আসসালামু আ'লাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহ
আমি অনেকদিন ধরে মানসিকভাবে অনেক কষ্টে আছি । আমি প্রায় ২৫ থেকে ২৬ বছর পর্যন্ত ইসলাম চর্চা থেকে দূরে ছিলাম। আমি তেমন নামাজ পড়তাম না, শুক্রবারের নামাজও খুব একটা পড়তাম না। আর কত গুনাহ যে করেছি নাওজুবিল্লাহ। আল্লাহ্ মাফ করুন। এসব বলা এই জন্য যে আমার ঈমানের অবস্থা কেমন ছিল জানানোর জন্য। হেদায়েত পাওয়ার পর আলহামদুলিল্লাহ নামাজ কখনও ইচ্ছাকৃত কাজা হয় না , প্রায় সব ধরনের আমল আমি করার চেষ্টা করি । পরিপূর্ণভাবে ইসলাম চর্চা শুরু করার পর থেকে মাথায় খারাপ খারাপ চিন্তা আসা শুরু করে যা পূর্বে তেমন একটা আসতো না । প্রথম দুই থেকে আড়াই বছর আল্লাহ্ সম্পর্কে খুবই ভয়ঙ্কর খারাপ চিন্তা আসতো । আলহামদুলিল্লাহ্ সেটা অনেকটা কমেছে । পূর্বে খারাপ কিছু মাথায় আসলে অথবা ভুল করে খারাপ কিছু উচ্চারণ করলে কালিমা পড়ে ঈমান নবায়ন করে ফেলতাম। আমার বিয়ের আগে পর্যন্ত কত বার যে ঈমান নবায়ন করছি তার হিসাব নাই। পড়ে জানতে পারি ভুল করে, হঠাৎ মুখ ফসকে , চিন্তিত অবস্থায় কুফরি করলে ঈমান যায় না ।
আমার বিয়ের পরেও অনেকবারই মুখ ফসকে হঠাৎ করে কুফরি কথা উচ্চারণ হয়ে যায় । অনেকটাই বেখায়ালে হয়ে যায়। আমি সতর্ক থাকলে এমনটা হতো না । বিয়ের পর কুফরি উচ্চারণ নিয়ে সিনিয়র মুফতির সাথে কথা বলেছি । তিনি বলেছেন আপনার ঈমান এখনও ঠিক আছে , বিয়েও ঠিক আছে যেহেতু আপনার ভুল করে কুফরি উচ্চারণ হইছে। তিনি কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন।
কিন্তু এখনও আমার ঈমান ও বিবাহিত জীবন নিয়ে প্রচণ্ড ভয়ে থাকি । আমি এখন কথা বলতে ভয় পাই । একটু আনমনা হয়ে কথা বললেই মনে হয় এই বুঝি কুফরি কথা বলে ফেললাম । আমি প্রচণ্ড ওয়াসওয়াসা আক্রান্ত রোগী । কোনো খারাপ চিন্তা আসলে প্রায় সারাদিন ঐ চিন্তা মাথায় ঘুরে।
যাইহোক নিচের প্রশ্নের গুলো কোনো অভিজ্ঞ মুফতি সাহেব উত্তর দিয়ে আমার কষ্টটা কমিয়ে দিবেন । ইন শা আল্লাহ্ ।
১। আমি কিছুদিন ধরে IOM এ বিভিন্ন জনের লেখা পড়তেছি । দেখলাম ইসলামের বিধান , আল্লাহ্ অথবা রসূল (সঃ) সম্পর্কে কেও খারাপ কিছু বললে কাফির হয়ে যায় । এসব পড়ার পর আমার মনে প্রশ্ন আসতেছে আমিও কি কটাক্ষ করে কোনো খারাপ কিছু বলেছি নাকি । উচ্চারণের বিষয়টা নিশ্চিত হতে পারতেছি না । অনেকদিন আগে বাথরুমে একটা খারাপ চিন্তা আসছিল রসুল(সঃ) সম্পর্কে । একটু একটূ মনে হচ্ছে যে তখন উচ্চারণ হয় নাই । আমি যেহেতু ১০০% নিশ্চিত হতে পারতেছি না সেক্ষেত্রে কি আমার ঈমান ঠিক আছে ?
