ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
https://ifatwa.info/4188/ নং
ফাতাওয়াতে বলেছি যে,
★নিয়ত মানে
হল মনস্থির করা। কোন কাজটি করছি?
কেন করছি? কার জন্য করছি? কি করছি? এসব বিষয় নির্ধারণ করার নাম হল নিয়ত।
প্রতিটি কাজের সওয়াব পাবার জন্য নিয়ত থাকা আবশ্যক।
নিয়ত বাংলায় বা আরবীতে বলা জরুরী নয়। আরবীতে যেসব নিয়ত আমাদের দেশে প্রচলিত
এসব শব্দে কোন নিয়ত কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়।তবে এসব নিয়তগুলো মূলত আমরা
মনে মনে যে বিষয়গুলোর নিয়ত করে থাকি, তারই আরবীতে
প্রকাশিত রূপ। এসব সুন্নাত মনে না করে এমনিতে পড়তে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু সুন্নত
মনে করলে বিদআত হবে।
মূল কথা, নামাযের
নিয়তের জন্য আরবীতে মুখে নিয়ত করার প্রমাণ নেই। মনে মনে নিয়ত করলেই যথেষ্ট।
হাদীস শরীফে এসেছে
عَنْ عُمَرَ بْنِ
الْخَطَّابِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ «إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ
وَإِنَّمَا لِامْرِئٍ مَا نَوٰى فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهٗ إِلَى اللهِ
وَرَسُوْلِه فَهِجْرَتُهٗ إِلَى اللهِ وَرَسُولِه وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهٗ اِلٰى
دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوِ امْرَأَةٍ يَتَزَوَّجُهَا فَهِجْرَتُهٗ إِلٰى مَا هَاجَرَ
إِلَيْهِ»
‘উমার ইবনুল
খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিয়্যাতের উপরই কাজের ফলাফল নির্ভরশীল।
মানুষ তার নিয়্যাত অনুযায়ী ফল পাবে। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের
সন্তুষ্টির জন্য হিজরত করবে,
তার হিজরত
আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সন্তুষ্টির জন্যই গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার
স্বার্থপ্রাপ্তির জন্য অথবা কোন মহিলাকে বিবাহের জন্য হিজরত করবে সে হিজরত তার
নিয়্যাত অনুসারেই হবে যে নিয়্যাতে সে হিজরত করেছে। সহীহ : বুখারী ১, মুসলিম ১৯০৭, তিরমিযী ১৬৩৭, নাসায়ী ৭৫, আবূ দাঊদ ২২০১, ইবনু মাজাহ্
৪২২৭, আহমাদ ১৬৯, ৩০২।
,
তবে কিছু উলামায়ে কেরামগন নামাজের শুরুতে মুখে নিয়ত করাকে পুরোপুরি ভাবে বিদয়াত বলে আখ্যায়িত করেছেন।
তারা কিছু রেফারেন্স দেনঃ
*হাফিয ইবনুল ক্বাইয়্যিম রহ. বলেনঃ
মুখে নিয়ত পাঠ করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈ কারো হতেই কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।
মুখে পাঠের এই পদ্ধতি শয়তানের একটি কুমন্ত্রণা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম যখন নামাযে দাঁড়াতেন তখন শুধু “আল্লাহু আকবার” বলতেন। আর আগে কিছু বলতেন
না। সুতরাং মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত পাঠ করা বিদআত। চার ইমামও এরূপ নিয়তনামা পড়াকে
পছন্দ করেন নি। [ইগাসাতুল লাহফান,
১/১৩৬ ।।
যাদুল মাআদ, ১/৫১]
.
“আরবি নিয়ত শব্দের অর্থ হল মনে ইচ্ছা পোষণ
করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এটা প্রমাণিত নেই। না প্রমাণিত
আছে কোন সাহাবী এবং তাবেঈ থেকেও। তাই মুখে নিয়ত পাঠ করা বিদআত।” [ফাতাওয়া আরকানুল
ইসলাম, ৩৩৯-৩৪০
পৃষ্ঠা]
,
*মোল্লা আলী কারী রহ. বলেন:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ত্রিশ হাজার ওয়াক্ত নামায আদায় করেছেন।
তথাপি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এই কথা বর্ণিত নেই যে, আমি অমুক অমুক ওয়াক্ত নামাযের নিয়ত করছি।
সুতরাং মুখে নিয়ত উচ্চারণ না করাটাই সুন্নাত। জেনে রাখুন, শব্দ উচ্চারণ করে মুখে নিয়ত করা জায়েজ নয়।
কারণ এটা বিদআত। সুতরাং যে কাজ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেন নি তা যে
করে সে বিদআতি। [দেখুনঃ মিরকাত,
১/৩৬-৩৭]
,
সুতরাং সালাত শুরু করার পূর্বে কোন সালাত, কয় রাকআত, তা ফরয, সুন্নত না
কি নফল এ বিষয়গুলো অন্তরে জাগ্রত থাকলে তাই নিয়তের জন্য যথেষ্ট।
যেহেতু এক্ষেত্রে উলামায়ে কেরামদের মতবিরোধ রয়েছে,তাই জরুরি,সুন্নাত মনে
না করে পড়া যদিও জায়েজ আছে,তব সতর্কতামূলক মুখে নিয়ত না করাই উচিত বলে মনে করছি। অন্তর থেকেই নিয়ত করে নিবে।
★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
সালাত শুরু করার পূর্বে কোন সালাত, কয় রাকআত, তা ফরয, সুন্নত না
কি নফল এ বিষয়গুলো অন্তরে জাগ্রত থাকলে তাই নিয়তের জন্য যথেষ্ট। তবে যেহেতু মুখে
উচ্চারণ করে নিয়ত করার ক্ষেত্রে উলামায়ে কেরামদের মতবিরোধ রয়েছে, তাই জরুরি,সুন্নাত বা মুস্তাহাব
মনে না করে পড়া যদিও জায়েজ আছে,তবে সতর্কতামূলক মুখে নিয়ত না করাই উচিত বলে মনে
করছি। তবে অবশ্যই অন্তর থেকেই নিয়ত করে নিবে।