আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
181 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (18 points)
আসসালামু আলাইকুম।

গ্রামাঞ্চলে অনেকে বলে থাকেন যে ফেরেশতারা শয়তানকে শাস্তি দেওয়ার জন্য তাদের উপর বজ্র নিক্ষেপ করেন। শয়তান এর জন্য মানুষের কাছে দাঁড়ায় যাতে এর দ্বারা মানুষকে কষ্ট দেওয়া হয় এবং শয়তান যাতে মানুষের আশেপাশে না থাকতে পারে এর জন্য "লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ" পড়তে হয়।
এই বিষয়টিকে কুরআন হাদিস কতটুকু সমর্থন করে? সূরা রাদে এসেছে আল্লাহ তায়ালা বজ্রপাতের দ্বারা যাকে ইচ্ছা তাকে প্রহার করেন,,এই আয়াত কি প্রচলিত বিশ্বাসটির সাথে সাংঘর্ষিক না?

1 Answer

0 votes
by (561,180 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


★প্রশ্নে উল্লেখিত কথা কুরআন হাদীসের কোথাও পাইনি।  

বজ্রপাত কি,তা সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত 
জেনে নেইঃ  

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 
وَ مِنۡ اٰیٰتِہٖ یُرِیۡکُمُ الۡبَرۡقَ خَوۡفًا وَّ طَمَعًا وَّ یُنَزِّلُ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَیُحۡیٖ بِہِ الۡاَرۡضَ بَعۡدَ مَوۡتِہَا ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یَّعۡقِلُوۡنَ ﴿۲۴﴾ 

আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে, তিনি তোমাদেরকে প্রদর্শন করান বিদ্যুৎ  ভয় ও আশার সঞ্চারকরূপে এবং আসমান থেকে পানি নাযিল করেন। অতঃপর তা দিয়ে যমীনকে পুনর্জীবিত করেন সেটার মৃত্যুর পর; নিশ্চয় এতে বহু নিদর্শন রয়েছে এমন সম্প্রদায়ের জন্য, যারা অনুধাবন করে।
(সুরা আর রুম ২৪)

আল্লাহর কুদরতের অন্যতম একটি নিদর্শন এই যে, আল্লাহ তাআলা মানুষকে বিদ্যুতের চমক দেখান। এতে উহার পতিত হওয়ার এবং ক্ষতি করারও আশংকা থাকে এবং এর পশ্চাতে বৃষ্টির আশাবাদও সঞ্চয় হয়। তিনি এই বৃষ্টির দ্বারা শুষ্ক এবং মৃত মৃত্তিকাকে জীবিত ও সতেজ করে তাতে রকমারি প্রকারের বৃক্ষ ও ফল-ফুল উৎপন্ন করেন।
 [ইবনে কাসীর]

وَ یُسَبِّحُ الرَّعۡدُ بِحَمۡدِہٖ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ مِنۡ خِیۡفَتِہٖ ۚ وَ یُرۡسِلُ الصَّوَاعِقَ فَیُصِیۡبُ بِہَا مَنۡ یَّشَآءُ وَ ہُمۡ یُجَادِلُوۡنَ فِی اللّٰہِ ۚ وَ ہُوَ شَدِیۡدُ الۡمِحَالِ ﴿ؕ۱۳﴾ 

আর রা'দ তার প্রশংসা মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে এবং ফেরেশতাগণও তা-ই করে তার ভয়ে। আর তিনি গর্জনকারী বজ্র পাঠান অতঃপর যাকে ইচ্ছে তা দ্বারা আঘাত করেন এবং তারা আল্লাহ সম্বন্ধে বিতন্ডা করে, আর তিনি শক্তিতে প্রবল শাস্তিতে কঠোর।
(সুরা রা'দ ১৩)

অর্থাৎ রা'দ আল্লাহ্ তা'আলার প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতার তাসবীহ পাঠ করে এবং ফিরিশতারা তার ভয়ে তাসবীহ পাঠ করে। মুজাহিদ বলেন, রা'দ বলে যদি মেঘের গর্জন বুঝা হয়, তবে এ তাসবীহ পাঠ করার অর্থ হবে আল্লাহ তাতে জীবন সৃষ্টি করেন। [কুরতুবী]

