আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
145 views
in ব্যবসা ও চাকুরী (Business & Job) by (15 points)
আসসালামু আলাইকুম,
উস্তাদ আমি এবং আমার দুই বন্ধু মিলে অনলাইনে ব্যাবসা শুরু করতে চাচ্ছি। সেই ক্ষেত্রে আমার এক বন্ধু শুধু টাকা দিবে এবং কোন কাজ করবে না। সে মুদারাবা পদ্ধতিতে ব্যাবসা করতে আগ্রহী। সেই ক্ষেত্রে আমার ১ম বন্ধু সম্পূর্ণ টাকা/মূলধন দেবে এবং আমি এবং আমার ২য় বন্ধু সকল কাজের দায়িত্বে থাকবো। এখন লাভ/লস এর শতকরা হার আমরা কিভাবে নির্ধারণ করবো? অর্থাৎ ১ম বন্ধুকে কত পারসেন্ট লাভ/লসের অংশ দেয়া উচিৎ এবং আমি ও আমার ২য় বন্ধুর কতটুকু গ্রহণ করা উচিৎ?

1 Answer

0 votes
by (57,240 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

মুদারাবা (مضاربة) শব্দটি আরবী দারব (ضرب) শব্দমূল হতে উদ্ভূত। আরবি ভাষায় শব্দটি প্রহার করা, আঘাত করা, অন্বেষণ করা, দৃষ্টান্ত দেয়া, পরিভ্রমণ করা ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পবিত্র কুরআনে শব্দটি পরিভ্রমণ করা অর্থে বহু জায়গায় ব্যবহৃত হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন ,

وَآخَرُونَ يَضْرِبُونَ فِي الْأَرْضِ يَبْتَغُونَ مِنْ فَضْلِ اللَّه

 অর্থ : অন্যরা আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে পৃথিবীতে ভ্রমণ করে। (সূরা মুযযাম্মিল : ২০)

ইসলামী শরীয়ার পরিভাষায়, মুদারাবা এমন একটি অংশীদারি কারবার যেখানে দু’টি পক্ষ থাকে। একপক্ষ মূলধন সরবরাহ করেন এবং অপর পক্ষ মেধা ও শ্রম ব্যয় করে উক্ত মূলধন দ্বারা ব্যবসা পরিচালনা করেন। ব্যবসায়ে লাভ হলে পূর্ব চুক্তি অনুসারে উভয়পক্ষের মাঝে বণ্টিত হয়। আর লোকসান হলে মূলধন সরবরাহকারী পক্ষকে তা বহন করতে হয়। এক্ষেত্রে সবটুকু লোকসান পুঁজিদাতা বহন করলেও মুদারিব তার শ্রম ও তৎপরতার কোনো পারিশ্রমিক না পাওয়াটাই তার লোকসান হিসেবে গণ্য হয়। তবে যদি মুদারিব কর্তৃক নিয়ম লঙ্ঘন, অবহেলা বা চুক্তিভঙ্গের কারণে লোকসান হয় তাহলে মুদারিবকে লোকসানের দায় বহন করতে হবে।

উল্লেখ্য, মুদারাবা ব্যবসায় স্বাভাবিক লোকসান হয়ে পুঁজি ক্ষতিগ্রস্থ হলে প্রথমত পূর্বতন লভ্যাংশ দ্বারা পুঁজির সমন্বয় করা হবে। লভ্যাংশ দ্বারা পুঁজির সমন্বয় না হলে অবশিষ্ট ক্ষতি পুঁজিদাতাই বহন করবে। এ ক্ষেত্রে মুদারিব বা উদ্যোক্তার উপর এর কোনো দায় আরোপিত হবে না। (শারহুল মাজাল্লাহ ৪/৩৬৩)

মূলধন সরবরাহকারী পক্ষকে বলা হয় ছাহিবুল মাল (صاحب المال) আর ব্যবসায় পরিচালনাকারী-পক্ষকে বলা হয় মুদারিব (مضارب)আর বিনিয়োগকৃত অর্থকে বলা হয় রা’সুল-মাল (رأس المال) বা পুঁজি।

মুদারাবা এক ধরনের অংশীদারিত্ব যেখানে একপক্ষ (সাহিবুল মাল/রাব্বুল মাল) তহবিল বা পুঁজি সরবরাহ করেন এবং অন্যপক্ষ তার দক্ষতা ও ব্যবস্থাপনা নিয়োজিত করেন। তাকে বলা হয় মুদারিব বা ব্যবস্থাপক। ব্যবসায়ের লাভ দু’পক্ষের মাঝে পূর্ব নির্ধারিত অনুপাতে ভাগ হয়। পুঁজির লোকসান হলে তা মূলধন সরবরাহকারী (সাহিবুল মাল) বহন করেন।

মুদারাবার শর্ত সমুহ সম্পর্কে জানুন: https://ifatwa.info/4260/?show=4260#q4260

 প্রশ্নকারী প্রিয় দ্বীনী ভাই/বোন!

