আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহ,
'আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী ব্যক্তি জাহান্নামী' কমবেশি হতে পারে,তবে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এরকমই একটি হাদিস আমার জানামতে রয়েছে। এ বিষয়টা নিয়েই আমার প্রশ্ন।তা হলোঃ
আমার একজন খালু। যিনি সম্পর্কে বলা চলে চাচা/ কাকাও হন। আমি যখন ছোট ছিলাম,তখন থেকেই পরিলক্ষিত হত যে, আমার পরিবারের সাথে তার ঝগড়া হতোই। আবার ঠিক হলে, আবার ঝগড়া হত। এবং আমার আম্মীজানের সাথেই মূলত হত। তো একবার কোনো এক বিষয়ে (যা আমার মনে নেই,তবে প্রয়োজন পড়লে আমাকে জানিয়েন আম্মীর থেকে জেনে,আবার আপনাকে জানানোর চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ) ফোনে আম্মীজানের সাথে খালুর প্রচুর বিতর্ক চলছিল। এবং এক পর্যায়ে (ফোন লাউডস্পিকারে থাকার কারনে আমি শুনতে পেলাম) আমার খালু সর্বপ্রথম আমার আম্মীকে বড্ড খারাপ গালিগালাজ করে এবং আম্মীজানের আম্মা আব্বাকে নিয়েও জগন্য বাজে কথা বলতে শুরু করে। তখন আম্মি আর বেশি কথা না বলে,ফোন রেখে দেয়। এবং এরপর থেকে খালুজানের সাথে আম্মীর আর কখনো যোগাযোগ হয়নি আর করেওনি। তো আলহামদুলিল্লাহ,আম্মীজান তো এখন পরিপূর্ণ পর্দা করার চেষ্টা করে যার কারনে খালুর সাথে ঔ মূহুর্তে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়াটা এখনকার জন্য উপকারী হয়েছে।
যদিও খালুর সাথে সম্পর্ক আম্মীর সাথে ছিন্ন হয়,তবে আমি এবং আমার পরিবারের অন্য সদস্যরা যোগাযোগ রাখত। এবং আমি যখন তার সাথে ফোনে কথা বলতাম তখন তিনি আমার কাছে আমার আম্মীর বিষয়ে বলত যে,তোর আম্মু ভালো না, হিংসুক ইত্যাদি ইত্যাদি। তো যাই হক,আমি বিষয়টাকে একটু ইগনোর করতাম। কিন্তু আমার বোনের জন্য একবার তিনি (খালু) এক পাত্রের খোঁজ দেন। তো আমি,আমার বোন, আমার আব্বা তার বাসায় গেলাম। সেখানেই পাত্রের সাথে বোনের দেখা দেখি করানো হল। সবকিছুই ঠিক ছিল। আমাদের সবার পছন্দ হয়েছিল,এমনকি আম্মীরও পছন্দ হয়েছিল। তবে আম্মী বিয়েটাতে তাড়াহুড়ো করতে চাচ্ছিলো না। আরেকটু সময় নিয়ে যাচাই বাচাই করতে চাচ্ছিল। ছেলে পক্ষ থেকেও রাজি ছিল। কিন্তু এদিকে আমার খালু তিনি বড্ড তাড়াহুড়ো করতে শুরু করলেন। তো আমরাও চাচ্ছিলাম একটু সময় নিতে। কারন ছেলে বিদেশ থাকত, সেখানে তার নাকি দোকান আছে।দোকান কি তার নিজের নাকি,সেই দোকানে তিনি কাজ করেন... ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয় যাচাই বাছাই করার প্রয়োজন তো আছেই। ছেলে আমাদের সবার পছন্দ হয়,তবুও আম্মী বলেছিল যে, 'ছেলে কালো,আর আসলেই দোকান নিজের কিনা' এই কথা আমার খালুর কাছে যায়। এদিকে সবাই আমরা বিয়ের জন্য কোনো হাঁ বা না কিছু বলিনি। আমি ইস্তেখারার আমল করতে চাচ্ছিলাম এবং যাচাই বাচাই করার ও দরকার। ছেলের আচার আচরণ সবকিছু ভালো লেগেছিল সবার। কিন্তু আমাদের কোনো মতামত না দেবার আগেই আমার খালু যেয়ে তাদের কাছে বলে দিয়েছে যে, 'মেয়েপক্ষ রাজি না'। এই তো এক বিষয়। দ্বিতীয় হলো, সেই পরিবারে গিয়ে আমার আম্মীর সম্পর্কে বড্ড বাজে বাজে কথা বলেছে। এবং বলতেছে 'ওর (আমার বোনের) মা যে কি করে তা তো আর বললাম না...' এই কথা বলার সময় আমার নানিও ছিল সেখানে।নানি তাকে জিজ্ঞেস করছে, 'আমার মেয়ে কি এমন করছে?' তখন আর কিছু বলে না, চুপচাপ।
