আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
379 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (42 points)
(১জন বোনের হয়ে প্রশ্ন করছি)

আসসালামু আ'লাইকুম ওয়া রহমাতুল্ল-হ্।
শাইখ, নিম্নোক্ত বিষয়ে আপনার সুচিন্তিত মতামত আশা করছি।

বাবা মার আদেশ মেডিক্যাল সেক্টর এ পড়া কিন্তু আমি মেডিক্যাল সেক্টরের ভয়াবহ ফিতনাপূর্ণ পরিবেশের কথা ভেবে ওখানে আর পড়তে চাচ্ছি না,এগুলার প্রতি কোনো ভালবাসা নেই,এগুলার পরিবর্তে ইল্ম অর্জন করতে চাই।আবার মেডিক্যালে পড়তে না চাওয়াটা বাবা মাকে জানালে ওরা খুব কষ্ট পাবে,হার্ট অ্যাটাক,স্ট্রোক টাইপের কিছু ও হয়ে যেতে পারে।আবার এদিকে নিজের উপর যুলুম হচ্ছে।যেদিকে আগ্রহ নাই সেদিকে যেতে হচ্ছে;মা বাবার আদেশ পালন করতে। কিন্তু মেডিক্যালে ফিতনার ভয়াবহতা অবর্ণনীয়।

 একটি মেয়ে ডাক্তারি পড়তে গেলে তাকে অনেক কিছু ফেইস করতে হয়। যেমন্টা পুরুষ রোগীর রিভিলিং বডি পার্ট দেখা, বা কোনো পেশেন্ট কে বিনা অনুমতিতে বিবস্ত্র দেখা, মর্গে পোস্ট মর্টাম এর সময় ছেলে মেয়ে উভয় কে দেখা ও প্রত্যেকটা বডি পার্ট চেক করা, কখনো বা পুরুষ স্যার বা ক্লাসমেট দের সো কোল্ড কুল ( অশ্লীল, হারাম জোকস সহ্য করা), কখনো আবার শিখার জন্যে নন মাহরাম এর সামনে হাল্কা হলেও চেহারা দেখানো!
মেডিক্যালের বর্তমান পরিবেশে গেলে নিজের গুনাহের আশংকা করছি এবং নিজের ইমান বাঁচানো কঠিন হয়ে যাবে বলে বোধ করছি।
এক্ষেত্রে তাদের আদেশ অমান্য করলে গুনাহ হবে কিনা?

তাছাড়া শুধুমাত্র এমবিবিএস পাস করার পর কেউ নারীদের বিশেষ চিকিৎসা দিতে পারে না। এমবিবিএস পাস করে শুধুমাত্র সর্দি,জ্বর,ঠাণ্ডা,কাশি,সাধারণ মেয়েলি চিকিৎসা হয়তো দিতে পারে। কিন্তু নারীদের সন্তান প্রসব,জরায়ু ক্যানসার,ব্রেস্ট ক্যান্সার এই সকল চিকিৎসা দিতে গেলে উচ্চতর ডিগ্রি নিতেই হবে।উচ্চতর ডিগ্রিতে ব্যাপক পরিমাণ সময় পড়াশোনাতে দিতে হয় যা একজন বিবাহিত নারী স্বামী,সন্তানের হক সামলানোর পর দিতে অসমর্থ।যারাই এমনটি করেছেন,তাদের স্বামী,সন্তানের হক নষ্ট হয়েছে।তাই উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার ইচ্ছা নেই।আর যদি আমার উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার পরিকল্পনাই না থাকে,তাহলে শুধুমাত্র এমবিবিএস পাস করার তো কোনো বিশেষ ফায়দা হচ্ছে না।এরকম সর্দি,কাশি,জ্বরের জন্য অনেক ডাক্তার রয়েছেন,শাইখ।

তাই উচ্চতর ডিগ্রি নেয়ার ইচ্ছা না থাকলে এগুলা পড়া তো আরও সময় নষ্ট। আর সত্যিকারার্থে আমার পক্ষে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়া সম্ভব নয়।স্বামীকে মাসনা করালে স্বামীর হক আদায়ে না হয় কিছু ছাড় পাবো।কিন্তু সন্তানের হক?সেটার জবাবদিহিতা নিয়ে ভয় পাচ্ছি।শরীরই চলবে না এত পরিশ্রমে।নিজের মেজাজই যদি খিটখিটে থাকে তাহলে সন্তান কি শিখবে আমাদের থেকে?আর এভাবে মেডিক্যালের চিকিৎসাবিদ্যা অর্জন এবং শার‌'ঈ ইল্ম অর্জন একসাথে করতে গেলে ২টার কোনোটাই হয়তো ভালভাবে হবে না।

আমি দ্বীনের ক্ষেত্রে জানতে চাই।আমি যদি  নাই জানি তাহলে কিভাবে বিপদে সবর করব?নানাজনের কটু কথায়ও মুখে কুলুপ এঁটে থাকা শিখব?যেদিন দ্বীন সম্পর্কে পড়াশোনা করা হয় সেদিন তো চেষ্টা বাড়ে কারও হক না নষ্ট করার।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করা একজন আপু নিজে এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।উনার পরামর্শ নিতে গেলে উনি বলেছেন,"শুধু জিনা-ব্যাভিচারই কি ফিতনা!?

