আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
233 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (5 points)
আসসালামু আলাইকুম
এই টপিক নিয়ে লিখতে আমার ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। আমার মায়ের সাথে আমার সম্পর্ক দিনদিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। উনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন, অতীতের দোষ ত্রুটি নিয়ে সর্বক্ষণ কথা শোনান, ডাক্তার হয়েও কেন ফ্রি মিক্সিং জব করিনা- দ্বীনের পথে আসা নিয়ে প্রচুর কথা শোনান। উনি বলেন- মায়ের সাথে খারাপ আচরণ করে কেউ দ্বীনি হয়না, তোর কোন দোয়া কবুল হবেনা।
সারাদিন অভিশম্পাত করেন। আমার একটি দুই বছরের বাচ্চাকে নিয়ে আমি সাময়িক কিছু সময়ের জন্যে নিরুপায় হয়ে মায়ের বাসায় থাকি। আরো দুই ভাই, বাবা আছেন। উনারাও কিছু বলতে পারেননা আমার মায়ের সামনে। আমার মা একদা দ্বীনদার ছিলেন। আর্থিক মোহ এবং উনার মেধার অহংকারে আজ উনি অন্ধ। তাছাড়া আব্বু সব সম্পদ না জানিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন। তাই আম্মু সারাদিন আব্বুর সাথে খারাপ আচরণ করেন, আলাদা রাখেন। আমি না সইতে পেরে বলেছি- এরচেয়ে ভালো বিবাহ বিচ্ছেদ করে ফেলেন।
আমরা বুঝি আম্মু অনেক কষ্ট পেয়েছেন জীবনে। কিন্তু এগুলো তো সব আল্লাহর পরীক্ষা। আম্মুকে কোন নসীহা দেয়া যায়না, কোন কথা বলল্লেই বলেন- আমি নাকি গালিগালাজ করছি! বলেন -আমি নাকি গায়ে হাত তুলেছি!
আল্লাহ মাফ করুক উনার এই মিথ্যাচারের জন্যে। মাঝেমাঝে ভাবি, এই মিথ্যাচার হয়তো উনার ইচ্ছাকৃত না, উনি ভুলে যান বা কল্পনা করেন আমি উনার গায়ে হাত তুলেছি । (এভাবে নিজেকে স্বান্তনা দেই)

১/ আমি কতটুকু মিনিমাম সম্পর্ক রাখলে হক্ব আদায় হবে?
২/ আমি কিভাবে উনার কাছে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন? কারণ মাঝেমধ্যে স্বাভাবিকভাবেই রেগে যাই।  কত সহ্য করা যায়! বিশেষ করে যখন আমার দুধের বাচ্চাটাও উনার অভিশাপ থেকে নিস্তার পায়না!
৩/ উনাদের অমতে আমি বিয়ে করেছি, মানে কাবিন করেছি, পরে উনাদেরকে মানিয়ে আবার পারিবারিকভাবেই উনারা মেনে নেন।( যেহেতু হারাম সম্পর্কে ছিলাম, তখন দ্বীনের বুঝ ছিলনা, তাই আল্লাহর কাছে আমরা দুজনই প্রতিনিয়ত তওবা করছি। )  কিন্তু তিনি এটি নিয়ে প্রতিনিয়ত কথা শোনান। বলেন- মেনে নেননি। আমরা নাকি তাদের কাছে মাফ চাইনি!
এখন আমি কি এর জন্যে গোনাহগার হচ্ছি? আমার কি করণীয়?
দয়া করে আমাকে কিছু পরামর্শ দিন। আমি আমার মায়ের বেদ্বীনতার জন্যে উনার মানসিক অশান্তি সহ্য করতে পারছিনা। আবার নিজে একসাথে থেকে প্রতিনিয়ত উনার অভিশাপ পাচ্ছি, তর্ক করে গোনাহগার হচ্ছি। কিভাবে আমি এই তিক্ততা দূর করতে পারি?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
    
وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْنًا ۖ وَإِن جَاهَدَاكَ لِتُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا ۚ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ [٢٩:٨]

আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে। [সূরা আনকাবুত-৮]

وَإِن جَاهَدَاكَ عَلَىٰ أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا ۖ وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا ۖ وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ۚ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ [٣١:١٥]

পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করবো। [সূরা লুকমান-১৫]

