উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
শরীয়তে ব্যবসা বাণিজ্য, ক্রয় বিক্রয় করা জায়েজ।
এ সম্পর্কে আল কুরআনেই বলা হয়েছে,
احل الله البيع وحرم الربا
‘মহান আল্লাহ কেনাবেচাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম’ (সূরা আল বাকারাহ : ২৭৫)।
রাসূল সা: এক ইহুদির কাছ থেকে বাকিতে খাদ্যদ্রব্য কিনেছিলেন এবং তাঁর লৌহবর্ম বন্ধক রেখেছিলেন (সহিহ আল বুখারি)।
★শরীয়তের বিধান অনুযায়ী কিস্তিতে (বাকীতে মেয়াদের ভিত্তিতে) ক্রয়-বিক্রয় করলে নগদের চেয়ে বেশি মূল্য নেওয়া জায়েয আছে।
বাকিতে লাভে পণ্য কেনাবেচা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বলেছেন, ‘কোনো পণ্যের ক্ষেত্রে এ কথা বলায় কোনো অসুবিধা নেই যে, নগদ হলে এত দাম আর বাকিতে হলে এত দাম। তবে ক্রেতা-বিক্রেতার সন্তুষ্টির ভিত্তিতেই তা হতে হবে’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ)।
★হযরত শুবা ইবনুল হাজ্জাজ রাহ. (মৃত্যু : ১৬০ হি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হাকাম ইবনে উতাইবা এবং হাম্মাদ ইবনে আবু সুলাইমকে এক ক্রেতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, সে অন্যের থেকে পণ্য ক্রয় করে আর বিক্রেতা তাকে বলে যে, নগদ মূল্যে কিনলে এত টাকা আর বাকিতে কিনলে এত টাকা। (এতে কোনো অসুবিধা আছে কি?) তারা উভয়ে বললেন, ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে যদি (মজলিস ত্যাগ করার পূর্বে) কোনো একটি (মূল্য) চূড়ান্ত করে নেয় তাহলে এতে কোনো অসুবিধা নেই।
দেখুন : মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২০৮৩৬; জামে তিরমিযী ১/১৪৭।
হজরত তাউস ও আতা রহ: বলেছেন, এ কথা বলায় কোনো অসুবিধা নেই যে, এই কাপড় নগদ হলে এত দাম আর বাকিতে হলে এত দাম। এর যেকোনো একটি গ্রহণ করতে পারবে (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ)।
ইমাম আবু হানিফা রহ: বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির নিকট ১০০ দিনার পায়। উক্ত দিনার পরিশোধের সময় হলে দেনাদার তাকে বলে, তুমি ১০০ দিনার নগদ মূল্যের কোনো পণ্য আমার কাছে ১৫০ দিনারের বিনিময়ে নির্দিষ্ট মেয়াদে বাকিতে বিক্রয় করো। এটা নিশ্চয় বৈধ। কেননা, তারা এমন কোনো শর্ত আরোপ করেনি এবং এমন কিছু বলেনি যার কারণে এ বেচাকেনা ফাসিদ বা নষ্ট হয়ে যাবে।’
আল্লামা সারাখসি র: ও হিদায়া গ্রন্থকার লিখেছেন, বাকিতে বিক্রির ক্ষেত্রে দাম বৃদ্ধি করা ব্যবসায়ীদের সাধারণ রেওয়াজ। এর ভিত্তিতেই ব্যবসা হয়ে থাকে। তাই কেউ কোনো জিনিস বাকিতে কিনে মুরাবাহা করতে চাইলে তা ক্রেতার কাছে স্পষ্ট করে বলে দেয়া দরকার যে, আমি এটা বাকিতে কিনেছি।
ইমাম আবু হানিফা রহ: বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির নিকট ১০০ দিনার পায়। উক্ত দিনার পরিশোধের সময় হলে দেনাদার তাকে বলে, তুমি ১০০ দিনার নগদ মূল্যের কোনো পণ্য আমার কাছে ১৫০ দিনারের বিনিময়ে নির্দিষ্ট মেয়াদে বাকিতে বিক্রয় করো। এটা নিশ্চয় বৈধ। কেননা, তারা এমন কোনো শর্ত আরোপ করেনি এবং এমন কিছু বলেনি যার কারণে এ বেচাকেনা ফাসিদ বা নষ্ট হয়ে যাবে।’
,
★★শরীয়তের বিধান হলো কিস্তিতে ক্রয়-বিক্রয় করলে নগদের চেয়ে বেশি মূল্য নেওয়া জায়েয।
তবে কিস্তির বিক্রির ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত শর্তের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে-
১. পণ্যের মূল্য ও আদায়ের তারিখ সুনির্দিষ্ট হতে হবে।
২. চুক্তির সময় পণ্যের মূল্য চূড়ান্ত হওয়ার পর কিস্তি আদায়ে বিলম্ব বা পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি কারণে পুনরায় মূল্য বৃদ্ধি করা যাবে না।
৩. কিস্তি আদায়ের জন্য পণ্য আটকে রাখা যাবে না; বরং চুক্তির পরই পণ্য ক্রেতাকে বুঝিয়ে দিতে হবে।
(মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী জিদ্দা ৭/২/৩২-৩৬; বাইউত তাকসীত ওয়া আহকামুহু, সুলাইমান আততুরকী পৃষ্ঠা : ২২৮; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছিরা, আল্লামা তাকী উসমানী ১/৭)
,
কিস্তির মেয়াদ কম বেশি হওয়ার কারণে পণ্যের মূল্য কম বেশি করা জায়েয। তবে শর্ত হল, কেনা বেচার সময় মেয়াদ অনুযায়ী একটা মূল্য চূড়ান্ত করে দিতে হবে। অর্থাৎ গ্রাহক যদি পণ্যটি কিস্তিতে নেয় তবে তা কত মাসে পরিশোধ করবে এবং মোট কত টাকা পরিশোধ করবে তা চুক্তির সময়ই নির্ধারণ করে নিতে হবে। বেচাকেনা সম্পন্ন হওয়ার পর কোনো কিস্তি আদায়ে বিলম্ব হলেও মূল্য বাড়ানো যাবে না। অথাৎ পূর্ব নির্ধারিত মূল্য অপরিবর্তীত থাকবে। তাই গ্রাহকের দায়িত্ব হবে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী কিস্তি আদায় করে দেয়া। যেন বিলম্বের কারণে বিক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
(জামে তিরমিযী, হাদীস ১২৩১; আলমাবসূত, সারাখসী ১৩/৭; আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ২/৩৭; রদ্দুল মুহতার ৫/৯৯,মাবসূত ১৩/৮; রদ্দুল মুহতার ৫/১৪২; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআসিরা ১/৭-৮)
,
★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরত " একই পন্য নগদে এক রকম দাম, আর বাকীতে অন্য দামে উপরে উল্লেখিত শর্তের ভিত্তিতে বিক্রয় করা যাবে।
যেমন এক বস্তা চাউল যদি নগদে ক্রয় করি তাহলে ১৩০০ টাকা এবং বাকীতে ক্রয় করে ৬ মাস পরে টাকা দেয় তাহলে ১৫০০ টাকা দিতে হবে।
এই পদ্ধতি উপরে উল্লেখিত শর্তের ভিত্তিতে হলে জায়েজ আছে।