আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
248 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (9 points)
retagged by

আসসালামু আ'লাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহ

আমি অনেকদিন ধরে মানসিকভাবে অনেক কষ্টে আছি । আমি প্রায় ২৫ থেকে ২৬ বছর পর্যন্ত ইসলাম চর্চা থেকে দূরে ছিলাম। আমি  তেমন নামাজ পড়তাম না, শুক্রবারের নামাজও খুব একটা পড়তাম না। আর কত গুনাহ যে করেছি নাওজুবিল্লাহ। আল্লাহ্‌ মাফ করুন। এসব বলা এই জন্য যে আমার ঈমানের অবস্থা কেমন ছিল জানানোর  জন্য। হেদায়েত পাওয়ার পর আলহামদুলিল্লাহ নামাজ কখনও ইচ্ছাকৃত কাজা হয় না , প্রায় সব ধরনের আমল আমি করার চেষ্টা করি । পরিপূর্ণভাবে ইসলাম চর্চা শুরু করার পর থেকে মাথায় খারাপ খারাপ চিন্তা আসা শুরু করে যা পূর্বে তেমন একটা আসতো না । প্রথম দুই থেকে আড়াই বছর আল্লাহ্‌ সম্পর্কে খুবই ভয়ঙ্কর খারাপ চিন্তা আসতো । আলহামদুলিল্লাহ্‌ সেটা অনেকটা কমেছে । পূর্বে খারাপ কিছু মাথায় আসলে অথবা ভুল করে খারাপ কিছু উচ্চারণ করলে কালিমা পড়ে ঈমান নবায়ন করে ফেলতাম। আমার বিয়ের আগে পর্যন্ত কত বার যে ঈমান নবায়ন করছি তার হিসাব নাই। পড়ে জানতে পারি ভুল করে, হঠাৎ মুখ ফসকে , চিন্তিত অবস্থায় কুফরি করলে ঈমান যায় না ।

আমার বিয়ের পরেও অনেকবারই মুখ ফসকে হঠাৎ করে কুফরি কথা উচ্চারণ হয়ে যায় । অনেকটাই বেখায়ালে হয়ে যায়। আমি সতর্ক থাকলে এমনটা হতো না । বিয়ের পর কুফরি উচ্চারণ নিয়ে সিনিয়র মুফতির সাথে কথা বলেছি । তিনি বলেছেন আপনার ঈমান এখনও ঠিক আছে , বিয়েও ঠিক আছে যেহেতু আপনার ভুল করে কুফরি উচ্চারণ হইছে। তিনি কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন।

কিন্তু এখনও আমার ঈমান ও বিবাহিত জীবন নিয়ে  প্রচণ্ড ভয়ে থাকি । আমি এখন কথা বলতে ভয় পাই । একটু আনমনা হয়ে কথা বললেই মনে হয় এই বুঝি কুফরি কথা বলে ফেললাম । আমি প্রচণ্ড ওয়াসওয়াসা আক্রান্ত রোগী । কোনো খারাপ চিন্তা আসলে প্রায় সারাদিন ঐ চিন্তা মাথায় ঘুরে।

 যাইহোক নিচের প্রশ্নের গুলো কোনো অভিজ্ঞ মুফতি সাহেব উত্তর দিয়ে আমার কষ্টটা কমিয়ে দিবেন । ইন শা আল্লাহ্‌ ।

 

১। আমি কিছুদিন ধরে IOM এ বিভিন্ন জনের লেখা পড়তেছি । দেখলাম ইসলামের বিধান , আল্লাহ্‌ অথবা রসূল (সঃ) সম্পর্কে কেও খারাপ কিছু বললে কাফির হয়ে যায় । এসব পড়ার পর আমার মনে প্রশ্ন আসতেছে আমিও কি কটাক্ষ করে কোনো খারাপ কিছু বলেছি নাকি । উচ্চারণের বিষয়টা নিশ্চিত হতে পারতেছি না । অনেকদিন আগে বাথরুমে একটা খারাপ চিন্তা আসছিল রসুল(সঃ) সম্পর্কে । একটু একটূ মনে হচ্ছে যে তখন উচ্চারণ হয় নাই । আমি যেহেতু ১০০% নিশ্চিত হতে পারতেছি না সেক্ষেত্রে কি আমার ঈমান ঠিক আছে ?  

২। কিছুদিন আগে রোস্তারাতে খাওয়ার সময় আমার মাড়ি দিয়ে রক্ত বাহির হয় । কিছুক্ষন কুলি করার পর রক্ত পড়া বন্ধ না হওয়ায় ঐ অবস্থায় খাবার খাই । তবে তখন মনে হারাম হালালের বিষয় চলে আসছিল । আমি যদি আগে জানতাম না মাড়ি থেকে নিঃসৃত রক্ত খাওয়া গুনাহের কাজ তাহলে রক্ত খাবারের সাথে খাইতাম না । হালালকে হারাম মনে করা আর হারামকে হালাল মনে করে খেয়েছি নাকি নিশ্চিত হতে পারতেছি না। আমিতো হারামের বিষয়টা নিশ্চিতই ছিলাম না । এক্ষেত্রে কি আমার ঈমান ঠিক আছে ?  

