আমি একজন ওয়াসওয়াসার রুগী। আমি বিয়ে করেনি। আমি জীবনে অনেকবার আল্লাহর দেওয়া কসম ভেঙেছি। এমনও কসম ভেঙেছি যা ভাঙলে ঈমান চলে যায়। অর্থাৎ কাফের, মুশরিক হয়ে যাওয়ার কসম ও ভেঙেছি।
আমার কসম ভেঙে ফেলার কাফফারা হিসেবে ২০০টি কসম ভেঙে ফেলার কাফফারা দিবো নিয়ত করেছিলাম। এটা একজন মুফতি হুজুরের সাথে পরামর্শ করেই নিয়েছিলাম।
এরপর আমি তওবা করে ঈমান এনেছি এবং ঈমান আনার জন্য ১-৩টি কাফফারা দিয়েছি। (সংখ্যা মনে নাই) এরপর আরও কিছু কসম ভেঙে ফেলেছি তবে সেগুলো ঈমান চলে যাওয়ার নয়। এরপর আনুমানিকভাবে আরও ৩০ টি কাফফারার নিয়ত করেছি। আরও কিছু কসম ভেঙে ফেলার পর সবমিলিয়ে ২৬৫ টি কাফফারা দেওয়ার নিয়ত করেছি।
কিছুদিন আগে আল্লাহর কসম তালাকের প্রশ্ন করবো না - এ জাতীয় আরও কয়েকবার কসম ভেঙে ফেলেছি। এরপর মনে মনে নিয়ত করে ফেলেছি ১০ টির কাফফারা দিবো। মানে একই কাজ না করার জন্য বার বার কসম কাটার জন্য প্রতিবার আলাদা আলাদা কাফফারা আদায়ের জন্য সতর্কতা হিসেবে ১০টি কাফফার নিয়ত করেছি। যদিও আমি জানি যে একই কাজ বার বার কসম করলেও একবারের টা আদায় করলেই হয়ে যায়। এক্ষেত্রে কাফফারার সংখ্যা হয়ে গেল ২৭৫ টি। মাঝে মাঝে মনের ভিতরে নিয়ত চলে আসতো ২৯০ টি দিয়ে দিবো, আবার নিয়ত চলে আসে যে সতর্কতা সরুপ ৩০০টির দিয়ে দিবো।
ঘটনাটি আমি আপনাকে ম্যাসেজ এ লিখে দিচ্ছি কারণ এই ঘটনাটি অন্য কেউ জেনে ফেললে বা যাকে নিয়ে ঘটনা সে দেখে ফেললো কি না সেটা নিয়ে আমার ভয়। সেই ঘটনার উপর ভিত্তি করে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েনঃঃ-
হুজুর, অনুগ্রহ করে আমার ম্যাসেজটি দেখুন। তবে, ম্যাসেজ এর ঘটনার সময় আমার এত ওয়াসওয়াসা ছিল না। কয়েকমাস ধরে ওয়াসওয়াসা অনেক বেড়ে গেছে। তখন, অন্য বিষয়ে ওয়াসওয়াসা ছিল। ঈমান, তালাক, কাফফারা - এসব বিষয় এ হয়তো ওয়াসওয়াসা ছিল না। তাই, ম্যাসেজটি পড়ার সময় ধরে নিয়েন যে, আমার তখন ঈমান, তালাক ও কাফফারা সংক্রান্ত ওয়াসওয়াসা ছিল না।
হুজুর আপনার কাছে পাঠানো ম্যাসেজ অনুযায়ী আমাকে বলুনঃ-
১. যেহেতু একজন মুফতি হুজুর বলেছেন কসম ভেঙে গেছে তাই ঘটনার জন্য আমি আবারও ৭ টি কাফফারা আদায়ের নিয়ত করে ফেলেছি মনে মনে। কসম কি ভেঙে গেছে?
২. তাহলে আমি কি শর্তযুক্ত তালাক ভেঙে ফেলেছি? ভেঙে না ফেললে এর যুক্তি কি?
৩. কসম ভেঙে ফেলার আগেই কি কাফফারা দেওয়ার নিয়ত করা যায়?
