আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
323 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (6 points)

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,

একজন আমাকে নিম্নের প্রশ্ন ও উত্তর-টি পাঠিয়েছেন, চেক করে দেখার জন্য। আমি তো দেখে হয়ে গিয়েছি। এইরকম উত্তর, ব্যাখ্যা কখনো চোখে পড়ে নি। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে কিছু বলতে পারে নি, আমি বলেছি, আমি জেনে জানাবো ইনশাল্লাহ।

উনি নাকি কোনো এক ফেইসবুক গ্ৰুপের মেম্বার এবং ওখানেই এটি পেয়েছেন।

আমি শুধু এতটুকু বললাম, দ্বীন এর জ্ঞান যেই সেই জায়গা থেকে নিতে গেলে বিপদ। এটা খুবই সেনসিটিভ এবং নির্ভরযোগ্য ও মুহাক্কীক আলেম ব্যতীত অন্য কোনো জায়গা থেকে এইসব জ্ঞান আহরণ করা খুবই বিপদজনক।

মুহতারাম এর কাছে আবেদন, একটু চেক করে দেখবেন এবং যথোপযুক্ত উত্তর দিবেন।

 

 প্রশ্ন: সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম এই দরুদ দিয়ে কি জিকির করা যাবে? শুক্রবারে আমরা যে দরুদ পড়ি সেখানে কি এই দরুদ পড়া যাবে?

উত্তর: জ্বী না!

দরুদ মানে হচ্ছে আল্লাহর কাছে রসুল এর জন্য রহমত,বরকত ও শান্তির দোয়া করা!

صلى الله عليه وسلم

এই দরুদের অর্থ হচ্ছে- আল্লাহ তাঁর প্রতি সালাত (দয়া) ও সালাম (শান্তি) বর্ষণ করুন।

অর্থাৎ যখন আমরা বলি, রসুল তখন আমরা আসলে বলি, "আল্লাহ রসুলের প্রতি সালাত ও সালাম বর্ষন করুন"

অতএব রসুল এর নাম নিলে এই দরুদ পড়া জায়েজ!

তবে যখন আমরা জিকির করি তখন আমরা রসুল এর নাম নেই না! শুধু বলি, সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!

যার অর্থ, "তার উপর সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক!

এখন প্রশ্ন হলো এখানে তার মানে কার? এটা এই দরুদে উল্লেখ নেই।

তাই জিকিরের সময় যে দরুদ পড়তে হবে সেই দরুদে উনার নাম উল্লেখ করতে হবে।

যেমন নিচের দরুদগুলো ও তাদের অর্থ লক্ষ্য করুন-

১.

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি মুহা’ম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর রহমত বর্ষণ কর।

২.

اللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ عَلَى نَبَيِّنَا مُحَمَّدٍ

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাদের নবী মুহাম্মাদের উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন।

দুইটা দরুদেই মুহাম্মদ নামটি এসেছে! অর্থাৎ এগুলো দিয়ে জিকির করা যাবে।

তবে সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দরুদটিতে শুধু সর্বনাম ব্যবহৃত হয়েছে, রসুল এর নাম আসেনি । যার কারনে প্রশ্ন থেকে যায় যে,শান্তি ও সালাম কার ওপর বর্ষিত হবে?

তাই এই দরুদ জিকির হিসেবে ব্যবহার যাবে না!

শায়েখ আসিম আল হাকিমকে প্রশ্ন করা হয় যে, সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দরুদটি কি শুক্রবারে আযকারে ব্যবহার করা যাবে যেহেতু এই দরুদে মুহাম্মদ নামটি নেই?

উত্তরে তিনি বলেন, "এটা বৈধ হবে না কারন এখানে রসুল এর নাম/সর্বনাম নেই!"

শুক্রবারে আমরা এতো বেশি করে দরুদ পড়ি! তবে দরুদ যদি বৈধই না হয় ভ্যালিড না হয় তাহলে তো ফলাফল শূন্য!

এ ব্যাপারে নিজে সতর্ক থাকবেন এবং সবাইকে জানিয়ে দিবেন ইন শা আল্লাহ!