৩। আমার মন গতকাল অনেকবার বলছে, ‘ইসলাম থেকে বাহির হয়ে যাই’ অথবা অনেকটা এই রকমি অন্য কিছু  । আমি বিষয়টা খেয়াল করে আল্লাহ্‌কে বলেছি, আল্লাহ্‌ আমাকে ইসলাম থেকে বাহির হয়ে যাওয়া থেকে হেফাজত করো । ইসলাম নিয়ে দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার তওফিক দান করো । ইসলামের প্রতিটি বিধানের প্রতি ঈমান ও বিশ্বাস আছে । ‘ইসলাম থেকে বাহির হয়ে যাই’ উচ্চারণ হইছে নাকি চিন্তা হচ্ছে। প্রায় নিশ্চিত আমি শুনি নাই । মনে হচ্ছে মনেই ছিল। এক্ষেত্রে কি আমার ঈমান ঠিক আছে ?  

৪। কুফরি উচ্চারণের ইচ্ছা ছিল না , তারপরও আল্লাহ্‌ ও রসূল(সঃ) সম্পর্কে ভুল করে অনিচ্ছাকৃতভাবে খারাপ কিছু বললেও কী কাফির হয়ে যায় ? আল্লাহ্‌ অনিচ্ছাকৃত গুনাহের কাজ মাফ করে দেন কুরআনে ও হাদিসে অনেক কিছুই আছে। একটা খেয়ালে গুনাহের কাজ একটা বেখায়ালে অসতর্কতাবশত গুনাহের কাজ ,দুটি পদ্ধতি ভিন্ন। কেও বেখায়ালে, অসতর্কতাবশত, অধিক চিন্তিত অবস্থায় ভুল করে কুফরি করলে কি ঈমান ঠিক থাকে ?

৫।  কুফরি উচ্চারণ হওয়ার পর কেও যদি বুঝতে পারে বাক্যটা কুফুরি ও কথাটায় অটল না থেকে আল্লাহ্‌র কাছে মাফ চায় তাহলে কি আল্লাহ্‌ মাফ করে দিবেন ? সে যদি  কুফরি বিশ্বাস করতো তাহলে সে মুখ নিঃসৃত কুফরি বাক্য অটল থাকতো , মনে অনুশোচনা আসতো না , পেরেশানি আসতো na । কিন্তু যার অনুশোচনা আসে , খারাপ লাগে কষ্ট লাগে তার কি এগুলো ঈমান থাকার লক্ষন ? 

৬। আমি ইসলামকে পরিপূর্ণ জীবনবিধান হিসাবে মেনে নিয়েছি। হেদায়েত পাওয়ার পর সব সময় আমলে জোর দিয়েছি । খারাপ সঙ্গ ত্যাগ করেছি। অনেক অনেক খারাপ কিছু ত্যাগ করেছি। কোনো গুনাহ হয়ে গেলে লজ্জিত, অনুতপ্ত ও পেরেশানিতে অস্থির হয়েছি । আমার সাথে উপরোক্ত এতো কিছু হওয়ার পরও আমি কীভাবে ডিসিশন নিবো আমার ঈমান আছে কি নাই ? আমি কিছুই বুঝতে পারতেছি  না ।

মুফতি সাহেব আমার অস্থিরতা দূর করতে সাহায্য করুন ।

 

 

1 Answer

0 votes
by (709,320 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : ما نهيتكم عنه ، فاجتنبوه ، وما أمرتكم به فأتوا منه ما استطعتم ، فإنما أهلك الذين من قبلكم كثرة مسائلهم واختلافهم على أنبيائهم . رواه البخاري ومسلم .
আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছি যে,তিনি বলেন, আমি তোমাদেরকে যে সমস্ত জিনিষ থেকে নিষেধ করেছি, সে সমস্ত জিনিষ থেকে বিরত থাকো,এবং যে সমস্ত জিনিষের আদেশ করেছি, যথাসম্ভব সেগুলো পালন করার চেষ্টা করো। তোমাদের পূর্ববর্তীগণ তাদের অধিক প্রশ্ন এবং মতপার্থক্যর কারণেই ধংস হয়েছে।(বোখারী-মুসলিম)

https://www.ifatwa.info/1379 নং ফাতাওয়ায় বলেছি যে,
তালাকের ওয়াসওয়াসা আসলে মাথা নাড়ালে তালাক পতিত হবে না।
হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢ : َ ( ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺗَﺠَﺎﻭَﺯَ ﻟِﻲ ﻋَﻦْ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﻣَﺎ ﻭَﺳْﻮَﺳَﺖْ ﺑِﻪِ ﺻُﺪُﻭﺭُﻫَﺎ ﻣَﺎ ﻟَﻢْ ﺗَﻌْﻤَﻞْ ﺃَﻭْ ﺗَﻜَﻠَّﻢ
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা আমার খাতিরে আমার উম্মতের অন্তরে চলে আসা ওয়াসওয়াসা(শয়তানি প্ররোচনা) বিষয়ে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ/শাস্তি প্রদাণ করবেন না।যতক্ষণ না সে কথা বা কাজের মাধ্যমে সেটাকে বাস্তব রূপ দিচ্ছে। (সহীহ বোখারী-২৩৯১,সহীহ মুসলিম-১২৭)

সুপ্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
(১)
জ্বী, আপনার ঈমানে কোনো সমস্যা হবে না।

(২)
না জেনে রক্ত খাওয়ার দরুণ আপনার কোনো গোনাহ হবে না।

(৩)
জ্বী, আপনার ঈমান ঠিক আছে।

(৪)
প্রশ্নের বিবরণ মতে ঈমানে কোনো সমস্যা হবে না।

(৫)
প্রশ্নের বিবরণ মতে ঐ ব্যক্তির ঈমানে কোনো সমস্যা হবে না।

(৬)
আপনার ঈমান পরিপূর্ণ রয়েছে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (709,320 points)
সংযোজন ও সংশোধন করা হয়েছে।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...