উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله
بسم الله الرحمن الرحيم
,
শরীয়তের বিধান হলো দাসী মুনিবের সন্তান প্রসব করলে (জীবিত অথবা মৃত) উক্ত দাসি ‘উম ওয়ালাদ’ বা ‘সন্তানের মা’ হিসেবে অভিহিত হবে। সেই সন্তান মুনিবের বৈধ, স্বাধীন সন্তান হিসেবে পরিগণিত হবে এবং পিতার সম্পত্তির ঠিক সেরকম উত্তরাধিকার পাবে যেরকম স্ত্রী’র সন্তানরা পেয়ে থাকে।
,
হাদীস শরীফে আছেঃ
حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ مَنْصُورٍ، وَمُسَدَّدٌ، قَالَا: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، اخْتَصَمَ سَعْدُ بْنُ أَبِي وَقَّاصٍ، وَعَبْدُ بْنُ زَمْعَةَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي ابْنِ أَمَةِ زَمْعَةَ، فَقَالَ سَعْدٌ: أَوْصَانِي أَخِي عُتْبَةُ إِذَا قَدِمْتُ مَكَّةَ أَنْ أَنْظُرَ إِلَى ابْنِ أَمَةِ زَمْعَةَ فَأَقْبِضَهُ فَإِنَّهُ ابْنُهُ، وَقَالَ عَبْدُ بْنُ زَمْعَةَ: أَخِي ابْنُ أَمَةِ أَبِي، وُلِدَ عَلَى فِرَاشِ أَبِي، فَرَأَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَبَهًا بَيِّنًا بِعُتْبَةَ، فَقَالَ: الْوَلَدُ لِلْفِرَاشِ وَلِلْعَاهِرِ الْحَجَرُ، وَاحْتَجِبِي عَنْهُ يَا سَوْدَةُ، زَادَ مُسَدَّد فِي حَدِيثِهِ، وَقَالَ: هُوَ أَخُوكَ يَا عَبْدُ صحيح
,
আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাযি.) ও ‘আবদ ইবনু যাম‘আহ (রাযি.) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যাম‘আহর দাসীর এক সন্তানের বিষয়ে বিবাদ নিয়ে উপস্থিত হলো। সা‘দ (রাযি.) বললেন, আমার ভাই ‘উতবাহ আমার কাছে ওয়াসিয়াত করেছে, আমি মক্কায় এলে যেন যাম‘আহর দাসীর সন্তানকে আমার অধিকারে গ্রহণ করি। কারণ ওটা তার ছেলে। কিন্তু ‘আবদ ইবনু যাম‘আহ বললেন, এটা আমার ভাই, আমার পিতার দাসীর সন্তান, আমার পিতার বিছানায় তার জন্ম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্তানটির মধ্যে ‘উতবাহর সুস্পষ্ট সাদৃশ্য দেখতে পেয়ে বললেনঃ সন্তান তার বিছানা যার। আর যিনাকারীর জন্য রয়েছে পাথর। তিনি সাওদা (রাযি.) বললেনঃ তার থেকে পর্দা করো। যিনাকারীর জন্য রয়েছে পাথর। মুসাদ্দাদের বর্ণনায় রয়েছেঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘হে ‘আব্দ! সে তোমার ভাই।’ (আবু দাউদ ২২৭৩)
,
★★ ইসলামে দাস দাসীদের অনেক অধিকার রয়েছে,যাহা ইসলাম পূর্ব যুগে ছিলোনাঃ
(১) তাদের মনিবদের মত খাদ্য ও পোশাক-পরিচ্ছদের নিশ্চয়তা:
আবূ দাউদ র. মা‘রুর ইবন সুয়াইদ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আমরা ‘রবযা’ [‘রবযা’ মদীনার নিকটবর্তী একটি গ্রামের নাম] নামক স্থানে আবূ যরের নিকট উপস্থিত হলাম,অতঃপর দেখা গেল যে, তাঁর গায়ে এবং তাঁর গোলামের গায়ে একই ধরনের চাদর। অতঃপর তিনি বললেন: হে আবূ যর! আপনি যদি আপনার গোলামের চাদরটা আপনার চাদরের সাথে মিলেয়ে ব্যবহার করতেন, তবে তা সুন্দর হত; আর তাকে আপনি অন্য আরেকটি কাপড় পড়িয়ে দিতেন? তখন