আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
195 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (2 points)
আসসালামু আলাইকুম
আমার জানার বিষয় হলঃ

আমাদের সমাজে যে  তৃতীয় লিঙ্গ বিশিষ্ট (হিজরা) আছে তারা লঞ্চ-বাস ট্রেন রাস্তাঘাট ইত্যাদি তে চাঁদা আদায় করে থাকে।আর টাকা না দিলে মানুষকে মানুষের সামনে  বিভিন্ন রকমের লজ্জিত  করে থাকে। আর তারা তো চাদা আর্থিক অভাবে আদায় করেনা। এক্ষেত্রে আমরা তাদেরকে টাকা দেওয়ার সময়  ছদকার নিয়ত করতে পারব কিনা?আর যদি ছদকার নিয়ত করতে না পারি তাহলে আমাদের কি করনীয়।
  হিজড়াদের মৃত্যুর পর  তাদের গোসল  তারা দিবে  নাকি  অন্য কোন মহিলারা দেবে  এবং তাদের কাফনের বিধান কি??
এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে  হিজরা কাদেরকে বলা হয়? অনেকে বলে  হিজড়াদের  একসাথে পুরুষাঙ্গ ও যৌনাঙ্গ উভয়টি থাকে এর বাস্তবতা কি??

1 Answer

+1 vote
by (678,880 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
তারা যদি গরিব মিসকিন হয়ে থাকে,তথা তাদের যদি নেসাব পরিমান সম্পদ না থাকে, তাহলে সদকাহ এর নিয়ত করা যাবে। 

(০২)
ফাতাওয়ার কিতাবে এসেছেঃ

 وَلَا يَخْلُو الْخُنْثَى مِنْ أَنْ يَكُونَ مُشْكِلًا، أَوْ غَيْرَ مُشْكِلٍ، فَإِنْ لَمْ يَكُنْ مُشْكِلًا بِأَنْ تَظْهَرَ فِيهِ عَلَامَاتُ الرِّجَالِ، فَهُوَ رَجُلٌ لَهُ أَحْكَامُ الرِّجَالِ، أَوْ تَظْهَرَ فِيهِ عَلَامَاتُ النِّسَاءِ، فَهُوَ امْرَأَةٌ لَهُ أَحْكَامُهُنَّ وَإِنْ كَانَ مُشْكِلًا، فَلَمْ تَظْهَرْ فِيهِ عَلَامَاتُ الرِّجَالِ وَلَا النِّسَاءِ (المغنى لابن قدامة-7\208)

সারমর্ম হিজড়া যদি গায়রে মুশকিলা হয়,তাহলে পুরুষের আলামত প্রকাশ পেলে তাকে পুরুষ ধরা।
নারীর আলামত প্রকাশ পেলে তাকে নারীর হুকুম দেওয়া হবে।
আর যদি যদি পুরুষ ও নারীর কোন আলামাতই প্রাধান্য না পায়,তাহলে তাকে ফুক্বাহায়ে কেরাম ‘খুনছায়ে মুশকিল’ বলে উদ্ধৃত করেন। অর্থাৎ এমন হিজড়া যার লিঙ্গ নির্ধারণ সম্ভব নয়।

