আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
253 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (3 points)
আসসালামু আলাইকুম। আজকাল অনেক ভাইবোন আছেন যারা দ্বীনের পথে আসছে আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু আমি প্রায় ই লক্ষ করি, তারা আবেগের বশে বা দুই একজন আলেম বা মুফতির ভিডিও দেখেই বিভিন্ন মাসআলার ফতোয়া দেন। বলেন ওমুক ভিডিওতে দেখেছি ওমুক হুজুর বলেছেন। তারা তোহ আর আন্দাজি বলবেন নাহ। রেফারেন্স নিয়ে বলেবেন আরো অনেক কিছু বলে।

আমি কাউকেই ছোটো করে বলছি নাহ। যেহেতু ম্যাক্সিমাম ই আমরা জেনারেল লাইন থেকে আসা। আর যারা ফতোয়া বিভাগে পড়াশোনা করেছেন,এইসব বিষয়ে স্পেশালিষ্ট তারাই আমার মতে ফতোয়া, মাসআলা নিয়ে কথা বলাটা যুক্তিযুক্ত আর সন্দেহ মুক্ত।
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এসব ভাইবোনদের কিভাবে এই বিষয়টা বুঝাবো যে, ফতোয়া হুটহাট করে দেওয়া উচিত নাহ।কয়েকজনকে বলেছিলাম বিষয়টা, কিন্তু তারা ১০০% শিউর হয়েই নাকি বলেন।

উত্তর দিলে মুনাসিব হয়

1 Answer

0 votes
by (713,000 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহাম।
জবাবঃ-

