আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
77 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (1 point)
শায়েখ আমি একজন বিবাহিতা নারী। আমার দুজন সন্তান রয়েছে তারা মাদ্রাসায় পড়া শুনা করে৷ আমার স্বামী প্রবাসে থাকেন। আমি ৫ বছর যাবত ব্ল্যাক ম্যাজিকে আক্রান্ত। যেটা আমি ৫ বছর যাবত অসুস্থতা মনে করে বিভিন্ন চিকিৎসা সেবা নিয়েছি ভালো ভালো ডাক্তার থেকে। কিন্তু কোনো পরিত্রাণ পাইনি। ৫ বছর পর বিভিন্নভাবে আলেমওলাদের পরামর্শের একজন অভিজ্ঞ রাকীর শরন্নাপন্ন হই। তখনই জিনিসটা আমাদের সকলের সামনে আসে যে,  আমি ৫ বছর যাবত জিনে আক্রান্ত এবং ব্ল্যাক ম্যাজিকে আক্রান্ত। যে ক্ষতি করছে সে আমার স্বামীর ফ্যামিলিদেরই একজন। যার কারনে সব সময় আমার স্বামীর সাথে আমার দন্দ লাগিয়ে দিতেন আমার শাশুড়ী। তখন আমার স্বামীর সাথে মন মালিন্য হলে  আমার স্বামী আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতো । প্রতিনিয়ত আমাদের ঝগড়া হতো, আর একটু থেকে কিছুই হইলেই আমাকে বার বার বলতো তোর  সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তোর খবর আমি জানিনা। তারপর কিছুদিন যাবত শুধু বলতো তুই আমাকে তালাক দে, এখন ডিভোর্স পেপার পাঠা। এইগুলো প্রতিনিয়তই বলতো। একদিন আমার ইন্টারনেট বন্ধ থাকায়, পরে নেট চালু করলে আমার স্বামী আমাকে ইমোতে কল দিয়ে প্রচুর গালাগালি করে বলে তোর নেট অফ কেনো। তখন আমি বলি আপনি সারাদিন আমার নামে অপবাদ দেন এজন্য কথা বলতে ভালো লাগেনা। এই কথা বলার সাথে সাথে আমার স্বামী উত্তেজিত হয়ে আমাকে বলে আর একবার এইকথা বললে তোরে তালাক দিবো। তখন আমি ও ক্ষিপ্ত হয়ে বলছি আমি তো ঠিকই বলছি। আপনি তো সব সময় আমার নামে অপবাদ দেন। একথা বলার সাথে সাথেই আমার স্বামী ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে বলেন তোকে আজকে একতালাক দিলাম। এইভাবে বাকি দুই মাসে ২ তালাক দিবো। এইবলে প্রচুর গালাগালি করে এবং আবার ক্ষিপ্ত হয়ে বলে এক তালাক, একতালাক, একতালাক, এই একতালাক শব্দটি অসংখ্যবার উচ্চারণ করেছে। মানে তিনবারের অধিক। মোবাইল টি লাউড স্পিকারে ছিলো যা আমি এবং আমার বড় সন্তানে শুনেছি। এর পর আমি ভিবিন্ত মুফতীর শরনাপন্ন হয়েছি, ম্যাক্সিমাম মুফতী গনই বলছেন ৩ তালাক হয়ে গেছে। কিছু আলেম বলছেন হয়নি পুনরায় বিবাহ পড়তে হবে আমাদের। কিন্তু তিন তালাক ভেবেই একমাস যাবত কথা বলা থেকে বিরত থেকেছি আমার স্বামীর সাথে। একমাস পরে আবার ফ্যামিলির প্রেসারে উনার কাছে যেতে বাধ্য হই। তখন ও আমাদের তেমন ভালো কথা হতোনা। অল্পতেই ঝগড়া লেগে যেতো। আর আমার স্বামী বেশি অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতো, বিশেষ করে আমার শরীরের সেনসিটিভ পার্ট গুলো নিয়ে আজে বাজে মন্তব্য করতো, আর একটু ঝগড়া হলেই আমাকে সব সময় বলতো তুই আমাকে তালাক দে, ডিভোর্স দে এখনই কোর্টে গিয়ে ডিভোর্স লেটার পাঠা । এইগুলা প্রতিনিয়ত বলতো। একটা সময় আমি ও চাইতাম না উনার সাথে আমার আর সম্পর্ক থাকুক। তাই উনি যখন একদিন আমাকে আবার প্রেসার করলো। তুই আমাকে ডিভোর্স দে, তখন আমি বললাম আপনি আমাকে অনুমতি দিচ্ছেন। তখন  উনি বললো হুম অনুমতি দিলাম। এরপর আমি উনাকে তিন তালাক দিয়ে দেই।
শায়েখ আমাদের পরিবার এখনো চাচ্ছে যে আমি উনার সাথে আবার সংসার করি। উপরোক্ত ঘটনা অনুযায়ী আমাদের সম্পূর্ণ বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে কিনা? বা পুনরায় যাওয়ার কোনো উপায় আছে কিনা।