وَأَمَّا بَيَانُ مَا يُعْرَفُ بِهِ أَنَّهُ ذَكَرٌ، أَوْ أُنْثَى، فَإِنَّمَا يُعْرَفُ ذَلِكَ بِالْعَلَامَةِ، وَعَلَامَةُ الذُّكُورَةِ بَعْدَ الْبُلُوغِ نَبَاتُ اللِّحْيَةِ، وَإِمْكَانُ الْوُصُولِ إلَى النِّسَاءِ وَعَلَامَةُ الْأُنُوثَةِ فِي الْكِبَرِ نُهُودُ ثَدْيَيْنِ كَثَدْيَيْ الْمَرْأَةِ وَنُزُولُ اللَّبَنِ فِي ثَدْيَيْهِ وَالْحَيْضُ وَالْحَبَلُ، وَإِمْكَانُ الْوُصُولِ إلَيْهَا مِنْ فَرْجِهَا؛ لِأَنَّ كُلَّ وَاحِدٍ مِمَّا ذَكَرْنَا يَخْتَصُّ بِالذُّكُورَةِ وَالْأُنُوثَةِ فَكَانَتْ عَلَامَةً صَالِحَةً لِلْفَصْلِ بَيْنَ الذَّكَرِ وَالْأُنْثَى. (بدائع الصنائع، كتاب الخنثى، فصل فى بيان ما يعرف به الخنثى أنه ذكر او انثى-7\327)
সারমর্মঃ
হিজড়ার পুরুষ হবার আলামত হল, দাড়ী উঠা, নারীর সাথে সহবাস করার সক্ষমতা থাকা।
আর নারী হবার আলামত হল, স্তন উঠা, হায়েজ আসা, গর্ভধারণের ক্ষমতা থাকা, দুধ আসা, তার যৌনাঙ্গ দিয়ে সহবাস করা সম্ভম হওয়া ইত্যাদি।

উপরোক্ত আলামত প্রকাশ পায় বালেগ হবার পর। বালেগ হবার আগে পুরুষ নারী বুঝার আলামত হল, তার পেশাবের রাস্তা।
যদি পুরুষালী লিঙ্গ দিয়ে পেশাব করে তাহলে পুরুষ, আর যদি নারী লিঙ্গ দিয়ে পেশাব করে তাহলে নারী। আর যদি দু’টি দিয়েই পেশাব করে, তাহলে পেশাব আগে যে অঙ্গ দিয়ে বের হয়, সেই অঙ্গ হিসেবে নারী পুরুষ নির্ধারিত হবে। অর্থাৎ যদি পেশাব প্রথমে পুরুষাঙ্গ দিয়ে বের হয়, তাহলে পুরুষ আর যদি নারী অঙ্গ দিয়ে বের হয়, তাহলে তাকে নারী ধরা হবে।
আর যদি উভয়টা দিয়ে একই সময়ে বের হয়, তাহলে তাকে খুনছায়ে মুশকিল বলবে।

হাদিস

عَنﺍﻟْﺤَﺴَﻦُ ﺑْﻦُ ﻛَﺜِﻴﺮٍ , ﺳَﻤِﻊَ ﺃَﺑَﺎﻩُ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺷَﻬِﺪْﺕُ ﻋَﻠِﻴًّﺎ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ، ﻓِﻲ ﺧُﻨْﺜَﻰ ، ﻗَﺎﻝَ " : ﺍﻧْﻈُﺮُﻭﺍ ﻣَﺴِﻴﻞَ ﺍﻟْﺒَﻮْﻝِ ، ﻓَﻮَﺭِّﺛُﻮﻩُ ﻣِﻨْﻪُ " 

ভাবার্থঃ-হাসান ইবনে ক্বাসির তার বাবাকে বলতে শুনেছেন,তিনি বলেনঃআমি হযরত আলী রাঃ কে দেখেছি তিনি খুনছা(হিজরা)দের বিষয়ে বলেনঃ তোমরা প্রস্রাব প্রবাহিত হওয়ার স্থান দেখে তাদেরকে (পুরুষ-মহিলা রূপে সাব্যস্ত করো এবং)ওয়ারিছ বানাও।(সুনানে বায়হাক্বী-১১৫৯১)

অন্যত্র বর্ণিত রয়েছে

ﻓﻘﺎﻝ ﻋﻠﻲ - ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ - : ﺇﻥ ﺑﺎﻝ ﻣﻦ ﻣﺠﺮﻯ ﺍﻟﺬﻛﺮ ﻓﻬﻮ ﻏﻼﻡ ، ﻭﺇﻥ ﺑﺎﻝ ﻣﻦ ﻣﺠﺮﻯ ﺍﻟﻔﺮﺝ ﻓﻬﻮ ﺟﺎﺭﻳﺔ .

