আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
220 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (2 points)
closed by

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহ,

 

'আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী ব্যক্তি জাহান্নামী' কমবেশি হতে পারে,তবে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এরকমই একটি হাদিস আমার জানামতে রয়েছে। এ বিষয়টা নিয়েই আমার প্রশ্ন।তা হলোঃ

 

আমার একজন খালু। যিনি সম্পর্কে বলা চলে চাচা/ কাকাও হন। আমি যখন ছোট ছিলাম,তখন থেকেই পরিলক্ষিত হত যে, আমার পরিবারের সাথে তার ঝগড়া হতোই। আবার ঠিক হলে, আবার ঝগড়া হত। এবং আমার আম্মীজানের সাথেই মূলত হত। তো একবার কোনো এক বিষয়ে (যা আমার মনে নেই,তবে প্রয়োজন পড়লে আমাকে জানিয়েন আম্মীর থেকে জেনে,আবার আপনাকে জানানোর চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ) ফোনে আম্মীজানের সাথে খালুর প্রচুর বিতর্ক চলছিল। এবং এক পর্যায়ে (ফোন লাউডস্পিকারে থাকার কারনে আমি শুনতে পেলাম) আমার খালু সর্বপ্রথম আমার আম্মীকে বড্ড খারাপ গালিগালাজ করে এবং আম্মীজানের আম্মা আব্বাকে নিয়েও জগন্য বাজে কথা বলতে শুরু করে। তখন আম্মি আর বেশি কথা না বলে,ফোন রেখে দেয়। এবং এরপর থেকে খালুজানের সাথে আম্মীর আর কখনো যোগাযোগ হয়নি আর করেওনি। তো আলহামদুলিল্লাহ,আম্মীজান তো এখন পরিপূর্ণ পর্দা করার চেষ্টা করে যার কারনে খালুর সাথে ঔ মূহুর্তে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়াটা এখনকার জন্য উপকারী হয়েছে। 

 

যদিও খালুর সাথে সম্পর্ক আম্মীর সাথে ছিন্ন হয়,তবে আমি এবং আমার পরিবারের অন্য সদস্যরা যোগাযোগ রাখত। এবং আমি যখন তার সাথে ফোনে কথা বলতাম তখন তিনি আমার কাছে আমার আম্মীর বিষয়ে বলত যে,তোর আম্মু ভালো না, হিংসুক ইত্যাদি ইত্যাদি। তো যাই হক,আমি বিষয়টাকে একটু ইগনোর করতাম। কিন্তু আমার বোনের জন্য একবার তিনি (খালু) এক পাত্রের খোঁজ দেন। তো আমি,আমার বোন, আমার আব্বা তার বাসায় গেলাম। সেখানেই পাত্রের সাথে বোনের দেখা দেখি করানো হল। সবকিছুই ঠিক ছিল। আমাদের সবার পছন্দ হয়েছিল,এমনকি আম্মীরও পছন্দ হয়েছিল। তবে আম্মী বিয়েটাতে তাড়াহুড়ো করতে চাচ্ছিলো না। আরেকটু সময় নিয়ে যাচাই বাচাই করতে চাচ্ছিল। ছেলে পক্ষ থেকেও রাজি ছিল। কিন্তু এদিকে আমার খালু তিনি বড্ড তাড়াহুড়ো করতে শুরু করলেন। তো আমরাও চাচ্ছিলাম একটু সময় নিতে। কারন ছেলে বিদেশ থাকত, সেখানে তার নাকি দোকান আছে।দোকান কি তার নিজের নাকি,সেই দোকানে তিনি কাজ করেন... ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয় যাচাই বাছাই করার প্রয়োজন তো আছেই। ছেলে আমাদের সবার পছন্দ হয়,তবুও আম্মী বলেছিল যে, 'ছেলে কালো,আর আসলেই দোকান নিজের কিনা' এই কথা আমার খালুর কাছে যায়। এদিকে সবাই আমরা বিয়ের জন্য কোনো হাঁ বা না কিছু বলিনি। আমি ইস্তেখারার আমল করতে চাচ্ছিলাম এবং যাচাই বাচাই করার ও দরকার। ছেলের আচার আচরণ সবকিছু ভালো লেগেছিল সবার। কিন্তু আমাদের কোনো মতামত না দেবার আগেই আমার খালু যেয়ে তাদের কাছে বলে দিয়েছে যে, 'মেয়েপক্ষ রাজি না'। এই তো এক বিষয়। দ্বিতীয় হলো, সেই পরিবারে গিয়ে আমার আম্মীর সম্পর্কে বড্ড বাজে বাজে কথা বলেছে। এবং বলতেছে 'ওর (আমার বোনের) মা যে কি করে তা তো আর বললাম না...' এই কথা বলার সময় আমার নানিও ছিল সেখানে।নানি তাকে জিজ্ঞেস করছে, 'আমার মেয়ে কি এমন করছে?' তখন আর কিছু বলে না, চুপচাপ। 

