আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+2 votes
238 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (36 points)
কোনো নারী স্বামী যদি হারিয়ে যায় তারপর সে মারা গেছে মনে করে স্ত্রী ইদ্দত পালন করে ২য় বিয়ে করেন এবং বিয়ের পরে প্রথম স্বামী ফিরে আসে তাহলে এর শরীয় সমাধান কি , স্ত্রী কি যেনার শাস্তি পাবে ? স্ত্রী বর্তমানে কার বৈধ স্ত্রী বলে বিবেচিত হবে ?
এ বেপারে সব মাজহাবের ফতোয়া কি একই ? কোনটা বেশি শক্তিশালী ?

1 Answer

+1 vote
by (684,200 points)
জবাব
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম


হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

وَعَنْ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم: «امْرَأَةُ الْمَفْقُودِ امْرَأَتُهُ حَتَّى يَأْتِيَهَا الْبَيَانُ».

মুগীরাহ বিন শু’বাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিরুদ্দিষ্ট বা দীর্ঘদিন অনুপস্থিত ব্যক্তির সংবাদ তার স্ত্রীর নিকটে না পৌছা পর্যন্ত ঐ স্ত্রী তারই থাকবে।
(দারা কুতনি ৩/৩১২৫৫)

وَعَنْ عُمَرَ - رضي الله عنه - فِي امْرَأَةِ الْمَفْقُودِ: تَرَبَّصُ أَرْبَعَ سِنِينَ, ثُمَّ تَعْتَدُّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا. أَخْرَجَهُ مَالِكٌ, وَالشَّافِعِيُّ

উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি নিরুদ্দিষ্ট (দীর্ঘদিন অনুপস্থিত) পুরুষের স্ত্রীকে চার বৎসর কাল অপেক্ষা করার জন্য বলেছেন। অতঃপর সে চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করবে।
(মুয়াত্তা মালিক ১২১৯)

حَدَّثَنِي يَحْيَى عَنْ مَالِك عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ قَالَ أَيُّمَا امْرَأَةٍ فَقَدَتْ زَوْجَهَا فَلَمْ تَدْرِ أَيْنَ هُوَ فَإِنَّهَا تَنْتَظِرُ أَرْبَعَ سِنِينَ ثُمَّ تَعْتَدُّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا ثُمَّ تَحِلُّ قَالَ مَالِك وَإِنْ تَزَوَّجَتْ بَعْدَ انْقِضَاءِ عِدَّتِهَا فَدَخَلَ بِهَا زَوْجُهَا أَوْ لَمْ يَدْخُلْ بِهَا فَلَا سَبِيلَ لِزَوْجِهَا الْأَوَّلِ إِلَيْهَا قَالَ مَالِك وَذَلِكَ الْأَمْرُ عِنْدَنَا وَإِنْ أَدْرَكَهَا زَوْجُهَا قَبْلَ أَنْ تَتَزَوَّجَ فَهُوَ أَحَقُّ بِهَا قَالَ مَالِك وَأَدْرَكْتُ النَّاسَ يُنْكِرُونَ الَّذِي قَالَ بَعْضُ النَّاسِ عَلَى عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ أَنَّهُ قَالَ يُخَيَّرُ زَوْجُهَا الْأَوَّلُ إِذَا جَاءَ فِي صَدَاقِهَا أَوْ فِي امْرَأَتِهِ قَالَ مَالِك وَبَلَغَنِي أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ قَالَ فِي الْمَرْأَةِ يُطَلِّقُهَا زَوْجُهَا وَهُوَ غَائِبٌ عَنْهَا ثُمَّ يُرَاجِعُهَا فَلَا يَبْلُغُهَا رَجْعَتُهُ وَقَدْ بَلَغَهَا طَلَاقُهُ إِيَّاهَا فَتَزَوَّجَتْ أَنَّهُ إِنْ دَخَلَ بِهَا زَوْجُهَا الْآخَرُ أَوْ لَمْ يَدْخُلْ بِهَا فَلَا سَبِيلَ لِزَوْجِهَا الْأَوَّلِ الَّذِي كَانَ طَلَّقَهَا إِلَيْهَا قَالَ مَالِك وَهَذَا أَحَبُّ مَا سَمِعْتُ إِلَيَّ فِي هَذَا وَفِي الْمَفْقُودِ 

