আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
289 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (45 points)
আসসালামু আলাইকুম।
কোন লোকের একজন স্ত্রী আছে। কিন্তু তিনি পরনারীর প্রতি আসক্ত। ঐ নারীকে তিনি ভবিষ্যতে তালাক দিয়ে দিবেন এই শর্তে বিয়ে করে। অর্থাৎ তাকে শুধু রক্ষিতা হিসেবে রাখবে। কোনদিন সামাজিক স্বীকৃতি দিবেন না এবং সন্তান দিবে না। এবং এভাবে তাকে পরিবারের কাছে গোপন করে বিয়ে করে। ঐ নারীও এ শর্তে রাজি ছিল। এবং তাকে বিয়ে করার পর কোনদিন স্ত্রীর মর্যাদা দেয়নি,রক্ষিতার মত ব্যবহার করেছে। এবং নির্দিষ্ট সময় পর তালাক দিয়েছে। আমার প্রশ্ন ৩ টা:

১. বিয়ে টা কি জায়েজ ছিল। এবং
২. মুখে ১ তালাক,২ তালাক, ৩ তালাক এভাবে তালাক দিয়েছে।এই তালাক টা কি কার্যকর হয়েছে?

৩. এইযে এতদিন প্রথম স্ত্রীর আড়ালে এসব কাজ করেছে এতে কি প্রথম স্ত্রীর হক নষ্ট করা হয়েছে?প্রথম স্ত্রীকে শারীরিক হক থেকে ও বঞ্চিত করা হয়েছে। এতে কি স্বামীর গুণাহ হবে?

1 Answer

0 votes
by (58,500 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

আল্লাহ তায়ালা বলেন-

فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ

তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। (সূরা বাকারা, আয়াত ২৩০)

হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَجُلاً طَلَّقَ امْرَأَتَه“ ثَلاَثًا فَتَزَوَّجَتْ فَطَلَّقَ فَسُئِلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَتَحِلُّ لِلأَوَّلِ قَالَ لاَ حَتّٰى يَذُوقَ عُسَيْلَتَهَا كَمَا ذَاقَ الأَوَّلُ.

আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ যে, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন ত্বলাক্ব দিলে সে (স্ত্রী) অন্যত্র বিয়ে করল। পরে দ্বিতীয় স্বামীও তাকে ত্বলাক্ব দিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে জিজ্ঞেস করা হল মহিলাটি কি প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে? তিনি বললেনঃ না, যতক্ষন না সে (দ্বিতীয় স্বামী) তার স্বাদ গ্রহণ করবে, যেমন স্বাদ গ্রহণ করেছিল প্রথম স্বামী। সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ৫২৬১

 

শরীয়তে দু'টি নিষিদ্ধ বিবাহের আলোচনা পাওয়া যায়।যথাঃ-(ক) (নিকাহুল মুত'আহ বা মূতা বিবাহ(খ)নিকাহুল মু'আক্কাতি বা সাময়িক বিবাহ

হেদায়া কিতাবে এ দু'টি বিয়েকে হুকুমসহ এভাবে ফুটিয়ে তুলা হয়েছে,

قال: " ونكاح المتعة باطل " وهو أن يقول لامرأة أتمتع بك كذا مدة بكذا من المال وقال مالك هو جائز لأنه كان مباحا فيبقى إلى أن يظهر ناسخه قلنا ثبت النسخ باجماع الصحابة رضي الله عنهم وابن عباس رضي الله عنهما صح رجوعه إلى قولهم فتقرر الإجماع "

মূতা বিবাহ বাতিল।মূতা বিয়ে হল,কোনো পুরুষ কোনো মহিলাকে বলবে,আমি এত দিনের জন্য এক টাকার বিনিময়ে তোমার কাছ থেকে ফায়দা গ্রহণ করবো।এরকম বিয়ে শরীয়তে নিষিদ্ধ।তবে ইমাম মালিক রাহ এটাকে প্রথমে জায়েয বলতেন।যেহেতু ইবনে আব্বাস রাযি প্রথমে জায়েযের পক্ষে ছিলেন,পরবর্তীতে ইবনে আব্বাস রাযি উনার মত থেকে জুমুহুর সাহাবার মতের দিকে ফিরে আসেন।

সুতরাং সমস্ত সাহাবায়ে কেরামের ঐক্যমত মূতা বিবাহ নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।

والنكاح المؤقت باطل " مثل أن يتزوج امرأة بشهادة شاهدين إلى عشرة أيام وقال زفر هو صحيح لازم لأن النكاح لا يبطل بالشروط الفاسدة. ولنا أنه أتى بمعنى المتعة والعبرة في العقود للمعاني ولا فرق بين ما إذا طالت مدة التأقيت أو قصرت لأن التأقيت هو المعين لجهة المتعة وقد وجد

