আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
391 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (6 points)
হুজুর,
প্রথমেই অনুরোধ,  আপনারা মেহেরবানী করে আমার পুরো ঘটনা ভালো করে পড়বেন।
আমার স্বামী অনেক দিন থেকেই নানাবিধ শারীরিক এবং মানুষিক অসুস্থতায় ছিলো।
আমার স্বামী আগে মাঝেমধ্যে ঝগড়াঝাটি হলে গায়ে হাত তুলতো,  বা গালাগালি করতো। সে খুব অল্প সময়ের মধ্যে অনেক বেশি উত্তেজিত হয়ে যেতো।  কিন্তু সেটা দীর্ঘস্থায়ী হতো না, ম্যানেজ করে ফেলতো।  অনেক সময় সিরিয়াস কিছু হলে আমার অভিভাবকে জানাতাম, সে এসেও বুঝিয়ে বলতো বা, তার এসব আচরণ যে সাভাবিক নয় সেটাও তাকে বুঝানো হতো। তার নানাবিধ মানুষিক সমস্যা অনেকদিন থেকেই হয়ে আসছিলো যা আমি বুঝতে পারলেও সে বুঝতে পারতো না। অনেক সময় আমি ব্যাথা পেলেও তাকে বললে সে মনে করতে পারতো না এরকম সে করেছিলো কি না। কিন্তু আমার কাছে তা কস্ট লাগতো এই ভেবে, কেন সে এমন আচরণ করে এমন অসাভাবিক হয়ে যায়। এমন কয়েকবার হয়েছিল যে, তিনি হাতের কাছে যা থাকতো তাই নিয়েই মারতে আসতো বা মারবে এরকম করতো (ছুরি,কাচি,লাঠি)। আবার আমি ভয়ে পেলে কান্নাকাটি করলে থেমে যেতো।  কিন্তু রেগে যেতো খুব অল্প সময়ের মধ্যে। পরে জিজ্ঞেস করলে বা আমি বললে সে তা মনে করতে পারতো না।  অল্পতে বেশি রেগে যাওয়া বা কথা মনে না থাকা এটা তার অনেকদিনের সমস্যা ছিলো কিন্তু সে চিকিৎসা করায়নি আমি বললেও। মেয়েটা এর আগেও অনেকবার একটু ব্যাথা পেয়েছিল বা বেশি,  কিন্তু এরকম উম্মাদের মতো জ্ঞ্যানবুদ্ধিহীন আর হয়নাই! হয়তো বকেছে বা একটা চড় দিয়েছে রেগে গেছে এ পর্যন্তই।  এ অবস্থার মধ্যে সংসার করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু জুনের ২১ রাতের যে ঘটনা ঘটে,  সেদিন সে নিজের উপরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলো এক পর্যায়ে আমার নিজের মানুষিক বিপর্যয় কাটিয়ে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পরে যা মনে হয়েছে।
গত জুনের ২১ তারিখে একদম ই তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে সে আমাকে মারাত্মকভাবে মেরে আঘাত করে। আমার পোনে তিন বছরের মেয়ে মোবাইল নিয়ে খেলছিল খাটের উপরে বসে। আমিও খাটের আরেক পাশে একটু দূরে বসে মোবাইলে কাজ করছিলাম।  আর মেয়ের বাবাও আরেক পাশে মেয়ের কাছাকাছি ই বসে ছিলো,  সে সময় তার শরীরে সে স্কিনের সমস্যার জন্য ক্রিম লাগিয়ে বসে ছিলো।  এমতাবস্থায় মেয়ে হঠাৎ আমার হাতে থাকা মোবাইলটা নিতে যিদ করে, কিন্তু আমি তা দেইনি যেহেতু সে আগেই একটি দিয়ে কার্টুন দেখছিল। তখন মেয়ে যিদ করে,মাথা পিছন দিকে উলটে পড়লে খাটের পাশে লেগে মাথায় ব্যাথা পায়, মেয়ের বাবা চাইলেই তাকে ধরতে পারতো কিন্তু সে ওই ক্রিম লাগিয়েছে এ জন্য ধরেনি মেয়ে কিছুটা ব্যাথা পায়, তখন সে মেয়েকে কোলে নিয়ে ফেলে আমিও ধরতে গেলে আমার গালে জোরে একটা থাপ্পড় মেরে বাথরুমে গিয়ে মেয়েকে মাথায় পানি দিয়ে আর আমাকে বকা শুরু করে। আমি তাকে বলছিলাম,  মেয়ে তো এরকম যেদ প্রায়ই করে, কিন্তু সে আমার আর কোন কথাই শুনে নি, এলোপাথাড়ি আমাকে থাপ্পড় ঘুষি মারতে থাকে,  আমি তখন তাকে ধাক্কা দেই কেন আমাকে কিছু হলেই এভাবে মারে এই বলে। তখন তার জুতা এনে তা দিয়েও আমাকে মারতে থাকে, আমি নিজেকে বাচাতে ধস্তাধস্তি করি, তখন সে আরও খেপে আমার গলাই চিপে ধরে দেয়ালের সাথে মাথার পিছনে বাড়ি দেয়া শুরু করে এবং শ্বাস রোধ করতে চেষ্টা করে বলতে থাকে আজকে তোকে মাইরাই ফেলমু, শেষ কইরা ফেলমু। আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল,  আমি তার বুকে জোরে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে রুমে ঢুকে মোবাইল নিতে যাই, তখন সে আরেক রুম থেকে কাঠের টুকরো এনে( ব্লক প্রিন্টিং এর ডাইস) আমার কপালে জোরে আঘাত করলো।  আর মোবাইল দুটো কেড়ে নিল।( যে মেয়ে সামান্য ব্যাথার কারণে  এরকম করছিলো,  সেই মেয়ের এতো চিতকার কান্না তার কানেই যায়নি মনে হয়।) আমার মোবাইলটা ছুড়ে মাটিতে ফেলে দেয়, আমি চিৎকার করতে থাকি মোবাইলটা নেয়ার জন্য, সে রুমের দরজা জানালাও বন্ধ করে দেয় যেন বাইরে আওয়াজ না যায়। সে পা দিয়ে মোবাইলটা ধরে রাখে, এই সময় আমি কয়েক মিনিটের জন্য মাটিতে পড়ে ছিলাম এবং আবারও কেদে উঠে মোবাইল নিতে চেষ্টা করি। আমি বারবার বলছিলাম মোবাইল দিতে আমি আমার মা, ভাইকে খবর দিব তুই তো আমাকে মেরে ফেলছিস। এক পর্যায়ে আমি ওয়্যারড্রপ এর উপরে লেপটপ ছিলো সেটা অন করতেও চেষ্টা করলে সে তা দেয়না, তখন আমি জোরে জোরে চিতকার করতে চাইলেও সে বারবার বলছিল তোকে মাইরা আজকেই আমি চইলা যামু। আমার কপাল দিয়ে যখন রক্ত পড়ছিল,  তখন আমি শুধু বলেছিলাম তুমি এভাবে আমাকে মেরে রক্ত বের করে দিলা! সে মুহুর্তে জন্য আমার তখন আমার স্বামীকে একজন খুনী মনে হয়্বছিল। আমি অনেক ধস্তাধস্তি  করে আমার মোবাইলটা হাতে নিতে পেরেছিলাম, ওই পর্যায়ে আবারও সে পাশের রুম থেকে রুটি বেলার বেলুন নিয়েও আসছিলো কিন্তু আঘাত আর করেনাই,  সে সময় আমার হাতে মোবাইলটা ছিলো, শুধু আমার মা এর নাম্বারটি দেখা যাচ্ছিলো। মা কে শুধু বলতে পেরেছি আম্মা ভাইয়াকে পাঠান,  আমাকে মেরে ফেলতেছে। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে সে আবারও মোবাইলটা হাত থেকে নিয়ে চুরমার করে ফেলে ছুড়ে ফেলে! দাঁড়ানো অবস্থায় দুজনের ধস্তাধস্তিতে আমি ধাক্কা খেয়ে খাটের উপরে পড়ে যাই।
এরপরে সে, আমাকে বলে তুই তোর মা ভাইরে খবর দিলি! আমার বাবার নাম উচ্চারণ করে তিনবার তালাক বলে। সে সময় সে, প্রচন্ড রকম উত্তেজিত ছিলো আর অস্থিরতা ছিলো। যা আমার প্রথমে মনে আসেনি। (ওই ঘটনার পরে আমি নিজেই শারীরিক এবং মানুষিকভাবে পুরোপুরি অসুস্থ ছিলাম তাৎখনিকভাবে এবং এরপর। আমি নিজেও মানুষিক এবং শারীরিকভাবে বিপর্যের মধ্যে ছিলাম প্রায় দুই মাসের অধিক।) এরপর সে আরও অনেকখন পর্যন্ত অসাভাবিক আচরণ ই করেছিলো! তার সমস্ত আচরণ বিচারবুদ্ধিহীন ছিলো সেদিন। আমি তার চোখ মুখ রক্তবর্ণ দেখেছিলাম যা খুবই অসাভাবিক ছিলা!
তার ওইদিনের আচরণ অন্যান্য যেকোনো সময়ের ঝগড়াঝাটি করার সময় যেমনটা হতো,  তেমনটা ছিলো ই না। আমার মনে হইছিল কেউ আমাকে খুন করে ফেলতে চাইছে! পাগলের মতো হয়ে গেছিলো যা এর আগে এতো সময় পর্যন্ত হয়নাই। সে আনুমানিক আধ ঘন্টার মতো একের পর এক কান্ড করেছিল যা অন্য সময় সে করতো না। গায়ে হাত তুললেও পরোক্ষনেই মাফ চাইতো সরি বলতো বা ঝগড়া থেমে যেতো।  সেদিনের টা ছিলো ভয়ংকর অসাভাবিক! তার চোখ মুখের যে ভাষা ছিলো, তাকে এক মুহুর্তের জন্য আমার কাছে স্বামী মনে হয়নি, একজন খুনীর মতো লেগেছিলো। তার শরীরে যে শক্তির প্রভাব ছিলো তা কোন সাভাবিক অবস্থায় একজন মানুষের থাকেনা।

আমার নিজের শারীরিক এবং মানুষিক বিপর্যের কারণে আমি নিজেই তখন বুঝে উঠতে পারিনাই আসলেই কি ঘটেছে কিভাবে ঘটেছে! তার সাথে তখন থেকেই সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সেই ঘটনা কে কেন্দ্র করে। যার কারণে প্রথমেই দুইজনের বক্তব্য পেশ করার সুযোগ হয়নি।
তার মানুষিক সমস্যার গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পত্র সাথে দেয়া হয়েছে।
সে  ("সিজোফ্রেনিয়া") সহ আরও দুটি রোগে আক্রান্ত ছিলো অনেকদিন থেকেই।
তার কোনকিছুই মনে নেই এখনো পর্যন্ত। এরপরেও আরও অনেক ঘটনা ঘটে গেছে কিন্তু সে সবকিছু এখনো মনে করতে পারেনা। উল্লেখ্য যে, ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া হয় এবং সে অনেকদিন থেকেই মানুষিক সমস্যায় ভুগছিল যা সে বুঝতে পারেনি, আমি কিছুটা বুঝতে পারলেও ব্যবস্থা নিতে পারিনাই।
হুজুর,উল্লিখিত বক্তব্য অনুযায়ী আমি ইসলামি শরিয়া মতে একটা ফায়সালা চাই।
প্রেসক্রিপশন এর তারিখ ২১/৬/২০২১ এর ঘটনার উপরে ডাক্তার সবকিছু জেনে দিয়েছে।
স্বামীর বক্তব্য
হুজুর,

আমার অনেকদিন থেকেই মানষিক সমস্যা হচ্ছিলো আমার ডায়বেটিস হাই ব্লাড প্রেশার ছিলো।  আর আমি একটা সময় দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলাম তখন আমি বিভিন্ন নেশায় আশক্ত ছিলাম।  কিন্তু পরে এসব ছেড়ে দেই আমার ডায়বেটিস এবং হাই প্রেশার ধরা পড়ার পর। কিন্তু আমার মানষিকভাবে বেশ কিছু সমস্যা হচ্ছিল যা আমিও বুঝতে পারিনাই আগে। আমি রেগে গেলে হাতের কাছে যা পেতাম তাই নিয়েই আমার স্ত্রীকে মারতে যেতাম । কিন্ত এরপরে আবার থেমে যেতাম বা তাকে ম্যানেজ করতাম। কিন্তু সবকিছু আমার মনে থাকতো না। এমনকি নিত্যদিনের কাজের৷ ক্ষেত্রেও আমার অনেক কিছুই ভুল হত মনে থাকতো না, আমার স্ত্রীর সহযোগিতায় আমি কাজগুলো করতাম। খুব সামান্য কারণে অনেক বেশি উত্তেজিত হয়ে যেতাম নিজের প্রতি আর নিয়ন্ত্রণ থাকতো না। আমার স্ত্রী ই আমাকে প্রায়ই থামাইতে বাধা দিতে চেষ্টা করেছে।
সেদিন প্রথমে আমার মেয়ের মাথায় ব্যাথা লাগে, এতে আমি আমার স্ত্রীর প্রতি রেগে গিয়েছিলাম,  তাকে দুই তিনটি চড় দেই জুতা দিয়েও বাড়ি দেই, এরপরে সে আমাকে ধাক্কা দেয়, এতে আমার রাগ আরও উঠে যায়। এরপর আমি তাকে কি করেছিলাম কিভাবে কি করে আঘাত করেছি আমার আর কিছুই মনে আসেনা আজকের এ পর্যন্ত।  আমার স্ত্রী যে কথাগুলো বলছে তার কিছুই আমি এখনো মনে করতে পারতেছিনা। ওই রাতে কখন আমার হুশ ফিরছে সেটাও আমি নির্দিষ্ট করে বলতে পারিনা, এটুকু শুধু মনে পড়ে কখন জানি আমার ছোট মেয়েটি আমার গায়ে এসে খেলার ছলে ধাক্কা দিলে আমি হুশ ফিরে পাই। এবং তখন আমার এটাই মনে হইছে কি যেন হয়ে গেছে আমার স্ত্রী নেই আমার সন্তানের কি হবে আমি খুব কান্নাকাটি করতে থাকি। এরপর আমি প্রায় তিন মাসের মতো মানুষিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। আমাকে অনেক হুজুর ডাক্তার দেখানো হয়, আমাদের দুজনকে আমার নিক্টস্থ কেউ কুফরি করেছিল এটা আমি জানতে পারি। আমি উন্মাদের মতো ছিলাম সেই রাতের ঘটনা থেকে।  আমার স্ত্রী সন্তানের সাথে আমার কোন যোগাযোগ আর হয়নি কেউ করতে দেয়নি আমার স্ত্রীর পক্ষের।  আমি আমার স্ত্রী সন্তানকে অনেক ভালোবাসি।  যে স্ত্রীর সামান্য অসুখে আমি ব্যাকুল হয়ে যেতাম। তার গায়ে কিভাবে এরকম আঘাত করা হয়েছে আমার দ্বারা,  তা আজও আমি স্বরণ করতে পারি না, আমি চিন্তা করতে গেলেই আমার বুকে চাপ দিয়ে আমি অসুস্থ হয়ে যাই।
ডাক্তারের প্রসক্রিপসনে উল্লেখ করা আছে আমি সিজোফ্রেনিয়া সহ আরও রোগে আক্রান্ত। যার ফলে সৃতিভ্রম হয়ে যায়, কখন কেন কি কারণে উত্তেজিত হয়ে কি করা হয় বলা হয় তা মনে করতে না পারা, এমনকি ওজু করার সময় আগে পরে কোনটা শেষ করেছি সেটাও ভুলে যাই। আমি ইচ্ছাকৃত কিছুই করি নাই হুজুর, কিভাবে কেমনে কি হয়ে গেছে, তা আজও আমার মনে নেই বলতে পারিনা।
ঘটনার তারিখ ২১/৬/২০২১।
ডাক্তার সেদিনের এবং এর আগের সমস্ত ঘটনা বিস্তারিত জানার পরে এই প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন।

1 Answer

0 votes
by (59,970 points)
edited by

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

স্বামী-স্ত্রী একজন আরেক জনের পোষাক সরূপ। তাই তারা একে অপরে পোষাকের মত মিলে মিশে থাকবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন -

أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَائِكُمْ ۚ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ ۗ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَخْتَانُونَ أَنفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنكُمْ ۖ فَالْآنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُوا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ ۚ

রোযার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদআল্লাহ অবগত রয়েছেন যেতোমরা আত্নপ্রতারণা করছিলেসুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিয়েছেন। অতঃপর তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর এবং যা কিছু তোমাদের জন্য আল্লাহ দান করেছেনতা আহরন কর। (সুরা বাকারাআয়াত ১৮৭)

 

যদি কোন সুস্থ্য ব্যক্তি রাগের বশে তালাক দেয়। তাহলে তালাক পতিত হয়ে যাবে। কারণ তালাক সাধারণত রাগের বশেই মানুষ দিয়ে থাকে। মোহাব্বত করে তালাক দেয়না। সুতরাং তা পতিত হবে।

 

 আপনাকে পাল্টা একটি প্রশ্ন করছি-

রাগের বশে কারো গলা কেটে ফেললে লোকটি মারা যাবে কি না?

 

এ প্রশ্নের উত্তরটা কী হবে?

