বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
স্বল্পভাষিতা বা কম কথা বলা মানুষের মহৎ
গুণগুলোর একটি। এ অভ্যাস বিপদ থেকে বেঁচে থাকার মন্ত্রবিশেষ। দুনিয়ার জীবনে মানুষ
নিজ হাতে সৃষ্ট যত বিপদে পড়ে অনেকাংশেই সেগুলো তার কথার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে থাকে।
পাশাপাশি এর পরকালীন অনিষ্ট তো রয়েছেই। দুনিয়া ও পরকালের সার্বিক কল্যাণের কথা
বিবেচনা করে স্বভাবধর্ম ইসলামে স্বল্পভাষিতাকে উৎসাহিত করা হয়েছে।
হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে এর নানাবিধ
উপকার ও গুরুত্বের কথা। পাশাপাশি রয়েছে বেশি কথা বলার ক্ষতির বিষয়টিও। আমরা যদি
আমাদের সামাজিক জীবনাচরণের দিকে খেয়াল করি তাহলে দেখব, যারা কথা বেশি বলে সমাজের চোখে তাদের
মর্যাদা খুব উন্নত নয়। কারও কারও ক্ষেত্রে ‘কথা বেশি বলা’ অন্যদের নিকট
মহাযন্ত্রনার কারণ বিবেচিত হয়। আর যে কথার চেয়ে কাজে মনোযোগী হয় বেশি, তার আলাদা একটা মর্যাদা থাকে সবার কাছে; ধন-সম্পদ তার যেমনই থাকুক না কেন।
সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে
বর্ণিত, হজরত রাসূলে
কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন,
حَدَّثَنَا
قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا ابْنُ لَهِيعَةَ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ عَمْرٍو
الْمُعَافِرِيِّ، عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْحُبُلِيِّ، عَنْ عَبْدِ
اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم "
مَنْ صَمَتَ نَجَا " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لاَ
نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ حَدِيثِ ابْنِ لَهِيعَةَ . وَأَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ
الْحُبُلِيُّ هُوَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يَزِيدَ .
‘যে নীরব থাকে সে মুক্তি পায়’। -সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং: ২৫০১
এ হাদিসের উদ্দেশ্য হচ্ছে, কোনো ব্যক্তি যখন মন্দ ও অনর্থক কথা থেকে
নিজেকে বিরত রাখবে, তখন সে ধ্বংসের
হাত থেকে বেঁচে যাবে। নিষ্কৃতি পাবে সে জাহান্নামের আজাব থেকেও। আমাদের দেখা একটি
বাস্তবতা হচ্ছে, যখন কেউ
প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বেশি বেশি কথা বলে, তখন সে যে কেবল অনর্থক কথাই বলে বেড়ায় এমন নয়। বরং সে জড়িয়ে
পড়ে অনেক ধরনের অন্যায়-অপরাধের সঙ্গেও। যারা বেশি কথা বলে তারা মানুষের
গিবত-পরনিন্দায় লিপ্ত হয় বেশি। অবচেতনভাবেই হয়তো তারা অনেকের গিবত করতে থাকে এবং এ
গিবত-পরনিন্দার কারণে অনেক সময় কারো সম্মানহানি হয়। কখনও আবার দুই ব্যক্তির মাঝে
সম্পর্ক নষ্টও হয়। এ কাজটি সামাজিকভাবে চরম নিন্দিত ও শরিয়তের দৃষ্টিতে এক জঘন্য
অন্যায়।
কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন একে অন্যের গিবত না করে।
তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে?’ –সূরা হুজুরাত: ১২
যারা বেশি কথা বলে, কখনও মিথ্যা-অশ্লীলতার সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ে
তারা। অনেক ক্ষেত্রেই অসংলগ্ন ও অসতর্ক কথায় তারা লিপ্ত হয়। ফলে ঝগড়া-বিবাদও
সৃষ্টি হয় কখনও কখনও। পরিণতিতে বিঘ্নিত হয় সামাজিক শান্তি-শৃংখলা ও সম্প্রীতি।
কিন্তু যদি তারা কথাবার্তায় সংযত হতো, অপ্রয়োজনীয় কথা থেকে বিরত থাকত- তাহলে এ
ধরনের মারাত্মক গোনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকা তাদের জন্যে অনেক সহজ হতো।
সাহাবি হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) হজরত
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মু্ক্তির উপায় সম্পর্কে জিজ্ঞেস
করেছিলেন। তিনি উত্তরে বললেন, তুমি তোমার জিহ্বাকে সংযত রেখো…। -সুনানে তিরমিজি শরিফ
কারণ জিহ্বাকে সংযত রাখাই হচ্ছে
গিবত-পরনিন্দা-চোগলখুরি জাতীয় গোনাহসমূহ থেকে বেঁচে থাকার প্রধান হাতিয়ার। আরেক
হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে আল্লাহ ও পরকালের ওপর ঈমান আনে সে যেন
উত্তম কথা বলে কিংবা চুপ থাকে। -সহিহ বোখারি, হাদিস নং: ১০২
কম কথা বলা বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞানের
পরিচায়ক। যে কথা কম বলে, সে অনেক ধরনের
অনর্থক বিষয় থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। গিবত-পরনিন্দা-মিথ্যা-অশ্লীল
কথাবার্তা ইত্যাদি নানা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকাও তার পক্ষে সম্ভব হয়। এ জন্যেই তো
যারা কথা কম বলে হাদিস শরিফে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোনো বান্দাকে
দুনিয়াবিমুখ ও স্বল্পভাষী দেখবে তখন তার সঙ্গে উঠাবসা করো। কেননা সে হেকমতপ্রাপ্ত।
-বায়হাকি
আরো জানুন- https://ifatwa.info/34499/?show=34499#q34499