সাঈদ ইবন মুসায়্যিব (রহঃ) হইতে বর্ণিত, উমর ইবন খাত্তাব (রাঃ) বলিয়াছেন, যেই স্ত্রীর স্বামী নিরুদ্দেশ-জানে না সে কোথায়, সে স্ত্রী চারি বৎসর অপেক্ষা করিবে। অতঃপর চারমাস দশদিন ইদ্দত পালন করিবে। তারপর অন্যত্র তাহার বিবাহ হালাল হইবে।

মালিক (রহঃ) বলেনঃ ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার পর সে যদি বিবাহ করে তবে স্বামী তাহার সাথে সংগম করুক বা না করুক তাহার পূর্ববর্তী স্বামীর জন্য তাহাকে গ্রহণ করার কোন পথ নাই। মালিক (রহঃ) বলেনঃ ইহাই আমাদের সিদ্ধান্ত। আর বিবাহের পূর্বে তাহার সহিত প্রথম স্বামীর সাক্ষাত হইলে তবে তিনিই অধিক হকদার হইবেন।

মালিক (রহঃ) বলেনঃ কিছু লোক বলিয়া থাকে যে, উমর ইবন খাত্তাব (রাঃ) বলিয়াছেনঃ প্রথম স্বামী আসিলে তাহাকে ইখতিয়ার দেওয়া হইবে (দ্বিতীয় স্বামী হইতে) মহর ফেরত লওয়া অথবা (মহর ফেরত না লইয়া) স্ত্রী ফেরত লওয়া।

মালিক (রহঃ) বলেনঃ উমর ইবন খাত্তাব (রাঃ) এই ধরনের ইখতিয়ার দিয়াছেন বলিয়া কিছু লোককে অস্বীকার করিতে পাইয়াছি।

মালিক (রহঃ) বলেনঃ আমার নিকট রেওয়ায়ত পৌছিয়াছে যে, উমর ইবন খাত্তাব (রাঃ) বলিয়াছেন, স্বামী স্ত্রীর নিকট উপস্থিত নাই, এমন স্ত্রীকে স্বামী তালাক দিয়াছে। অতঃপর স্ত্রীকে পুনরায় গ্রহণ করিতে চাহিয়াছে। কিন্তু সে যে রুজু করিতে চাহিয়াছে এই খবর তাহার স্ত্রীর নিকট পৌছে নাই। শুধু তাহাকে তালাক দেওয়ার সংবাদই সে পাইয়াছে। তাই সে স্বামী গ্রহণ করিয়াছে। দ্বিতীয় স্বামী তাহার সহিত সংগত হউক না হউক প্রথম স্বামী যে তাহাকে তালাক দিয়াছিল তাহার পক্ষে স্ত্রীকে পাওয়ার আর কোন পথ নাই।

মালিক (রহঃ) বলেনঃ এই বিষয়ে এবং নিরুদ্দেশের বিষয়ে আমি যাহা শুনিয়াছি তন্মধ্যে ইহা আমার নিকট পছন্দনীয়।
(মুয়াত্তা মালেক ১২১০)

প্রশ্নে উল্লেখিত ক্ষেত্রে যদি স্ত্রী তালাকের অধিকার প্রাপ্ত হয়ে প্রথম স্বামী থেকে তালাক গ্রহন করে দ্বিতীয় স্বামী গ্রহন করে থাকে, তাহলে তাদের দ্বিতীয় বিবাহ বহাল থাকবে৷ 

আর যদি তালাকের অধিকারপ্রাপ্ত না হয়ে থাকে, তাহলে শরিয়তসম্মত উল্লেখিত পদ্ধতি অনুযায়ী বিচ্ছেদ হওয়ার পর যদি দ্বিতীয় বিবাহ হয়, অতপর স্বামী ফিরে আসলে, হানাফি সহিহ মতানুযায়ি উক্ত স্ত্রীর প্রথম স্বামীর স্ত্রী হিসেবে বহাল থাকবে৷

