জবাবঃ-
কিছু কিছু মুফাস্সিরীন হযরাত সূরা ইয়াসিনের ৫৮নং আয়াতের ব্যাখায় লিখেন,
سَلَامٌ قَوْلًا مِن رَّبٍّ رَّحِيمٍ
করুণাময় পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাদেরকে বলা হবে সালাম।(সূরা ইয়াসিন-৫৮)
আল্লামা আলুসী বাগদাদি রাহ বলেন,উক্ত আয়াতে আল্লাহর তরফ থেকে যে সালামের কথা বর্ণনা করা হয়েছে,সেই সালাম আল্লাহ তার রাসূল সাঃ কে মে'রাজের রাত্রে প্রেরণ করেছালেন,যখন আল্লাহ তা'আলা বলেছিলেন,
" السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته "
তখন রাসূল সাঃ প্রতিউত্তরে বলেছিলেন,
" السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين "
(রুহুল মা'আনী-৩/৩৮)
এবং কিছু কিছু হাদীস বিশারদ যেমন বদরুদ্দীন আইনি রাহ আবু-দাউদ গ্রন্থের ব্যখ্যায়(৪/২৩৮)মে'রাজ সম্পর্কীয় তাশাহুদের উক্ত ঘটনাকে লিখেন,এবং মুল্লা আলী ক্বারী রাহ ইবনে মালাক হানাফি রাহ থেকেও বর্ণনা করেন,
এবং কিছু কিছু ফিকহের কিতাব যেমন, তাবয়ীনুল হাক্বাঈক্ব(১/১২১)গ্রন্থেও এমনটা বর্ণিত হয়েছে।তাছাড়া ইমাম কাসতাল্লানী রাহ ও ইমাম শা'রানী রাহ ও এমনটা উল্লেখ করেছেন।
তবে এসব বর্ণনায় কোনো সনদের উল্লেখ নেই।সুতরাং এগুলোকে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর দিকে নিসবত করা অদ্য ঠিক হবে না।কেননা তাশাহুদ সম্পর্কে হাদীসের কিতাবাদিতে যে সব বর্ণনা এসেছে,তাতে মে'রাজ সম্পর্কীয় উক্ত ঘটনার কোনো উল্লেখ নেই।
হযরত ইবনে মাসউদ রাযি থেকে বর্ণিত,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بن مسعود رضي الله عنه قَالَ : ( كُنَّا نَقُولُ فِي الصَّلَاةِ خَلْفَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : السَّلَامُ عَلَى اللَّهِ ، السَّلَامُ عَلَى فُلَانٍ ، فَقَالَ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ : إِنَّ اللَّهَ هُوَ السَّلَامُ ، فَإِذَا قَعَدَ أَحَدُكُمْ فِي الصَّلَاةِ فَلْيَقُلْ : التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ . - فَإِذَا قَالَهَا أَصَابَتْ كُلَّ عَبْدٍ لِلَّهِ صَالِحٍ فِي السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ - أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ ، ثُمَّ يَتَخَيَّرُ مِنْ الْمَسْأَلَةِ مَا شَاءَ ) .
আবদুল্লাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পিছনে সালাত আদায় করার সময় (বৈঠকে) বলতাম, আল্লাহর উপর সালাম হোক, অমুকের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের বললেনঃ বস্তুত আল্লাহ নিজেই সালাম (শান্তিদাতা)। অতএব তোমাদের কেউ যখন সালাতে বসে সে যেন বলে, "আত্তাহিয়াতু লিল্লা-হি ওয়াস্ সলাওয়া-তু ওয়াত তাইয়িবা-তু আসসালা-মু 'আলাইকা আইয়ুহান নাবিইয়্যু ওয়া রহমাতুল্ল-হি ওয়াবারাকুহু আসসালা-মু 'আলাইনা- ওয়া'আলা- ইবা-দিল্লা-হিস্ স-লিহীন" অর্থাৎ "যাবতীয় মান-মর্যাদা, প্রশংসা ও পবিত্রতা আল্লাহর জন্য। হে নাবী! আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বারাকাত অবতীর্ণ হোক। আমাদের এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর শান্তি নেমে আসুক।” যখন সে এ কথাগুলো বলে, তখন তা আল্লাহর প্রতিটি নেক বান্দার কাছে পৌছে যায়, সে আসমানে বা জমিনেই থাক। (অতঃপর বলবে) "আশ্বহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়ারসূলুহু" অর্থাৎ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ তার বান্দা ও রাসূল।" অতঃপর সালাত আদায়কারী তার ইচ্ছানুযায়ী যে কোন দু'আ পড়তে পারে। (সহীহ বুখারী-৬৩২৮,সহীহ মুসলিম৪০২)
মে'রাজ সম্পর্কীয় তাশাহুদের ঘটনা যদিও কিছু কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,কিন্ত সর্বত্রই বিনা সনদে বর্ণিত হয়েছে।তাই রাসূলুল্লাহ সাঃ এর দিকে উক্ত ঘটনাকে সম্মন্ধযুক্ত করা উচিৎ হবে না।তাছাড়া হাদীসের কোনো কিতাবে বিশুদ্ধ সনদে যত জায়গায় তাশাহুদের আলোচনা এসেছে,কোথাও কিন্তু উক্ত ঘটনার উল্লেখ নেই।সে হিসেবে মুহাক্বিক উলামায়ে কেরাম উক্ত ঘটনাকে বিশুদ্ধ বলেন না।আল্লাহু আ'আলাম।