সাময়িক বিয়ে বাতিল,যেমন কেউ কোনো মহিলাকে দু'জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে দশ দিনের জন্য বিয়ে করল।ইমাম যুফার রাহ বলেন,এভাবে বিয়ে করলে বাতিল হবে না বরং সাধারণ বিয়ের মত লাযিম হয়ে যাবে।কেননা বিয়ে বাতিল শর্তসমূহর মাধ্যমে ফাসিদ হয় না।ইমাম যুফার রাহ ব্যতীত অন্যান্য হানাফি ফুকাহায়ে কেরাম মনে করেন,সে এখানে বিয়েকে উপভোগের অর্থে নিয়ে এসেছে।আর উকুদ তথা চুক্তিতে অর্থকেই ধর্তব্য হিসেবে ধরে নেয়া হয়।সময় কম হোক আর বেশী হোক উপভোগের অর্থ চলে আসলে সেই বিয়ে বাতিল বলে গণ্য হবে।আর এখানে সময়ের উল্লেখের ধরুণ উপভোগের অর্থা পাওয়া গিয়েছে। (হেদায়া-১/১৯০)

 

বিবাহের মূল উদ্দেশ্যই হলো স্থায়িত্ব। তবে মূতা বিয়ে ইসলামের প্রথমিক যুগে কিছু সময়ের জন্য হালাল ছিলো। অতঃপর কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য হারাম ঘোষনা করা হয়েছে।

 

হযরত আলী ইবনে আবূ তালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত

عن علي رضي الله عنه : " أن رسول الله صلى الله وسلم نهى عن نكاح المتعة وعن لحوم الحمر الأهلية زمن خيبر ." وفي رواية : " نهى عن متعة النساء يوم خيبر وعن لحوم الحمر الإنسية ."

রাসূলুল্লাহ সাঃ খাইবার যুদ্ধের দিন মহিলাদের সাথে মুত‘আহ করা থেকে এবং গৃহপালিত গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। (সহীহ বোখারী-৪২১৬,সহীহ মুসলিম-১৪০৭)

 

ইবনে সাবরাহ আল জুহানী (রহঃ) থেকে তার পিতা সাবরাহ (রাযিঃ) এর সূত্রে বর্ণিত রয়েছে,

وعن الربيع بن سبرة الجهني أن أباه حدثه أنه كان مع رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال : " يا أيها الناس إني قد كنت أذنت لكم في الاستمتاع من النساء وإن الله قد حرم ذلك إلى يوم القيامة فمن كان عنده منهن شيء فليخل سبيله ولا تأخذوا مما آتيتموهن شيئاً "

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,হে লোক সকল! আমি তোমাদেরকে মূতা বিয়ে সম্পর্কে অনমুতি দিয়েছিলাম।তবে আল্লাহ তা'আলা কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য মূতা বিয়েকে হারাম করে দিয়েছেন।সুতরাং কারো নিকট কোনো মূতা স্ত্রী থাকলে তার রাস্তা ছেড়ে দাও।আর তোমরা তাদেরকে যা কিছু দিয়েছিলে তা ফিরিয়ে নিয়ে আসবে না। (সহীহ মুসলিম-১৪০৬)

 

আল্লাহ তা'আলা উনার যে সমস্ত বিশেষ নি'আমত দ্বারা মানুষদের কে চিন্তা গবেষনার দাওয়াত দিয়েছেন।এই নি'আমত সময়ের একটি হল, স্বামী-স্ত্রী মধ্যকার মহব্বত ভালাবাসা সৃষ্টি,স্ত্রীকে স্বামীর জন্য প্রশান্তিকর বানানো বানানো। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা সন্তানসন্ততি বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন।এবং মহিলার জন্য ইদ্দত ও মিরাছের ব্যবস্থা রেখেছেন।এসব কিছুই মূতা বিবাহে পাওয়া যাচ্ছে না

 

শিয়া মতাবলম্বীরা মূতা বিয়ের অনুমোদন দিয়ে থাকে,এবং একে পূন্য কাজ মনে করে।যা হাদীস এবং ইজমায়ে সাহাবার বিরোধী।

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

 

১. বিবাহের মূল উদ্দেশ্যই হলো স্থায়িত্ব। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের পর তালাক দেওয়ার শর্তে বিবাহ করা জায়েজ হয়নি।

২. হ্যাঁ, এতে তিন তালাক কার্যকর হয়ে গিয়েছে।

৩. হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যদি স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি জুলুম করে বা তার অধিকার আদায় না করে তাহলে অবশ্যই স্বামীর গুনাহ হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, উভয় জন যদি নির্দিষ্ট সময়ের শর্তে বিয়ে করে থাকে তাহলে এটাকে মূতা বিবাহ বলে, যা শরীতে হারাম। ফলে তাদের জিনা করার গুনাহ হয়েছে। সুতরাং খাছ দিলে আল্লাহ তায়ালার কাছে তওবা করতে হবে, অন্যথায় জাহান্নামে যেতে হবে। (আল্লাহ তায়ালা মাফ করেন)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...