بسم الله
الرحمن الرحيم
জবাবঃ-
রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে অনেক সময় মানুষ
অভিশাপ দিয়ে বসে। অপছন্দের লোকের প্রতি আল্লাহর গজব নেমে আসার অপেক্ষা করে। তার যেকোনো
ধরনের ক্ষতি ও ধ্বংস কামনা করে। এমন গর্হিত কাজ কিছু মানুষের অভ্যাসেও পরিণত হয়ে যায়।
ইসলামের দৃষ্টিতে এসব সম্পূর্ণ হারাম ও অনুচিত।
অনেক সময় অভিশাপ হিতেবিপরীত হয়, এটা হাদিস শরিফে স্পষ্ট উল্লেখ আছে।কোনো মুসলমান অন্য মুসলমানকে
অভিশাপ দেয়া সর্বাবস্থায় হারাম।এমনকি নির্দিষ্ট কোনো অমুসলিমকেও লানত করা যাবে না,
যতক্ষণ না কুফরি অবস্থায় তার মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হবে।
হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার জিহ্বা
ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে। ’ ( তিরমিজি, হাদিস নং:
২৬২৭; আবু দাউদ, হাদিস নং: ২৪৮১)
অপর মুসলমান কষ্ট পেতে পারে এমন কাজ
করা কোনো মুসলমানের জন্য শোভা পায় না। কখনো অজান্তে কাউকে কষ্ট দিয়ে ফেললে, বোঝার সঙ্গে সঙ্গে তার কাছে মাফ চেয়ে নেয়া উত্তম চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ।
তেমনিভাবে কারো কাছ থেকে কোনো জুলুমের শিকার হলেও তাকে ক্ষমা করে দেয়াই মহৎ চরিত্রের
পরিচায়ক।
হাদিসে এসেছে, ‘রাসুল (সা.) বলেছেন, যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তুমি তার সঙ্গে সম্পর্ক
স্থাপন করো, যে তোমাকে বঞ্চিত করে, তুমি
তাকে তুষ্ট করো, যে তোমার প্রতি জুলুম করে, তুমি তার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার (ক্ষমা) করো। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং: ১৭৩৩৪)
তেমনিভাবে কাউকে অভিশাপ দেয়াও কোনো মুমিনের
জন্য শোভনীয় নয়। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন,
‘মুমিন কখনো অভিসম্পাতকারী হয় না। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ২০৮৮)
রাসুল (সা.) আরো বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর আল্লাহর
লানত, তার গজব ও জাহান্নামের অভিশাপ দেবে না। ’ (তিরমিজি,
হাদিস নং: ১৯৮৬)
অভিসম্পাতকারী আখেরাতেও মান-মর্যাদা
পাবে না। রাসুল (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন অভিশাপকারীরা
সুপারিশ করতে পারবে না এবং সাক্ষ্যপ্রদানও করতে পারবে না। (মুসলিম, হাদিস নং: ২৫৯৮)
এ সব হাদিস দ্বারা এ কথা সহজেই অনুমেয়
হয় যে- অন্যায়ভাবে কাউকে অভিশাপ দেয়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ। প্রিয় নবী (সা.) অভিশাপ ও
অভিশাপকারীকে পছন্দ করেননি।
রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন কোনো বান্দা কোনো ব্যক্তিকে অভিশাপ দেয়, তখন অভিশাপ আকাশে চলে যায়, আকাশের দরজাগুলো তার জন্য
বন্ধ হয়ে যায়, অতঃপর তা জমিনের দিকে নেমে আসে। তখন জমিনের দরজাগুলোও তার থেকে বন্ধ করে
দেয়া হয়, অতপর তা ডানে বাঁয়ে ঘুরতে থাকে, যখন কোনো উপায় না পায়, তখন যাকে অভিসম্পাত করা হয়েছে, সে যদি এর যোগ্য হয়,
তাহলে তার প্রতি পতিত হয়। অন্যথায় অভিশাপকারীর দিকেই ধাবিত হয়। (আবু
দাউদ, হাদিস নং: ৪৯০৭)
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে অন্য হাদিসে
এসেছে, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর বাতাসকে লানত (অভিশাপ)
দিল, তখন নবীজি বললেন, বাতাসকে লানত দিও
না, কেননা এ তো আল্লাহরপক্ষ থেকে নির্দেশিত। কেউ যদি কোনো বস্তুকে
লানত বা অভিশাপ দেয়, আর সে যদি ওই লানতের পাত্র না হয়,
তাহলে সেই লানত লানতকারীর দিকেই ফিরে আসে। (তিরমিজি, হাদিস নং: ১৯৭৮; আবু দাউদ, ২/২৭৬)
বোঝা যায়, যে লানত বা অভিশাপ দেবে সে যদি অভিশাপের উপযুক্ত না হয়,
তাহলে এই অভিশাপ তার দিকে যায় না। বরং অভিশাপকারীর দিকেই প্রত্যাবর্তিত
হয়। এ জন্য অভিশাপ দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া চাই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সব অনিষ্ট
ও বিপদাপদ থেকে রক্ষা করুন।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!
প্রিশ্নেলিখিত ছুরতে নিজের উপর অভিশাপ দেওয়া গুনাহ
এবং উক্ত কাজ করার কারনে কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না তবে যদি কসমের সাথে লানত করে , তাহলে কসম ভঙ্গ করার কারণে কাফ্ফারা আদায় করতে হবে। কারো উপরে
লানত করলে তার কাছ থেকে ক্ষমা চাইতে হবে এবং আল্লাহ তায়ালার কাছেও উক্ত কাজের প্রতি
অনুতপ্ত হয়ে খালেস দিলে তওবা করতে হবে।