বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম।
জবাবঃ
স্বামী-স্ত্রী একজন আরেক জনের পোষাক সরূপ। তাই তারা একে অপরে পোষাকের মত মিলে
মিশে থাকবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন -
أُحِلَّ لَكُمْ
لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَائِكُمْ ۚ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ
لِبَاسٌ لَّهُنَّ ۗ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَخْتَانُونَ أَنفُسَكُمْ
فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنكُمْ ۖ فَالْآنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُوا مَا
كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ ۚ
রোযার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা তোমাদের জন্য হালাল করা
হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ অবগত রয়েছেন যে, তোমরা আত্নপ্রতারণা করছিলে, সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন এবং
তোমাদের অব্যাহতি দিয়েছেন। অতঃপর তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর এবং যা
কিছু তোমাদের জন্য আল্লাহ দান করেছেন, তা আহরন কর। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৭)
যদি কোন সুস্থ্য ব্যক্তি রাগের বশে তালাক দেয়। তাহলে তালাক পতিত হয়ে যাবে।
কারণ তালাক সাধারণত রাগের বশেই মানুষ দিয়ে থাকে। মোহাব্বত করে তালাক দেয়না। সুতরাং
তা পতিত হবে।
আপনাকে
পাল্টা একটি প্রশ্ন করছি-
রাগের বশে কারো গলা কেটে ফেললে লোকটি মারা যাবে কি না?
এ প্রশ্নের উত্তরটা কী হবে?
নিশ্চয় আপনি বলবেন, গলা যেভাবেই
কাটা যাক, রাগ করে
করুক বা নিয়ত ছাড়া করুক গলা কেটে খুন হয়েই যাবে। কারণ এটি খুবই সঙ্গীন কর্ম।
ঠিক তেমনি তালাক শব্দ। এটি খুবই জঘন্য একটি শব্দ। নিকৃষ্ট হালাল বলা হয়েছে
হাদীসে। এ ভয়ানক শব্দটি নিয়ত থাকুক বা না থাকুক রাগে বলুক আর ভালবেসে বলুক
স্ত্রীকে উদ্দেশ্য নিয়ে মুখ দিয়ে এ শব্দ বের হলেই তালাক পতিত হয়ে যায়।
হাদীসে এসেছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” ثَلَاثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ:
الطَّلَاقُ، وَالنِّكَاحُ، وَالرَّجْعَةُ “
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, তিনি বিষয় এমন যে, ইচ্ছেকৃত করলে ইচ্ছেকৃত এবং ঠাট্টা করে করলেও
ইচ্ছেকৃত বলে ধর্তব্য হয়। তা হল,
তালাক, বিবাহ এবং তালাকে রেজয়ীপ্রাপ্তা স্ত্রীকে
ফিরিয়ে নিয়ে আসা। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২০৩৯, সুনানে আবু
দাউদ, হাদীস
নং-২১৯৪}
وفي رد المحتار- ويقع
طلاق من غضب خلافا لابن القيم الخ وهذا الموافق عندنا لما مر فى المدهوش، ( رد
المحتار، كتاب الطلاق، مطلب فى طلاق المدهوش-4/452)
যার সারমর্ম হলো রাগ অবস্থায় তালাক দিলেও তালাক হয়ে যাবে।
,
তালাক তো দেওয়াই হয় রাগ হয়ে। কয়জন আছে, শান্তভাবে
তালাক দেয়? আসলে তো
এমনই হওয়া উচিত ছিল যে, যদি
বাস্তবসম্মত ও অনিবার্য প্রয়োজনে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয় তাহলে বড়দের সঙ্গে
পরামর্শ করে একে অন্যের কল্যাণকামী হয়ে বুঝে-শুনে, সঠিক মাসআলা
জেনে নিয়ে মাসআলা অনুযায়ী তালাক প্রদানের মাধ্যমে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করবে।
কিন্তু
আফসোস! অধিকাংশ মানুষ মাসআলা জানার চেষ্টাও করে না, আর না তাদের
মধ্যে এই সুবুদ্ধি আছে যে, বড়দের সাথে
পরামর্শ করবে, চিন্তা-ভাবনা
করবে। নিজের ইচ্ছাবিরোধী কোনো কিছু পেলেই রাগের বশে তালাক দিয়ে ফেলে। আর তা এক বা
দুইটি নয়; এক
নিঃশ্বাসে তিন তালাক।
যখন রাগ প্রশমিত হয় তখন অনুতপ্ত হয় এবং বিভিন্ন ধরনের কথা বানাতে থাকে। বলে, আমি রাগের মাথায় বলে ফেলেছি, তালাক দেওয়ার ইচ্ছা ছিল না। এসব লোকের জেনে
রাখা উচিত যে, তালাক পতিত
হওয়ার জন্য নিয়তের কোনো প্রয়োজন নেই। এটা কোনো ইবাদত নয় যে, এর জন্য নিয়ত করতে হবে। নিয়ত থাক বা না থাক
সর্বাবস্থায় তালাক শব্দ বলে ফেললে বা কাগজে লিখে দিলেই তালাক হয়ে যায়।
তেমনিভাবে রাগের অবস্থায় তালাক দিলেও তালাক হয়ে যায়, এমনকি হাস্যরস বা ঠাট্টাচ্ছলে তালাক দিলেও তা
পতিত হয়ে যায়।
★★অবশ্য কেউ
যদি প্রচন্ড রেগে যায় ও রাগের ফলে বেহুঁশ হয়ে পড়ে আর এ অবস্থায় সে কী বলেছে
তার কিছুই মনে না থাকে তাহলে ঐ অবস্থার তালাক কার্যকর হবে না।
(★শর্ত হলো
বেহুশ হয়ে যাওয়া,এবং সেই সময়ের কোনো কথা মনে না থাকা)
★ সু-প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!
১. স্ত্রীকে এভাবে মারধর করা জায়েজ নয়। এতে স্বামী গুনাহগার হবে।
২. প্রশ্নে আরো স্পষ্ট ভাবে বলার দরকার ছিলো যে, কোন শব্দে ও কিভাবে তিন তালাক দিয়েছে। তাছাড়া শরীয়তের হুকুম
বিস্তারিত ভাবে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তাই নিকটস্ত কোনো নির্ভরযোগ্য ইফতা বিভাগে
সরাসরি যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
৩. আপনার স্বামী যদি বাস্তবেই
সেদিন প্রচন্ড রেগে গিয়ে থাকে ও রাগের ফলে বেহুঁশ
হয়ে পড়ে আর এ অবস্থায় সে কী বলেছে তার কিছুই মনে না থাকে তাহলে ঐ অবস্থার তালাক
কার্যকর হবে না। তবে শর্ত
হলো বেহুশ হয়ে যাওয়া এবং সেই সময়ের কোনো কথা মনে না থাকা।