এবং দ্বিতীয় স্বামীর সাথে বিবাহ বাতিল হয়ে যাবে৷ আর যদি শরিয়তসম্মত পন্থায় বিচ্ছেদ না ঘটিয়ে অন্যত্রে বিবাহ বসে থাকে৷ তাহলে সর্বসম্মতিক্রমে উক্ত স্ত্রী প্রথম স্বামির স্ত্রী হিসেব বহাল থাকবে৷ সর্বাবস্তায় প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে শিবহে নিকাহ হওয়ার কারণে গর্ভের বাচ্চাটির নসব দ্বিতীয় স্বামি থেকে হবে৷ 
(ইমামদুল মুফতিয়ীন, পৃ: ৫৫৮; আল হিলাতু নাজেযা, পৃ: ৮৭-৮৮৷)

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন, 
স্বামী হারিয়ে গেলে তার সম্পর্কে  কোনো তথ্য পাওয়া না গেলে শরীয়তের নিয়ম হলো স্ত্রীর জন্য ৪ বছর অপেক্ষা করা।
তবে খোরপোশ না থাকা,গুনাহের আশংকা থাকা ইত্যাদি কারনে স্ত্রী চাইলে এতো দিন অপেক্ষা করতে না চাইলে আদালতের স্বরনাপন্ন হবে।

স্বামী হারিয়ে গেলে স্ত্রী বিষয়টি আদালতে পেশ করবে।
তারা এক্ষেত্রে স্ত্রীকে যতদিন অপেক্ষার কথা বলবে,ততদিন অপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিবে।
(কিতাবুন নাওয়াজেল ১০/৭০)

শরয়ী আদালতের সিদ্ধান্তের পর ২য় বিবাহ হলে এক্ষেত্রে ১ম স্বামী ফিরে আসলে ইমাম মালেক রহঃ ব্যাতিত সকল ইমামের মতে সেই স্ত্রী ১ম স্বামীর কাছেই ফিরে যাবে।

তবে ইমাম মালেক রহঃ বলেন যে ২য় স্বামীর সাথেই সে থাকবে।
১ম স্বামীর কাছে ফিরে যাবেনা। 

إن تزوجت بعد انقضاء عدتها ، فدخل بها زوجها ، أو لم يدخل بها ، فلا سبيل لزوجها الأول إليها ، قال مالك : وذلك الأمر عندنا ، وإن أدركها زوجها قبل أن تتزوج فهو أحق بها " انتهى من " الموطأ " (2/575) .
সারমর্মঃ 
স্ত্রী ইদ্দত অতিবাহিত হওয়ার পর অন্যত্রে বিবাহ বসলে ইমাম মালেক রহঃ এর মতে ১ম স্বামীর আর কিছুই করার থাকবেনা।  

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন, 
প্রশ্নে উল্লেখিত স্ত্রীর উচিত প্রথম স্বামীর কাছেই ফিরে যাওয়া। কারণ সে এখনো প্রথম স্বামীরই বাকি রয়েছে। যেহেতু প্রথম স্বামী তাকে তালাক দেয়নি।
তবে যদি দ্বিতীয় স্বামীর সাথে শারিরীক সম্পর্ক করে থাকে, তাহলে প্রথম স্বামীর সাথে শারিরীক সম্পর্ক করার পূর্বে মহিলা ইদ্দত পালন করে নিতে হবে। আর ইদ্দত হল পেটে সন্তান হলে সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত, নতুবা তিন হায়েজ অতিক্রান্ত হওয়া পর্যন্ত প্রথম স্বামীর সাথে সহবাস করতে পারবে না।
বিস্তারিত পড়ুন- [আলহীলাতুন নাযিজাহ হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ কৃত]

আর যদি প্রথম স্বামী স্ত্রীকে আর ফিরিয়ে না নিতে চায়, তাহলে তার কাছ থেকে তালাক নিয়ে দ্বিতীয় স্বামীর সাথে আবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নিবে।

এখানে প্রশ্নে উল্লেখিত মহিলার উপর যেনার শাস্তির বিষয়টি ব্যাখ্যা সাপেক্ষ।
যদি স্বামীর মৃত্যুর খবর না জেনে শুধুমাত্র নিজে ধারণা করে চার বছর অপেক্ষা না করে বা মুসলিম আদালতের রায় না নিয়েই যদি সে আগে ভাগেই অন্যত্রে বিবাহ বসে,তাহলে তাকে যেনার শাস্তি দেয়া হবে।

নতুবা নয়।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...