(১জন বোনের হয়ে প্রশ্ন করছি)
আসসালামু আ'লাইকুম ওয়া রহমাতুল্ল-হ্।
শাইখ, নিম্নোক্ত বিষয়ে আপনার সুচিন্তিত মতামত আশা করছি।
বাবা মার আদেশ মেডিক্যাল সেক্টর এ পড়া কিন্তু আমি মেডিক্যাল সেক্টরের ভয়াবহ ফিতনাপূর্ণ পরিবেশের কথা ভেবে ওখানে আর পড়তে চাচ্ছি না,এগুলার প্রতি কোনো ভালবাসা নেই,এগুলার পরিবর্তে ইল্ম অর্জন করতে চাই।আবার মেডিক্যালে পড়তে না চাওয়াটা বাবা মাকে জানালে ওরা খুব কষ্ট পাবে,হার্ট অ্যাটাক,স্ট্রোক টাইপের কিছু ও হয়ে যেতে পারে।আবার এদিকে নিজের উপর যুলুম হচ্ছে।যেদিকে আগ্রহ নাই সেদিকে যেতে হচ্ছে;মা বাবার আদেশ পালন করতে। কিন্তু মেডিক্যালে ফিতনার ভয়াবহতা অবর্ণনীয়।
একটি মেয়ে ডাক্তারি পড়তে গেলে তাকে অনেক কিছু ফেইস করতে হয়। যেমন্টা পুরুষ রোগীর রিভিলিং বডি পার্ট দেখা, বা কোনো পেশেন্ট কে বিনা অনুমতিতে বিবস্ত্র দেখা, মর্গে পোস্ট মর্টাম এর সময় ছেলে মেয়ে উভয় কে দেখা ও প্রত্যেকটা বডি পার্ট চেক করা, কখনো বা পুরুষ স্যার বা ক্লাসমেট দের সো কোল্ড কুল ( অশ্লীল, হারাম জোকস সহ্য করা), কখনো আবার শিখার জন্যে নন মাহরাম এর সামনে হাল্কা হলেও চেহারা দেখানো!
মেডিক্যালের বর্তমান পরিবেশে গেলে নিজের গুনাহের আশংকা করছি এবং নিজের ইমান বাঁচানো কঠিন হয়ে যাবে বলে বোধ করছি।
এক্ষেত্রে তাদের আদেশ অমান্য করলে গুনাহ হবে কিনা?
তাছাড়া শুধুমাত্র এমবিবিএস পাস করার পর কেউ নারীদের বিশেষ চিকিৎসা দিতে পারে না। এমবিবিএস পাস করে শুধুমাত্র সর্দি,জ্বর,ঠাণ্ডা,কাশি,সাধারণ মেয়েলি চিকিৎসা হয়তো দিতে পারে। কিন্তু নারীদের সন্তান প্রসব,জরায়ু ক্যানসার,ব্রেস্ট ক্যান্সার এই সকল চিকিৎসা দিতে গেলে উচ্চতর ডিগ্রি নিতেই হবে।উচ্চতর ডিগ্রিতে ব্যাপক পরিমাণ সময় পড়াশোনাতে দিতে হয় যা একজন বিবাহিত নারী স্বামী,সন্তানের হক সামলানোর পর দিতে অসমর্থ।যারাই এমনটি করেছেন,তাদের স্বামী,সন্তানের হক নষ্ট হয়েছে।তাই উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার ইচ্ছা নেই।আর যদি আমার উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার পরিকল্পনাই না থাকে,তাহলে শুধুমাত্র এমবিবিএস পাস করার তো কোনো বিশেষ ফায়দা হচ্ছে না।এরকম সর্দি,কাশি,জ্বরের জন্য অনেক ডাক্তার রয়েছেন,শাইখ।
তাই উচ্চতর ডিগ্রি নেয়ার ইচ্ছা না থাকলে এগুলা পড়া তো আরও সময় নষ্ট। আর সত্যিকারার্থে আমার পক্ষে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়া সম্ভব নয়।স্বামীকে মাসনা করালে স্বামীর হক আদায়ে না হয় কিছু ছাড় পাবো।কিন্তু সন্তানের হক?সেটার জবাবদিহিতা নিয়ে ভয় পাচ্ছি।শরীরই চলবে না এত পরিশ্রমে।নিজের মেজাজই যদি খিটখিটে থাকে তাহলে সন্তান কি শিখবে আমাদের থেকে?আর এভাবে মেডিক্যালের চিকিৎসাবিদ্যা অর্জন এবং শার‌'ঈ ইল্ম অর্জন একসাথে করতে গেলে ২টার কোনোটাই হয়তো ভালভাবে হবে না।
আমি দ্বীনের ক্ষেত্রে জানতে চাই।আমি যদি নাই জানি তাহলে কিভাবে বিপদে সবর করব?নানাজনের কটু কথায়ও মুখে কুলুপ এঁটে থাকা শিখব?যেদিন দ্বীন সম্পর্কে পড়াশোনা করা হয় সেদিন তো চেষ্টা বাড়ে কারও হক না নষ্ট করার।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করা একজন আপু নিজে এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।উনার পরামর্শ নিতে গেলে উনি বলেছেন,"শুধু জিনা-ব্যাভিচারই কি ফিতনা!?
চোখের ফিতনা, কানের ফিতনা.. এগুলোকে আমরা আমলে আনিনা।
এখন অনেক ছেলেই আছে পর্দা করা মেয়েকে দেখে মনে আকাংখা করে তার বউ ঐ রকম হবে... চোখের ফিতনা...
তোমার কন্ঠস্বর শুনে কারও মনে হলো- কি মিষ্টি ভয়েস... কানের ফিতনা... এগুলো কি আটকানো সম্ভব ? কিন্তু এগুলোও তো ফিতনা! আমরা সেক্সচুয়াল বিষয়টা ছাড়া আর সব ফিতনাকে পাশ কাটিয়ে যাই।
যখন আমি মেডিকেলে পড়েছি তখন বেপর্দা, পথভ্রষ্ট ছিলাম।ওখানকার সবকিছুই আমি জানি এবং দেখেছি।সহজ কথায়, পরকালকে priority দিলে মেডিকেলে যাওয়ার কোনো অর্থ নাই।যারা ইতিমধ্যে মেডিক্যালে পড়াশোনা করছেন,তারা পড়ুক। কিন্তু তোমার তাক‌ওয়া বুঝে তুমি সিদ্ধান্ত নাও;তুমি না গেলে নারী ডাক্তার তৈরি হ‌ওয়া কমে যাবে না।"
শাইখ,শুধু যে ফিতনা তা-ই নয়,এছাড়াও এই পড়াশোনাতে আমি যাওয়া মানেই আমার স্বামী,সন্তানের হক নষ্ট হ‌ওয়া। উল্লেখ্য,আমি অবিবাহিত। ভবিষ্যৎ হক নষ্টের ব্যাপারে প্রবল আশংকা করছি।
এত এত গুনাহ সামাল দেওয়ার মতো ইমান,তাক‌ওয়া, আত্মশুদ্ধিতা আমার নেই। এক্ষেত্রে আমি যদি পিতা-মাতার কথা না মানি এবং মেডিক্যালে পড়াশোনা না করি,এতে কি আমি পিতা-মাতার অবাধ্য বলে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার নিকট গণ্য হবো এবং আমার গুনাহ হবে?