কিছু উলামায়ে কেরামগন বিদআতকে দুই ভাগে ভাগ করে থাকেন। বিদআতে হাসানাহ বা উত্তম বিদআত এবং বিদআতে সাইয়িয়াহ বা মন্দ বিদআত।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَه أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَه مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٌ وَمَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً سَيِّئَةً كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِه مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْءٌ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইসলামে যে ব্যক্তি কোন নেক কাজ চালু করলো সে এ চালু করার সাওয়াব তো পাবেই, তার পরের লোকেরা যারা এ নেক কাজের উপর ‘আমাল করবে তাদেরও সমপরিমাণ সাওয়াব সে পাবে। অথচ এদের সাওয়াব কিছু কমবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন মন্দ রীতির প্রচলন করলো, তার জন্য তো এ কাজের গুনাহ আছেই। এরপর যারা এ মন্দ রীতির উপর ‘আমাল করবে তাদের জন্য গুনাহও তার ভাগে আসবে, অথচ এতে ‘আমালকারীদের গুনাহ কম করবে না।
মুসলিম ১০১৭ মিশকাত ২১০
ভালো কাজের প্রচলন বলতে এমন কাজ যা রসূলের সুন্নাতের বহির্ভূত নয়।
এই হাদীসকে সামনে রেখে উলামায়ে কেরামগন বলেছেন যে বিদ'আতে হাসানাহ হলো প্রত্যেক ঐ কাজ যার আছল (ভিত্তি), অথবা দৃষ্টান্ত কুরুনে ছালাছাহ এর ভিতরে আছে,অথবা শরীয়তের সাথে তার সামঞ্জস্যতা থাকে,খেলাফ না হয়।
দ্বীন শরীয়তের মাছলাহাত এর খেলাফ কোনো কাজ বিদ'আতে ছায়্যিয়াহ।
ইবনে হাজর আসকালানী রহঃ বলেনঃ
والتحقیق أنہا إن کانت مما تندرج تحت مستحسن في الشرع فہي حسنة وإن کانت مما تندرج تحت مستقبح في الشرع فہي مستقبحة (فتح الباري)
সারমর্মঃ
যদি শরীয়তের দৃষ্টিতে তাহা ভালো কাজ হয়,তাহলে তাহা হাসানাহ,কিন্তু যদি তাহা শরীয়তের দৃষ্টিতে মন্দ কাজ হয়,তাহলে তাহা মন্দ।
,
এই অর্থে বিদ'আতে হাসানাহ যেহেতু সুন্নাতের খেলাফ নয়,তাও তাহা করলে ছওয়াব হবে।
★অন্যান্য ইসলামী স্কলারদের মতে ইসলামের মধ্যে বিদ‘আতে হাসানাহ বলতে কিছু নেই। প্রত্যেক বিদ‘আতই গোমরাহী।
,
যারা বিদ'আতে হাসানাহ বলেছেন,
প্রকৃত ব্যাপার হল, তাঁরা ‘বিদআতে হাসানাহ’ বলে যা কিছু বুঝিয়েছেন।
তা শাব্দিক অর্থে বিদআত হলেও শরিয়তের পরিভাষায় বিদআত হয় না। অন্যথায় শরিয়তের পরিভাষায় সকল বিদআতই গোমরাহি। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
وَكُلُّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ وَكُلُّ ضَلاَلَةٍ فِي النَّارِ
আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম। (মুসলিম ১৫৩৫ নাসায়ী ১৫৬০ )
এজন্য আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. বলেন,
كُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ، وإن رآها الناسُ حسنةً
প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহি, যদিও মানুষ তা ‘হাসানাহ’ (উত্তম) মনে করে। (আল ইবানাহ ১/৩৩৯)
ইমাম মালিক রহ. বলেন,
مَن ابتدع في الإسلام بدعةً يراها حسنةً، فقد زعم أن محمداً صلى الله عليه وسلم خان الرسالة؛ لأن الله تعالى يقول: {الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ}، فما لم يكن يومئذٍ ديناً فلا يكون اليوم ديناً
যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোনো বিদআতের প্রচলন করে এবং এটাকে ‘হাসানাহ’ মনে করে সে যেন এই ধারণা করল যে, মুহাম্মদ ﷺ রিসালাতের দায়িত্বে খেয়ানত করেছেন। কেননা, আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেছেন, আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। সুতরাং সেই যুগে যা দীন হিসাবে পরিগণিত ছিল না, তা এই যুগেও দীন হিসাবে গণ্য হতে পারে না। (আল ই’তিসাম লিশ-শাতিবী ১/৬৪)