ওয়া আলাইকুমুস সালাম
ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম।
জবাবঃ
■ কোরআন সর্বশেষ ঐশী গ্রন্থ।
আল্লাহ কোরআনকে কিয়ামত পর্যন্ত আগত মানুষের জন্য মনোনীত করেছেন এবং পৃথিবীর শেষদিন
পর্যন্ত রক্ষার অঙ্গীকার করেছেন। ইরশাদ হয়েছে,
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا
الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি এবং অবশ্যই আমিই তার
রক্ষক।’ (সুরা হিজর,
আয়াত : ৯)
■ হাফেজরা আল্লাহর কোরআন সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার অন্যতম অংশ।
ইসলাম তাদের বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে, তেমনি তাদের আছে কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য।
হাফেজদের অনন্য মর্যাদা : একাধিক আয়াত ও হাদিস দ্বারা
কোরআনের ধারক ও বাহক হাফেজদের বিশেষ মর্যাদা প্রমাণিত হয়। যেমন—
১. শ্রেষ্ঠ বাণীর ধারক : হাফেজরা সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী কোরআনের
ধারক। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ
اللَّهِ حَدِيثًا
‘আল্লাহর চেয়ে বেশি সত্যবাদী কে?’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৮৭)
২. সর্বোত্তম ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত : কোরআনের হাফেজ
মুমিনদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
عَنْ عُثْمَانَ قَالَ:
قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «خَيْرُكُمْ مَنْ تَعْلَّمَ الْقُرْاٰنَ وَعَلَّمَه».
‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি যে নিজে কোরআন
শেখে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০২৮)
৩. আল্লাহর নিদর্শন : হাফেজদের অন্তরে কোরআন সংরক্ষণ
আল্লাহর কুদরতের বহিঃপ্রকাশ। কেননা পৃথিবীর আর কোনো ধর্মগ্রন্থ এভাবে সংরক্ষণের
নজির নেই। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি তো আগে কোনো কিতাব পাঠ করেননি এবং নিজ হাতে কোনো কিতাব লেখেননি যে
মিথ্যাচারীরা সন্দেহ পোষণ করবে; বরং যাদের জ্ঞান
দেওয়া হয়েছে। বস্তুত তাদের অন্তরে এটা স্পষ্ট নিদর্শন। শুধু অবিচারকারীরাই আমার
নিদর্শন অস্বীকার করে।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৪৮-৪৯)
৪. পরকালে সুপারিশকারী : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা কোরআন তিলাওয়াত করো। কেননা তা কিয়ামতের দিন তার
ধারকের জন্য সুপারিশকারী হবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩০২)
৫. আয়াতে আয়াতে মর্যাদা বৃদ্ধি : কিয়ামতের দিন কোরআন
মুখস্থকারীদের প্রতিটি আয়াতের বিপরীতে মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.)
বলেছেন,
وَعَنْ
عَبْدِ اللّٰهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «يُقَالُ لِصَاحِبِ
الْقُرْاٰنِ: اِقْرَأْ وَارتق وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِى الدُّنْيَا
فَإِنَّ مَنْزِلَكَ عِنْدَ اٰخِرِ اٰيَةٍ تَقْرَؤُهَا».
‘কোরআন অধ্যয়নকারীকে বলা হবে, কোরআন পাঠ করতে করতে ওপরে উঠতে থাকো। তুমি দুনিয়াতে যেভাবে ধীরে-সুস্থে পাঠ করতে, সেভাবে পাঠ করো। কেননা তোমার তিলাওয়াতের শেষ আয়াতেই
(জান্নাতে) তোমার বাসস্থান হবে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৪৬৪)
■ মুসলিমসমাজ ও রাষ্ট্রে হাফেজে কোরআন : মুসলিম সমাজ ও
রাষ্ট্রে হাফেজদের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। যেমন—ইসলামী সমাজব্যবস্থায় ইমামের একটি
বিশেষ মর্যাদা আছে। আর কোরআনের অধিক বিশুদ্ধ তিলাওয়াতকারী হিসেবে হাফেজরা এ
ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও কেরাতে অধিক পারদর্শী ব্যক্তি মানুষের
ইমামতি করবে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৫৮২)
■ আল্লাহভীরুদের জন্য কোরআনের জ্ঞান : কোরআন মুখস্থ করতে পারা
আল্লাহর অনুগ্রহের বিষয়,
তেমনি তা হৃদয়ঙ্গম করতেও আল্লাহর অনুগ্রহ প্রয়োজন। আর
আল্লাহ অনুগ্রহ করেন তার মুত্তাকি বান্দাদের প্রতি। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহকে ভয় কোরো, তিনি তোমাদের শিক্ষা দান করবেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৮২)
■ আমল করলে মহাপুরস্কার : কোরআন ধারণের পর মানুষ যখন আমল করে
তখনই সে চূড়ান্ত সাফল্য লাভ করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই এই কোরআন পথপ্রদর্শন করে সেই পথের দিকে, যা সুদৃঢ় এবং সৎকর্মপরায়ণ মুমিনদের সুসংবাদ দেয় যে তাদের জন্য আছে
মহাপুরস্কার।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৯)
■ কোরআনের প্রতি যত্নশীল হওয়া আবশ্যক : কোরআনের প্রতি যত্নশীল
হওয়ার দুটি দিক। যথাক্রমে—
এক. মনোযোগসহ সুন্দরভাবে তিলাওয়াত করা। যেমন আল্লাহ ইরশাদ
করেন,
‘যাদের আমি কিতাব দান করেছি তারা তা যথাযথভাবে তিলাওয়াত করে, তারাই তাতে বিশ্বাস করে। আর যারা এটা প্রত্যাখ্যান করে তারা
ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১২১)
দুই. কোরআন ভুলে না যাওয়া। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা কোরআনের প্রতি লক্ষ রাখবে। যে পবিত্র সত্তার হাতে
আমার জীবন তাঁর শপথ! কোরআন বাঁধন ছাড়া উটের চেয়েও দ্রুতগতিতে দৌড়ে যায়।’ (সহিহ
বুখারি,
হাদিস : ৫০৩৩)
■ কোরআনকে প্রতিপক্ষ না বানানো : কোরআন পরকালে মুক্তির উপায়
হবে,
তেমনি তা বিপদেরও কারণ হবে। এ জন্য মহানবী (সা.) বলেন, ‘কোরআন সাক্ষী হবে তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২১)
■ মুহাদ্দিসরা বলেন, কোরআন প্রতিপক্ষ হবে সেসব মানুষের, যারা তাতে বিশ্বাস করে না, তার প্রতি সন্তুষ্ট
থাকে না,
তার আদেশ মান্য করে না, নিষেধাজ্ঞা পরিহার করে না, হালালকে হালাল ও
হারামকে হারাম জানে না,
তাকে জীবনবিধান হিসেবে গ্রহণ করে না। আল্লাহ সবাইকে কোরআনের
ধারক-বাহক হিসেবে কবুল করুন। আমিন।
★ সু-প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
আপনার প্রশ্নের সমর্থনে
এখন পর্যন্ত কোনো কুরআনের আয়াত বা হাদীস পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে পাওয়া গেলে জানানো
হবে ইনশাআল্লাহ।