৪. হুজুর আমার মোট কতটি কাফফারা দিলে ঈমান থাকবে? আমি হুজুর ঈমান নিয়ে মরতে চাই।
৫. আপনি যদি বলেন যে কসম ভেঙে যায়নি তাহলে এরপরও কি কাফফারা আদায় করবো? যেহেতু নিয়ত করেছি?
৬. যদি কসম ভেঙে ফেলার কাফফারা আদায় করে ফেলি তাহলে কি উপরে তালাকের শর্ত ভেঙে যাবে? যদি আমি কসম ভেঙে না থাকি?
৭. হুজুর, একজন মুসলিমের জন্য ঈমান কতটা দামী সেটা তো হুজুর আমি এখন ভালভাবে বুঝতে পারছি। আমি কিভাবে বিয়ে করতে পারবো এবং ঈমান নিয়ে মরতে পারবো একটু জানান হুজুর। আমার ঈমান বাচানোর জন্য আমি সব করতে পারি হুজুর। কতটি কাফফারা দিলে আমি ঈমান ফিরে পাবো হুজুর?
৮. আপনাকে প্রশ্ন করার সময় যদি শর্তটি সেই মেয়ে দেখে ফেলে কিংবা অন্য কেউ দেখে ফেলে সেই মেয়েকে বলে দেয় তাহলে কি শর্ত ভেঙে যাবে?
৯. আমি ঈমান এনে যদি কাফফারা না দেই তাহলে কি আমার ঈমান আবার চলে যাবে? কাফফারার না দেওয়ার গুনাহ কি তওবার মাধ্যমে কবুল হয়?
১০. কাফফারা দেওয়ার সময় কি মনে মনে নিয়ত করে দিতে হবে যে এটা কোন কসম এর কাফফারা?
১১. আমি কিছুতেই কাফফারার সংখ্যা নির্ধারণ করতে পারছি না। কারণ ৩০০ টির সাথে ৭ টি যোগ করার কথা ভাবি আবার চিন্তা করি আমি তো ২৬৫ টির পর এত কসম ভেঙে ফেলছি না। এত কেন দিবো? তখন মনের মধ্যে আসে "একবার ভেবেছিলাম ২৬৫+১০+৭ = ২৮২ টি কাফফারা দিবো। ৩০০ টি তো আগেই মনে মনে চিন্তা করেছি। তাহলে ঈমান ভঙের কাফফারা কই গেল? আমার কি ঈমানের চেয়ে টাকার মূল্য বেশি হয়ে গেল?"
১২. একবার মনের মধ্য এ এসে পড়েছিল যে এত কাফফারা বাড়ালে তো ৫০০ টিও দেওয়া যায়। এটা মনে হয় উদাহরণ সরুপ এনেছি। নাকি নিজেই মনে মনে এনেছি মনে করতে পারছি না। মানে কাফফারার সংখ্যা বাড়ানোর নিয়ত করে ফেলি তাই হয়তো এমন চিন্তা করেছিলাম। এখন কি ৫০০ টির নিয়ত হয়ে গেছে?
১৩. কাফফারার সংখ্যা কিভাবে স্থির করতে হয়? আমার মনে তো মাঝে মাঝে ৫০০/১০০০ ও উকি দেয়। - এই নিয়ত মনে হয় মনে মনে আমি ইচ্ছা করেই এনেছি। যেন কাফফারার সংখ্যা আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় নাকি অন্য কারণ কিছুই বুঝতে পারছি না। এখন লেখার সময় দুশ্চিন্তা হচ্ছে ৫০০/১০০০ কাফফারার নিয়ত হয়ে গেল নাতো? - এটা নিয়ে খুব চিন্তা হচ্ছে। একটু পর আবার মনে মনে চিন্তা আসতাছে ১০০০ কাফফারা দিলে কেমন খরচ হবে? ইত্যাদি। মানে আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আবার চিন্তা আসতাছে ১ লক্ষ/ ১ কোটি কাফফার। হুজুর, আমি অত্যাধিক সুচীবায়ুগ্রস্থ। আমাকে ঈমান আনতে সাহায্য করুন। যখন কাফফারার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার নিয়ত হয়ে যায় তখন আমি মনে কষ্ট পাই। আবার ২০০০ কাফফারা নিয়েও চিন্তা চলে আসে। একবার মনে মনে ভেবেছিলাম "১০০০ টি কাফফারা দেওয়ার নিয়ত করলে কত টাকা যাবে? আমি না দিতে পারলে আমার সন্তান দিবে।" এভাবে ভাবতে ছিলাম কিন্তু নিয়ত করেনি। পরে আবার ভয় পেয়ে গেলাম যে ১০০০ টি কাফফারা দেওয়ার নিয়ত হয়ে গেল কি না? হুজুর, আমাকে কতটি কাফফারা দিতে হবে?
