বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম।
জবাবঃ
প্রাণীদের বন্দী করে লালন পালন করা ও পোষা
জায়েয রয়েছে। শুকুর এবং কয়েক শ্রেণীর কুকুর ব্যতীত। তাছাড়া অন্যান্য প্রাণীকে
পোষা ও লালন পালন করার সাধারণ বিধান হল,বৈধতা।
বিড়ালকে রাসূলুল্লাহ সাঃ মহব্বত করতেন।
আবু-হুরায়রা রাযি বিড়ালকে সর্বদা সাথে রাখতেন বলেই উনার নাম বিড়াল ওয়ালা বা বিড়ালের
মালিক বলে রাসূলুল্লাহ সাঃ উনাকে নাম দিয়েছিলেন।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে,
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ الله عَنْه قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحْسَنَ النَّاسِ خُلُقًا ، وَكَانَ لِي أَخٌ يُقَالُ لَهُ أَبُو عُمَيْرٍ ، وَكَانَ إِذَا جَاءَ قَالَ : ( يَا أَبَا عُمَيْرٍ ، مَا فَعَلَ النُّغَيْرُ ؟ نُغَرٌ كَانَ يَلْعَبُ بِهِ )
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচেয়ে
অধিক সদাচারী ছিলেন। আমার এক ভাই ছিল; ‘তাকে আবূ ‘উমায়র’ বলে ডাকা হতো। আমার ধারণা
যে, সে তখন মায়ের দুধ খেতো না। যখনই সে তাঁর নিকট
আসতো, তিনি বলতেনঃ হে আবূ ‘উমায়র! কী করছে তোমার
নুগায়র? সে নুগায়র পাখিটা নিয়ে খেলতো।(সহীহ
বোখারী-৬২০৩,সহীহ মুসলিম-২১৫০)
প্রাণী লালন-পালন কয়েকটি শর্তে ভিত্তিতে
জায়েয।
(১) প্রাণীকে নিয়মিত খাবার
দাবার প্রদান করতে হবে।
হযরত ইবনে উমর থেকে বর্ণিত,
عن ابن عمر رضي الله عنهما قال : قال النبي صلى الله عليه وسلم : ( دخلتِ امرأةٌ النارَ في هِرَّة حبَسَتْها، لا هي أطعَمَتْها ولا هي ترَكَتْها تأكُلُ مِن خَشَاش الأرض حتى ماتَتْ )
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এক
নারী একটি বিড়ালের কারণে জাহান্নামে গিয়েছিল, সে তাকে বেঁধে রেখেছিল। সে
তাকে খাবারও দেয়নি, ছেড়েও দেয়নি, যাতে সে যমীনের পোকা মাকড়
খেতে পারত। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রেও নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে
অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে।(সহীহ বোখারী-৩৩১৮,সহীহ
মুসলিম-২২৪২)
হযরত জাবের রাযি থেকে বর্ণিত
عن جابر بن عبد الله رضي الله عنهما عن رَسُولِ الله صلى الله عليه وسلم : ( أنَّهُ نَهَى أنْ يُقْتَلَ شَيْءٌ مِنَ الدَّوَابِّ صَبْراً )
রাসূলুল্লাহ সাঃ বন্দী করে বোকা রেখে কোনো
প্রাণীকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন।(সহীহ মুসলিম-১৯৫৯)
(২) প্রাণীকে কোনো প্রকার
কষ্ট দেয়া যাবে না।
عن جابر بن عبد الله رضي الله عنهما قال : ( نَهَى رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَن الضَّرْبِ في الوَجْهِ ، وَعَن الوَسْمِ في الوَجْهِ )
রাসূলুল্লাহ সাঃ মুখে প্রহার করা এবং মুখে ট্যাটু অঙ্কন করা
যাবে না। (সহীহ মুসলিম-২১১৬)
অপর এক হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنِيْ عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ أَسْمَاءَ حَدَّثَنَا جُوَيْرِيَةُ بْنُ أَسْمَاءَ عَنْ نَافِعٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ عُذِّبَتْ امْرَأَةٌ فِيْ هِرَّةٍ سَجَنَتْهَا حَتَّى مَاتَتْ فَدَخَلَتْ فِيْهَا النَّارَ لَا هِيَ أَطْعَمَتْهَا وَلَا سَقَتْهَا إِذْ حَبَسَتْهَا وَلَا هِيَ تَرَكَتْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الأَرْضِ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এক নারীকে একটি বিড়ালের
কারণে আযাব দেয়া হয়েছিল। সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল। সে অবস্থায় বিড়ালটি মরে যায়।
মহিলাটি ঐ কারণে জাহান্নামে গেল। কেননা সে বিড়ালটিকে খানা-পিনা কিছুই করাইনি এবং
ছেড়েও দেয়নি যাতে সে যমীনের পোকা-মাকড় খেয়ে বেঁচে থাকত। (বুখারী
শরীফ ৩৪৮২.আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩২২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২৩৩)
প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
আপনি বিড়াল পোষতে পারবেন এবং বিড়াল এর পিছনে টাকা খরচ
করলে আপনার কোনো গুনাহ হবে না
ইনশাআল্লাহ। বরং আরো সাওয়াব পাবেন। তবে শর্ত হল, আপনি
এর যথাযথ হক আদায় পূর্বক বিড়ালকে লালন পালন করতে হবে।
উল্লেখ্যে যে, বিড়াল পোষতে গিয়ে তার পিছনে
একেবারে খুব বেশী খরচ না করে অসহায় গরীব দু:খীদের দান করলে আরো বেশী সাওয়াব হবে
ইনশাআল্লাহ। কারণ মানুষ হলো আশরাফুল মাখলূকাত। অনেক মানুষকে এমন পাবেন যারা দিনে
ঠিকমত এক দুই বেলা খানাও পায় না।
আপনি বিড়ালকে হাড়, মাছের
কাটা ইত্যাদি খাওয়ানোর অভ্যাস করালে আর তার পিছনে তেমন কোনো খরচ করাও লাগবে না।