আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
802 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (64 points)
আসসালামু আলাইকুম।
১) ইসলাম অনুযায়ী আত্মীয় কারা করা? বোন জামাই, ভাবি, মামী, চাচী, ফুপা, খালু, ভাতিজি জামাই, ভাতিজার বৌ এরাও কি আত্মীয়দের অন্তর্ভূক্ত?
২) কোন মেয়ে যার কোন ইনকাম নেই, সে যদি শুধু ফোনে প্রতি মাসে বা কয়েক মাস পরপর খালা, খালাতো বোন, চাচাতো বোন, তাদের সন্তানদের সাথে কথা বলে তাহলে কি সে আত্মীয়তার হক আদায় করেছে বলে গন্য হবে?

৩) চাচাতো ও খালাতো ভাইদের সাথেও কি নিয়মিত ফোন করে যোগাযোগ রাখতে হবে?
৪) আত্মীয় স্বজনের হক ও পিতা মাতার হক আদায়ের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানার জন্য কোন কোন বাংলা কিতাব পড়া যেতে পারে?

৫) কোন মেয়ের কাছে তিন হাজার টাকা থাকা অবস্হায় সে যদি কসম ভঙ্গের কাফফারা আদায়ের জন্য তিন দিন রোজা রাখে তাহলে কি কাফফারা আদায় হয়ে যাবে?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

(০১) ইসলামে আত্মীয়তার সম্পর্ক বলতে বুঝায়, মা ও বাবার দিক থেকে রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দেরকে। সুতরাং -
মা, নানী, নানীর মা...দাদী, দাদীর মা... এবং তাদের উর্ধস্তন নারীগণ।
দাদা, দাদার পিতা..., নানা, নানার পিতা... এবং তাদের উর্ধস্তন পুরুষগণ।
ছেলে, মেয়ে, তাদের সন্তান-সন্তুতি এবং তাদের অধ:স্তন ব্যক্তিবর্গ।
ভাই, বোন, তাদের সন্তান-সন্তুতি এবং তাদের অধ:স্তন ব্যক্তিবর্গ।
চাচা, ফুফু, মামা, খালা এবং তাদের সন্তানগণ

এরা সবাই আরহাম বা রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়ের অন্তর্ভূক্ত। এদের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করা জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম কারণ বলে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া আল্লাহ তাআলা বলেন:

ﻭَﺃُﻭﻟُﻮ ﺍﻟْﺄَﺭْﺣَﺎﻡِ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﺃَﻭْﻟَﻰٰ ﺑِﺒَﻌْﺾٍ

“বস্তুতঃ যারা (রক্ত সম্পর্কীয়) আত্নীয়, আল্লাহর বিধান মতে তারা পরস্পর বেশী হকদার।” (সূরা আনফাল: ৭৫)

আর নবী সা. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন কারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না বলে ঘোষণা করেছেন। যেমন,
জুবাইর বিন মুতঈম (রা) থেকে বর্ণিত যে, তিনি নাবী (স) কে বলতে শুনেছেন যে,
( ﻻ ﻳﺪﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻗﺎﻃﻊ ﺍﻟﺮﺣﻢ )
“আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” [বুখারী ও মুসলিম]

এছাড়া ও মর্মে বহু হাদীস রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, স্ত্রীর নিকটাত্মীয়গণ স্বামীর নিকটাত্মীয় নয়। অনুরূপভাবে স্বামীর আত্মীয়গণ স্ত্রীর নিকটাত্মীয় নয়। তবে তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করা এবং তাদের সাথে সদারণ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে এটি ভালো কাজের অন্তর্ভুক্ত এবং এ মাধ্যমে সওয়াব হবে ইনশাআল্লাহ। 
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরত  বোন জামাই, ভাবি, মামী, চাচী, ফুপা, খালু, ভাতিজি জামাই, ভাতিজার বৌ এরা রক্ত সম্পর্কিত  আত্মীয়দের অন্তর্ভূক্ত নয়।
তবে তারা সাধারণ আত্মীয়দের মধ্যে গন্য হবে। 
,