১৪. আমি যদি ভাবি যে, "কাফফারা আদায় না করলে ঈমান আসবে না" - এটা কি ঈমানের পরিপন্থী?
১৫. আমি প্রশ্ন লেখার সময় অন্য মানুষকে কথা দিয়েছিলাম যে উমুক কাজ করবো। আমার যদি এমন মনে হয় যে উমুক কাজ না করলে হয়তো কাফফারার সংখ্যা বেড়ে যাবে। এরপর আমি যদি ঐ কাজটি করার নিয়ত করি এবং পরে যদি সেটাকে ওয়াসওয়াসা ভেবে বাদ দেই তাহলে কি কাফফারার সংখ্যা বেড়ে যাবে?
১৬. আমার কাফফারার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সাথে কি অন্য কোন কাজ বা পাপ সম্পর্কিত? যেমন প্রশ্ন লেখা সময়ে, বা আপনি যতক্ষণ উত্তর না দিবেন তখন কোন পাপ করলে কাফফারা বেড়ে যাবে? বা পরে পাপ করলে বেড়ে যাবে?
১৭. এই আইডি ফেইক। আমি ভুল নামে ও ভুল ইমেইল ব্যবহার করে আইডি খুলে প্রশ্ন করেছি। এতে কি কাফফারার সংখ্যার উপর কোন সমস্যা হবে? মানে কাফফারা কি বেড়ে যাবে?
১৮. একজন কাফফারার প্রশ্ন লেখার সময় একজন ফোন দিয়ে বলল একটি নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে। আমি বলেছি ৯ টায় যাবো। এরপর ভয় ঢুকে গেল ৯ টায় না গেলে কাফফারার সংখ্যা বেড়ে ৫০০/১০০০ হয়ে যায় কি না? কারণ, তখন সম্ভবত ৫০০/১০০০ কাফফারা নিয়ে লিখছিলাম সে আমায় যখন ফোন দিছিল৷ তাই, আমি ৯ টার পূর্বেই বের হয়ে গেলাম। এখন যাওয়ার সময় আমি যদি বান্দার হোক কিংবা অন্য যেকোনো পাপ কাজে লিপ্ত হই তাহলে কি কাফফারা বেড়ে যাবে? আমার এই ধরনের প্রশ্ন আসলে করনীয় কি? বা প্রশ্ন লেখার সময় কোন পাপ কাজে লিপ্ত হলে কি কাফফারার সংখ্যা বেড়ে যাবে?
১৯. কাফফারার সংখ্যা বেড়ে যাওয়া নিয়ে আমি যে ভয় পাচ্ছি আর এত প্রশ্ন করছি এতে কি এমন হতে পারে আল্লাহ তা'আলা রেগে আমার কাফফারা বাড়িয়ে দিবেন বা কবুল করবেন না?
২০. আমার কাফফারার সংখ্যা নিয়ে অতিরিক্ত প্রশ্ন আসা শুরু হয়ে গেছে। কি করলে মুক্তি পাবো? আপনার দেওয়া ফতোয়া আর পরামর্শ যদি না মানি সেক্ষেত্রে কি কাফফারা বেড়ে যাবে? আমার আরো প্রশ্ন জেগে আছে। সেগুলো না করলে কাফফারার সংখ্যা বেড়ে যাবে? আমি তো প্রশ্ন করতে চাই না। কিন্তু প্রশ্ন মনের আসে শুধু। হুজুর, এসব প্রশ্নের আপনার উত্তর মনোযোগ দিয়ে না পড়লে কি কাফফারা বেড়ে যাবে?