চোখের ফিতনা, কানের ফিতনা.. এগুলোকে আমরা আমলে আনিনা।

এখন অনেক ছেলেই আছে পর্দা করা মেয়েকে দেখে মনে আকাংখা করে তার বউ ঐ রকম হবে... চোখের ফিতনা...

তোমার কন্ঠস্বর শুনে কারও মনে হলো- কি মিষ্টি ভয়েস... কানের ফিতনা... এগুলো কি আটকানো সম্ভব ? কিন্তু এগুলোও তো ফিতনা!  আমরা সেক্সচুয়াল বিষয়টা ছাড়া আর সব ফিতনাকে পাশ কাটিয়ে যাই।

যখন আমি মেডিকেলে পড়েছি তখন বেপর্দা, পথভ্রষ্ট ছিলাম।ওখানকার সবকিছুই আমি জানি এবং দেখেছি।সহজ কথায়, পরকালকে priority দিলে মেডিকেলে যাওয়ার কোনো অর্থ নাই।যারা ইতিমধ্যে মেডিক্যালে পড়াশোনা করছেন,তারা পড়ুক। কিন্তু তোমার তাক‌ওয়া বুঝে তুমি সিদ্ধান্ত নাও;তুমি না গেলে নারী ডাক্তার তৈরি হ‌ওয়া কমে যাবে না।"

শাইখ,শুধু যে ফিতনা তা-ই নয়,এছাড়াও এই পড়াশোনাতে আমি যাওয়া মানেই আমার স্বামী,সন্তানের হক নষ্ট হ‌ওয়া। উল্লেখ্য,আমি অবিবাহিত। ভবিষ্যৎ হক নষ্টের ব্যাপারে প্রবল আশংকা করছি।

এত এত গুনাহ সামাল দেওয়ার মতো ইমান,তাক‌ওয়া, আত্মশুদ্ধিতা আমার নেই। এক্ষেত্রে আমি যদি পিতা-মাতার কথা না মানি এবং মেডিক্যালে পড়াশোনা না করি,এতে কি আমি পিতা-মাতার অবাধ্য বলে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার নিকট গণ্য হবো এবং আমার গুনাহ হবে?

1 Answer

0 votes
by (589,680 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহাম।
জবাবঃ-
https://www.ifatwa.info/1722 নং ফাতাওয়ায় বলেছি যে,
চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব বৃহৎ ফেক্বাহী গ্রন্থ 'আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায়' রয়েছে,
" ﻃﺎﻋﺔ ﺍﻟﻤﺨﻠﻮﻗﻴﻦ - ﻣﻤّﻦ ﺗﺠﺐ ﻃﺎﻋﺘﻬﻢ – ﻛﺎﻟﻮﺍﻟﺪﻳﻦ ، ﻭﺍﻟﺰّﻭﺝ ، ﻭﻭﻻﺓ ﺍﻷﻣﺮ : ﻓﺈﻥّ ﻭﺟﻮﺏ ﻃﺎﻋﺘﻬﻢ ﻣﻘﻴّﺪ ﺑﺄﻥ ﻻ ﻳﻜﻮﻥ ﻓﻲ ﻣﻌﺼﻴﺔ ، ﺇﺫ ﻻ ﻃﺎﻋﺔ ﻟﻤﺨﻠﻮﻕ ﻓﻲ ﻣﻌﺼﻴﺔ ﺍﻟﺨﺎﻟﻖ " ﺍﻧﺘﻬﻰ
যাদের আদেশ-নিষেধ এর অনুসরণ শরীয়ত কর্তৃক ওয়াজিব।যেমন-মাতাপিতা,স্বামী,সরকারী বিধিনিষেধ,এর অনুসরণ ওয়াজিব।
এ হুকুম ব্যাপক হারে প্রযোজ্য হবে না বরং ঐ সময়-ই প্রযোজ্য হবে যখন তা গুনাহের কাজ হবে না।কেননা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে আল্লাহর অবাধ্যতায় কোনো মাখলুকের অনুসরণ করা যাবে না।(২৮/৩২৭)(শেষ)

সহশিক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন-https://www.ifatwa.info/434

সুপ্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
উম্মতের বৃহৎ ফায়দার স্বার্থে বর্তমান প্রচলিত মেডিকেল শিক্ষার অনুমোদন ফুকাহায়ে কেরাম দিয়েছেন। স্বামী সন্তানের হক আদায় যদি কোনোভাবেই সম্ভব না হয়, এবং এজন্য আপনি মেডিকেল শিক্ষা গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারও আপনার রয়েছে। এবং এক্ষেত্রে মাতাপিতার অবাধ্য হওয়ার জন্য আপনার কোনো গোনাহ হবে না।

তবে আমরা পরামর্শ দেবো যে, যথাসম্ভব পর্দা মেন্টন করে,বোবা ও বধির হয়ে এই ফরযে কেফায়া দায়িত্ব পালনের দিকে অগ্রসর হয়ে কোনো বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে যাওয়া।এবং দ্রুত বিয়ে করে নেওয়া।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...