ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহাম।
জবাবঃ-
একজন মুফতীর মাঝে কি কি শর্তের উপস্থিতি আবশ্যক "আল মাউসুআতুল ফিকহিয়্যায়" তার একটা পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে। তাতে মুফতীর সাতটি শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে।
১. ইসলাম। মুফতী যিনি হবেন তার জন্য ইসলামের পবিত্র ধর্ম বিশ্বাসে দীক্ষিত হওয়া আবশ্যক। সুতরাং ভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী কারো ধর্মীয় অভিমত ফতোয়া বলে বিবেচিত হবে না।
২. বয়সের পরিপক্বতা। একজন মুফতীকে অবশ্যই যথোপযুক্ত প্রাপ্ত বয়সে উপনীত হতে হবে। অপ্রাপ্ত কিংবা অপরিপক্ব বয়সী কারো ফতোয়া গৃহীত ফতোয়ার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হবে না।
৩. জ্ঞান বুদ্ধি। একজন মুফতীকে সুস্থ, স্বচ্ছ জ্ঞানবুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া আবশ্যক। সুতরাং জ্ঞানবুদ্ধিতে অস্বচ্ছতা, অপরিপক্বতা কিংবা প্রতিবন্ধিতা আছে এমন কারো ফতোয়া ফতোয়া হিসেবে গৃহীত হবে না।
৪. ন্যায়পরায়ণতা ও সত্যনিষ্ঠতা। একজন মুফতীকে যথেষ্ট ন্যায়পরায়ণ ও সত্যনিষ্ঠ হতে হবে। সুতরাং অন্যায়াশ্রয়ী কোনো পাপ পঙ্কিলতায় অভ্যস্ত ব্যক্তি মুফতীর সুমহান আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারে না।
৫. ইজতিহাদ। ইজতিহাদ অথর্, সর্বসম্মত গৃহীত দলীল প্রমাণের আলোকে শরঈ বিধান সম্বন্ধে ধারণা লাভ ও তা উদ্ভাবনের উদ্দেশে ফকীহের সবটুকু সাধ-সাধ্য ও শ্রম-সাধনা ব্যয় করা। একজন মুফতীর প্রধানতম শর্ত হলো, ইজতিহাদ। ইমাম শাফী রহ. বলেন, আল্লাহ তা‘আলার দীনের ব্যাপারে শুধু এমন ব্যক্তির জন্যই ফতোয়া প্রদান বিধিত যিনি কুরআনের নাসেখ-মানসুখ (রহিতকারী এবং রহিত কৃত আয়াত-প্রবচন), মুহকাম- মুতাশাবিহ (দ্ব্যর্থহীন এবং দ্ব্যর্থবোধক আয়াত প্রবচন), তাওয়ীল-তানযীল (কুরআনের মূল পাঠ এবং তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ) এবং এতদোভয়ের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে প্রজ্ঞাবান হবেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসের নাসিখ মানসুখ সম্বন্ধে গভীর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হবেন, কুরআন বিষয়ে যে পরিমাণ পাণ্ডিত্বের প্রয়োজন হাদীস বিষয়েও সে পরিমাণ পাণ্ডিত্বাধিকারী হবেন, ভাষা জ্ঞান, কাব্য জ্ঞান তথা কুরআন-সুন্নাহ বুঝার ক্ষেত্রে যেসব শাস্ত্রের প্রয়োজন সে সম্পর্কে সম্যক অবগতি লাভ করবেন, এগুলো সুবিচার বোধের আলোকে প্রয়োগ করবেন, দেশজ সার্বিক রীতিনীতির আবর্তন-বিবর্তন সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা রাখবেন এবং এসবের সাথে সাথে প্রখর মেধা সম্পন্ন হবেন। সুতরাং কারো মাঝে যদি এসব জ্ঞান গুণের সমাবেশ হয় তবে কেবল তিনিই ফতোয়া ফারায়েজ সম্বন্ধে কথা বলার অধিকার লালন করবেন এবং হালাল হারাম সম্বন্ধে ফতোয়া দিতে পারবেন। আর যিনি জ্ঞান-গুণের এ উচ্চতায় পৌঁছুতে পারবেন না তার জন্য ফতোয়া প্রদানের অধিকার অনুন্মুক্ত।- খতীবে বাগদাদী, আল ফকীহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ ৩০৯, আলমাউসুআতুল ফিকহিয়্যায় ইমাম শাফেয়ী রা. এর মুফতীর শর্তাবলি উল্লেখ করে মন্তব্য করা হয়েছে, এটাই হলো, ইজতিহাদের বস্তুনিষ্ঠ অর্থ। ৩২/২৮ তবে আল্লামা তুমুরতাশী রহ. বলেন, মুফতীর জন্য ইজতিহাদটা হলো প্রাধান্য শর্ত। ইবনে আবিদীন রাহ. বলেন, এর অর্থ হলো মুজতাহিদের উপস্থিতিকালে তিনিই মুফতী নিয়োগের ব্যাপারে প্রাধান্য পাবেন।- রদ্দুল মুহতার ৫/৪৯৮, ৫০৫ ইবনে দাকীকুল ঈদ রহ. হুবহু একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন।- আলমাউসুআতুল ফিকহিয়্যা ৩২/২৮।
৬. উন্নত প্রতিভাশক্তি। এর অর্থ একজন মুফতীকে বিপুল পরিমাণ নির্ভুলতা ও যথার্থতার প্রমাণ দিতে হবে। এবং তার মাসআলা উদ্ভাবন শক্তি বিশুদ্ধ ও গতিময় হতে হবে। সুতরাং অনুন্নত মেধার অধিকারী এবং যাদের ত্রুটিবিচ্যুতির পরিমাণটা তুলনামূলক বেশি তাদের জন্য ফতোয়া প্রদানের অধিকার অরক্ষিত।
৭. বিচক্ষণতা ও সচেতনতা। একজন মুফতীর মাঝে বিচক্ষণতা ও সচেতনতাবোধ থাকা আবশ্যক। ইবনে আবিদীন রহ. বলেন, মুফতীর জন্য গভীর বিচক্ষণ ও চৌকস হওয়া আবশ্যক। যাতে তারা নীতিহীন মানুষের চক্রান্ত ও ছলচাতুরী অনুধাবন করতে সক্ষম হয়। কারণ অনেক মানুষ ছলচাতুরী, প্রবঞ্চনা ও জালিয়াতিপ্রসূত কথার মারপ্যাচে মিথ্যাকে সত্য করার ব্যাপারে বেশ সিদ্ধহস্ত। এক্ষেত্রে মুফতী মহোদয় অসচেতন হলে বড়ো ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।(ইবনে আবিদীন, রদদুল মুহতার ৪/৩০১) অনুবাদে-মুফতী হাফিজুর রহমান
সুপ্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
কুরআন সুন্নাহর আলোকে মাস'আলা?মাসাঈল সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান ব্যতিত ফাতাওয়া প্রদান করা জায়েয হবে না।