২২. উমুক কাজ না করলে কাফফারা বেড়ে যাবে - মনের মধ্যে এই ধরনের শর্ত চলে আসলে করনীয় কি? আমি যদি সতর্কতা সরুপ উমুক কাজ করার নিয়ত করে ফেলি এবং পরে যদি সেই কাজটি না করি তাহলে কি কাফফারা বেড়ে যাবে?
২৩. এইগুলো যদি ওয়াসওয়াসা হয়ে থাকে আমি যদি এই ধরনের প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকি তাহলে কি আমি জিহাদের সওয়াব পাব? আপনার দেওয়া পরামর্শ না মেনে যদি আমি নিজের মত করে শর্ত তৈরি করি এবং সে অনুযায়ী কাজ করি তাহলে কি পাপ হবে?
২৪৷ জানার জন্য এই প্রশ্ন করতাছিঃ কেউ যদি বলে উমুক কাজ না করলে কাফফারা বেড়ে যাবে - এটা যদি সে উচ্চারণ করে বলে এবং উমুক কাজটি (সেটি যত সওয়াব এর কাজই হোক বা পাপের কাজই হোক না কেন) না করে তাহলে কি তার কাফফারা বেড়ে যাবে? এই প্রশ্নের মাধ্যমে কি কাফফারা বেড়ে যাবে? আমি তো এমন কথা উচ্চারণ করে বলেনি।
২৫. আমি নিয়মিত ফরজ নামাজ পড়ি না। আমি ঘুনিয়ে ছিলাম। ঘুম থেকে ওঠার পর মনে হল আজকে আসরের নামাজ না পড়লে কাফফারা বেড়ে যাবে। তখন মনে হলো যে ওয়াক্ত চলে গেছে। তাহলে আগামী কাযা আদায় করবো। পরে দেখি নামাজের সময় আছে। ৫.০৩ - ৫.২০ এর মধ্যে কি আসরের ওয়াক্ত থাকে? আমাকে কি কাযা আদায় করতে হবে যেহেতু নিয়ত চলে এসেছে নাকি আমিই মনে মনে করেছি যে আগামীকাল কাযা আদায় করবো? আমি যদি নামাজ আদায় না করতাম তাহলে কি কাফফারা বেড়ে যেত? নামাজ/ওযু শুদ্ধ না হলে বা আমি যদি জেনে শুনেও ভুল করে থাকি তাহলে কি কাফফারা বেড়ে যাবে? কাযা নিয়ত করার সময় হয়তো আমি আগামীকাল ফরজ নামাজও পড়তাম এখন যদি আগামীকাল কাযা ও ফরজ নামাজ না পড়ি তাহলে কি কাফফারা বেড়ে যাবে? আমার মনের মধ্যে আসতাছে যে, আগামীকাল আসর নামাজ না পড়লে কাফফারা বেড়ে যেতে পারে। - আমি কি এই অনুযায়ী পাত্তা দিবো? আমি যদি কাফফারার চিন্তা আসায় নিয়ত করেও ফেলি যে আগামীকাল আসরের নামাজ আদায় করবো। এক্ষেত্রে আগামীকাল আসরের নামাজ আদায় করলে বা না করলে কি কাফফারা বেড়ে যাবে? শুধুমাত্র কাফফারা যেন বেড়ে না যায় - এই নিয়তে নামাজ আদায় করলে কি সেটা গুনাহ হবে?
২৬. আজকে আসরের নামাজ না পড়লে হয়তো কাফফারা বেড়ে যেতে পারে - এই নিয়তে হয়তো আমি আসরের সালাত আদায় করেছি। এতে কি কাফফারা বেড়ে যাবে? - এই ধরনের ধারণা রাখা কি ঈমানের পরিপন্থী? এই ধরনের ধারণা করলে কি কাফফারা বেড়ে যাবে?
হুজুর আমায় ক্ষমা করে দিয়েন আমি অনেকগুলো প্রশ্ন করে ফেলেছি।