আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
138 views
in খাদ্য ও পানীয় (Food & Drink) by (42 points)
reshown by
১.কাজের ক্ষেত্রে একলোক বাবাকে  কিছু জিনিস কিনে দিলো বাবার খাওয়ার জন্য। কিন্তু একা সব খাওয়া সম্ভব না , তাই বাবা সেগুলো বাসায় নিয়ে আসে। এখন বাকিরা সেই খাবার খেতে পারবে?লোকটা তো জানে না যে এগুলো আমরাও খাবো।

২.অফিসের কর্মচারী দের জন্য কিছু খাবার এনে রাখা হয়। সেটা কর্মচারীরা খায়। যেটা বাড়তি থাকে তা অফিসের কাজের মহিলা  কেও দিয়ে দেয়া হয়। তো সেগুলো যদি বাসায় আনা হয় তবে সেটা কি খাওয়া যাবে ?

৩. ইদানিং যেকোনো বাইরের খাবার খাওয়ার সময় কেমন জানি লাগে, যে এটা হালাল নাকি। আমি Swiss থেকে মাংসের একটা খাবার খাই, কিন্তু জানি না টা জবাই এর সময় আল্লাহ এর নাম নেয়া হয়েছিল কিনা। আর প্রতিবার যদি সম পরিমাণ টাকা সদকা দেই, সেটাও তো সম্ভব  হয় না সব সময়। তাহলে তো যখনই সন্দেহ জাগবে তখনই কিছু টাকা দান করতে হবে  । এক্ষেত্রে কি করবো?

৪. আমার কাছ থেকে ৪০০ টাকা নিয়ে দেয়ার কথা ভুলে গেছে একজন। আমি মাফ করে দিয়েছি। ওটা সে খাওয়ার কাজে খরচ করেছিল। এতদিন পর আমি চাইলাম যে, টাকা টা আমি মাফ করে দিবো ঠিকাছে, কিন্তু আমার নিয়ত টা পরিবর্তন করলাম। আমি সেটা সাওয়াব এর নিয়ত না রেখে সদকা হিসেবে গণ্য করতে চাইলাম, যদি হারাম খাওয়া হয়ে যায় সেটার জন্য। এমন কি করা যাবে? ওই টাকা লেনদেন অনেক দিন আগের কথা।


৫. আমরা তো কতো খাবারই খাই, নিজের অজান্তেই হারাম খেয়ে ফেললে কি করবো? আর সবসময় এমন চিন্তা আসলে কি করবো?

1 Answer

0 votes
by (59,970 points)
edited by

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

অন্যর মাল তার অন্তরের সন্তুষ্টি ব্যতীত কারো জন্য হালাল হয় না।বিদায় এসব পরিত্যাজ্য।

কেননা আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍْ ﻻَ ﺗَﺄْﻛُﻠُﻮﺍْ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻜُﻢْ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ ﺑِﺎﻟْﺒَﺎﻃِﻞِ ﺇِﻻَّ ﺃَﻥ ﺗَﻜُﻮﻥَ ﺗِﺠَﺎﺭَﺓً ﻋَﻦ ﺗَﺮَﺍﺽٍ ﻣِّﻨﻜُﻢْ ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮﺍْ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﺑِﻜُﻢْ ﺭَﺣِﻴﻤًﺎ

তরজমাঃ-হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু। (সূরা নিসা(২৯)

এবং হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত,

عن ابن عباس قال;قال رسول اللّٰه صلى اللّٰه عليه و سلم ﻻ ﻳﺤﻞ ﻣﺎﻝ ﺍﻣﺮﺉ ﻣﺴﻠﻢ ﺇﻻ ﺑﻄﻴﺐ ﻧﻔﺲ ﻣﻨﻪ "

নবী কারীম সাঃ বলেনঃ"কোন মুসলমানের জন্য  অন্য কোনো মুসলমানের মাল তার অন্তরের সন্তুষ্টি ব্যতীত হালাল হবে না। (তালখিসুল হাবীর-১২৪৯) আরো জানুন-https://www.ifatwa.info/3747

 

