بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
উম্মতের
উপর নবীজির যে সীমাহীন অনুগ্রহ রয়েছে, এর অন্যতম দাবি হচ্ছে নবীজির
প্রতি দরূদ ও সালামের নাযরানা পেশ করা। এটা আমাদের উপর নবীজির হক। যেখানে স্বয়ং আরহামুর
রাহিমীন ও তার ফেরেশতাগণ নবীজির প্রতি দরূদ প্রেরণ করেন; সেখানে
আমাদের মতো নগণ্য উম্মতের দরূদের কোনোই প্রয়োজন নেই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের। যেখানে খোদ রাব্বুল আলামীন স্বীয় হাবীবকে দান করেছেন মাকামে মাহমুদ-জান্নাতের
সর্বোচ্চ মর্যাদা, সেখানে তার জরুরত নেই আমাদের
কারো দরূদ ও সালামের।
কিন্তু
তবুও কেন এই নির্দেশ- দরূদ ও সালাম পাঠ করতে হবে তার প্রতি? হ্যাঁ, এতিম এ
উম্মতীকে নিজের স্বার্থেই নিবেদন করতে হবে প্রিয় নবী (সা.) এর প্রতি দরূদ ও সালাম-
ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সবটুকু দিয়ে। নবীজির প্রতি আমাদের মহব্বত
এমন কিছুই দাবি করে।
আল্লাহ
তাআলা বলেন-
اِنَّ اللهَ
وَ مَلٰٓىِٕكَتَهٗ یُصَلُّوْنَ عَلَی النَّبِیِّ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا
صَلُّوْا عَلَیْهِ وَ سَلِّمُوْا تَسْلِیْمًا.
নিশ্চয়
আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি ‘সালাত’ প্রেরণ করেন। হে যারা ঈমান এনেছ, তোমরা তার
প্রতি ‘সালাত’ পৌঁছাও এবং অধিক পরিমাণে সালাম পেশ কর। (সূরা আহযাব ৩৩ : ৫৬)
হজরত মুহাম্মদ
(সা.) এর প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করাকেই আমরা দরূদ বলে অভিহিত করে থাকি। বস্তুত আল্লাহ
রাব্বুল আলামীন স্বীয় শান অনুযায়ী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর উপর দরূদ বর্ষণ করেন। ফেরেশতাগণও
আপন পর্যায় থেকে দরূদ প্রেরণ করেন নবীজির প্রতি। আর তাই উম্মতেরও কর্তব্য হচ্ছে স্বীয়
অবস্থান থেকে মহান মুহসিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সালাত ও সালাম নিবেদন
করা।
আল্লাহ
তায়ালা নবীজির ওপর দরূদ বর্ষণ করেন- এর অর্থ কী? এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা
নিজ হাবীবের ওপর রহমত বর্ষণ করেন। তার গুণগান ও মর্যাদা বর্ণনা করেন ফেরেশতাদের নিকট।
তিনি তার বন্ধুর শ্রেষ্ঠত্ব, বড়ত্ব ও মহত্ত্ব বয়ান করেন
এবং তার সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করতে থাকেন।
আর ফিরিশতাগণ
দরূদ প্রেরণ করেন- এর অর্থ হল, ফেরেশতাগণ আল্লাহ তায়ালার
নিকট নবীজির মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব তলব করতে থাকেন। বরকতের দোয়া করতে থাকেন নবীজি ও
তার পুত পবিত্র পরিবারের জন্য।
আর মুমিনগণ
যে দরূদ পেশ করেন- এর অর্থ হল, তারা হজরত মুহাম্মদ (সা.)
এর শেখানো পদ্ধতিতে দরূদ পাঠ করতে থাকেন। মুমিনগণ আল্লাহ তায়ালার নিকট দরখাস্ত করতে
থাকেন, ইয়া রব! আপনি আপনার হাবীবের শান ও মান বৃদ্ধি করতে থাকুন। দুনিয়াতে
তার আলোচনা সমুন্নত করুন। তার আনীত শরীয়তকে প্রতিষ্ঠিত করুন। তার দ্বীনকে আপনি বুলন্দ
করে দিন। আখেরাতে তাকে শ্রেষ্ঠ প্রতিদানে ভূষিত করুন। উম্মতের জন্য তার শাফাআত কবুল
করুন। তাকে মাকামে মাহমূদ দান করে সর্বোচ্চ মর্যাদা প্রদান করুন। এভাবে ঊর্ধ্বজগৎ
ও ইহজগতের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মর্যাদা ও
শ্রেষ্ঠত্বের মহিমা। (ফাতহুল বারী, হাফেয ইবনে হাজার ১১/ ১৫৫, ১৫৬; আলকওলুল
বাদী, হাফেয সাখাবী, পৃ. ৫১-৫৭)
দরূদ শরীফের ফজিলত
ঈমানদারদের
প্রতি আল্লাহ তাআলার নির্দেশ হল, তোমরা নবীজির প্রতি দরূদ ও
সালাম পেশ কর। আল্লাহ বলেন-
اِنَّ اللهَ
وَ مَلٰٓىِٕكَتَهٗ یُصَلُّوْنَ عَلَی النَّبِیِّ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا
صَلُّوْا عَلَیْهِ وَ سَلِّمُوْا تَسْلِیْمًا.
