(০১)
হ্যাঁ শুধুমাত্র লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু যিকির করা জায়েজ আছে।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَبِيبِ بْنِ عَرَبِيٍّ، حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ كَثِيرٍ الأَنْصَارِيُّ، قَالَ سَمِعْتُ طَلْحَةَ بْنَ خِرَاشٍ، قَالَ سَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ، رضى الله عنهما يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " أَفْضَلُ الذِّكْرِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَفْضَلُ الدُّعَاءِ الْحَمْدُ لِلَّهِ "
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহঃ-কে আমি বলতে শুনেছিঃ “লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ" অতি উত্তম যিকর এবং "আলহামদু লিল্লাহ" অধিক উত্তম দুআ।
হাসানঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৮০০),তিরমিজি ৩৩৮৩)
(০২)
হযরত হাসান ইবনে আলী রাযি থেকে বর্ণিত,
وعن الحسين بن علي بن أبي طالب رضي الله عنهما أن النبي صلى الله عليه وسلم قال : ( البخيل الذي من ذكرت عنده فلم يصل عليَّ )
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,বাস্তব কৃপন তো সেই ব্যক্তি যার সামনে আমার নাম উচ্ছারণ করা হল,অথচ সে আমার উপর দুরুদ পাঠ করল না।(সুনানু তিরমিযি-৩৫৪৬)
কোনো মজলিসে একাধিকবার রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নাম উচ্ছারিত হলে প্রথম বার রাসূলুল্লাহ সাঃ এর উপর দুরুদ পাঠ ওয়াজিব।এবং পরের বার দুরুদ পাঠ মুস্তাহাব।তবে এসম্পর্কে ভিন্নমতও রয়েছে।
,
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যেকোনো একবার সংক্ষিপ্ত হলেও দরুদ শরীফ পাঠ করতে হবে।
আরো জানুনঃ
(০৩)
ইল্লালাহ যিকির করা যাবে।
বিস্তারিত জানুনঃ
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ
যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় পরওয়ার দেগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে। {৮:২, সূরা আনফাল-২}
اللَّهُ نَزَّلَ أَحْسَنَ الْحَدِيثِ كِتَابًا مُتَشَابِهًا مَثَانِيَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُودُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمْ وَقُلُوبُهُمْ إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ ذَلِكَ هُدَى اللَّهِ يَهْدِي بِهِ مَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ (23
আল্লাহ উত্তম বাণী তথা কিতাব নাযিল করেছেন, যা সামঞ্জস্যপূর্ণ, পূনঃ পূনঃ পঠিত। এতে তাদের লোম কাঁটা দিয়ে উঠে চামড়ার উপর, যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে, এরপর তাদের চামড়া ও অন্তর আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়। এটাই আল্লাহর পথ নির্দেশ, এর মাধ্যমে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ প্রদর্শন করেন। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন, তার কোন পথপ্রদর্শক নেই। {৩৯:২০, সূরা যুমার-২৩}
وَإِذَا سَمِعُوا مَا أُنْزِلَ إِلَى الرَّسُولِ تَرَى أَعْيُنَهُمْ تَفِيضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُوا مِنَ الْحَقِّ يَقُولُونَ رَبَّنَا آمَنَّا فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِينَ (83
