আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
213 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (31 points)
১. ছোট শিরক এবং বড় শিরক সম্পর্কে জানতে চাই।

২. পীর সাহেবের মুরিদ হয়ে তার দরবারে এবং মাজারে যাতায়াত করা, পীরের মৃত্যুদিবস উপলক্ষে আয়োজিত বাৎসরিক অনুষ্ঠানে নিয়মিত যোগদান করা, সেই উপলক্ষে সাদাকা করা এবং এই আকীদা পোষণ করা যে, পীরের সুপারিশ পরকালে মুক্তির উপায় হতে পারে, পীরেরা মৃত্যুর পর আরো ক্ষমতাশালী হয়ে যান এবং সব দেখতে পান, তাঁরা আল্লাহর ওলী তাই আল্লাহ তাঁদের সুপারিশে মুরিদদের যে কোন দুয়া কবুল করেন, এই ধরণের আকীদা কোন ধরণের শিরকের অন্তর্ভুক্ত?
৩. এ ধরণের আকীদায় বিশ্বাসী লোকদের মৃত্যুর পর তাঁদের জন্য মাগফিরাতের দুয়া করা যাবে কি? যদি কারো পিতা মাতা বা স্বামী স্ত্রী উল্লেখিত আকীদার অনুসারী হয় তবে তাদের মৃত্যুর পর তাদের জন্য সাদাকা করা বা দুয়া করা যাবে কি?

৪. মাহরাম কর্তৃক অশোভন বা অশালীন আচরণের শিকার হলে  তার সাথে পর্দা ফরজ হয়ে যায়, এই মাসআলা কি সঠিক?

৫. সম্পূর্ণ সজাগ অবস্থায় যদি এরূপ আচরণ সম্পর্কে  নিশ্চিত না হওয়া যায়, ঘুমের ঘোরে কারো সন্দেহ লাগে এই রকম কিছু, তবে সেই অবস্থায় তার মাসআলা কী হবে?

1 Answer

0 votes
by (574,080 points)
edited by
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


(০১)
শিরক দুই প্রকার: এক. শিরকে জলী, দুই. শিরকে খফী। শিরকে জলী সবচেয়ে মারাত্মক। শিরকে জলীর অনেক প্রকার রয়েছে। 

★বড় শিরক যেমন,
ইবাদত, যা একমাত্র আল্লাহ তাআলার হক, তাতে আল্লাহ ছাড়া কাউকে শরীক করা, উপায়-উপকরণের ঊর্ধ্বের বিষয়ে গাইরুল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা, উপায়-উপকরণকে উপায়-উপকরণের সৃষ্টিকর্তার মান দেওয়া, গাইরুল্লাহকে উপকার ও ক্ষতির ক্ষমতাধারী মনে করা ইত্যাদি। 

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَلاَ تَجْعَلُواْ لِلّهِ أَندَاداً وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ﴾

‘‘অতএব তোমরা জেনে শুনে আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ স্থাপন করো না’’। (সূরা আল বাকারা: ২২)
,
আরো জানুনঃ  


★ছোট শিরক যেমনঃ-
★রিয়া তথা লোক দেখানো ইবাদত।
★আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করা।

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেছেন,

   مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللَّهِ فَقَدْكَفَرَ أَوْ أَشْرَك  

‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে শপথ করল, সে কুফুরী করলো অথবা শিরক করল’’। ইমাম তিরমিযী হাদীছটি বর্ণনা করার পর হাসান বলেছেন

★শব্দের মাধ্যমে ছোট শিরক হয়ে থাকে

যেমন কেউ বললো, ماشاء الله وشئت ‘‘আল্লাহ এবং আপনি যা চেয়েছেন’’। 

★কোনো কোনো অবস্থায় لو (যদি) শব্দ উচ্চারণ করা

এমন কিছু শব্দ রয়েছে, যা উচ্চারণ করা মোটেই ঠিক নয়। কারণ এটি মানুষের আকীদা নষ্ট করে। বিশেষ করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে لَوْ শব্দটি ব্যবহার করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। মানুষ যখন অপ্রিয় পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় কিংবা মুছীবতে পড়ে তখন সে যেন এমন না বলে, আমি যদি এমন করতাম, তাহলে আমার এ বিপদ হতো না! আমি যদি এমন না করতাম, তাহলে আমার এমন হতো না। কেননা এ ধরণের কথার মধ্যে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, বান্দার যা হাতছাড়া হলো এবং যা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় তাতে তার ধৈর্য নেই। 

সেই সঙ্গে যে ব্যক্তি لو শব্দটি উচ্চারণ করে, তার কথার মধ্যে আরো ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, তাক্বদীর ও আল্লাহ তা‘আলার ফায়ছালার প্রতি তার ঈমান নেই। এতে নিজের নফস্কে দোষারোপ করা এবং কুমন্ত্রণা ও দুশ্চিন্তা প্রদানের জন্য শয়তানকে সুযোগ করে দেয়া হয়।

কোনো মুসলিমের উপর মুছীবত নেমে আসলে তাক্বদীরকে মেনে নেয়া এবং মুছীবতে সবর করা আবশ্যক। তবে নিজের নফস্কে দোষারোপ না করে কল্যাণ আনয়নকারী উপায়-উপকরণ সংগ্রহ করা এবং অকল্যাণ প্রতিহতকারী ও অপ্রিয় বস্তু বিদূরিতকারী উপায়-উপকরণ অবলম্বন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা জরুরী।

উহুদ যুদ্ধে মুসলিমদের উপর যে বিপদাপদ নেমে এসেছিল, তার কারণে যারা لو শব্দটি ব্যবহার করেছিল, তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা দোষারোপ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿يَقُولُونَ لَوْ كَانَ لَنَا مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ مَا قُتِلْنَا هَاهُنَا﴾
‘‘তারা বলে, এ ব্যাপারে যদি আমাদের করণীয় কিছু থাকতো, তাহলে আমরা এখানে নিহত হতাম না’’। (সূরা আলে-ইমরান: ১৫৪)

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
ছোট শিরক তাওহীদের মধ্যে ঘাটতি আনয়ন করে এবং সেটাকে ত্রুটিযুক্ত করে দেয়। 

মানুষের মধ্যে এমন অনেক ছোট শিরক রয়েছে, যা থেকে আল্লাহ তা‘আলা এবং তার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সতর্ক করেছেন। যাতে করে আকীদার সংরক্ষণ করা যায় এবং তাওহীদের হেফাযত করা হয়। কেননা এ ছোট শিরকগুলো তাওহীদে ঘাটতি আনয়ন করে। কখনো কখনো এগুলো বড় শিরকের দিকে নিয়ে যায়।

(০২)
যদি মাজারে সেজদাহ না দেয়া হয়,পীর সাহেব বা মাজারে শুয়ে থাকা ব্যাক্তি কিছু দিতে পারে,এমন আকীদা না হয়, তাহলে প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে সব গুলো শিরক নয়।  
""পীরেরা মৃত্যুর পর আরো ক্ষমতাশালী হয়ে যান এবং সব দেখতে পান"" এটি শিরকি আকীদা।
(ক্ষমতা দ্বারা কি উদ্দেশ্য, সেটির উপর নির্ভর করে এটি বড় শিরক কিনা?) 
,
তবে কিছু ইসলামী স্কলারগন   এখানে উল্লেখিত প্রায় সব গুলিকেই শিরক বলে আখ্যায়িত করেন। 

(০৩)
তাদের মৃত্যুর পর তাদের জন্য সাদাকা করা বা মাগফিরাতের দুয়া করা যাবে। 

কেননা এখানে ঢালাও ভাবে সব গুলিকে শিরক বলা যায়না।
আর সেই ব্যাক্তি যেহেতু অজ্ঞতাবশত এগুলো করে মারা গিয়েছে,তাই তাকে মুশরিক বলা যায়না।

(০৪)
সতর্কতামূলক তাদের সামনে বেপর্দা না যাওয়া উচিত,দুরত্ব বজায় রাখা উচিত।

প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে তাদের সামনে ফিতনাহর আশংকা থাকা অবস্থায় পর্দা করা আবশ্যক। 

(০৫)
সেই অবস্থায় তো ঘুমন্ত ব্যাক্তির গুনাহ হবেনা। 
তবে এক্ষেত্রে শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে তার সামনে পর্দা করা আবশ্যক নয়।

তবে বিষয়টি সম্পর্কে প্রবল ধারনা হলে পর্দা করাই সতর্কতা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...