নিশ্চয়
আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি ‘সালাত’ প্রেরণ করেন। হে যারা ঈমান এনেছ তোমরা তার
প্রতি ‘সালাত’ পৌঁছাও এবং অধিক পরিমাণে সালাম পেশ কর। (সূরা আহযাব ৩৩ : ৫৬)
অতএব দরূদ
পাঠের মাধ্যমে মহান রবের মহান নির্দেশ পালিত হয়। এছাড়া যেখানে খোদ রাব্বুল আলামীন স্বীয়
হাবীবের প্রতি দরূদ প্রেরণ করছেন, ফেরেশতাগণও পেশ করছেন নবীজির
প্রতি দরূদ; ঊর্ধ্বজগতে গুঞ্জরিত হচ্ছে নবীর শানে দরূদ, সেখানে
আমিও এই ধরাধাম থেকে দয়ার নবীর প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করার মাধ্যমে শামিল হচ্ছি সেই
মুবারক কাফেলায়।
اِنَّ اللهَ
وَ مَلٰٓىِٕكَتَهٗ یُصَلُّوْنَ عَلَی النَّبِیِّ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا
صَلُّوْا عَلَیْهِ وَ سَلِّمُوْا تَسْلِیْمًا.
(নিশ্চয়
আল্লাহ ও তার ফিরিশতাগণ নবীর প্রতি ‘সালাত’ প্রেরণ করেন। হে যারা ঈমান এনেছ তোমরা তার
প্রতি ‘সালাত’ পৌঁছাও এবং অধিক পরিমাণে সালাম পেশ কর।)
আয়াতটি
নাযিল হয় তখন সাহাবীগণ বললেন, ইয়া নাবিয়্যাল্লাহ! আমরা আপনার
প্রতি কীভাবে দরূদ পাঠ করব? নবীজি বললেন, তোমরা বলো-
اللَّهُمَّ
صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى
إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، وَبَارِكْ عَلَى
مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ
إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ.
(হে আল্লাহ!
আপনি সালাত ও রহমত বর্ষণ করুন মুহাম্মাদের প্রতি এবং মুহাম্মাদের পরিবার পরিজনের প্রতি।
যেভাবে আপনি ইবরাহীমের প্রতি এবং ইবরাহীমের পরিবারের প্রতি রহমত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়
আপনি প্রশংসিত এবং মর্যাদাবান। আপনি বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদের উপর এবং মুহাম্মাদের
পরিবারের উপর। যেভাবে আপনি বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীমের পরিবারের উপর এবং ইবরাহীমের
পরিবারের উপর। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত এবং মর্যাদাবান।) -মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ১৮১৩৩; মুসনাদে
ইবনে আবী শাইবাহ, হাদিস ৫০৫
দরূদ এমন
একটি আমল, যার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তাআলার করুণা লাভে ধন্য হয়। বান্দা
যদি আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি একবার দরূদ শরীফ পেশ করে
আল্লাহ তায়ালার প্রতিদানে তার প্রতি দশ বার রহমত বর্ষণ করেন। নবীজি বলেন-
مَنْ صَلَّى
عَلَيَّ وَاحِدَةً صلَّى الله عَلَيْهِ عَشْرًا.
যে আমার
প্রতি একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমত বর্ষণ করেন। (সহীহ মুসলিম, হাদিস ৪০৮; সুনানে
আবু দাঊদ, হাদিস ১৫৩০; সুনানে নাসায়ী, হাদিস ১২৯৬; মুসনাদে
আহমাদ, হাদিস ৮৮৫৪, ১০২৮৭)
দরূদের
মাধ্যমে যেভাবে আল্লাহর রহমত লাভ হয় তেমনি এর মাধ্যমে অর্জিত হয় বহু নেকি, মাফ হয়
বান্দার গুনাহ। পাশাপাশি বৃদ্ধি পেতে থাকে বান্দার মর্যাদা। হাদিস শরীফে এসেছে-
مَنْ صَلَّى
عَلَيَّ مِنْ أُمَّتِي صَلَاةً مُخْلِصًا مِنْ قَلْبِهِ، صَلَّى الله عَلَيْهِ
بِهَا عَشْرَ صَلَوَاتٍ، وَرَفَعَهُ بِهَا عَشْرَ دَرَجَاتٍ، وَكَتَبَ لَهُ بِهَا
عَشْرَ حَسَنَاتٍ، وَمَحَا عَنْهُ عَشْرَ سَيِّئَاتٍ.
আমার যে
উম্মতী আমার প্রতি অন্তর থেকে একবার দরূদ পেশ করবে আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে তার উপর
দশবার রহমত বর্ষণ করবেন। তার মর্তবা দশ স্তর পর্যন্ত উন্নীত করবেন। তাকে দশ নেকী দান
করবেন এবং তার দশটি গুনাহ মাফ করে দেবেন। (সুনানে কুবরা, নাসাঈ, হাদিস ৯৮৯২, ৯৮৯৩, ১২২১, ১০১২২; সুনানে
নাসাঈ, হাদিস ১২৯৭; আমালুল ইয়াউমি ওয়াল লাইলাই, নাসাঈ, হাদিস ৩৬২)
আরো বিস্তারিত জানতে
ভিজিট করুন: https://ifatwa.info/28101/?show=28101#q28101
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
নবীজির
প্রতি ভালোবাসা ও মুহাব্বতের দাবী হলো নবীর প্রতি অধিক হারে দরুদ পড়া ও নবীজির আদর্শ
ও সুন্নাতের অনুসরণ করা। কুরআন ও হাদীসের বিভিন্ন দলীল ও প্রমাণের মাধ্যমে তা
প্রমাণিত। তবে প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে আপনি চাইলে জান্নাতে নবীর সম্মান ও মর্তবা বৃদ্ধির
জন্য দোয়া করতে পারেন। তবে উত্তম হলো বেশী বেশী দরুদের আমল করা। উপরে দরুদ পাঠের
ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে।