আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
211 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুম।
আমি যদি কাউকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে কোন অভিজ্ঞতা বা ঘটনা শেয়ার করি এবং এতে যদি কারো দোষ বা ত্রুটি প্রকাশ পায়, তাহলে কি তা গিবত হবে?

ঘটনাটি এরকম,
সম্প্রতি আমি আর আমার শ্বাশুড়ি এক বাসায় যাই এবং এরপর তাদেরই একটা দাওয়াতে যাই যেখানে আরো অনেক আত্নীয় ছিল তাদের। আমার আর আমার শ্বাশুড়িকে দেখে অনেকেই প্রশংসা করছিল যে আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো, দেখে মনেই হয় না শ্বাশুড়ি বউ! মনে হয় যেন মা মেয়ে! ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমি তখন খেয়াল করিনি কিন্তু এখন মনে পড়ে যে কারো মুখে মাশাআল্লাহ বা আলহামদুলিল্লাহ এরকম কিছু শুনিনি।

ওইদিনের পর ৩ দিনের মধ্যে আরেকটা ঘটনা হয়। খুব তুচ্ছ বিষয়ে আমার আর আমার শ্বাশুড়ির মধ্যে মনোমালিন্য হয় এবং তার সাথে সম্পর্ক এখনো ঠিক হয়নি ১ সপ্তাহের বেশি হয়ে গেছে৷ এরকম আর কখনো হয় নি।
আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি কিন্তু কয়েকদিন হলো বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি যে আমাদের সম্পর্কে বদনজর লেগেছে।আল্লাহ মাফ করুক।


এখন আমি একটা বিষয়ে চিন্তিত।
যেই বাসায় সমস্যা শুরু, সেখানে আমার কাছের এক মানুষ প্রায়ই যায় বা যাবে। এখন আমি আশংকা করছি বদনজরের।

এখন আমি কি আমার কাছের মানুষকে সেই বাসার মানুষদের বিষয়ে সতর্ক করতে পারি? যেন সাবধানে থাকে? বললে কি গিবত হবে?

এক্ষেত্রে কীভাবে তাকে বললে বিষয়টা গিবত হবে না?

আরেকটা বিষয় হলো পুরো বিষয়টি আমার ধারণা। সত্যি কিনা তা প্রমাণের কোন উপায় নেই। ধারণা করে কিছু বলাও তো গুনাহ। এখন এক্ষেত্রে কী বলা যায় বা করা যায়?

1 Answer

0 votes
by (59,970 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

আল্লাহ তায়ালা বলেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ ۖ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ

মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। (সূরা হুজরাত, আয়াত নং-১২)

 

হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " أَتَدْرُونَ مَا الْغِيبَةُ " . قَالُوا اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ . قَالَ " ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ " . قِيلَ أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِي أَخِي مَا أَقُولُ قَالَ " إِنْ كَانَ فِيهِ مَا تَقُولُ فَقَدِ اغْتَبْتَهُ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيهِ فَقَدْ بَهَتَّهُ " .

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি জান, গীবত কী জিনিস? তাঁরা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, (গীবত হল) তোমার ভাই এর সম্পর্কে এমন কিছু আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে। প্রশ্ন করা হল, আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাই এর মধ্যে থেকে থাকে তবে আপনি কি বলেন? তিনি বললেন, তুমি তার সম্পর্কে যা বলছ তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলেই তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তা তার মধ্যে না থাকে তা হলে তো তুমি তার প্রতি অপবাদ আরোপ করলে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬৩৫৭)

 

বদ নযর লাগা সত্য। হাদীস শরীফে এসেছে-

حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ نَصْرٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، عَنْ مَعْمَرٍ، عَنْ هَمَّامٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " الْعَيْنُ حَقٌّ ". وَنَهَى عَنِ الْوَشْمِ.

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বদ নযর লাগা সত্য। আর তিনি উল্কি আঁকতে (খোদাই করতে) নিষেধ করেছেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৩২৯)

তিনদিনের অধিক এক মুসলিমের অন্য মুসলিমের সাথে কথা-বার্তা বন্ধ রাখা হারাম।

 

হাদীস শরীফে এসেছে-

وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «لاَ تَقَاطَعُوا، وَلاَ تَدَابَرُوا، وَلاَ تَبَاغَضُوا، وَلاَ تَحَاسَدُوا، وَكُونُوا عِبَادَ اللهِ إِخْوَاناً، وَلاَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلاَث» . متفق عَلَيْهِ

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা পরস্পর সম্পর্ক-ছেদ করো নাএকে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুভাবাপন্ন হয়ো নাপরস্পরের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করো নাপরস্পর হিংসা করো না। তোমরা আল্লাহর বান্দাভাই ভাই হয়ে যাও। কোন মুসলিমের জন্য এটা বৈধ নয় যেসে তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি কথাবার্তা বলা বন্ধ রাখবে।’’

(সহীহুল বুখারী ৬০৫৬৬০৭৬মুসলিম ২৫৫৯তিরমিযী ১৯৩৫আবূ দাউদ ৪৯১০আহমাদ ১১৬৬৩১২২৮০১২৬৪০১২৭৬৭১২৯৪১মুওয়াত্তা মালিক ১৬৮৩)


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!


১. তিনদিনের অধিক এক মুসলিমের অন্য মুসলিমের সাথে কথা-বার্তা বন্ধ রাখা হারাম। আবার যেহেতু শাশুড়ী নিজের মায়ের মত। আবার বয়সেও বড়। তাই আপনার উচিৎ তার সাথে কথা বার্তা বলা। দোষ যদি তারও হয় তবু আপনি তার কাছে ক্ষমা চাইলেন। এতে আপনার সম্মান কমবে না ইনশাআল্লাহ।

 

২. বদ নযর লাগা যেহেতু সত্য। আবার তাদের থেকে লেগেছে এটাও নিশ্চিত নয়। তাই কারোর গীবত করার উদ্দেশ্যে  না নিয়ে শিক্ষা মূলক হিসেবে কারোর নাম না নিয়ে তাদের পরিবার সম্পর্কে বলতে পারেন। এবং তাদের থেকে একটু দূরে থাকতে বলতে পারেন। এতে কোন গুনাহ হবে না ইনশাআল্লাহ। তবে খেয়াল করতে হবে যে, কারোর নাম নেওয়া যাবে না। এভাবে বলতে পারেন যে, অমুক পরিবারের একজন এমন এমন করেছে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...