এখানে লেখক বলতে চাচ্ছেন, শরয়ী আদালতে আবরার হত্যাকারীদের কারও ফাঁসি হতো না। কারণ তাদের হত্যার উদ্দেশ্য ছিল না। এটা কতটুকু সঠিক??
এডভোকেট মওলানা Naeem Hasan ভায়ের পোস্ট। শেষে আমার কিছু কথা আছে।
------------------------
আবরার কে ওরা কেউ ঠাণ্ডা মাথায় খুন করতে চায় নাই। জাস্ট একটু ডলা(?) দিতে চাইসিল, ভার্সিটির হলগুলোতে শিবির কর্মীদের যেভাবে সাধারণত সো-কল্ড ডলা দেয়া হয়। যে টাইপের আঘাত করা হইছিল সেগুলোতে সাধারণত সুস্থ মানুষজন মরে না। ঘটনাচক্রে আবরার মরে গেছে। হত্যা করার পূর্বপরিকল্পনা, ইনটেনশন বা নলেজ কোনটাই খুব সম্ভবত ছিল না তাদের।
এধরণের হত্যাকাণ্ডগুলো দেশীয় আইনের ভাষায় সাধারণত 'মার্ডার' ক্যাটেগরিতে পড়ে না, বরং 'কাল্পেবল হোমিসাইড নট এমাউন্টিং টু মার্ডার' ক্যাটাগরিতে পড়ে। 'কাল্পেবল হোমিসাইড' অপরাধ ও শাস্তির মাত্রায় মার্ডারের চেয়ে হালকা, যেক্ষেত্রে শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হয় না, বরং যাবজ্জীবন বা ১০ বছরের জেল হয়।
আবরার হত্যা মামলায় আদালত চাইলে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে যাবজ্জীবন বা জেল দিতে পারতো। আইনে সেটার সুযোগ ছিল।
তবে হ্যাঁ আবরারের শারিরীক যখম কে চাইলে নিম্নবর্ণিত ক্যাটাগরিতেও ফেলা যায়- "done with the intention of causing such bodily injury which is sufficient in the ordinary course of nature to cause death, or – with the intention of causing such bodily injury as the offender knows to be likely to cause the death of the person to whom the harm is caused".
সেক্ষেত্রে এটি মার্ডার হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
আইনের শব্দগুলো যেহেতু এক্ষেত্রে এবস্ট্রাকট, তাই ফরেনসিক রিপোর্ট সহ বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করে যে কোন দিকেই ঘোরানোর সুযোগ থাকে। বিচারকের সদিচ্ছা এক্ষেত্রে দিনশেষে গুরুত্বপূর্ণ।
তবে এধরণের পলিটিক্যালি সেনসিটিভ মামলাগুলোতে আদালত প্রপার লিগ্যাল প্রভিসনের চেয়ে জনতুষ্টির ব্যাপারটা বেশি প্রাধান্য দেয়। পাবলিক সেন্টিমেন্ট ঠাণ্ডা হবে। আপিলে দীর্ঘদিন ঝুলে থাককে, তারপর মানুষের স্মৃতি ঝাপসা হয়ে আসলে খালাস পেয়ে যাবে। কিংবা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা তো আছেই।
আবরার হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে একটা প্রেডিকশন হচ্ছে এই রায় দিনশেষে পরিপূর্ণ কার্যকর হবে না। মাঝপথে ক্ষয়ে যাবে।
----------------------------------
আমার কথা
এই রায়ে আমি খুশি-অখুশি কিছুই না। সম্ভবত কিছুটা অখুশি। প্রাণ যিনি দিয়েছেন, নেবার ক্ষমতা শুধু তার। আল্লাহ ছাড়া কেউ কারও প্রাণ নেয়ার ধৃষ্টতা দেখাবার এখতিয়ার রাখে না। আল্লাহর আইন মোতাবেকই শুধু কারও প্রাণ নেয়া চলতে পারে। কোনো রাষ্ট্রপক্ষ, কোনো বৃটিশ কমন ল', কোনো রাজার আদেশ কোনোকিছুই প্রাণদণ্ডের অধিকার রাখে না। এটা জাস্টিস না। আল্লাহর আইন ছাড়া আর কোনো আইনে জাস্টিস হয়না। মানবরচিত সকল আইন জুলুম। আমাদের ঈমান আমাদেরকে এটাই বলে।
নিঃসন্দেহে আবরার মজলুম। আবার, আবরারের হত্যার রায়ে যে কারও যদি ফাঁসি হয়, সেও আল্লাহর আইনে মজলুম হয়ে যাবে। কেননা ইসলামী আইন অনুসারে আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানে এদের কারও হয়তো মৃত্যুদণ্ড হতো না, যেহেতু 'মেরে ফেলার' উদ্দেশ্য এদের কারোরই ছিল না। যদি কারও মৃত্যুদণ্ড হতোও, তবুও ইসলামী আইনে সে আরেকটি সুযোগ পেত, যার নাম দিয়াত বা ব্লাডমানি। আসামীদের পরিবার আবরারের পরিবারকে অর্থ দিয়ে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করতো। হয়তো দু'পাঁচজন (যারা সরাসরি পিটিয়েছে) ছাড়া বাকিদের ব্যাপারে আবরারের পরিবার রাজিও হয়ে যেত। এই সুযোগটা তারা পেল না। (যদি ফাঁসি হয়, আল্টিমেটলি হবে না)
আমি বৃটিশ কমন ল' ও শরীয়া আইনের তুলনা করছি। বৃটিশ কমন ল'তে ফৌজদারী বিচার হয় রাষ্ট্রপক্ষ বনাম আসামীপক্ষ। এখানে বাদী বা ভুক্তভোগীর কোনো বেনিফিট নাই। জরিমানা যাবে রাষ্ট্রের কোষাগারে। শরীয়া আইনে বিচার হয় ভিকটিম বনাম আসামী। ভিকটিম চাইলে ক্ষমা বা ব্লাডমানি বা কিসাস (প্রাণের বদলা প্রাণ) নিতে পারে।
তবে শেষমেশ ফাঁসি যে হবে না এটা সচেতন মানুষ মাত্রই বুঝার কথা। জনআবেগ তোষণের রায় এটা৷ যতদিন মামলা চলবে ততদিন এরা মৃত্যুর প্রহর গুনবে, পেরেশানির ভিতর থাকবে, এদের পরিবারও অনুভব করবে সন্তান হারানোর বেদনা, মামলা চালাতে বিস্তর খরচাপাতি করবে। জনগণের এটুকুই প্রাপ্তি।