আর তারা রসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা যখন শুনে, তখন আপনি তাদের চোখ অশ্রু সজল দেখতে পাবেন; এ কারণে যে, তারা সত্যকে চিনে নিয়েছে। তারা বলেঃ হে আমাদের প্রতি পালক, আমরা মুসলমান হয়ে গেলাম। অতএব, আমাদেরকেও মান্যকারীদের তালিকাভুক্ত করে নিন। {৫:৮৩, সূরা মায়িদা-৮৩}
ছাহাবায়ে কেরামগনদের অঝর ধারায় তাদের চোখ থেকে অশ্রু বইয়ে যেত। আফসোস আর হাহাকারে মনটা আনচান করে উঠতো। ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে চিৎকার করে নয়, স্বাভাবিক স্বরে ক্রন্দন করতেন।
সুতরাং এটি ছাহাবায়ে কেরামগনদের আমল।
,
তবে যদি কোন দুর্বল চিত্তের মানুষ, নিজের অনিচ্ছায় জোরে চিৎকার করে উঠে, পাগলামী শুরু করে দেয়, হাহাকার করে উঠে সজোরে। তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে অপারগ ধরা হবে। অনিচ্ছায় এমন হওয়ার কারণে সে গোনাহগার হবে না।
,
কিন্তু যদি ইচ্ছেকৃত এমনটি করে। ইচ্ছেকৃত জিকিরের মজলিসে লাফিয়ে উঠে, নাচতে শুরু করে দেয়, হৈ হুল্লোড় করতে থাকে, পাগলামী করতে থাকে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি ফাসিক। মারাত্মক গোনাহগার।
ইমাম আবুল আব্বাস কুরতুবী রহঃ বলেনঃ
وَأَمَّا مَا ابْتَدَعَهُ الصُّوفِيَّةُ فِي ذَلِكَ فَمِنْ قَبِيلِ مَا لَا يُخْتَلَفُ فِي تَحْرِيمِهِ لَكِنَّ النُّفُوسَ الشَّهْوَانِيَّةَ غَلَبَتْ عَلَى كَثِيرٍ مِمَّنْ يُنْسَبُ إِلَى الْخَيْرِ حَتَّى لَقَدْ ظَهَرَتْ مِنْ كَثِيرٍ مِنْهُمْ فِعْلَاتُ الْمَجَانِينِ وَالصِّبْيَانِ حَتَّى رَقَصُوا بِحَرَكَاتٍ مُتَطَابِقَةٍ وَتَقْطِيعَاتٍ مُتَلَاحِقَةٍ وَانْتَهَى التَّوَاقُحُ بِقَوْمٍ مِنْهُمْ إِلَى أَنْ جَعَلُوهَا مِنْ بَابِ الْقُرَبِ وَصَالِحِ الْأَعْمَالِ وَأَنَّ ذَلِكَ يُثْمِرُ سِنِيِّ الْأَحْوَالِ وَهَذَا عَلَى التَّحْقِيقِ مِنْ آثَارِ الزَّنْدَقَةِ وَقَوْلُ أَهْلِ الْمُخَرِّفَةِ وَاللَّهُ الْمُسْتَعَانُ اه
“তথাকথিত সূফীরা উক্ত বিষয়ে এমন সব বিদআত সৃষ্টি করেছে, যেগুলোর হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। সঠিক পথের দাবীদারদের অনেকে উপর প্রবৃত্তি প্রাধান্য লাভ করেছে। সে ফলশ্রুতিতে অনেকেরই পক্ষ থেকে পাগল ও বালকসূলভ আচরণ, যেমন তালে তালে নৃত্য ইত্যাদি প্রকাশ পেয়েছে। এর অশুভ পরিণতি এতদূর পর্যন্ত গড়ায় যে, তাদের কেউ কেউ একে ইবাদতে শামিল করে এবং আমলে সালেহ তথা পূণ্যকর্ম বলে সাব্যস্ত করে। আরো বলে যে, এটা অবস্থার উন্নতি সাধন করে। অতএব, নিশ্চিতরূপে বলা যায় যে, এগুলো চরম ইসলামবিদ্বেষী যিন্দিকদের প্রভাব এবং নির্বোধদের প্রলাপ”। {ফাতহুল বারী-২/৩৬৮, রিসালাতুল মুসতারশিদীন এর টিকা-১১৩-১১৪}
আল্লামা শাতেবী রহঃ তার ‘আলইতসাম’গ্রন্থে আল্লামা আবূ বকর আজুররী থেকে উদ্ধৃত এক দীর্ঘ আলোচনার এক স্থানে উল্লেখ করেনঃ
كَمَا يَفْعَلُ كَثِيرٌ مِنَ الْجُهَّالِ؛ يَصْرُخُونَ عِنْدَ الْمَوَاعِظِ وَيَزْعَقُونَ، وَيَتَغَاشَوْنَ ـ قَالَ: وَهَذَا كُلُّهُ مِنَ الشَّيْطَانِ يَلْعَبُ بِهِمْ، وَهَذَا كُلُّهُ بِدْعَةٌ وَضَلَالَةٌ،
ওয়াজ নসীহতের সময় অধিকাংশ মুর্খরা যে চিৎকার করে উঠে লাফ-ফাল দেয়, মাতাল মাতাল ভাব করে, এ সবই শয়তানী কর্মকান্ড। শয়তান ওদের সাথে খেলা করে। এগুলো বিদআত ও ভ্রষ্টতা। {আলইতিসাম-১/৩৫৬}