(সংগৃহীত)

 

1 Answer

0 votes
by (676,960 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

اِنَّ اللّٰہَ وَ مَلٰٓئِکَتَہٗ یُصَلُّوۡنَ عَلَی النَّبِیِّ ؕ یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا صَلُّوۡا عَلَیۡہِ وَ سَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا ﴿۵۶﴾ 

নিশ্চয় আল্লাহ নবীর প্রশংসা করেন এবং তার ফেরেশতাগণ নবীর জন্য দোআ-ইসতেগফার করেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবীর উপর দরুদ পাঠ কর এবং তাকে যথাযথ ভাবে সালাম জানাও।
(সুরা আহযাব ৫৬)

এ হুকুমটি নাযিল হবার পর বহু সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সালামের পদ্ধতি তো আপনি আমাদের বলে দিয়েছেন। (অর্থাৎ নামাযে “আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান নাবীয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ” এবং দেখা সাক্ষাত হলে “আসসালামুআলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ” বলা।) কিন্তু আপনার প্রতি সালাত পাঠাবার পদ্ধতিটা কি?

এর জবাবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন লোককে বিভিন্ন সময় যেসব সালাত বা দরূদ শিখিয়েছেন তা বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। যেমন,

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

[বুখারীঃ ৩৩৬৯, ৬৩৬০, ৯৭৯]

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ

[বুখারী ৩৩৭০]

اللهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُوْلِكَ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ

[বুখারীঃ ৪৭৯৮]

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَآلِ إِبْرَاهِيمَ ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

[মুসনাদে আহমাদঃ ৪/১১৯]

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
দরুদ হিসেবে শুধু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলা জায়েজ আছে।
এটি বারবার বলাতেও সমস্যা নেই। 
এখানে যে যমির (তার) উল্লেখ রয়েছে,এর দ্বারা যিকির কারী সহ সকলেই জানে যে এখানে রাসুলুল্লাহ সাঃ উদ্দেশ্য। 
সুতরাং এখানে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর নাম উল্লেখ না করলেও সমস্যা নেই।
দরুদ পাঠ হয়ে যাবে।

তবে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর নাম উল্লেখ করা সবচেয়ে ভালো হবে।

তাই এক্ষেত্রে সাল্লাল্লাহু আলান নাবিয়্যি মুহাম্মাদ বলা সবচেয়ে ভালো ও উত্তম।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلَمَةَ، قَالَ حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، عَنْ يَحْيَى بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَالِمٍ، عَنْ مُوسَى بْنِ عُقْبَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَلِيٍّ، عَنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ، قَالَ عَلَّمَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم هَؤُلاَءِ الْكَلِمَاتِ فِي الْوَتْرِ قَالَ " اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ فَإِنَّكَ تَقْضِي وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ وَإِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ وَصَلَّى اللَّهُ عَلَى النَّبِيِّ مُحَمَّدٍ " .

মুহাম্মাদ ইবনু সালামা (রহঃ) ... হাসান ইবনু আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এ বাক্যগুলো শিক্ষা দিয়েছেন বিতরের সালাতে (পড়বার জন্য) তিনি বলেছেন, তুমি বলঃ

اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ فَإِنَّكَ تَقْضِي وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ وَإِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ وَصَلَّى اللَّهُ عَلَى النَّبِيِّ مُحَمَّدٍ
(সুনানে নাসায়ী ১৭৪৯ ইফাঃ)

উপরোক্ত হাদীসের আলোকে অনেক ইসলামী স্কলারদের মতে সব চেয়ে ছোট দরুদ হলোঃ-
صَلَّى اللَّهُ عَلَى النَّبِيِّ مُحَمَّدٍ

সাল্লাল্লাহু আলান নাবিয়্যি মুহাম্মাদ।

কেউ কেউ নিম্নোক্ত তিনটি দরুদকে ছোট দরুদ বলেছেনঃ
(الف) اللّہم صلّ علی محمد وعلی آل محمد ۔ (ب) وصلی اللہ علی النبي الأميّ ۔ (ج) وصلی اللہ علی النبيّ محمد۔ (زاد السعید، ص: ۱۳، ۲۲، ۳۲، ط: لاہور)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...