প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি যেহেতু বালেগ হয়েছিলেন,তাই আপনার উপরেও মসজিদে গিয়ে জামা'আতের সহিত নামাজে অংশ গ্রহন আবশ্যক ছিলো।
আপনি শায়েখ আবু তাহের মিসবাহ সাহেব দাঃবাঃ লিখিত "এসো আরবি শিখি ১.২.৩.৪" বই ক্রয় করে সেটির সহায়তা নিতে পারেন।
সবচেয়ে উত্তম হলো অনলাইন বা অফলাইন কোনো মাদ্রাসায় আরবি ভাষা শিক্ষার কোর্সে ভর্তি হওয়া।
ইমাম গাজালি(রহ.) তাঁর বিখ্যাত ‘এহইয়াউ উলুমিদ্দীন’ গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি ছয়টি বিষয়ের কথা বর্ণনা করেন, যা না থাকলে নামাজে মনোযোগী হওয়া যায় না।
★প্রথম বিষয় : নামাজে ‘হুজুরে দিল’ বা একাগ্র থাকা ; এটি নামাজের প্রাণ। রাসূললুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত কর এমনভাবে, যেন তাঁকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখছেন।’ (বুখারি হা/৫০; মুসলিম হা/৮; মিশকাত হা/২)
বস্তুত আমাদের মন কখনো বেকার থাকে না; হয় নামাজে থাকে, না হয় অন্যত্র থাকে। নামাজে দাঁড়ালে শয়তান বারবার মানুষের মন ছিনিয়ে নিয়ে যেতে চায়, কিন্তু আমাদেরকে তা ধরে রাখতে হয়। সুতরাং নামাজের শুরু থেকে শেষ পযন্ত এই কল্পনা (মুখে উচ্ছারণ ব্যতিরেকে) ধরে রাখার অনুশীলন করুন যে,’আল্লাহ আমাকে দেখছেন’। দাঁড়ানো থেকে রুকুতে যাবার আগে, রুকু থেকে সিজদায় যাবার আগে কিংবা সিজদা থেকে বসার আগে, প্রত্যেক অবস্থান পরিবর্তনের পূর্বে মনের অবস্থাটা দেখে নিন যে, কল্পনাটা আছে কিনা। না থাকলে আবার নিয়ে আসুন। এভাবে এই অনুশীলনের মাধ্যমে নামাজ শেষ করার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন।
রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘যে সুন্দরভাবে অজু করে, অতঃপর মন ও শরীর একত্র করে (একাগ্রতার সাথে) দু’রাকআত নামাজ আদায় করে, (অন্য বর্ণনায় এসেছে- যে নামাজে ওয়াসওয়াসা স্থান পায় না) তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়)। (নাসাঈ হা/১৫১; বুখারি হা/১৯৩৪; মিশকাত হা/২৮৭)
★দ্বিতীয় বিষয় : নামাজে যা কিছু পাঠ করা হয় তা বিশুদ্ধ উচ্ছারণে পড়ার চেষ্টা করুন।এটি অন্তরের উপস্থিতিকে আরো দৃঢ় করে। অন্তত সূরা ফাতিহা ও তাসবীহগুলোর অর্থ বুঝে পড়ার চেষ্টা করুন।আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে কুরআন তেলাওয়াত কর।’ (মুযযাম্মিল ৪)
রাসূললুল্লাহ (সাঃ) প্রতিটি সূরা তারতীল সহকারে তেলাওয়াত করতেন। (মুসলিম হা/৭৩৩, তিরমিযী হা/৩৭৩)
এ ব্যাপারে রাসূললুল্লাহ (সাঃ) এর নিম্নোক্ত হাদিসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যেমন তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি নামাজ কে আমার এবং আমার বান্দার মাঝে দু’ভাগে ভাগ করেছি। বান্দা আমার কাছে যা কামনা করবে তাই পাবে। যখন আমার বান্দা বলে, (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি সারা জাহানের মালিক)। তখন আল্লাহ বলেন, (বান্দা আমার প্রশংসা করল)। যখন বলে, (পরম করুণাময় অসীম দয়াবান) আল্লাহ বলেন, (বান্দা আমার গুণগান করল)। যখন বলে, (বিচার দিবসের মালিক) আল্লাহ বলেন, (বান্দা আমার যথাযথ মর্যাদা দান করল)। যখন বলে, (আমরা কেবলমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং কেবলমাত্র আপনারই সাহায্য প্রার্থনা করি)। আল্লাহ বলেন, (এটি আমার ও আমার বান্দার মাঝে, আর আমার বান্দা যা চাইবে, তাই পাবে)। যখন বলে, (আপনি আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করুন। এমন ব্যক্তিদের পথ, যাদেরকে আপনি পুরস্কৃত করেছেন। তাদের পথ নয়, যারা অভিশপ্ত ও পথভ্রষ্ট হয়েছে)। আল্লাহ তাআলা বলেন, (এটা আমার বান্দার জন্য, আর আমার বান্দা যা প্রার্থনা করবে তাই পাবে)। (মুসলিম হা/৩৯৫; মিশকাত হা/৮২৩)