নিশ্চয় আপনি বলবেন, গলা যেভাবেই কাটা যাক, রাগ করে করুক বা নিয়ত ছাড়া করুক গলা কেটে খুন হয়েই যাবে। কারণ এটি খুবই সঙ্গীন কর্ম।

 

ঠিক তেমনি তালাক শব্দ। এটি খুবই জঘন্য একটি শব্দ। নিকৃষ্ট হালাল বলা হয়েছে হাদীসে। এ ভয়ানক শব্দটি নিয়ত থাকুক বা না থাকুক রাগে বলুক আর ভালবেসে বলুক স্ত্রীকে উদ্দেশ্য নিয়ে মুখ দিয়ে এ শব্দ বের হলেই তালাক পতিত হয়ে যায়। 

 

হাদীসে এসেছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” ثَلَاثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ: الطَّلَاقُ، وَالنِّكَاحُ، وَالرَّجْعَةُ

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, তিনি বিষয় এমন যে, ইচ্ছেকৃত করলে ইচ্ছেকৃত এবং ঠাট্টা করে করলেও ইচ্ছেকৃত বলে ধর্তব্য হয়। তা হল, তালাক, বিবাহ এবং তালাকে রেজয়ীপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২০৩৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৯৪}

 

وفي رد المحتار- ويقع طلاق من غضب خلافا لابن القيم الخ وهذا الموافق عندنا لما مر فى المدهوش، ( رد المحتار، كتاب الطلاق، مطلب فى طلاق المدهوش-4/452)

যার সারমর্ম হলো রাগ অবস্থায় তালাক দিলেও তালাক হয়ে যাবে।   

,

তালাক তো দেওয়াই হয় রাগ হয়ে। কয়জন আছে, শান্তভাবে তালাক দেয়? আসলে তো এমনই হওয়া উচিত ছিল যে, যদি বাস্তবসম্মত ও অনিবার্য প্রয়োজনে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয় তাহলে বড়দের সঙ্গে পরামর্শ করে একে অন্যের কল্যাণকামী হয়ে বুঝে-শুনে, সঠিক মাসআলা জেনে নিয়ে মাসআলা অনুযায়ী তালাক প্রদানের মাধ্যমে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করবে।

 কিন্তু আফসোস! অধিকাংশ মানুষ মাসআলা জানার চেষ্টাও করে না, আর না তাদের মধ্যে এই সুবুদ্ধি আছে যে, বড়দের সাথে পরামর্শ করবে, চিন্তা-ভাবনা করবে। নিজের ইচ্ছাবিরোধী কোনো কিছু পেলেই রাগের বশে তালাক দিয়ে ফেলে। আর তা এক বা দুইটি নয়; এক নিঃশ্বাসে তিন তালাক।

 

যখন রাগ প্রশমিত হয় তখন অনুতপ্ত হয় এবং বিভিন্ন ধরনের কথা বানাতে থাকে। বলে, আমি রাগের মাথায় বলে ফেলেছি, তালাক দেওয়ার ইচ্ছা ছিল না। এসব লোকের জেনে রাখা উচিত যে, তালাক পতিত হওয়ার জন্য নিয়তের কোনো প্রয়োজন নেই। এটা কোনো ইবাদত নয় যে, এর জন্য নিয়ত করতে হবে। নিয়ত থাক বা না থাক সর্বাবস্থায় তালাক শব্দ বলে ফেললে বা কাগজে লিখে দিলেই তালাক হয়ে যায়। তেমনিভাবে রাগের অবস্থায় তালাক দিলেও তালাক হয়ে যায়, এমনকি হাস্যরস বা ঠাট্টাচ্ছলে তালাক দিলেও তা পতিত হয়ে যায়।

 

★★অবশ্য কেউ যদি প্রচন্ড রেগে যায় ও রাগের ফলে বেহুঁশ হয়ে পড়ে আর এ অবস্থায় সে কী বলেছে তার কিছুই মনে না থাকে তাহলে ঐ অবস্থার তালাক কার্যকর হবে না।

(শর্ত হলো বেহুশ হয়ে যাওয়া,এবং সেই সময়ের কোনো কথা মনে না থাকা)


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!

 

১. স্ত্রীকে এভাবে মারধর করা জায়েজ নয়। এতে স্বামী গুনাহগার হবে।

. প্রশ্নে আরো স্পষ্ট ভাবে বলার দরকার ছিলো যে, কোন শব্দে ও কিভাবে তিন তালাক দিয়েছে। তাছাড়া শরীয়তের হুকুম বিস্তারিত ভাবে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তাই নিকটস্ত কোনো নির্ভরযোগ্য ইফতা বিভাগে সরাসরি যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

৩. আপনার স্বামী যদি বাস্তবেই সেদিন  প্রচন্ড রেগে গিয়ে থাকে ও রাগের ফলে বেহুঁশ হয়ে পড়ে আর এ অবস্থায় সে কী বলেছে তার কিছুই মনে না থাকে তাহলে ঐ অবস্থার তালাক কার্যকর হবে না তবে শর্ত হলো বেহুশ হয়ে যাওয়া এবং সেই সময়ের কোনো কথা মনে না থাকা


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...