হাদীস শরীফে এসেছেঃ  

مُصْعَبُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ نَزَلَتْ فِيهِ آيَاتٌ مِنَ الْقُرْآنِ قَالَ: حَلَفَتْ أُمُّ سَعْدٍ أَنْ لَا تُكَلِّمَهُ أَبَدًا حَتَّى يَكْفُرَ بِدِينِهِ، وَلَا تَأْكُلَ وَلَا تَشْرَبَ، قَالَتْ: زَعَمْتَ أَنَّ اللهَ وَصَّاكَ بِوَالِدَيْكَ، وَأَنَا أُمُّكَ، وَأَنَا آمُرُكَ بِهَذَا. قَالَ: مَكَثَتْ ثَلَاثًا حَتَّى غُشِيَ عَلَيْهَا مِنَ الْجَهْدِ، فَقَامَ ابْنٌ لَهَا يُقَالُ لَهُ عُمَارَةُ، فَسَقَاهَا، فَجَعَلَتْ تَدْعُو عَلَى سَعْدٍ، فَأَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي الْقُرْآنِ هَذِهِ الْآيَةَ: {وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْنًا وَإِنْ جَاهَدَاكَ عَلَى أَنْ تُشْرِكَ بِي}

মুসআব ইবনু সা’দ (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণিত যে, তাঁর সম্পর্কে কুরআনের কিছু আয়াত অবতীর্ণ হলো। তিনি বলেন, তাঁর মা শপথ করে ফেলেছে যে, যতক্ষন তিনি ইসলামকে অস্বীকার না করবেন ততক্ষন তার সাথে কথা বলবে না খাবেও না, পানও করবে না। সে বললো, আল্লাহ তায়ালা তোকে আদেশ করেছেন, পিতামাতার কথা মানতে। আর আমি তোর মা। আমি তোকে এ আদেশ করছি। মা তিন দিন পর্যন্ত কিছু খেলেন না। কষ্টে সে বেহুশ হয়ে গেলে উমারাহ নামক তার এক ছেলে তাকে পানি পান করালো। মা সা’দর উপর বদদু’আ করতে লাগলো। তখন আল্লাহ তা’আলা কুরআন শরীফে এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যব্যাবহার করতে। তবে ওরা যদি তোমার উপর বল প্রয়োগ করে, আমার সাথে এমন কিছু শরীক করতে যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তুমি তাদের মেনো না।” (২৯ঃ ৮) আর পৃথিবীতে তাদের সাথে বসবাস করবে সদ্ভাবে।” (৩১ঃ ১৫) [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৭৪৮]

عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَتْ: قَدِمَتْ عَلَيَّ أُمِّي وَهِيَ مُشْرِكَةٌ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَاسْتَفْتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قُلْتُ: وَهِيَ رَاغِبَةٌ، أَفَأَصِلُ أُمِّي؟ قَالَ: «نَعَمْ صِلِي أُمَّكِ

আসমা বিনতে আবূ বাকর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর যুগে আমার আম্মা মুশরিক অবস্থায় আমার নিকট এলেন। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট ফাতওয়া চেয়ে বললাম, তিনি আমার প্রতি খুবই আকৃষ্ট, এমতাবস্থায় আমি কি তার সঙ্গে সদাচরণ করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি তোমার মায়ের সঙ্গে সদাচরণ কর। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৬২০]

আরো জানুনঃ 

(০১)
প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
উপরে উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস গুলো থেকে বুঝা যায় যে মাতা পিতা কষ্ট পায়,এমন কোনো কাজ না করা 
সুতরাং আপনি যদি দূরে থেকেও তার সাথে ফোনে কথাবার্তা চালিয়ে যান,তার খোজ খবর নেন,প্রয়োজনে তাদেরর পাশে দাড়ান,তাদের বৈধ আদেশ মেনে চলেন, তবে মাতা পিতার হক আদায় হবে।   

(০২)
আপনি তাকে বুঝিয়ে মাফ চাইবেন।
প্রয়োজনে কান্না করে হলেও মাফ চেয়ে নিবেন।
একসাথে বসবাসের কারনেই মনে হয় এহেন সমস্যা হচ্ছে।
তাই এটির সমাধানের চেষ্টা করুন।

(০৩)
আপনি মাতা পিতার অনুমতি না নিয়ে কাবিন করেছিলেন,এটি মারাত্মক অন্যায় কাজ হয়েছিলো।
এর জন্য তাদের কাছে মাফ চেয়ে নিতে হবে।

সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আলাদা বাসায় থাকার চেষ্টা করুন। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...