আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
703 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রশ্ন হলোঃ আমি যদি আমার বউয়ের সাথে প্রচন্ড রাগান্বিত অবস্থায় ঝগড়া করতে থাকি এবং ঝগড়ার এক পর্যায়ে আমি বলি৷ ১ তালাক, ২ তালাক এবং ৩ তালাক। বলার সাথে সাথেই আমি অনুতপ্ত হই। বউয়ের কাছে ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে থাকি। এখন আমাদের তালাক কি হবে? যদি ফিরিয়ে আনার সুযোগ থাকে তাহলে সে উপায় কি? বিস্তারিত যদি আমাকে একটু জানান। আমি প্রচন্ড অনুতপ্ত।
আর যদি ২ তালাক হয় তাহলে ফিরিয়ে আনার উপায় কি? কতো দিনের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে? তালাক দেয়ার সময় সে হায়েজ(পিরিয়ড) অবস্থায় ছিলো।

1 Answer

+1 vote
by (61,230 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

তালাক অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয়। কেউ এই ক্ষমতার অপব্যবহার করলে কিংবা ভুল পন্থায় তা প্রয়োগ করলে সে একদিকে যেমন গুনাহগার হবে অন্যদিকে তালাকও কার্যকর হয়ে যাবে। তাই প্রতিটি বিবেচক স্বামীর দায়িত্ব হল, তালাকের শব্দ কিংবা এর সমার্থক কোনো শব্দ মুখে উচ্চারণ করা থেকে সতর্কতার সাথে বিরত থাকা।

অবশ্য অতীব প্রয়োজনে তালাক প্রদানে বাধ্য হলে স্ত্রীর পবিত্র অবস্থায় শুধু এক তালাক দিয়ে ক্ষান্ত হওয়া উচিত। এভাবে বলবে যে, ‘তোমাকে তালাক দিলাম।’ তালাকের সাথে ‘বায়েন’ শব্দ কিংবা ৩ সংখ্যা ব্যবহার করবে না। কেউ ‘বায়েন’ শব্দ বলে ফেললে (চাই তা এক বা দুই তালাক হোক না কেন) নতুন করে শরীয়তসম্মত পন্থায় বিবাহ দোহরানো ছাড়া স্ত্রীর সাথে পুনরায় মিলনের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।

https://ifatwa.info/4167/ নং আমরা উল্লেখ করেছি যে, স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তালাক লেখা,বা উচ্চারণ করার দ্বারাই স্ত্রীর উপর তালাক পতিত হয়ে যায়।এজন্য তালাক শব্দটি স্ত্রীর নিজে শোনা যেমন জরুরী নয়, তেমনি সংবাদ স্ত্রীর কাছে পৌছানোও জরুরী নয়। এমনিতেই তালাক পতিত হয়ে যায়। বাকি স্ত্রীকে জানিয়ে দেয়া জরুরী যেন স্ত্রী ইদ্দত পালন করে স্বাধীন হয়ে যেতে পারে।

সে হিসেবে মুঠোফোনে তালাক এসএমএস করে,বা মুখে  দিলেও তা পতিত হয়ে যায়। কারণ স্ত্রী উদ্দেশ্য করে মুখে তালাক বললেই যেখানে তালাক হয়ে যায়, সেখানে মুঠোফোনে বলার দ্বারা তালাক পতিত হতে কোন প্রতিবন্ধকতাই সৃষ্টি হচ্ছে না। তালাকতো স্বামীর মুখে বলার দ্বারাই হয়ে যাচ্ছে। সেটি মুঠোফোনের মাধ্যমে পৌছুক বা না পৌছুক এর সাথে তালাক পতিত হওয়া ও পতিত না হবার কোন সম্পর্কই নেই। তাই আলাদাভাবে মুঠোফোনের দ্বারা তালাক পতিত হবার কোন তফাৎ নেই। আশা করি বিষয়টি পরিস্কার হয়েছে।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” ثَلَاثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ: الطَّلَاقُ، وَالنِّكَاحُ، وَالرَّجْعَةُ

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, তিনি বিষয় এমন যে, ইচ্ছেকৃত করলে ইচ্ছেকৃত এবং ঠাট্টা করে করলেও ইচ্ছেকৃত বলে ধর্তব্য হয়। তা হল, তালাক, বিবাহ এবং তালাকে রেজয়ীপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২০৩৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৯৪}