হাদীসে এসেছে, এক প্রতাপশালী লোকের কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে পাঠালে সে লোক বললঃ কে আল্লাহর রাসূল? আল্লাহ কি? সোনার না রূপার? নাকি পিতলের? এভাবে তিনবার সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাঠানো লোককে বলে পাঠাল। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তার উপর আকাশ থেকে বজ্রপাত করালেন। ফলে তার মাথা গুড়িয়ে যায়। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। [ইবনে আবি আসেমঃ আস সুন্নাহঃ ৬৯২]

একবার আমের বিন তুফাইল আমেরী এবং আরবাদ বিন রবীয়া আমেরী রাসুল(ﷺ) এর নিকট গেল। তারা রাসুল(ﷺ)কে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। আমের রাসুল(ﷺ)কে বলল, “আপনি একটু উঠুন, আপনার সঙ্গে একান্তে আলাপ করতে চাই।” আমের তার সাথী আরবাদকে আরো বলে রেখেছিল যে মুহাম্মাদ(ﷺ) যখন আমার সাথে আলাপে মগ্ন থাকবে, তখন তুমি অতর্কিতে পিছন থেকে তাকে তলোয়ারের আঘাত করে শেষ করে দেবে। আরবাদ সুযোগ বুঝে রাসুল(ﷺ) এর পেছনে চলে এল, কিন্তু খাপ থেকে কিছুতেই তলোয়ার বের করতে পারল না।বার বার চেষ্টা করেও বিফল হল। তখন অকস্মাৎ বজ্রপাত হল এবং ব্জ্র পড়ল পাপিষ্ঠ আরবাদের মাথার উপর। বজ্রাহত হয়ে সে নিমেষেই মারা গেল। ভয় পেয়ে পালিয়ে গেল আমের কিন্তু পালাতে পালাতে সে বলছিল যে সে রণকুশলী লোকদের দিয়ে এই উপত্যকা ভরে ফেলবে [অর্থাৎ রাসুল(ﷺ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা]। পরদিন তার উরুর উপরে একটি বড় ফোঁড়া হয় এবং সে ঘোড়ার পিঠে মৃত্যুবুরণ করে।
(তাফসির মাজহারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৯৮-৩০১)

মহান আল্লাহ তায়ালার  সামনে সবার চাতুরী অচল। যে কোন সময় যে কারো বিরুদ্ধে যে কোন কৌশল তিনি এমন পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে পারেন যে, আঘাত আসার এক মুহুর্ত আগেও সে জানতে পারে না কখন কোন দিক থেকে তার উপর আঘাত আসছে। এ ধরনের একচ্ছত্র শক্তিশালী সত্তা সম্পর্কে যারা না ভেবেচিন্তে এমনি হালকাভাবে আজেবাজে কথা বলে, কে তাদের বুদ্ধিমান বলতে পারে? তাঁর ক্ষমতা ও কৌশল সম্পর্কে কারও কোন সন্দেহ থাকা উচিত নয়। তিনি যখন যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। তাঁর পাকড়াও থেকে কেউই পালিয়ে যেতে পারবে না। [সা’দী] 

সুতরাং যদি তিনিই কেবল বান্দাদের জন্য বৃষ্টি নিয়ে আসেন, তাদের জন্য রিযিকের মৌলিক ব্যবস্থাপনা করেন, তিনিই যদি তাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করেন, সমস্ত বড় বড় সৃষ্টি যেগুলো বান্দাদের মনে ভীতির উদ্রেক করে এবং বিরক্তির সঞ্চার করে তারাও যদি তাঁকেই ভয় পায়, তবে তো তিনিই সবচেয়ে বেশী শক্তিমান। একমাত্র তিনি ইবাদাত পাওয়ার উপযুক্ত। আর তাই পরবর্তী আয়াতে তাকে ডাকার কথা বলা হয়েছে। [সা'দী]

মেঘ, বৃষ্টি, বজ্রপাত এগুলো সবই আল্লাহ কর্তৃক সৃষ্ট প্রাকৃতিক উপাদান। এগুলো দ্বারা আল্লাহ পৃথিবীর পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখেন, মানুষ ও পশু-পাখির খাদ্যের ব্যবস্থা করেন। সেই সাথে ব্জ্রপাতের দ্বারা যে তিনি পাপিষ্ঠদের ধ্বংস করতে সক্ষম, সেকথাও আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে। এমন ঘটনা বাস্তবে ঘটেছে, ইবন আব্বাস(রা) এর বিবরণ থেকে আমরা এমন একটি ঘটনা জানতে পারছি।
(কিছু তথ্য সংগৃহীত)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...