(০২)
শরীয়তের বিধান হলো  বিদ্বেষ পোষন না করে এমনিতেই দেখা সাক্ষাৎ না হওয়ার কারনে আত্মীয়ের সাথে  কথা না হলে কোনো সমস্যা নেই। 
তবে মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে খোজ খবর নেওয়া জরুরি। 
,
আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে যে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে,তা হলোঃ  
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، يَبْلُغُ بِهِ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم قَالَ " لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعُ رَحِمٍ " . - صحيح
জুবাইর ইবনু মুত্বঈম (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

.(বুখারী ৫৯৮৪, মুসলিম ১৯-(২৫৫৫), আবূ দাঊদ ১৬৯৬, তিরমিযী ১৯০৯, সহীহুল জামি‘ ৭৬৭১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৫৪০ সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৪৫, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ২০২৩৪, মুসনাদুল বাযযার ৩৪০৫, আহমাদ ১৬৭৩২, মুসনাদে আবূ ইয়া‘লা ৭৩৯২, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৫৪, শু‘আবুল ঈমান ৭৯৫২, ‘ত্ববারানী’র আল মু‘জামুল কাবীর ১৪৯১, আর মু‘জামুল আওসাত্ব ৯২৮৭।)

কেউ যদি মনে মনে কোনো আত্মীয়ের প্রতি বিদ্বেষ না রাখে, কিন্তু সে হয়ত মাসে একবারও তাদেরকে ফোন করেনা, তাদের সাথে সাক্ষাত হয়না, তবে সে  সম্পর্ক ছিন্নকারীর দলভুক্ত হবেনা।

সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরত কোন মেয়ে যার কোন ইনকাম নেই, সে যদি শুধু ফোনে প্রতি মাসে বা কয়েক মাস পরপর খালা, খালাতো বোন, চাচাতো বোন, তাদের সন্তানদের সাথে কথা বলে,তাদের দুঃখ কষ্টের খবর শুনে,তাদের যথা সম্ভব হেল্প করার চেষ্টা করে,    তাহলে সে আত্মীয়তার হক আদায় করেছে বলে গন্য হবে।
এটাকে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে বলা যাবেনা। 

(০৩) 
চাচাতো ও খালাতো ভাই আপনার গায়রে মাহরাম। 
তাই ত দের সাথে বিনা প্রয়োজনে কথা বলা যাবেনা।
প্রয়োজন হলে ফিতনার আশংকা না থাকলে   কথা বলা যাবে।  
সুতরাং তাদের সাথে  নিয়মিত ফোন করে যোগাযোগ রাখতে হবেনা।

(০৪) 
আত্মীয়তার হকঃ
তাদের হক আদায় করতে বুঝানো হয়েছে যে যথাসম্ভব  তাদের সার্বিক সহযোগিতা করতে হবে। সব সময় তাদের কল্যাণে কাজ করে যেতে হবে।
তাদের ক্ষতি হয় এমন কাজকে তাদের থেকে প্রতিহত করতে হবে। তাদের জন্য ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। লেন-দেন ও যাবতীয় ব্যবহারিক কর্মকাণ্ডে বৈষম্য দূর করতে হবে এবং তাদের ন্যায় সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ তাদের হকগুলো আদায় করতে হবে।

যেমন- অসুস্থদের দেখতে যাওয়া; তাদের হকসমূহের ব্যাপারে সচেতন থাকা; তাদের গোসল দেয়া; জানাযার নামাজ আদায় করা; দাফন-কাফন ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করা।
,
আত্মীয় দের হক সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন 

এখানে দুটি বাংলা কিতাবের নাম উল্লেখ করছিঃ
 
★আত্মীয় স্বজনের হক

প্রতিবেশী ও আত্মীয়- স্বজনের প্রতি সদ্ব্যবহারের লাভ এবং এ বিষয়ে অবহেলাকারীর দুনিয়া ও আখিরাতের লাভ-ক্ষতিসমূহের বিস্তারিত বিবরণ এখানে দেওয়া আছে।

লেখকঃ সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. ,
শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা যাকারিয়া মুহাজেরে মাদানী রহ.