২। কিছুদিন আগে রোস্তারাতে খাওয়ার সময় আমার মাড়ি দিয়ে রক্ত বাহির হয় । কিছুক্ষন কুলি করার পর রক্ত পড়া বন্ধ না হওয়ায় ঐ অবস্থায় খাবার খাই । তবে তখন মনে হারাম হালালের বিষয় চলে আসছিল । আমি যদি আগে জানতাম না মাড়ি থেকে নিঃসৃত রক্ত খাওয়া গুনাহের কাজ তাহলে রক্ত খাবারের সাথে খাইতাম না । হালালকে হারাম মনে করা আর হারামকে হালাল মনে করে খেয়েছি নাকি নিশ্চিত হতে পারতেছি না। আমিতো হারামের বিষয়টা নিশ্চিতই ছিলাম না । এক্ষেত্রে কি আমার ঈমান ঠিক আছে ?
৩। আমার মন গতকাল অনেকবার বলছে, ‘ইসলাম থেকে বাহির হয়ে যাই’ অথবা অনেকটা এই রকমি অন্য কিছু । আমি বিষয়টা খেয়াল করে আল্লাহ্কে বলেছি, আল্লাহ্ আমাকে ইসলাম থেকে বাহির হয়ে যাওয়া থেকে হেফাজত করো । ইসলাম নিয়ে দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার তওফিক দান করো । ইসলামের প্রতিটি বিধানের প্রতি ঈমান ও বিশ্বাস আছে । ‘ইসলাম থেকে বাহির হয়ে যাই’ উচ্চারণ হইছে নাকি চিন্তা হচ্ছে। প্রায় নিশ্চিত আমি শুনি নাই । মনে হচ্ছে মনেই ছিল। এক্ষেত্রে কি আমার ঈমান ঠিক আছে ?
৪। কুফরি উচ্চারণের ইচ্ছা ছিল না , তারপরও আল্লাহ্ ও রসূল(সঃ) সম্পর্কে ভুল করে অনিচ্ছাকৃতভাবে খারাপ কিছু বললেও কী কাফির হয়ে যায় ? আল্লাহ্ অনিচ্ছাকৃত গুনাহের কাজ মাফ করে দেন কুরআনে ও হাদিসে অনেক কিছুই আছে। একটা খেয়ালে গুনাহের কাজ একটা বেখায়ালে অসতর্কতাবশত গুনাহের কাজ ,দুটি পদ্ধতি ভিন্ন। কেও বেখায়ালে, অসতর্কতাবশত, অধিক চিন্তিত অবস্থায় ভুল করে কুফরি করলে কি ঈমান ঠিক থাকে ?
৫। কুফরি উচ্চারণ হওয়ার পর কেও যদি বুঝতে পারে বাক্যটা কুফুরি ও কথাটায় অটল না থেকে আল্লাহ্র কাছে মাফ চায় তাহলে কি আল্লাহ্ মাফ করে দিবেন ? সে যদি কুফরি বিশ্বাস করতো তাহলে সে মুখ নিঃসৃত কুফরি বাক্য অটল থাকতো , মনে অনুশোচনা আসতো না , পেরেশানি আসতো na । কিন্তু যার অনুশোচনা আসে , খারাপ লাগে কষ্ট লাগে তার কি এগুলো ঈমান থাকার লক্ষন ?
৬। আমি ইসলামকে পরিপূর্ণ জীবনবিধান হিসাবে মেনে নিয়েছি। হেদায়েত পাওয়ার পর সব সময় আমলে জোর দিয়েছি । খারাপ সঙ্গ ত্যাগ করেছি। অনেক অনেক খারাপ কিছু ত্যাগ করেছি। কোনো গুনাহ হয়ে গেলে লজ্জিত, অনুতপ্ত ও পেরেশানিতে অস্থির হয়েছি । আমার সাথে উপরোক্ত এতো কিছু হওয়ার পরও আমি কীভাবে ডিসিশন নিবো আমার ঈমান আছে কি নাই ? আমি কিছুই বুঝতে পারতেছি না ।
মুফতি সাহেব আমার অস্থিরতা দূর করতে সাহায্য করুন ।