 

যাই হক, যখন আমার মায়ের সম্পর্কে অন্য জায়গায় উল্টা পাল্টা কথা বলা শুরু করে এবং আমার বোনের এই বিয়ের বিষয়ে এরকম কাজ করে তখন থেকে উনার সাথে আমি যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছি। যে ব্যক্তি আমার আম্মীর সম্পর্কে বাজে বাজে কথা বলে,তার সাথে সুসম্পর্ক কিভাবে হতে পারে? এই আমার ভাবনা। সেই ভাবনা থেকে উনার এবং উনার পরিবারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন।

 

কিন্তু এই মানুষটা আমার বড্ড প্রিয় ছিল। আমার স্মরনে আছে,ছোটবেলায় স্বপ্নে এই মানুষটাকে একবার লাশবহনের খাটে শুয়ে থাকতে দেখে খুব খারাপ লাগে। অর্থাৎ বিচ্ছেদের চিন্তায় আমার চোখ থেকে অঝরে পানি ঝরতে থাকে। আমি স্বপ্নেও কান্না করি এবং ঘুম ভেঙ্গে যাবার পরেও কান্না করি। ছোটবেলা থেকে এখনো আমাকে খুব আদর করে এবং ভালোবাসে। কিন্তু তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হবার জন্য ভিতরে কোনো খারাপ লাগা নেই। কারন তিনি যা-ই করুক আমার মায়ের থেকে উর্ধের তো তিনি নন। আমার মাকে যে পরিমাণ ভালোবাসি, তা তো তার সমতুল্য কখনো নয়। সেই মায়ের সম্পর্কে বাজে কথা বলবে আর আমি সেই ব্যক্তির সাথে সুসম্পর্ক রাখব তাতো কোনো বিবেকবান ব্যক্তির কাজ হতে পারে না সম্ভবত। এবং আমার আম্মীজান তিনি আমাকে উনার সাথে কথা বলতে নিষেধ করেছেন।

 

হযরতওয়ালা,জানার ছিল আপনার কাছে এই যে, ঔ ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার কারনে আমি কি জাহান্নামী হব? এবং তার সাথে সম্পর্কছিন্ন করা কি গুনাহের কাজ হচ্ছে? আমার খালার সাথে এবং খালার ছেলের সাথে যোগযোগ না থাকাটাও কি শরীয়তের দৃষ্টিতে ভুল হচ্ছে? 

 

(খালার সাথেও আম্মীর সম্পর্ক নেই। কারন আমার খালা তার স্বামীর ভুলটাকে স্বীকারই করেনা। তার বোনের (অর্থাৎ আমার আম্মীর) পক্ষে কখনো থাকে না। এই বিষয়ে সম্ভবত কষ্ট পেয়ে তার সাথে যোগাযোগ রাখেনা। তবে খালাতো ভাই, বোনদের সাথে যোগাযোগ করে।)

 