★তৃতীয় বিষয় : নামাজে আল্লাহর প্রতি ‘তাযীম’ বা ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রদর্শন করুন।কেননা, আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা আল্লাহর সম্মুখে দণ্ডায়মান হও বিনীতভাবে’ (বাকারাহ ২/২৩৮) কাজেই ধীর-স্থিরতা অবলম্বন করুন।
আবু কাতাদা (রা.)হতে বর্ণিত, রাসূললুল্লাহ (সাঃ)বলেন, ‘নিকৃষ্টতম চোর হল সেই ব্যক্তি, যে নামাজে চুরি করে। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! নামাজে কিভাবে চুরি করে? তিনি বললেন, ‘যে রুকু-সিজদা পূর্ণভাবে আদায় করে না’। (আহমাদ ; মিশকাত হা/৮৮৫ )
★চতুর্থ বিষয় : নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহতায়ালাকে ভয় করুন। ভাবুন, এই নামাজই হয়তোবা আপনার জীবনের শেষ নামাজ।
রাসূললুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকটে জনৈক ব্যক্তি সংক্ষিপ্ত উপদেশ কামনা করলে তিনি তাকে বললেন, ‘যখন তুমি নামাজে দন্ডায়মান হবে, তখন এমনভাবে নামাজ আদায় কর, যেন এটিই তোমার জীবনের শেষ নামাজ’। (ইবনু মাজাহ; মিশকাত হা/৫২২৬, সনদ হাসান)
★পঞ্চম বিষয় : নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কল্যাণ আশা করুন। আল্লাহতায়ালা বলেন-‘তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর’ (সূরা বাক্বারা-৪৫)।এই বিশ্বাস রাখুন, আল্লাহ আমার প্রতিটি প্রার্থনায় সাড়া দিচ্ছেন। রাসূললুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘তোমাদের কেউ নামাজে দাঁড়ালে সে মূলত তার প্রভুর সাথে কথোপকথন করে। তাই সে যেন দেখে, কিভাবে সে কথোপকথন করছে’। (মুস্তাদরাক হাকেম; সহিহুল জামে‘ হা/১৫৩৮)
★ষষ্ঠ বিষয় : নামাজে নিজের গুনাহর কথা চিন্তা করে আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হওয়ার কথা ভেবে নিজের মাঝে ‘হায়া’ বা লজ্জাশরম নিয়ে আসুন। দন্ডায়মান অবস্থায় একজন অপরাধীর মত মস্তক অবনত রেখে এবং দৃষ্টিকে সিজদার স্থানের দিকে নিবদ্ধ রাখুন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) (দাঁড়ানো অবস্থায়) সিজদার জায়গায় দৃষ্টি রাখতেন। (দেখুন : তাফসীরে তবারী ৯/১৯৭)
উপরের ছয়টি বিষয় অনুসরণ করলে নামাজে মনোযোগ তৈরি হবে। ইনশাআল্লাহ।
এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ). বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজের সময় হলে সুন্দরভাবে ওযূ করে এবং একাগ্রতার সাথে সুন্দরভাবে রুকূ-সিজদা করে নামাজ আদায় করে, তার এ নামাজ পূর্বের সকল গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে কোন কবিরা গুনাহে লিপ্ত হয়। আর এ সুযোগ তার সারা জীবনের জন্য।’ (মুসলিম হা/২২৮; মিশকাত হা/২৮৬)
আল্লাহই আমাকে দেখছেন,এই বিশ্বাস মনে বদ্ধমুল করে নিতে পারলে ইখলাসের সহিত আমল হবে,ইনশাআল্লাহ।
আপনি আহকামে জিন্দেগী, ইসলামী জিন্দেগী, আল ফিকহুল মুয়াসসার, ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ বই গুলো পড়তে পারেন।