★মাতা-পিতা ও সন্তানের হক
লেখকঃ অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান।
(এই বাংলা কিতাবের পিডিএফ লিংক কমেন্ট বক্সে দেওয়া আছে।) 

(০৫) 
কসমের কাফফারা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনঃ   
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
 
لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ وَلَٰكِن يُؤَاخِذُكُم بِمَا عَقَّدتُّمُ الْأَيْمَانَ ۖ فَكَفَّارَتُهُ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَاكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ ۖ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ ۚ ذَٰلِكَ كَفَّارَةُ أَيْمَانِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْ ۚ وَاحْفَظُوا أَيْمَانَكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ [٥:٨٩

আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অনর্থক শপথের জন্যে; কিন্তু পাকড়াও করেন ঐ শপথের জন্যে যা তোমরা মজবুত করে বাধ। অতএব, এর কাফফরা এই যে, দশজন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করবে; মধ্যম শ্রেনীর খাদ্য যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে দিয়ে থাক। অথবা, তাদেরকে বস্তু প্রদান করবে অথবা, একজন ক্রীতদাস কিংবা দাসী মুক্ত করে দিবে। যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে না, সে তিন দিন রোযা রাখবে। এটা কাফফরা তোমাদের শপথের, যখন শপথ করবে। তোমরা স্বীয় শপথসমূহ রক্ষা কর এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নির্দেশ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। {সূরা মায়িদা-৮৯}

উক্ত আয়াতের আলোকে কসমের কাফফারা হল-

ব্যক্তি তার পরিবারকে নিয়ে মধ্যম ধরণের যে খাবার গ্রহণ করে এমন খাবার দশজন মিসকিনকে দুই বেলা খাইয়ে দিবে। অথবা দুই জোড়া কাপড় দিয়ে দিবে। যা সদকায়ে ফিতির পরিমাণ টাকা একদিন খরচ ধরা হবে। সেই হিসেবে সদকায়ে ফিতর পরিমাণকে দশ দিয়ে গুণ দিলে যত টাকা হয়, তাই হবে কসমের কাফফারা। যেমন ধরুন যে গত রোযায় সদকায়ে ফিতির ছিল ৬০ টাকা। তো সেই হিসেবে ৬০০[ ছয় শত টাকা] হবে কসমের কাফফারা। এটি বর্তমান মূল্য হিসেবে ধরা হয়েছে। আগে পরে পরিবর্তিত হতে পারে।

যে ব্যক্তি এর সামর্থ রাখে না, সে তিন দিন রোযা রাখবে।
,
সুতরাং কোন মেয়ের কাছে তিন হাজার টাকা থাকে,তাহলে তাকে ৬০০ টাকা কসমের কাফফারা আদায় করতে হবে।
এই টাকা  থাকা অবস্থায় সে যদি কসম ভঙ্গের কাফফারা আদায়ের জন্য তিন দিন রোজা রাখে তাহলে কাফফারা আদায় হয়ে যাবে কিনা এই ব্যাপারে উলামায়ে কেরামদের মতবিরোধ রয়েছে।
কিছু উলামায়ে কেরামগন বলেছেন যে কাফফারা আদায় হয়ে যাবে।
কিছু উলামায়ে কেরামগন বলেছেন যে কাফফারা আদায় হবেনা।
,
তাই সতর্কতামূলক তাকে ৬০০ টাকা কসমের কাফফারা আদায় করতে হবে।
(টাকার পরিমান বাজার দর হিসেবে নির্ধারন করতে হবে।)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...