জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
★ঈমানদার আর মুমিন একই শব্দ।
মুসলিম হল সেই ব্যক্তি যে ঈমান আনার পর ইসলামের বিভিন্ন হুকুম আহকাম মেনে চলে। আর মু'মিন হল সেই ব্যক্তি যে শুধুমাত্র ঈমান এনেছে।
,
অর্থাৎ, মুমিন শব্দের চেয়ে মুসলিম শব্দ ব্যাপক অর্থবোধক।
,
আর ঈমান হচ্ছে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো- যেমন- আল্লাহ,ফেরেশতা,... আসমানী কিতাব, নবী রাসুল,শেষ দিবস, ভালো হোক কিংবা মন্দ তাকদীর তথা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ভাগ্য ও পুণরুত্থানে বিশ্বাস স্থাপন করা।
,
মুসলিম শব্দটি সালাম শব্দ থেকে উৎপত্তি যার শাব্দিক অর্থ শান্তি ও নিরাপত্তা বিধান করা। মুসলিম শব্দের অর্থ আত্নসর্মপনকারী।
,
পারিভাষিক অর্থেঃ
যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে মহান প্রতিপালক হিসেবে গ্রহন করবে, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবেনা এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নির্দেশিত পথে নিজের জীবন চালাবে, হালাল কে হালাল বলে মানবে এবং হারামকে বয়কট করবে, সালাত প্রতিষ্ঠা করবে, রোজা রাখবে, নিসাবের অধিকারী হলে যাকাত আদায় করবে এবং হজ্জে গমন করবে। এইসব গুনাবলীর অধিকারী হলে তাকে মুসলিম বলা হয়।
,
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
لَّيْسَ الْبِرَّ أَن تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا ۖ وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ ۗ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ
সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার।
ঈমানের রয়েছে সাতটি স্তম্ভ।
১. একক ইলাহ হিসেবে আল্লাহকে বিশ্বাস করা।২. আল্লাহর ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস করা।
৩ সমস্ত আসমানী কিতাবসমূহতে বিশ্বাস।
৪. সকল নবী ও রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস।
৫.তাক্বদীর বা ভালো মন্দের ওপর আল্লাহর ক্ষমতা রয়েছে বলে বিশ্বাস করা।
৬. আখিরাত বা পরকালের প্রতি বিশ্বাস।
৭. মৃত্যুর পর পুনঃজীবিত হওয়ার প্রতি বিশ্বাস।
আরো জানুনঃ
★উলামায়ে কেরামগন বলেছেন যখন শুধু মুমিন বা শুধু মুসলমান বলা হবে,তখন এ দুটি শব্দের মাঝে কোনো পার্থক্য থাকবেনা।
একই অর্থবোধক শব্দ বলে বিবেচিত হবে।
যখন এ দুটি শব্দ একত্রে বলা হবে,তখনই কেবল উপরে উল্লেখিত পার্থক্য দাড়াবে।
বিস্তারিত জানুনঃ
,
★মুমিন মুসলমান জান্নাতে যাবে।
তাদের গুনাহ থেকে গেলে আল্লাহ তায়ালার থেকে মাফ না হলে সেই গুনাহের শাস্তি ভোগ করার পরে হলেও তারা জান্নাতে যাবেই।
,