হযরত আলী রাঃ বলেনঃযদি সে পুঃলিঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করে তাহলে সে বালক,আর যদি সে স্ত্রীঃলিঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করে তাহলে সে বালিকা।(আসসুনানুল কুবরা-১২১৮৬)

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন, 
যে হিজড়ার বাহ্যিক অবয়ব পুরুষের মত,(দাড়ি গজানো ইত্যাদি) তার  মৃত্যুর পর তার লাশের ক্ষেত্রে পুরুষ মাইয়েতের বিধান প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ গোসল দেয়া, কাফন পরানো, দাফন করা ও জানাযার নামাযসহ সবই পুরুষের মত করা হবে।
আর যে হিজড়ার অবয়ব নারী সদৃশ এবং তার মধ্যে মেয়েলি নিদর্শনই প্রবল তার মৃত্যুর পর  উল্লেখিত সকল ক্ষেত্রে মহিলা মাইয়্যেতের বিধান প্রযোজ্য হবে।

(কিতাবুল আছল ৯/৩২২; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৪/১৪৯।)

তবে হিজড়া যদি মুশকিলাহ হয়,সেক্ষেত্রে বিধান ভিন্ন।
তার গোসলের বিধান হলোঃ

وَأَمَّا حُكْمُ غُسْلِهِ بَعْدَ الْمَوْتِ فَلَا يَحِلُّ لِلرَّجُلِ أَنْ يُغَسِّلَهُ لِاحْتِمَالِ أَنْ يَكُونَ أُنْثَى وَلَا يَحِلُّ لِلْمَرْأَةِ أَنْ تُغَسِّلَهُ لِاحْتِمَالِ أَنَّهُ ذَكَرٌ وَلَكِنَّهُ يُيَمَّمُ، كَانَ الْمُيَمِّمُ رَجُلًا، أَوْ امْرَأَةً، غَيْرَ أَنَّهُ إنْ كَانَ ذَا رَحِمٍ مَحْرَمٍ مِنْهُ يَمَّمَهُ مِنْ غَيْرِ خِرْقَةٍ، وَإِنْ كَانَ أَجْنَبِيًّا يَمَّمَهُ بِالْخِرْقَةِ وَيَكُفُّ بَصَرَهُ عَنْ ذِرَاعَيْهِ. (بدائع الصنائع، كتاب الخنثى، فَصْلٌ فِي حُكْمُ الْخُنْثَى الْمُشْكِلِ-7\328)

সারমর্মঃ  এই জাতীয় হিজড়া মারা গেলে পুরুষ তাকে গোসল দিতে পারবে না যেহেতু নারী হবার সম্ভাবনা আছে। নারীও দিতে পারবে না, যেহেতু পুরুষ হবার সম্ভাবনা আছে। তাই তাকে তায়াম্মুম করিয়ে দিবে। মাহরাম হলে তার হাত দিয়েই তায়াম্মুম করাবে।
আর যদি গায়রে মাহরাম তায়াম্মুম করাতে আসে, তাহলে হাতে কাপড় পেঁচিয়ে তারপর তায়াম্মুম করাবে।

তার কাফনের বিধান হলোঃ

(قَوْلُهُ وَخُنْثَى مُشْكِلٌ كَامْرَأَةٍ فِيهِ) أَيْ فَيُكَفَّنُ فِي خَمْسَةِ أَثْوَابٍ احْتِيَاطًا لِأَنَّهُ عَلَى احْتِمَالِ كَوْنِهِ ذَكَرًا فَالزِّيَادَةُ لَا تَضُرُّ قَالَ فِي النَّهْرِ إلَّا أَنَّهُ يُجَنَّبُ الْحَرِيرَ وَالْمُعَصْفَرَ وَالْمُزَعْفَرَ احْتِيَاطًا (رد المحتار، باب صلاة الجنازة-2\204)
সারমর্মঃ
নারীদের মত কাফন দেয়া হবে হিজড়ায়ে মুশকিলাহ দের।
তথা পাঁচ কাপড় দেওয়া হবে।

শরীয়তের দৃষ্টিতে  হিজরা কাদেরকে বলা হয়,হিজড়া সংক্রান্ত  বিস্তারিত জানুনঃ  


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...