উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
আসমান যমিন গ্রহ নক্ষত্র সহ সমগ্র কিছুর সৃষ্টি কর্তা যেমন মহান আল্লাহ তায়ালা,ঠিক তেমনই ভাষারও সৃষ্টিকর্তা মহান রব্বুল আলামীনই।
ভাষা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনঃ
ভাষা আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি-নিদর্শন
আন্তর্জাতিক ভাষা গবেষণা প্রতিষ্ঠান এথনোলগ -এর তথ্যানুসারে পৃথিবীতে বর্তমানে মোট ভাষার সংখ্যা ৭,১০৫ টি। তন্মধ্যে বাংলাদেশেই আছে ৪৪টি। ভাষাভাষীদের সংখ্যার দিক থেকে পৃথিবীতে বাংলা ভাষার অবস্থান ৭ম। পৃথিবীর ২০২ মিলিয়ন মানুষ এ ভাষায় কথা বলে, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৩.০৫ শতাংশ।
.
সব প্রাণীই একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে থাকে। তবে মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী শব্দ তৈরি করতে পারে না। পাখি গান গায়, নির্দিষ্ট কিছু ডাক দেয়। অন্যান্য পশু শারীরিক ইঙ্গিত ও কিছু ধ্বনির ব্যবহার করে, যা সীমিত। তবে মানুষই একমাত্র তার আনলিমিটেড ভাব প্রকাশে আনলিমিটেড শব্দ তৈরি করতে পারে। ভাষার অরিজিন বা উৎপত্তি কোথা থেকে, এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের কাছে কোনো সদুত্তর নেই। মূলত মানুষের উৎপত্তি নিয়ে যেমন তাদের কোনো সদুত্তর নেই, ঠিক তেমনি ভাষার উৎপত্তি নিয়েও তাদের কোনো উত্তর নেই। বিবর্তনবাদীরা বলেন, মানুষও এক সময় পশুর মতো ইঙ্গিত ও ধ্বনি ব্যবহার করত, এরপর হঠাৎ করেই আবিষ্কার করলো যে সে বিভিন্ন শব্দ তৈরি করতে পারছে। এরপর তারপর এরপর... শেষকথা, নির্দিষ্টভাবে জানা যায় না ভাষা কীভাবে আসল।
অথচ আল-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্টভাবে জানাচ্ছেন,
...وعلم أدم الأسماء كلها ثم عرضهم علي الملأئكة فقال
"আর তিনি আদমকে শেখালেন সমস্ত বস্তু-সামগ্রীর নাম। তারপর সে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীকে ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। অতঃপর বললেন, আমাকে তোমরা এগুলোর নাম বলো, যদি তোমাদের বক্তব্য সত্য হয়ে থাকে।" [সূরা বাকারা: ৩১]
এ আয়াতে এটা সুস্পষ্ট যে, পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদম (আ.) -কে সৃষ্টির পর আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সকল বস্তুর নাম শেখান। আমরা জানি, ভাষা হচ্ছে মনের ভাব প্রকাশ। আর ভাব প্রকাশের প্রাথমিক উপাদান হলো শব্দভাণ্ডার বা ভোকাবুলারি, যা আল্লাহ তায়ালা এই আয়াতে আদম (আ.) -কে শিখিয়েছেন বলে জানালেন। ফলে ভাষা যে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি, তা আর বলার অপেক্ষা থাকে না।
বরং ভাষাকে আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিদর্শন বলেও উল্লেখ করেন।
ومن آياته خلق السماوات والأرض واختلاف الالسنتكم والوانكم ان في ذلك لآ يأتي للعالمين
"তাঁর আরো এক নিদর্শন হচ্ছে, নভোমন্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি, এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানীদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।" [সূরা রুম: ২২] এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালাকে ভাষার বৈচিত্র্যকে তাঁর নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেন।
.
কারণ হিসেবে মুফাসসিরগণ বলেন, হাত-পা-মুখমণ্ডলসহ সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ একই হওয়া সত্ত্বেও নানা মানুষ নানা ভাষায় কথা বলছে, একে অপরের সাথে যোগাযোগ করছে, এটা তাঁর নিদর্শন বৈ কি! বরং মানুষের ভাষাকে গুরুত্ব দিয়ে আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক নবি-রাসূলকে তাঁদের স্বজাতীয় ভাষায় পাঠিয়েছেন।
.
...وما أرسلنا من رسول إلا بلسان قومه
"আমি সব নবি-রাসূলকেই তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে পরিষ্কার বোঝাতে পারে।" [সূরা ইবরাহীম: ৪]
.
কাজেই এটা স্পষ্ট যে, ভাষা আল্লাহ তায়ালার একটি বিশেষ নিয়ামত। আর নিয়ামতের সর্বোত্তম শুকরিয়া হলো নিয়ামতকে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করা। ভাষার অপব্যবহার এই নিয়ামতের অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ। কাজেই এর শাস্তিও কঠিন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, "(কল্পনা করো সেদিনের কথা) যেদিন তাদের জিহ্বা (ভাষা), তাদের হাত ও তাদের পা, তারা যা কিছু করত তা প্রকাশ করে দেবে"। [সূরা নূর: ২৪]
.
ভাষার অপব্যবহারের চেয়ে বরং চুপ থাকা উত্তম। রাসূল স. বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ও ক্বিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে নতুবা চুপ থাকে। [বুখারি ও মুসলিম]।
.
একজন মুসলিম হিসেবে তাই ভাষার সম্মান হবে ভাষাকে উত্তম কথা ও কাজে ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে। উত্তম কাজ হতে পারে ঈমানের কথা, নৈতিক ও চারিত্রিক উন্নয়নের কথা, সৎ কাজের আহ্বান, অশ্লীলতা ও নষ্টামি পরিত্যাগের আহ্বান, মানবোন্নয়নের আহ্বান ইত্যাদি। রাসূল (স.) বলেন, "নিশ্চয়ই কিছু কিছু বক্তব্য জাদুর মতো"। [বুখারি: ৫৪৩৪] অর্থাৎ এসব বক্তব্য ও ভাষার ব্যবহার মানুষ মুগ্ধ হয়ে শুনে ও পাঠ করে। এগুলো মানুষের মাঝে অস্বাভাবিক প্রভাব ফেলে।
আমাদের চেষ্টা করতে হবে ভাষার সে যাদুময়ী ব্যবহার আয়ত্ত করে মানুষকে সততার দিকে আহ্বান করা। তাহলেই ভাষা-নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় হবে।
,
★উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা স্পষ্ট হলো যে সবকিছুর ন্যায় ভাষারও সৃষ্টিকর্তা মহান রব্বুল আলামীনই।