ওয়াবিসা ইবনে মা'বাদ রাযি থেকে বর্ণিত,

ﻭﻋﻦ ﻭﺍﺑﺼﺔَ ﺑﻦِ ﻣَﻌْﺒِﺪٍ  ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﺗَﻴْﺖُ ﺭﺳﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪ ﷺ ﻓَﻘَﺎﻝَ : « ﺟِﺌْﺖَ ﺗﺴﺄَﻝُ ﻋﻦِ ﺍﻟﺒِﺮِّ؟ » ﻗُﻠْﺖُ : ﻧَﻌَﻢْ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : « ﺍﺳْﺘَﻔْﺖِ ﻗَﻠْﺒَﻚَ، ﺍﻟﺒِﺮُّ : ﻣَﺎ ﺍﻃْﻤَﺄَﻧَّﺖْ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺍﻟﻨَّﻔْﺲُ، ﻭﺍﻃْﻤَﺄَﻥَّ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺍﻟﻘَﻠْﺐُ، ﻭﺍﻹِﺛﻢُ : ﻣَﺎ ﺣﺎﻙَ ﻓﻲ ﺍﻟﻨَّﻔْﺲِ، ﻭﺗَﺮَﺩَّﺩَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﺪْﺭِ، ﻭﺇِﻥْ ﺃَﻓْﺘَﺎﻙَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻭَﺃَﻓْﺘَﻮﻙَ » ﺣﺪﻳﺚٌ ﺣﺴﻦٌ، ﺭﻭﺍﻩُ ﺃﺣﻤﺪُ ﻭﺍﻟﺪَّﺍﺭﻣِﻲُّ ﻓﻲ " ﻣُﺴْﻨَﺪَﻳْﻬِﻤﺎ ."

তিনি বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নিকট গেলাম।রাসূলুল্লাহ সাঃ আমাকে বললেন,তুমি কি নেকীর কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য এসেছ?আমি বললাম জ্বী হ্যাইয়া রাসূলাল্লাহ!

তখন তিনি আমাকে বললেন,তুমি তোমার অন্তরের নিকট ফাতওয়া জিজ্ঞাসা করো।নেকি হল সেটা যার উপর অন্তর প্রশান্তিবোধ করে,এবং যে জিনিষের উপর অন্তর শান্ত থাকে।আর গোনাহ হল সেটা,যা অন্তরে অশান্তি সৃষ্টি করে নাড়িয়ে দেয়,এবং অন্তরকে দ্বিধান্বিত করে ফেলে।যদিও উক্ত কাজ সম্পর্কে মুফতিগণ বৈধতার ফাতাওয়া প্রদাণ করুক না কেন(মুসনাদে আহমদ-১৭৫৪৫)

 

হাসান ইবনে আলী রাযি থেকে বর্ণিত রয়েছে।

ﻭﻋﻦ ﺍﻟﺤَﺴَﻦِ ﺑﻦ ﻋَﻠﻲٍّ ﺭﺿﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻗَﺎﻝَ : ﺣَﻔِﻈْﺖُ ﻣِﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﷺ : « ﺩَﻉْ ﻣَﺎ ﻳَﺮِﻳﺒُﻚَ ﺇِﻟﻰ ﻣَﺎ ﻻ ﻳﺮِﻳﺒُﻚ » ﺭﻭﺍﻩُ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ﻭﻗﺎﻝ : ﺣﺪﻳﺚٌ ﺣﺴﻦٌ ﺻﺤﻴﺢٌ 

তিনি বলেনআমি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছি।তিনি বলেন,সন্দেহ যুক্ত জিনিষকে পরিহার করে সন্দেহমুক্ত জিনিষকে গ্রহণ করো। (সুনানু তিরমিযি-২৪৪২)

 

নু'মান ইবনে বশির বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছি-

عن عامر، قال: سمعت النعمان بن بشير، يقول: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: "الحلال بين، والحرام بين، وبينهما مشبهات لا يعلمها كثير من الناس، فمن اتقى المشبهات استبرأ لدينه وعرضه، ومن وقع في الشبهات: كراع يرعى حول الحمى، يوشك أن يواقعه، ألا وإن لكل ملك حمى، ألا إن حمى الله في أرضه محارمه، ألا وإن في الجسد مضغة: إذا صلحت صلح الجسد كله، وإذا فسدت فسد الجسد كله، ألا وهي القلب "

