আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
164 views
in পবিত্রতা (Purity) by (97 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম
১.গতকাল আমার পা ঘেষে একটা কুকুর হেটে চলো যায়, এবং কুকুরটি সম্ভবত আমার পায়ে লেগেছিলো। কুকুরটি যাওয়ার পর আমার পায়ে ভেজা অনুভব হয়, যেহেতু কুকুর নাপাক তাই আমি ধরে নিই আমার পা এবং জুতা নাপাক। বাসায় এসে পা ধুয়ে নিয়েছিলাম কিন্তু জুতা বাইরে সিড়িঘরে রেখে দিয়েছিলাম। কিন্তু আজ বৃষ্টি পড়ায় সিড়িঘর ভিজে গিয়েছিলো। আমার মা জুতোগুলো নিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে রাখেন। প্রশ্ন হলো, বৃষ্টির পানিতে জুতো ভিজে যাওয়ার কথা, আমার মা সেই জুতো ধরায় তার হাত কি নাপাক গন্য হবে?

২.যদি নাপাক গন্য হয়ে থাকে, আমার মা তা জানেন না, আমাকে কি এই নাপাকির বিষয়ে আমার মাকে অবগত করতে হবে? ( এক হাদিসে শুনেছি ওমর (রা) এবং এক সাহাবার গায়ে পানি পড়লে সেই সাহাবা জানতে চান সেই পানি কি নাপাক ছিল কিনা। কিন্তু ওমর (রা) তা এড়িয়ে যেতে বলেন। তাই এই প্রশ্ন ছিল)

৩. এই নাপাকি তিনি কিভাবে পরিষ্কার করবেন? ওযু করতে গেলে হাত ধুলেই যথেষ্ট হবে? নাকি একবার মাটি দিয়ে ঘষে ৭বার পানি দিয়ে ধুতে হবে?

1 Answer

0 votes
by (58,830 points)
edited by

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

শুকনা কুকুর শরীর বা কাপড়ের সাথে লাগলে শরীর বা কাপড় কিছুই নাপাক হবে না।(ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ-৫/২৩৩)

যদি কেউ পবিত্র পানি কুকুরের উপর ঢেলে দেয়।অতঃপর কুকুর মানুষের সামনে গিয়ে গা ঝাড়া দেয়,এবং ঐ পানি কোনো মানুষের শরীরে লাগে তাহলে ঐ মানুষের শরীর নাপাক হবে না।(আহসানুল ফাতাওয়া-২/৮৬)

আল্লামা আলাউদ্দিন হাসক্বাফী রাহ লিখেন,

 وَلَوْ أُخْرِجَ حَيًّا وَلَمْ يُصِبْ فَمُهُ الْمَاءَ لَا يَفْسُدُ مَاءُ الْبِئْرِ وَلَا الثَّوْبُ بِانْتِفَاضِهِ وَلَا بِعَضِّهِ مَا لَمْ يُرَ رِيقُهُ وَلَا صَلَاةُ حَامِلِهِ وَلَوْ كَبِيرًا، وَشَرَطَ الْحَلْوَانِيُّ شَدَّ فَمِهِ.

যদি কুকুরকে পানির ছোট হাউজ(১০*১০স্কয়ার হাত নয় এমন হলে ছোট নতুবা বড়)থেকে বের করা হয়,এবং কুকুরের মূখ পানির সাথে মিশ্রিত না হয়,তাহলে হাউজের পানি ফাসিদ হবে না।এবং কুকুরের শরীরের পানি কোনো কাপড়ে লাগলে সেই কাপড়ও নাপাক হবে না।কুকুর কাউকে কামড় দিলে যতক্ষণ পর্যন্ত তার লালা দেখা যাবে না ততক্ষণ পর্যন্ত কাপড় নাপাক হবে না।এবং বড় কুকুরকে বহনকারীর কাপড়ও নাপাক হবে না।সুতরাং নামায ফাসিদ হবে না।আল্লাম হালওয়ানী রাহ এক্ষেত্রে কুকুরের মূখ বন্ধ থাকার শর্তারোপ করেন।(আদ্দুর্রুল মুখতার-১/২০৮)

 

*কুকুরের দেহ মূলত নাপাক নয়। তাই কুকুরের শরীরে কোনো নাপাকি লেগে না থাকলে তার সাথে কাপড় বা কোনো কিছু লাগলে নাপাক হবে না। তবে কুকুরের লালা নাপাক। সেটি শরীরে বা কাপড়ে লাগলে নাপাক হয়ে যাবে। তাই কুকুরের মুখের লালা লেগে যদি তার দেহ ভিজে থাকে এবং ঐ ভেজা অংশ কাপড়ে লাগে তাহলে কাপড় নাপাক হয়ে যাবে। -(ফাতহুল কাদীর ১/১৩১; মারাকিল ফালাহ ২১; শরহুল মুনিয়া ১৫৯; আলবাহরুর রায়েক ১/১০১; আননাহরুল ফায়েক ১/৯৩)

 

* কুকুরের লালা লাগলে গোসল ফরয হয়না; বরং যেখানে লেগেছে তা তিনবার ধুয়ে নিলেই পাক হয়ে যায়। কমপক্ষে তিনবার ধোয়া জরুরী। কেননা হাদীস শরীফে এসেছে, আবু হুরায়রা রযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, إِذَا وَلَغَ الْكَلْبُ فِي الإِنَاءِ فَاهْرِقْهُ ثُمَّ اغْسِلْهُ ثَلاثَ مَرَّاتٍ যখন কুকুর পাত্রে মুখ দেয় তখন পাত্রের বস্তুটি ফেলে দাও, তারপর পাত্রটি তিনবার ধুয়ে নাও। (দারাকুতনী ১৬৫)

 

আতা রহ. বলেন, أَنَّهُ كَانَ إِذَا وَلَغَ الْكَلْبُ فِي الْإِنَاءِ أَهْرَاقَهُ وَغَسَلَهُ ثَلَاثَ مَرَّات আবু হুরায়রা রযি. কুকুরের মুখ দেয়া পাত্রের বস্তু ফেলে দিয়েছেন এবং পাত্রটি তিনবার ধুয়েছেন। (দারাকুতনী ১৬৬)

আর সাতবার ধোয়া উত্তম। তন্মধ্যে একবার মাটি বা সাবানদ্রব্য দ্বারা মেজে ফেললে বা ধুয়ে ফেললে আরও উত্তম। কেননা হাদীস শরীফে এসেছে, আবু হুরায়রা রযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, إِذَا شَرِبَ الْكَلْبُ فِيْ اِنَاءِ أَحَدِكُمْ فَلْيَغْتَسِلْهُ سَبْعَ مَرَّاتٍ তোমাদের কারো পাত্রে যখন কুকুর পানি পান করে, তখন সে যেন তা সাতবার ধুয়ে নেয়। (বুখারী ১৭২, মুসলিম ২৭৯)

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

শুকুর যেভাবে তার সমস্ত অংশ নিয়ে অপবিত্র যাকে নজসুল আইন বলা হয়। কুকুর কিন্তু সেভাবে তার সমস্ত অংশ নিয়ে অপবিত্র নয়। বরং কুকুরের পশম পবিত্র।তার চামড়া পবিত্র কি না? সে সম্পর্কে উলামায়ে কেরামদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। তবে দেবাগতের পর কুকুরের চামড়া পবিত্র হওয়া সম্পর্কে সবাই একমত।এবং শরীরের ঐ সমস্ত অঙ্গ পবিত্র যাতে হায়াত থাকে না,যেমন নক,পশম ইত্যাদি। তবে তার গোশত নাপাক।

সুতরাং প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে যদি আপনার প্রবল ধারণা হয় যে, কুকুরের শরীরে লেগে থাকা ভিজা লালা থেকেই তাহলে আপনার জুতা ও পায়ের যেই অংশে লেগেছে তা নাপাক হবে। অন্যথায় নাপাক হবে না। এবং উক্ত বিষয়ে অতিরিক্ত ওয়াসওয়াসায় নিপতিত হওয়া মোটেও উচিত নয়। তবে হ্যাঁ যদি তা নাপাক প্রমাণিত হয় তাহলে তিনবার হাত ধৌত করাই যথেষ্ট। আর সাতবার ধোয়া উত্তম।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 167 views
...