رَجُلٌ اسْتَكْتَبَ مِنْ رَجُلٍ آخَرَ إلَى امْرَأَتِهِ كِتَابًا بِطَلَاقِهَا وَقَرَأَهُ عَلَى الزَّوْجِ فَأَخَذَهُ وَطَوَاهُ وَخَتَمَ وَكَتَبَ فِي عُنْوَانِهِ وَبَعَثَ بِهِ إلَى امْرَأَتِهِ فَأَتَاهَا الْكِتَابُ وَأَقَرَّ الزَّوْجُ أَنَّهُ كِتَابُهُ فَإِنَّ الطَّلَاقَ يَقَعُ عَلَيْهَا(الفتاوى الهندية، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى الطلاق بالكتابة-1/379، رد المحتار، كتاب الطلاق، مطلب فى الطلاق بالكتابة-4/456، المحيط البرهانى، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى ايقاع الطلاق بالكتاب-4/486، تاتارخانية، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى ايقاع الطلاق بالكتاب-3/380)

যার সারমর্ম হলো স্ত্রীর উদ্দেশ্যে  কোথাও তালাক লিখে তাকে পাঠালেই তালাক পতিত হয়ে যাবে।

وقال الليث عن نافع كان ابن عمر إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيرك

হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রাঃ এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো,তখন তিনি বলেন-“যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা] করতে পার। কারণ,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। {সহীহ বুখারী-২/৭৯২, ২/৮০৩}

একসাথে তিন তালাক দেওয়া জায়েয না হলেও কেউ যদি এই নাজায়েয কাজ করে তাহলে তার স্ত্রীর উপর তিন তালাক ঠিকই পতিত হয়। এক্ষেত্রে তার মৌখিকভাবে রুজু করার অধিকার অবশিষ্ট থাকে না। এমনকি নতুন করে বিবাহ দোহরিয়ে নেওয়ার দ্বারাও তারা একে অপরের জন্য হালাল হতে পারে না। তাই সকল স্বামীরই কর্তব্য, প্রথম থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা। মুখ দিয়ে কখনো তিন তালাক কিংবা তালাক, তালাক, তালাক শব্দ উচ্চারণ না করা। আর আগেই দুই তালাক দিয়ে থাকলে এখন আর তৃতীয় তালাকের চিন্তাও না করা।

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

 সংখ্যা উল্লেখ করা ছাড়া যদি কেউ তার স্ত্রীকে শুধু তালাক বলে তাহলে এক তালাকে রজয়ী হবে। আর যদি তিন তালাক দেয় বা তালাক শব্দটি তিন তিন বার উচ্চারণ করে তাহলে তিন তালাক হয়ে যাবে। তিন তালাকের পর স্ত্রীকে আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। চায় অনেক বৎসর পরই দেয়া হোক না কেন। তৃতীয় তালাকের পর উক্ত স্ত্রীর অন্য কোথাও বিয়ে হলে, এবং উক্ত দ্বিতীয় স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে, তখন পূনরায় আবার প্রথম স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যাবে। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন:

https://ifatwa.info/30520/?show=30520#q30520

তবে যদি কেউ এক তালাক বা দুই তালাক দিয়ে থাকে,তাহলে শরীয়তের  বিধান হল, দুই তালাক বা এক তালাক দেয়ার পর স্বামীর অধিকার থাকে, স্ত্রীকে ইদ্দত তথা তিন হায়েজ অতিক্রান্ত হওয়ার আগে রাজআত করা তথা স্ত্রীকে স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে আনা। এতে কোন কিছুর প্রয়োজন নেই।

 কিন্তু যদি তিন হায়েজ অতিক্রান্ত হওয়ার আগে স্ত্রীকে ফিরিয়ে না আনা হয়, তাহলে স্ত্রীকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে নতুন করে মোহর ধার্য করে বিবাহ করা আবশ্যক। নতুবা স্বামী স্ত্রী হিসেবে উভয়ের বসবাস করা জায়েজ নয়। (ফাতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ-৯/৪৪১,২৪৫)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...