তিনি (আবূ যর) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে শুনেছি: “তারা তোমাদের ভাই, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন; সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা যার ভাইকে তার অধীন করে দিয়েছেন, সে যেন তাকে তাই খাওয়ায় যা সে নিজে খায়; আর সে যেন তাকে পোশাক হিসেবে তাই পরিধান করায় যা সে নিজে পরিধান করে এবং যে বোঝা বহন করতে সে অক্ষম, সে যেন এমন বোঝা তার উপর চাপিয়ে না দেয়। তার পরেও যে বোঝা বহন করতে সে অক্ষম, এমন বোঝা যদি তার উপর চাপিয়ে দেয়,তবে সে যেন তাকে সহযোগিতা করে।” [বুখারী, কিতাবুল আদব, বাব নং- ৪৪, হাদিস নং- ৫৭০৩]
,
(২) তাদের সম্মান রক্ষা করা: আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাওবার নবী আবুল কাসেম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি তার নির্দোষ গোলামকে অপবাদ দেবে, কিয়ামতের দিন তাকে অপবাদের শাস্তি স্বরূপ বেত্রাঘাত করা হবে;তবে সে যা বলেছে তা যথাযথ হলে ভিন্ন কথা।” [বুখারী, কিতাবুল হুদুদ, বাব নং- ৩১, হাদিস নং- ৬৪৬৬]
★ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর গোলামকে স্বাধীন করে দিয়ে মাটি থেকে এক খণ্ড কাঠ অথবা অন্য কিছু হাতে নিয়ে বলেন: এর মধ্যে আমার জন্য এমন কোন প্রতিদান নেই, যা এর সমান হতে পারে। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে শুনেছি: “যে ব্যক্তি তার গোলামকে চড় মারলো অথবা প্রহার করল, তবে তার কাফ্ফারা হলো তাকে মুক্ত করে দেওয়া।” [আবূ দাউদ, আদব, বাব নং- ১৩৪, হাদিস নং- ৫১৭০ ; মুসলিম, আইমান, বাব নং- ৮, হাদিস নং- ৪৩৮৮]
,
★★(৩) দীন ও দুনিয়ার বিষয়ে মর্যাদাবান গোলামকে স্বাধীন ব্যক্তির উপর প্রাধান্য দেওয়া:
,
সালাতে গোলামের ইমামতি করাটা শুদ্ধ। উম্মুল মুমেনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার একজন গোলাম ছিল, সে সালাতে তাঁর ইমামতি করত এমনকি মুসলিমগণকে গোলামের কথা শ্রবণ করা ও তার আনুগত্য করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যখন সে তাদের শাসন ক্ষমতার অধিকারী হয় এবং অন্যদের থেকে অধিক যোগ্য হয়।
স্বাধীনতা মানুষের মৌলিক অধিকার; আপতিত কোনো কারণ ব্যতীত কোন ব্যক্তির এই অধিকার হরণ করা যায় না। আর ইসলাম যখন দাসপ্রথাকে নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে গ্রহণ করেছে (যা আমরা পরিষ্কারভাবে আলোচনা করেছি), তখন ইসলাম সেই মানুষকে দাস করেছে যে তার স্বাধীনতার চূড়ান্ত অপব্যবহার করেছে। ফলে যখন সে কোনো সীমালঙ্ঘনের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পর যুদ্ধবন্দী হবে, তখন তাকে যুদ্ধবন্দিত্বের সময়কালীন আটক রাখা একটি সঠিক আচরণ। আর যখন কোনো কারণে মানুষ দাস-দাসীতে রূপান্তরিত হয়; অতঃপর যখন তার পথভ্রষ্টতা থেকে ফিরে আসে, তার অতীতকে সে ভুলে যায় এবং সে এমন মানুষ হয়ে যায় যে অপকর্ম থেকে দূরে ও সৎকর্মের নিকটবর্তী, তখন তার স্বাধীনতা লাভের আবেদন মঞ্জুর করা হবে কি?