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,(কোনো জিনিষ)হালাল (হওয়া)পরিস্কার।(এবং কোনো জিনিষ) হারাম(হওয়া) ও পরিস্কার। হ্যা এ দুয়ের মধ্যে কিছু বিধান রয়েছে সাদৃশ্যপূর্ণ। যার সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই জানেনা।যে ব্যক্তি সন্দেহপূর্ণ জিনিষ থেকে বেঁছে থাকলসে যেন তার দ্বীন এবং ইজ্জতকে হেফাজত করে নিল। আর যে ব্যক্তি সন্দেহপূর্ণ জিনিষে পতিত হলসে যেন হারামে পতিত হল। যেমন রাখাল ক্ষেতের দেয়াল ঘেষে পশু চড়ালো।এখানে সম্ভাবনা রয়েছে যেপশু ক্ষেতে নেমে যাবে। 

 

জেনে রাখ! প্রত্যেক বাদশারই একটি সীমান্তরেখা রয়েছে এবং আল্লাহ যমীনে তার সীমারেখা হল,তার হারাম বিধি-বিধান।জেনে রাখ! শরীরে একটি মাংসপিণ্ড রয়েছে। যখন সেই মাংসপিণ্ড ভাল থাকে তখন সারা শরীর-ই ভাল থাকে।আর যখন সেই মাংসপিণ্ড নষ্ট হয়ে যায়,তখন সমস্ত শরীরই নষ্ট হয়ে যায়। সেই বস্তু হল,ক্বলব বা অন্তর। (সহীহ বুখারী-৫২)

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

 

. যদি সেই জিনিসগুলো একেবারে আপনার বাবার মালিকানায় দিয়ে দেয় তাহলে আপনার বাবার জন্য তা বাড়িতে নিয়ে আসা জায়েজ আছে এবং এগুলো বাড়ীর সবাই খেতে পারবে এতে কোনো সমস্যা নেই আর যদি সেগুলো আপনার বাবার জন্য শুধু অফিসেই খাওয়ার অনুমতি থাকে; বাড়ীতে নিয়ে আসার অনুমতি না থাকে তাহলে সেগুলো বাড়ীতে নিয়ে আসা জায়েজ হবে না

 

২. যদি সেগুলো সবার জন্য শুধু অফিসেই খাওয়ার অনুমতি থাকে; বাড়ীতে নিয়ে আসার অনুমতি না থাকে তাহলে সেগুলো বাড়ীতে নিয়ে আসা জায়েজ হবে না

 

৩. যেহেতু বাংলাদেশে মুসলমানদের সংখ্যা বেশী তাই ধরে নেওয়া হবে মুসলিম হোটেলগুলোতে তারা হালাল গোশতই বিক্রয় করে। ধরে নেওয়া হবে যে, তারা যেহেতু মুসলমান তাই জবাইয়ের সময় আল্লাহর নাম নিয়েই জবাই করেছে।  তাই সন্দেহ করার কোনো কারণ নেই। তবে যদি কোনো নির্দিষ্ট হোটেলের ব্যাপারে এই তথ্য পাওয়া যায় যে, তারা হালাল গোশত বিক্রয় করে না। তাহলে এটা ভিন্ন কথা।

 

৪. আপনি উক্ত টাকা সওয়াবের নিয়তেই মাফ করে দিবেন। কারণ একজন প্রকৃত মুসলমান হারাম কাজে টাকা ব্যয় করতে পারে না। তবে যদি একান্ত সে উক্ত টাকা হারাম কাজে ব্যয় করেই থাকে তাহলে এতে তার গোনাহ হবে। আপনার কোনো গোনাহ হবে না (যদি আপনার অজান্তে হয়)। কিন্তু আপনি সওয়াব পেয়ে যাবেন।

 

৫. নিজের অজান্তে হারাম খেয়ে ফেললে আশা করা যায় আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দিবেন ইনশাআল্লাহ। তবুও এই ক্ষেত্রে চিন্তা আসলে আপনি ইস্তেগফার পড়বেন।
<!--[endif]-->


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...