মুদারাবা বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য অন্যতম জরুরী শর্ত হল, কারবার শুরু করার পূর্বেই উভয়পক্ষ প্রকৃত লভ্যাংশ বণ্টনের হার নির্ধারণের ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হতে হবে, যে অনুযায়ী রাব্দুলমাল এবং মুদারিব উভয়ে লভ্যাংশের পাওনাদার হবে। শরীয়ত লভ্যাংশ বন্টনের নির্দিষ্ট কোন অনুপাত বর্ণনা করেনি, বরং তা নির্ধারণের ব্যাপারে উভয়পক্ষের স্বাধীন মতামতের উপর ছেড়ে দিয়েছে। তারা লভ্যাংশে সমহারেও অংশীদার হতে পারে কিংবা রাব্দুলমাল এবং মুদারিবের জন্য পৃথক পৃথক অনুপাতও নির্দিষ্ট করতে পারে। তবে তারা কোন পক্ষের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভ ধার্য করতে পারবে না। এমনিভাবে কোন পক্ষের মুনাফা মূলধনের কোন আনুপাতিক অংশের সাথেও নির্দিষ্ট করতে পারবে না। উদাহরণস্বরূপমূলধন যদি এক লাখ টাকা হয়, তাহলে তারা এ শর্তে চুক্তিবদ্ধ হতে পারবে না যে, সমুদয় মুনাফার দশ হাজার টাকা মুদারিব পাবে এবং এ ধরনের চুক্তিও করতে পারবে না যে, (যেমন) মূলধনের ২০% রাব্দুলমালকে দেয়া হবে। তবে এ চুক্তি করতে পারবে যে, প্রকৃত মুনাফার ৪০% মুদারিব পাবে এবং ৬০% রাব্দুলমাল পাবে, কিংবা ৬০% মুদারিব এবং ৪০% রাব্দুলমাল পাবে।

বিভিন্ন অবস্থায় মুনাফার বিভিন্ন অনুপাত ধার্য করাও জায়েয আছে। যেমন- রাব্দুলমাল মুদারিবকে একথা বলতে পারে যে, তুমি যদি গমের ব্যবসা কর, তাহলে সমুদয় মুনাফার ৫০% পাবে, আর যদি আটার ব্যবসা কর, তাহলে সমুদয় মুনাফার ৩৩% পাবে। এমনিভাবে রাব্দুলমাল একথাও বলতে পারে যে, তুমি যদি নিজ শহরে ব্যবসা কর, তাহলে ৩০% পাবে, আর যদি ভিন্ন শহরে ব্যবসা কর, তাহলে মুনাফায় তােমার অংশ ৫০% হবে । মুনাফার সিদ্ধান্তকৃত আনুপাতিক অংশ ব্যতীত মুদারিব মুদারাবার জন্য কৃত স্বীয় কাজের বিনিময়ে কোন রকম বেতন, ভাতা বা বিনিময়ের দাবী করতে পারবে না।

ফিকহবিদদের সর্বসম্মতিক্রমে মুদারিব পূর্ব সিদ্ধান্তকৃত আনুপাতিক হারে মুনাফা ব্যতীত মুদারাবার ব্যবসা পরিচালনার কারণে কোন রকম বেতন, ভাতা বা বিনিময়ের দাবী করতে পারবে না। তবে ইমাম আহমাদ (রহ.) মুদারিবকে মুদারাবা একাউন্ট থেকে শুধুমাত্র দৈনিক খোরাকের খরচ গ্রহণ করার অনুমতি প্রদান করেন। কিন্তু হানাফী ফিকহবিদদের নিকট মুদারিব মুদারাবা একাউন্ট থেকে দৈনিক খােরাকের খরচ ঐ সময় গ্রহণ করতে পারবে, যখন সে মুদারাবা ব্যবসার জন্য নিজ শহরের বাইরে ভ্রমণ করবে। তখন সে তার থাকা খাওয়া ইত্যাদির খরচ গ্রহণ করতে পারবে। নিজ শহরে থাকাকালীন সময়ে দৈনিক কোন খরচের পাওনাদার হবে না। যদি মুদারাবার কোন ব্যবসায় লোকসান হয় এবং কোন ব্যবসায় লাভ হয়, তাহলে প্রথমে লাভ দ্বারা লোকসানের ক্ষতিপূরণ করা হবে। ক্ষতিপূরণের পর যা থাকবে, তা উভয়ের মাঝে পূর্ব সিদ্ধান্তকৃত আনুপাতিক হারে বণ্টন করা হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...