ইসলাম তার আবেদন মঞ্জুর করার পক্ষে অভিমত পেশ করে; ফিকাহবিদগণের কেউ কেউ এই আবেদন মঞ্জুর করাকে আবশ্যক মনে করেন এবং কেউ কেউ এই আবেদন মঞ্জুর করারকে মুস্তাহাব (পছন্দনীয়) মনে করেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাসদের ব্যাপারে অনেক ওসিয়ত করেছেন। এ কথা প্রমাণিত যে, তিনি যখন সাহাবাদের মাঝে বদরের যুদ্ধের যুদ্ধবন্দীদের বণ্টন করেন, তখন তিনি তাঁদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন: তোমরা যুদ্ধবন্দীদের সাথে ভালো ব্যবহার কর। এ ছাড়াও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাসদাসী স্বাধীন করার সওয়াব বর্ণনা করে আরও বলেন: “যে কেউ কোন দাস বা দাসী স্বাধীন করবে, আল্লাহ্ তাকে তার প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করবেন।” [বুখারী ও মুসলিম]
★কুরআনুল কারীমেও জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য দাসমুক্তিকে অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ঘোষণা করে বলা হয়েছে: “তবে সে তো বন্ধুর গিরিপথে প্রবেশ করেনি। আর কিসে আপনাকে জানাবে— বন্ধুর গিরিপথ কী? এটা হচ্ছে: দাসমুক্তি।” [সূরা আল-বালাদ: ১১-১৩]
,
★বর্ণিত আছে যে, ওসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কোন অপরাধ করার কারণে তাঁর গোলামের কান মলে দিয়েছিলেন; অতঃপর তিনি তাকে উদ্দেশ্য করে পরবর্তীতে বললেন: তুমি আস, অত:পর আমার কানে চিমটি কাট। কিন্তু গোলাম তাতে অপারগতা প্রকাশ করল; তখন তিনি তাকে পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন, তারপর সে হালকাভাবে কানে চিমটি কাটতে শুরু করল। তখন তিনি তাকে বললেন: ভাল করে চিমটি কাট; কেননা আমি কিয়ামতের দিনের শাস্তি ভোগ করতে পারব না। তখন গোলাম বলল: হে আমার মনিব! আপনি যেই দিনকে ভয় করেন, অনুরূপভাবে আমিও তো সেই দিনকে ভয় করি।
,
★আবদুর রহমান ইবন ‘আউফ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন তাঁর গোলামদের সাথে হাঁটতেন, তখন তাদের কেউ তাঁকে পৃথক কেউ ভাবতে পারতেন না। কেননা তিনি তাদের সামনে চলতেন না এবং তারা যেই পোশাক পরিধান করত তিনিও সেই পোশাক পরিধান করতেন। আর ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কোন একদিন মক্কার পথ অতিক্রম করতেছিলেন, অতঃপর তিনি গোলামদেরকে তাদের মনিবদের সাথে না খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন; তখন তিনি রাগ হয়ে তাদের অভিভাবকদেরকে বললেন: এই জাতির কী হল যে, তারা তাদের খাদেমদের উপর নিজেদেরকে প্রাধান্য দেয়? তারপর তিনি খাদেমদেরকে ডাকলেন, তারা তাদের সাথেই খাওয়া-দাওয়া করল। আর জনৈক ব্যক্তি সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট প্রবেশ করলে সে তাঁকে ময়দার খামির তৈরি করতে দেখল, তখন বলল: হে আবূ আবদিল্লাহ! এ কী হচ্ছে? অতঃপর তিনি বললেন: আমরা খাদেমকে এক কাজে পাঠিয়েছি এবং আমরা তার উপর দু’টি কাজ এক সাথে চাপিয়ে দিতে অপছন্দ করলাম।
,
★★কুরআন হাদীসের আলোকে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ অধিকারের কথা এখানে উল্লেখ করছিঃ
★ এক সাহাবী এসে বললেন ইয়া রাসুলুল্লাহ আমি আমার গোলামকে প্রতিদিন কয়বার মাফ করবো?
উত্তরে আসল প্রতিদিন ৭০ টি ভুল মাফ করবে।
(বুখারী ২৩৮৪)
★ তাদেরকে আমার দাস হিসেবে সম্বোধন করা নিষেধ।
ডাকার সময় এভাবে ডাকবে আমার বালক, আমার খাদিম।
(তিরমিজি ১৯৪৯)
★★ পান থেকে চুন খসলেই ইসলামে দাসমুক্তির বিধান দেওয়া হয়েছেঃঃ
★ যদি দাসকে মারো,তো প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে তাকে মুক্ত কর।
(মুসলিম শরীফ ৪১৫২)
★ কাউকে অনিচ্ছাকৃত মেরে ফেলেছ,তো এর কাফফারা স্বরুপ দাস মুক্তি কর।
(কুরআন সুরা নিসা /৯২)
★ প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেছ,দাস মুক্তি কর।
(কুরআন সুরা মায়েদাহ/৮৯)
★ রমজান মাসে রোযা রেখে (দিনের বেলা) স্ত্রী সহবাস করেছ,দাস মুক্তি কর।
(আবু দাউদ ২২০৭)
★ ঝগড়ার সময় স্ত্রীকে বলেছ তোমার পিঠ,, আমার মায়ের মতো,তো গোলাম আযাদ কর।
(আবু দাউদ ২২০৮)
★যাকাতের ৮ টি খাতের ১ টি খাতই আছে,যাকাতের টাকা দিয়ে গোলাম ক্রয় করে তাকে আযাদ করে দেওয়া।
(কুরআন সুরা তওবাহ/৬০)
সূর্য গ্রহনের সময় দাস মুক্ত কর।
(বুখারী শরীফ ৯৯৬)
★ পরকালের সওয়াবের আশায় দাস মুক্ত কর।
(বুখারী শরীফ ৫২৪৬)