بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব ,
১.কুরআন মাজীদে পুত্রের প্রতি লুকমান হাকীমের ওসিয়তগুলো বিশেষ
গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে তিনি নিজ পুত্রকে ওসিয়ত করে বলেন-
وَ اِذْ قَالَ لُقْمٰنُ
لِابْنِهٖ وَ هُوَ یَعِظُهٗ یٰبُنَیَّ لَا تُشْرِكْ بِاللهِ اِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِیْمٌ.
স্মরণ কর, যখন লুকমান উপদেশচ্ছলে নিজ পুত্রকে বলেছিল, বৎস! তুমি
আল্লাহ্র সাথে শরীক করো না। কেননা র্শিক নিশ্চয় মারাত্মক অবিচার ও পাপ। -সূরা লুকমান
(৩১) : ১৩
আল্লাহ তাআলা নবীকে সতর্ক করে বলেছেন-
وَ لَقَدْ اُوْحِیَ اِلَیْكَ وَ
اِلَی الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِكَ لَىِٕنْ
اَشْرَكْتَ لَیَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَ لَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ.
নিশ্চয় আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি এই ওহী প্রেরণ
করা হয়েছে যে, যদি আপনি
শিরক করেন তাহলে অবশ্যই আপনার সকল আমল বরবাদ হয়ে যাবে এবং নিশ্চিত আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের
অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন। -সূরা যুমার (৩৯) : ৬৫
শিরক দুই প্রকার: এক. শিরকে জলী (তথা বড় শিরক), দুই. শিরকে খফী। শিরকে জলী সবচেয়ে মারাত্মক।
শিরকে জলী (বড় শিরক) এর অনেক প্রকার রয়েছে। যেমন ইবাদত, যা একমাত্র
আল্লাহ তাআলার হক, তাতে আল্লাহ ছাড়া কাউকে শরীক করা, উপায়-উপকরণের ঊর্ধ্বের বিষয়ে গাইরুল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা,
উপায়-উপকরণকে উপায়-উপকরণের সৃষ্টিকর্তার মান দেওয়া, গাইরুল্লাহকে উপকার ও ক্ষতির ক্ষমতাধারী মনে করা ইত্যাদি এ কাজ গুলি করলে বড়
শিরক হয়।
কোনো গুনাহকে ছোট কিংবা তুচ্ছ ভাবাও কবিরা গুনাহ। অর্থাৎ ছোটখাটো
গুনাহকে তুচ্ছ ভেবে সে সব গুনাহে যদি কেউ অভ্যস্ত হয়ে যায়, তাহলে ধীরে ধীরে তার জন্য বড় ধরনের পাপের পথ
খুলে যায় এবং এরপর সে বড় পাপ করতে দ্বিধা করে না। তা ছাড়া একজন প্রকৃত মুমিনকে এটা
ভাবতে হবে যে, গুনাহ বাহ্যিক দৃষ্টিতে যত ক্ষুদ্র হোক না কেন,
অবস্থানগত দিক থেকে তা সমান। অর্থাৎ প্রতিটি গুনাহ হচ্ছে আল্লাহতায়ালার
নির্দেশ লঙ্ঘন। কারও এক টাকা আত্মসাৎ করা ও এক লাখ টাকা আত্মসাৎ করা এ দুটোই পাপের
কাজ; যা আল্লাহর নির্দেশের লঙ্ঘন।
কোন গুনাহ করার পর খুশী
হওয়া বা আনন্দ প্রকাশ করা কবীরা গুনাহ। সুতরাং আপনার জন্য করণীয় হলো,উক্ত গুনাহ থেকে খালেস দিলে তওবা করা এবং জাবতীয়
গোনাহের উপর লজ্জিত হয়ে আল্লাহ তায়ালার নিকট মাফ চাওয়া।
*স্ত্রীর সাথে কেমন আচরণ করা উচিত? এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ বলেন,
ٱلرِّجَالُ
قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖ
وَبِمَآ أَنفَقُواْ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡۚ فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٞ
لِّلۡغَيۡبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُۚ وَٱلَّٰتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ
فَعِظُوهُنَّ وَٱهۡجُرُوهُنَّ فِي ٱلۡمَضَاجِعِ وَٱضۡرِبُوهُنَّۖ فَإِنۡ
أَطَعۡنَكُمۡ فَلَا تَبۡغُواْ عَلَيۡهِنَّ سَبِيلًاۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيّٗا
كَبِيرٗا ٣٤ [النساء: ٣٤]
পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের
একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে। সুতরাং
পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাজতকারিনী
ঐ বিষয়ের যা আল্লাহ হিফাজত করেছেন। আর তোমরা যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদেরকে সদুপদেশ
দাও, বিছানায় তাদেরকে ত্যাগ কর এবং তাদেরকে (মৃদু) প্রহার কর।
এরপর যদি তারা তোমাদের আনুগত্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পথ অনুসন্ধান করো না।
নিশ্চয় আল্লাহ সমুন্নত মহান। [সূরা আন-নিসা: ৩৪]
মুসলিম শরীফের দীর্ঘ এক হাদীসে এসেছে,
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেনঃ
فَاتَّقُوا اللّٰهَ فِى
النِّسَاءِ فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانِ اللّٰهِ وَاسْتَحْلَلْتُمْ
فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللّٰهِ وَلَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لَا يُوطِئْنَ
فُرُشَكُمْ أَحَدًا تَكْرَهُونَه فَإِنْ فَعَلْنَ ذٰلِكَ فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا
غَيْرَ مُبَرِّحٍ وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ
بِالْمَعْرُوفِ
‘তোমরা তোমাদের
নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করবে। কেননা তোমরা তাদেরকে গ্রহণ করেছো আল্লাহর আমানাত
হিসেবে এবং আল্লাহর নামে তাদের গুপ্তাঙ্গকে হালাল করেছো। তাদের ওপর তোমাদের হাক্ব হলো
তারা যেন তোমাদের বিছানায় এমন কাউকেও আসতে না দেয়, যাকে তোমরা অপছন্দ কর। যদি তারা তা করে, তবে তাদেরকে মৃদু প্রহার করবে। আর তোমাদের ওপর তাদের হাক্ব হলো, তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে তাদের খাদ্য ও পোশাকের ব্যবস্থা করবে।’ (সহীহ মুসলিম
১২১৮, আবূ দাঊদ ১৯০৫, নাসায়ী ২৭৬১,
ইবনু মাজাহ ৩০৭৪, ইবনু আবী শায়বাহ্ ১৪৭০৫,
দারিমী ১৮৯২)
عَنْ حَكِيمِ بْنِ مُعَاوِيَةَ
الْقُشَيْرِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا حَقُّ
زَوْجَةِ أَحَدِنَا عَلَيْهِ؟، قَالَ: «أَنْ تُطْعِمَهَا إِذَا طَعِمْتَ، وَتَكْسُوَهَا
إِذَا اكْتَسَيْتَ، أَوِ اكْتَسَبْتَ، وَلَا تَضْرِبِ الْوَجْهَ، وَلَا تُقَبِّحْ،
وَلَا تَهْجُرْ إِلَّا فِي الْبَيْتِ»
হাকীম ইবন মুআবিয়া রহ. তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা
করি, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! স্বামীদের উপর স্ত্রীদের কী হক?
