ওয়া
আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আল্লাহর তা'আলার বানী
الْخَبِيثَاتُ لِلْخَبِيثِينَ وَالْخَبِيثُونَ لِلْخَبِيثَاتِ ۖ وَالطَّيِّبَاتُ لِلطَّيِّبِينَ وَالطَّيِّبُونَ لِلطَّيِّبَاتِ ۚ أُولَٰئِكَ مُبَرَّءُونَ مِمَّا يَقُولُونَ ۖ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ
দুশ্চরিত্রা নারীকূল দুশ্চরিত্র পুরুষকুলের জন্যে এবং দুশ্চরিত্র পুরুষকুল দুশ্চরিত্রা নারীকুলের জন্যে। সচ্চরিত্রা নারীকুল সচ্চরিত্র পুরুষকুলের জন্যে এবং সচ্চরিত্র পুরুষকুল সচ্চরিত্রা নারীকুলের জন্যে। তাদের সম্পর্কে লোকে যা বলে, তার সাথে তারা সম্পর্কহীন। তাদের জন্যে আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।(সূরা নূর-২৬)
(এক)
মুফাস্সিরীনে কেরাম উক্ত আয়াতের অর্থ বর্ণনা করতে যেয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত পেশ করে থাকেন,
- (১)কথার মধ্যে ভাল এবং খারাপ থাকা।অর্থাৎ নোংরা ও অশ্লীল কথা, এবং সভ্যতাজনিত কথা।
তখন আয়াতের অর্থ হবে,নোংরা কথা নোংরা মানুষের জন্যই উপযোক্ত।ঠিকতেমনি নোংরা মানুষ নোংরা কথার উপযুক্ত।এমনিভাবে ভালো কথা ভালো মানুষের উপযুক্ত। এবং ভালো মানুষ ভালো কথার উপযুক্ত।এটা,হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস,মুজাহিদ ইবনে জাবর,সাঈদ ইবনে যুবাইর, শা'বী, হাসান বসরী, হাবীব ইবনে আবী ছাবিত,যাহহাক, ইবনে জারীর তাবারী রাহ এর মত।ইমাম নাহহাসা উনার কিতাব 'মা'আনীল কুরআন' এ বলেন,এটাই সর্বোত্তম তাফসীর।এর প্রমাণ হল,আল্লাহ তা'আলার পরবর্তী বাণী,
أولئك مبرءون مما يقولون
'তাদের সম্পর্কে লোকে যা বলে, তার সাথে তারা সম্পর্কহীন' তথা হযরত আয়েশা রাযি ও হযরত সফওয়ান রাযি সম্পর্কে নোংরা শ্রেণীর লোকরা যা বলেছিলো,তা থেকে তারা দুইজন পবিত্র।এত্থেকে বুঝা যায়,এই আয়াতে الْخَبِيثَاتُ لِلْخَبِيثِينَ শব্দ দ্বারা কথার অশ্লীলতা বুঝানো হয়েছে।
ইমাম তাবারী রাহ বলেন,এটাই সর্বোত্তম তা'বীল।কেননা এই আয়াত হযরত আয়েশা রাযি এর শানে নোংরা কথা বলার পরই নাযিল হয়েছে।কাজেই বুঝা গেল,এই আয়াতে নোংরামি দ্বারা কথা নোংরামি উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে।
(তাফসীরে তাবারী-১৯/১৪৪)
- (২)কাজের মধ্যে নোংরামি ও সভ্যতা।তখন আয়াতের ব্যাখা হবে,মন্দ কাজ মন্দ লোকের জনই উপযুক্ত।এবং মন্দ লোক মন্দ কাজের উপযুক্ত।ঠিকতেমনি ভদ্র কাজ ভদ্র লোকের উপযুক্ত।এবং ভদ্র লোক ভদ্র কাজের উপযুক্ত।এটা হাবীব ইবনে আবি ছাবিত,আ'তা ইবনে আবি রাবাহ,কাতাদাহ,
ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহ বলেন,
নোংরা কথা বা কাজ,দুটুই হতে পারে।
মাজমু'আতুল ফাতাওয়া-১৪/৩৪৩)
- (৩)নিকাহর ব্যাপারে ভাল-মন্দ পুরুষ এবং নারী উদ্দেশ্য।তখন আয়াতের উদ্দশ্য হল,দুশ্চিরিত্র পুরুষের জন্য দুশ্চরিত মহিলা।এটা আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে আসলাম এর মত।রাসূলুল্লাহ সাঃ ভালো ছিলেন,এবং উনার স্ত্রী আয়েশা রাযিও ভালো ছিলেন।
ইমাম কুরতুবী রাহ বলেন,
এই ব্যখ্যার উৎস হল,আল্লাহর তা'আলার অন্য এক বাণী,
الزاني لا ينكح إلا زانية أو مشركة
যিনাকারী পুরুষ যিনাকারী মহিলা বা মুশরিক মহিলা ব্যতীত অন্য কাউকে বিয়ে করবে না।(সূরা নূর-০৩)
তখন,الخبيثات দ্বারা উদ্দেশ্য হবে,যিনাকারী মহিলা।এবং الطيبات দ্বারা উদ্দেশ্য হবে,সভ্যভদ্র মহিলা।
এটা নাহহাস রাহ এর মত।এবং ইবনে যায়েদ এর মত।(তাফসীরে কুরতুবী-১২/২১১)
(দুই)
প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যাখ্যানুসারে কোনো মতপার্থক্য নেই,অভিযোগ নেই।
তবে তৃতীয় ব্যখ্যায় প্রশ্ন চলে আসে যে,আমরা দেখতে পাই যে,অনেক নেককার স্ত্রী বদকার স্বামীকে বিয়ে করে থাকে?
জবাবে বলা হবে,এখানে অর্থ হল,সচ্চরিত্র পুরুষের জন্য সচ্চরিত্রা মাহিলাকে বিয়ে করা ব্যতীত অন্য কোথাও বিয়ে করা উচিৎ হবে না।এবং দুশ্চিরিত্রা মহিলা মহিলার জন্য দুশ্চিরিত্র পুরুষই বেশ উপযুক্ত। যে ব্যক্তি দুশ্চরিত্রা মহিলার খবর জানা সত্বেও সে দুশ্চরিত্রাকে বিয়ে করতে যাবে,সে নিজেও এরকম দুশ্চরিত্র।
তাফসীরে জালালাইন গ্রন্থে উক্ত আয়াতের ব্যাখায় লিখা হয়,
ﻣِﻤَّﺎ ﺫُﻛِﺮَ ﺃَﻱْ اﻟﻻَّﺋِﻖ ﺑِﺎﻟْﺨَﺒِﻴﺚِ ﻣِﺜْﻠﻪ ﻭَﺑِﺎﻟﻄَّﻴِّﺐِ ﻣِﺜْﻠﻪ
উক্ত আয়াতে যে বলা হয়েছে,'দুশ্চরিত্রা নারীকূল দুশ্চরিত্র পুরুষকুলের জন্যে'(শেষ পর্যন্ত)
এই আয়াতের সহজ অর্থ হচ্ছে,দুশ্চরিত্র নারীর জন্য দুশ্চিত্র পুরুষই উপযোক্ত এভাবে ঠিক তার উল্টো।এ অর্থ নয় যে,দুশ্চরিত্র নারী দুশ্চরিত্র পরুষকেই পাবে।হতে পারে পাবে আবার নাও পেতে পারে।