যাই হক, যখন আমার মায়ের সম্পর্কে অন্য জায়গায় উল্টা পাল্টা কথা বলা শুরু করে এবং আমার বোনের এই বিয়ের বিষয়ে এরকম কাজ করে তখন থেকে উনার সাথে আমি যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছি। যে ব্যক্তি আমার আম্মীর সম্পর্কে বাজে বাজে কথা বলে,তার সাথে সুসম্পর্ক কিভাবে হতে পারে? এই আমার ভাবনা। সেই ভাবনা থেকে উনার এবং উনার পরিবারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন।
কিন্তু এই মানুষটা আমার বড্ড প্রিয় ছিল। আমার স্মরনে আছে,ছোটবেলায় স্বপ্নে এই মানুষটাকে একবার লাশবহনের খাটে শুয়ে থাকতে দেখে খুব খারাপ লাগে। অর্থাৎ বিচ্ছেদের চিন্তায় আমার চোখ থেকে অঝরে পানি ঝরতে থাকে। আমি স্বপ্নেও কান্না করি এবং ঘুম ভেঙ্গে যাবার পরেও কান্না করি। ছোটবেলা থেকে এখনো আমাকে খুব আদর করে এবং ভালোবাসে। কিন্তু তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হবার জন্য ভিতরে কোনো খারাপ লাগা নেই। কারন তিনি যা-ই করুক আমার মায়ের থেকে উর্ধের তো তিনি নন। আমার মাকে যে পরিমাণ ভালোবাসি, তা তো তার সমতুল্য কখনো নয়। সেই মায়ের সম্পর্কে বাজে কথা বলবে আর আমি সেই ব্যক্তির সাথে সুসম্পর্ক রাখব তাতো কোনো বিবেকবান ব্যক্তির কাজ হতে পারে না সম্ভবত। এবং আমার আম্মীজান তিনি আমাকে উনার সাথে কথা বলতে নিষেধ করেছেন।
হযরতওয়ালা,জানার ছিল আপনার কাছে এই যে, ঔ ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার কারনে আমি কি জাহান্নামী হব? এবং তার সাথে সম্পর্কছিন্ন করা কি গুনাহের কাজ হচ্ছে? আমার খালার সাথে এবং খালার ছেলের সাথে যোগযোগ না থাকাটাও কি শরীয়তের দৃষ্টিতে ভুল হচ্ছে?
(খালার সাথেও আম্মীর সম্পর্ক নেই। কারন আমার খালা তার স্বামীর ভুলটাকে স্বীকারই করেনা। তার বোনের (অর্থাৎ আমার আম্মীর) পক্ষে কখনো থাকে না। এই বিষয়ে সম্ভবত কষ্ট পেয়ে তার সাথে যোগাযোগ রাখেনা। তবে খালাতো ভাই, বোনদের সাথে যোগাযোগ করে।)
বিশেষভাবে বলতে চাই, আমি আল্লহ পাকের মেহেরবানীতে দ্বীনের হুকুম মতো পুরাপুরি চলার চেষ্টা করি। নিজের জীবনকে সুন্নতের আলোকে গড়ার চেষ্টা করি। যতটুকু ওলামাদের সহবতে যাবার বরকতে বা দ্বীনি কিতাবাদী পড়ার কারনে জানতে পেরেছি,তার উপর পরিপূর্ণ আমল করার চেষ্টা করি। আমার পরিবারেও দ্বীনের হুকুম মতো চালানোর চেষ্টা করি। যেহেতু বড্ড এলেমের সংকীর্ণতা তাই এ বিষয়টিতে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের ঠিকানা জাহান্নামী করে ফেললাম নাকি,সেই ভয়ে আপনার নিকটে প্রশ্ন করা। জানালে বড্ড উপকার হত ইনশাআল্লাহ।
জাযাকাল্লহু খয়রন, হযরতওয়ালা।