একজন মুফতীর মাঝে কি কি শর্তের উপস্থিতি আবশ্যক "আল মাউসুআতুল ফিকহিয়্যায়" তার একটা পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে। তাতে মুফতীর সাতটি শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে।
১. ইসলাম। মুফতী যিনি হবেন তার জন্য ইসলামের পবিত্র ধর্ম বিশ্বাসে দীক্ষিত হওয়া আবশ্যক। সুতরাং ভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী কারো ধর্মীয় অভিমত ফতোয়া বলে বিবেচিত হবে না।
২. বয়সের পরিপক্বতা। একজন মুফতীকে অবশ্যই যথোপযুক্ত প্রাপ্ত বয়সে উপনীত হতে হবে। অপ্রাপ্ত কিংবা অপরিপক্ব বয়সী কারো ফতোয়া গৃহীত ফতোয়ার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হবে না।
৩. জ্ঞান বুদ্ধি। একজন মুফতীকে সুস্থ, স্বচ্ছ জ্ঞানবুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া আবশ্যক। সুতরাং জ্ঞানবুদ্ধিতে অস্বচ্ছতা, অপরিপক্বতা কিংবা প্রতিবন্ধিতা আছে এমন কারো ফতোয়া ফতোয়া হিসেবে গৃহীত হবে না।
৪. ন্যায়পরায়ণতা ও সত্যনিষ্ঠতা। একজন মুফতীকে যথেষ্ট ন্যায়পরায়ণ ও সত্যনিষ্ঠ হতে হবে। সুতরাং অন্যায়াশ্রয়ী কোনো পাপ পঙ্কিলতায় অভ্যস্ত ব্যক্তি মুফতীর সুমহান আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারে না।
৫. ইজতিহাদ। ইজতিহাদ অথর্, সর্বসম্মত গৃহীত দলীল প্রমাণের আলোকে শরঈ বিধান সম্বন্ধে ধারণা লাভ ও তা উদ্ভাবনের উদ্দেশে ফকীহের সবটুকু সাধ-সাধ্য ও শ্রম-সাধনা ব্যয় করা। একজন মুফতীর প্রধানতম শর্ত হলো, ইজতিহাদ। ইমাম শাফী রহ. বলেন, আল্লাহ তা‘আলার দীনের ব্যাপারে শুধু এমন ব্যক্তির জন্যই ফতোয়া প্রদান বিধিত যিনি কুরআনের নাসেখ-মানসুখ (রহিতকারী এবং রহিত কৃত আয়াত-প্রবচন), মুহকাম- মুতাশাবিহ (দ্ব্যর্থহীন এবং দ্ব্যর্থবোধক আয়াত প্রবচন), তাওয়ীল-তানযীল (কুরআনের মূল পাঠ এবং তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ) এবং এতদোভয়ের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে প্রজ্ঞাবান হবেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসের নাসিখ মানসুখ সম্বন্ধে গভীর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হবেন, কুরআন বিষয়ে যে পরিমাণ পাণ্ডিত্বের প্রয়োজন হাদীস বিষয়েও সে পরিমাণ পাণ্ডিত্বাধিকারী হবেন, ভাষা জ্ঞান, কাব্য জ্ঞান তথা কুরআন-সুন্নাহ বুঝার ক্ষেত্রে যেসব শাস্ত্রের প্রয়োজন সে সম্পর্কে সম্যক অবগতি লাভ করবেন, এগুলো সুবিচার বোধের আলোকে প্রয়োগ করবেন, দেশজ সার্বিক রীতিনীতির আবর্তন-বিবর্তন সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা রাখবেন এবং এসবের সাথে সাথে প্রখর মেধা সম্পন্ন হবেন। সুতরাং কারো মাঝে যদি এসব জ্ঞান গুণের সমাবেশ হয় তবে কেবল তিনিই ফতোয়া ফারায়েজ সম্বন্ধে কথা বলার অধিকার লালন করবেন এবং হালাল হারাম সম্বন্ধে ফতোয়া দিতে পারবেন। আর যিনি জ্ঞান-গুণের এ উচ্চতায় পৌঁছুতে পারবেন না তার জন্য ফতোয়া প্রদানের অধিকার অনুন্মুক্ত।- খতীবে বাগদাদী, আল ফকীহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ ৩০৯, আলমাউসুআতুল ফিকহিয়্যায় ইমাম শাফেয়ী রা. এর মুফতীর শর্তাবলি উল্লেখ করে মন্তব্য করা হয়েছে, এটাই হলো, ইজতিহাদের বস্তুনিষ্ঠ অর্থ। ৩২/২৮ তবে আল্লামা তুমুরতাশী রহ. বলেন, মুফতীর জন্য ইজতিহাদটা হলো প্রাধান্য শর্ত। ইবনে আবিদীন রাহ. বলেন, এর অর্থ হলো মুজতাহিদের উপস্থিতিকালে তিনিই মুফতী নিয়োগের ব্যাপারে প্রাধান্য পাবেন।- রদ্দুল মুহতার ৫/৪৯৮, ৫০৫ ইবনে দাকীকুল ঈদ রহ. হুবহু একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন।- আলমাউসুআতুল ফিকহিয়্যা ৩২/২৮।
৬. উন্নত প্রতিভাশক্তি। এর অর্থ একজন মুফতীকে বিপুল পরিমাণ নির্ভুলতা ও যথার্থতার প্রমাণ দিতে হবে। এবং তার মাসআলা উদ্ভাবন শক্তি বিশুদ্ধ ও গতিময় হতে হবে। সুতরাং অনুন্নত মেধার অধিকারী এবং যাদের ত্রুটিবিচ্যুতির পরিমাণটা তুলনামূলক বেশি তাদের জন্য ফতোয়া প্রদানের অধিকার অরক্ষিত।
৭. বিচক্ষণতা ও সচেতনতা। একজন মুফতীর মাঝে বিচক্ষণতা ও সচেতনতাবোধ থাকা আবশ্যক। ইবনে আবিদীন রহ. বলেন, মুফতীর জন্য গভীর বিচক্ষণ ও চৌকস হওয়া আবশ্যক। যাতে তারা নীতিহীন মানুষের চক্রান্ত ও ছলচাতুরী অনুধাবন করতে সক্ষম হয়। কারণ অনেক মানুষ ছলচাতুরী, প্রবঞ্চনা ও জালিয়াতিপ্রসূত কথার মারপ্যাচে মিথ্যাকে সত্য করার ব্যাপারে বেশ সিদ্ধহস্ত। এক্ষেত্রে মুফতী মহোদয় অসচেতন হলে বড়ো ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।(ইবনে আবিদীন, রদদুল মুহতার ৪/৩০১) অনুবাদে-মুফতী হাফিজুর রহমান


সুপ্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
কুরআন সুন্নাহর আলোকে মাস'আলা?মাসাঈল সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান ব্যতিত ফাতাওয়া প্রদান করা জায়েয হবে না।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...