★কুফর শব্দটি আরবী। যার শাব্দিক অর্থ হল ঢেকে রাখা, লুকিয়ে রাখা এবং এর ব্যবহারিক অর্থ হল অবাধ্যতা, অস্বীকার করা, অকৃতজ্ঞতা। ইসলামি পরিভাষায় কুফর বলা হয়, যে সকল বিষয়ের উপর ঈমান আনা জরুরী ঐ সকল বিষয়গুলো হতে কোন একটাকে অস্বীকার করা। যেমন- কোন ব্যক্তি ঈমানদার বলে দাবী করতে হলে উপরেল্লিখিত সাতটি মৌলিক বিষয়কে অবশ্যই তাকে অন্তর থেকে বিশ্বাস করতে হবে। বিশ্বাস না করাটা কুফর বা কুফরি। আর যে ব্যক্তি বিশ্বাস করবে না সে কাফির।
★কাফেরের আখেরাতে শাস্তি হল, এর কারণে পরকালের চিরস্থায়ী জাহান্নাম।
★মুশরিকের পরিচয় হল, যে ব্যক্তি কোরআন ও সহীহ হাদিসে বর্ণিত আল্লাহর নাম ও গুণাবলীসমূহের কোন ব্যাপারে আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে শরিক বা অংশীদার করে বা সমকক্ষ করে বা সামঞ্জস্য করে সে-ই মুশরিক।
★মুশরিকের শাস্তি কাফেরদের অনুরূপ।
★মুরতাদের পরিচয় হল, যে ব্যক্তি প্রথমে মুসলিম ছিল। তারপর ইসলামের যে কোনো আবশ্যকীয় বিষয়কে অস্বীকার করে কাফের হয়ে গেছে। উক্ত ব্যক্তির নাম মুরতাদ।
তার আখেরাতের শাস্তি কাফেরের মতোই।
★ইসলামের পরিভাষায় মুনাফিক বলা হয় ওই ব্যক্তিকে যে প্রকাশ্যে ইসলাম চর্চা করে; কিন্তু গোপনে অন্তরে কুফরী বা ইসলামের প্রতি অবিশ্বাস লালন করে। আর এ ধরনের প্রতারণাকে বলা হয় নিফাক।
আখেরাতে মুনাফিকদের শাস্তিও কাফেরদের মতই হবে; বরং তার চেয়ে অধিক হবে।
★দাইয়ুস-এর পরিচয় হল, যে ব্যক্তি নিজের পরিবারের অশ্লীলতার ব্যাপারে দায়িত্ববোধহীন বা আত্মমর্যাদাহীন।
দাইয়ুস তার গুনাহের কারনে জাহান্নামে যাবে।
তবে আল্লাহ তায়ালা মাফ করলে সেটি ভিন্ন কথা।
★ইসলামের পরিভাষায় ফাসিক বলা হয় ওই ব্যক্তিকে যে ব্যক্তি নিয়মিত কবীরাহ গুনাহতে লিপ্ত থাকে অথবা প্রকাশ্যে আল্লাহর নিষিদ্ধ ঘোষিত হারাম কাজ করতে অভ্যস্ত এবং তওবা করে পাপ কাজ থেকে ফিরে আসে না।
ফাসেক ব্যক্তি যদি নামাযী মুসলমান হয়, দ্বীনের অন্য বিধি-বিধান মেনে চলে কিন্তু কিছু কবীরাহ গুনাহতে লিপ্ত থাকে, তাহলে মীযানে তার নেক আমল যদি পাপ কাজের ওজনের চাইতে ভারী হয় তাহলে সে জান্নাতে যাবে। অথবা আল্লাহর বিশেষ রহমতে তাকে যদি ক্ষমা করে দেন, তাহলে সে কোন শাস্তি ছাড়াই সরাসরি জান্নাতে যাবে। কিন্তু তার পাপ কাজ যদি নেকীর চাইতে বেশি ভারী হয় এবং আল্লাহর রহমত পেতে ব্যর্থ হয় তাহলে সে জাহান্নামে পাপের শাস্তি ভোগ করবে। জাহান্নামে কঠিন শাস্তির পরে পাপের প্রায়শ্চিত্ত হলে এর পরে সে জান্নাতে যাবে।
★ইহুদির পরিচয় হল, মুসা আ.-এর অনুসারী হিসেবে যারা দাবী করে তাদেরকে ইহুদি বলা হয়।
★খ্রিস্টানের পরিচয় হল, বনি-ইসরাইল সম্প্রদায়ের যারা ঈসা আ.-এর অনুসারী হিসেবে দাবী করে তাদেরকে খ্রিস্টান বলা হয়।
★রাসুলুল্লাহ সাঃ এর নবুয়ত লাভের ইহুদি খ্রিস্টানদের ধর্ম রহিত হয়ে গিয়েছে,তাই তাদের আখেরাতে শাস্তি হল, এর কারণে পরকালের চিরস্থায়ী জাহান্নাম।