শায়েখ আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি খুবি অসুস্থ, এখনো আমার শরীরে জিন আসে যায়। এখনো আমি আগের মতই অসুস্থ। আমি এই নিয়ে ৫-৬ জন এর উপরে কুরাআন সুন্নাহ ভিত্তিক অভিজ্ঞ রাকীর শরনাপন্ন হয়েছি। উনাদের প্রত্যেকেরই চিকিৎসা সেবার নেওয়ার পর ১০-১৫ যাবত সম্পুর্ন সুস্থ থাকি। এরপরই আবার আমার উপর সেই একই ব্যাক্তি চিন চালান করে দেয় তার কবিরাজের মাধ্যমে। এইভাবেই আমার দিনাতিপাত হচ্ছে।

1 Answer

0 votes
by (678,880 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

শরীয়তের বিধান হলো এব বৈঠকে ৩ তালাক দেওয়া হোক,বা একাধিক বৈঠকে,
এক শব্দে ৩ তালাক দেওয়া হোক বা একাধিক শব্দে ৩ তালাক দেওয়া হোক,সব ছুরতেই ৩ তালাকই পতিত হয়ে যাবে।       

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার উপর তিন তালাক পতিত হয়ে গিয়েছে।      

এক্ষেত্রে সূরত একটিই বাকি আছে। তা হল, আপনার অন্যত্র বিবাহ হতে হবে।তারপর সেই স্বামীর সাথে স্বাভাবিক ঘর সংসার করতে হবে। এমনকি শারিরীক সম্পর্ক হতে হবে। তারপর উক্ত স্বামী যদি আপনাকে তালাক দেয়, তারপর ইদ্দত শেষ হয়, তাহলেই কেবল আপনি আবার উক্ত স্বামীর সাথে বিবাহ বসতে পারবেন। এবং আবার ঘর সংসার করতে পারবেন। এছাড়া দ্বিতীয় কোন রাস্তা খোলা নেই।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٢:٢٣٠] 

তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে,তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়,তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা;যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। [সূরা বাকারা-২৩০]

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

وقال الليث عن نافع كان ابن عمر إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيرك

হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রাঃ এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো,তখন তিনি বলেন-“যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা] করতে পার। কারণ,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। {সহীহ বুখারী-২/৭৯২, ২/৮০৩}

عن مجاهد قال كنت عند ابن عباس فجاء رجل فقال إنه طلق امرأته ثلاثا. قال فسكت حتى ظننت أنه رادها إليه ثم قال ينطلق أحدكم فيركب الحموقة ثم يقول يا ابن عباس يا ابن عباس وإن الله قال (وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا) وإنك لم تتق الله فلم أجد لك مخرجا عصيت ربك وبانت منك امرأتك

অর্থ: হযরত মুজাহিদ রহঃ. বলেন,আমি ইবনে আব্বাস রাঃ-এর পাশে ছিলাম। সে সময় এক ব্যক্তি এসে বলেন-‘সে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ চুপ করে রইলেন। আমি মনে মনে ভাবছিলাম-হয়ত তিনি তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার কথা বলবেন (রুজু করার হুকুম দিবেন)। কিছুক্ষণ পর ইবনে আব্বাস রা. বলেন,তোমাদের অনেকে নির্বোধের মত কাজ কর;[তিন তালাক দিয়ে দাও!] তারপর ‘ইবনে আব্বাস! ইবনে আব্বাস! বলে চিৎকার করতে থাক। শুনে রাখ আল্লাহ তা‘য়ালা বাণী-“যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘য়ালাকে ভয় করে আল্লাহ তা‘য়ালা তার জন্য পথকে খুলে দেন। তুমিতো স্বীয় রবের নাফরমানী করেছো [তিন তালাক দিয়ে]। এ কারণে তোমার স্ত্রী তোমার থেকে পৃথক হয়ে গেছে। {সুনানে আবু দাউদ-১/২৯৯, হাদীস নং-২১৯৯, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৪৭২০, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৪৩}

আরো জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...