বিশেষভাবে বলতে চাই, আমি আল্লহ পাকের মেহেরবানীতে দ্বীনের হুকুম মতো পুরাপুরি চলার চেষ্টা করি। নিজের জীবনকে সুন্নতের আলোকে গড়ার চেষ্টা করি। যতটুকু ওলামাদের সহবতে যাবার বরকতে বা দ্বীনি কিতাবাদী পড়ার কারনে জানতে পেরেছি,তার উপর পরিপূর্ণ আমল করার চেষ্টা করি। আমার পরিবারেও দ্বীনের হুকুম মতো চালানোর চেষ্টা করি। যেহেতু বড্ড এলেমের সংকীর্ণতা তাই এ বিষয়টিতে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের ঠিকানা জাহান্নামী করে ফেললাম নাকি,সেই ভয়ে আপনার নিকটে প্রশ্ন করা। জানালে বড্ড উপকার হত ইনশাআল্লাহ।

 

জাযাকাল্লহু খয়রন, হযরতওয়ালা।

closed

1 Answer

0 votes
by (589,680 points)
selected by
 
Best answer


ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
(১)
https://www.ifatwa.info/1577 নং ফাতাওয়ায় বলেছি যে,
ذَهَبَ فُقَهَاءُ الْحَنَفِيَّةِ وَالشَّافِعِيَّةِ إِلَى أَنَّ دَرَجَاتِ الصِّلَةِ تَتَفَاوَتُ بِالنِّسْبَةِ لِلأَْقَارِبِ، فَهِيَ فِي الْوَالِدَيْنِ أَشَدُّ مِنَ الْمَحَارِمِ، وَفِيهِمْ أَشَدُّ مِنْ غَيْرِهِمْ . وَلَيْسَ الْمُرَادُ بِالصِّلَةِ أَنْ تَصِلَهُمْ إِنْ وَصَلُوكَ؛ لأَِنَّ هَذَا مُكَافَأَةٌ، بَل أَنْ تَصِلَهُمْ وَإِنْ قَطَعُوكَ . فَقَدْ رَوَى الْبُخَارِيُّ وَغَيْرُهُ لَيْسَ الْوَاصِل بِالْمُكَافِئِ وَلَكِنَّ الْوَاصِل الَّذِي إِذَا قُطِعَتْ رَحِمُهُ وَصَلَهَا
হানাফি ফুকাহায়ে কেরাম,এবং শাফেয়ী ফুকাহায়ে কেরাম মনে করেন,সিলাহ রেহমি আত্মীয়তার স্থরভেদে প্রযোজ্য হবে।মাহরামের তুলনায় মাতা-পিতার জন্য উচ্ছস্থরের সিলাহ রেহমি প্রযোজ্য হবে।আর গায়রে মাহরামের তুলনায় মাহরামের জন্য উচ্ছস্থরের সিলাহ রেহমি প্রযোজ্য হবে।সিলাহ রেহমির অর্থ এটা নয় যে,কেউ আপনার সাথে ভালো ও উত্তম ব্যবহার করল,আর বিনিময়ে আপনিও তার সাথে ভালো ব্যবহার করলেন।কেননা এটার নাম তখন সিলাহ রেহমি না হয়ে  মুকাফা'।বরং আত্মীয় কেউ আপনার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ককে ছিন্ন করার পরও আপনি তার দিকে উত্তম ব্যবহার নিয়ে অগ্রসর হবেন এটাই হলো মূলত সিলাহ রেহমি।যেমন সহীহ বুখারী সহ বিভিন্ন রেওয়াতে এসেছে,সিলাহ রেহমি এটা নয় যে,আত্মীয় কারো ভালো ব্যবহারের বিনিময়ে আপনিও তার সাথে ভালো ব্যবহার করলেন,বরং সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার পরও তার সাথে ভালো ব্যবহার করার নামই হলো সিলাহ রেহমি।(৩/৮৪)

সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
আপনার মায়ের নামে যেহেতু মিথ্যা বদনাম করেছেন, তাই যতক্ষণ না আপনার মায়ের কাছে উনি ক্ষমা চাচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তার সাথে আন্তরিক সম্পর্ক না রাখা আপনার জন্য রুখসত রয়েছে। হ্যা, হঠাৎ দেখা হয়ে গেলে সাধারণ সালাম কালাম করবেন। তবে সবকিছু ভুলে গিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করাই উত্তম।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (2 points)
আল্লহ আপনাকে উওম জাযা দান করুক,হযরতওয়ালা।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...