তিনি বলেন, “যা সে খাবে তাকেও (স্ত্রী) খাওয়াবে,
আর সে যা পরিধান করবে তাকেও তা পরিধান করাবে। আর তার (স্ত্রীর) চেহারার
উপর মারবে না এবং তাকে গালাগাল করবে না। আর তাকে ঘর হতে বের করে দিবে না। [আবু দাউদ:
হাদীস নং ২১৪২।]
বর্তমানে আমাদের সমাজে কিছু পুরুষ ব্যক্তি ইচ্ছেমত স্ত্রীর গায়ে
হাত তোলে। এটি জুলুম ও একেবারেই নিষিদ্ধ। কুরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা যেখানে প্রহারের
অনুমতি দিয়েছেন সেখানে প্রহার করার পূর্বে আরও দুটি ধাপ অতিক্রম করতে বলেছেন। আল্লাহ
তাআলা বলেন-
وَاللَّاتِي تَخَافُونَ
نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ
‘যে সকল স্ত্রীদের
থেকে তোমরা অবাধ্যতার ভয় কর তাদেরকে উপদেশ দাও এবং শয্যা পৃথক করে দাও এবং প্রহার কর।’
[সূরা নিসা, আয়াত:
৩৪]
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
সুতরাং স্বাভাবিক অবস্থায় স্ত্রীর গায়ে হাত তোলার অধিকার স্বামীর
নেই। চূড়ান্ত পর্যায়ে স্ত্রীকে সামান্য প্রহারের অনুমতি থাকলেও সেক্ষেত্রে নিম্নোক্ত
বিষয়গুলি অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে।
ক. সংশোধনের উপরোক্ত দুটি পন্থা ব্যর্থ হলে কেবল তখনই হালকা
প্রহারের অবকাশ আছে।
খ. অন্তরে মুহাব্বত পোষণ রেখে চূড়ান্ত পর্যায়ের অসন্তুষ্টি প্রকাশের
জন্য এমনটি করা যাবে। যেন সে সংশোধন হয়ে যায়।
গ. রাগান্বিত অবস্থায় প্রহার করতে পারবে না। কারণ রাগের সময়
প্রহার করলে শরিয়তের গণ্ডির মধ্যে থাকা সম্ভব নাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
ঘ. চেহারা ও স্পর্শকাতর অঙ্গসমূহে প্রহার করা যাবে না।
ঙ. ক্ষতের সৃষ্টি হয়, হাড্ডিতে চোট লাগে, চামড়ায় দাগ পড়ে,
রক্তপাত হয়, শরীরে প্রভাব-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়
এমনভাবে প্রহার করা যাবে না।
এক কথায় মৃদু প্রহার যার দ্বারা শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়া
সৃষ্টি হবে না। কারণ উদ্দেশ্য প্রহার নয়। উদ্দেশ্য হল সংশোধন করা।
উল্লেখ্য, স্ত্রীর সংশোধনের চূড়ান্ত পর্যায়েও মৃদু প্রহারকে রাসূল সা. অপছন্দ করেছেন।
হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূল সা. বলেন: তোমরাদের মধ্যে যারা তাদের
স্ত্রীকে প্রহার করে তারা ভালো লোক নয়।(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস:
২১৪৬)
অতএব উত্তম আখলাক হল, মৃদু প্রহার থেকেও বিরত থাকা।(খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪৪৪,
বাদায়েউস সানায়ে ৩/৬৫০, আততাশরীয়ুল জিনায়ী ১/৩৮৫)
সুতরাং স্ত্রীর লজ্জাস্থান,তলপেট এরকম স্পর্শকাতর জায়গায় আঘাত করা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও জঘন্য
কাজ যা কোন ভাবেই জায়েয নেই।
*ফরয গোসলে নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছানো
ফরয। শুধু আঙ্গুল দ্বারা নাকের ভিতরটা ভিজিয়ে নিলেই চলবে না । এর দ্বারা ফরয গোসল
আদায় হবে না। অবশ্য অযুর সময় নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌছালেও চলবে ৷ কিন্তু
শুধু আঙ্গুল ভিজিয়ে নাকের ভেতর প্রবেশ করালে অজু আদায় হলেও অজুর সুন্নাত আদায় হবে না।
আর নাকের ভিতরে পানি পৌছানোর পদ্ধতি হল, প্রথমে নাকে পানি পৌঁছাবে। এরপর বাম হাতের কনিষ্ঠা
আঙ্গুল দ্বারা নাকের ভিতরটা পরিষ্কার করে নিবে যেন কোনো অংশ শুকনা না থেকে যায়। এভাবে
তিনবার পানি প্রবেশ করাবে।(সুনানে আবু দাউদ ১/১৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া
১/২২৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৫১)