আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
72 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুম, কোনো মুসলিম দেশের মুসলমান ফুটবলার যদি দেশের হয়ে ফুটবল খেলে পাওয়া সমস্ত টাকা তার দেশের গরীব মুসলমান পরিবারের মাঝে দান করে দেয় তাহলে তার জন্য কি সে সাওয়াব পাবে? যেমন মরক্কোর ফুটবলার হাকিম জিয়েচ, তিনি একজন মুসলমান এবং তিনি ২০১৫ সাল থেকে দেশের হয়ে খেলে যত টাকা পেয়েছেন তার কিছুই নিজে গ্রহন করেননি। সবই দান করেছেন নিজের দেশের গরিব পরিবারের মাঝে। এর জন্য কি তিনি সাওয়ান পাবেন?

1 Answer

0 votes
by (62,960 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

প্রথেমে  জেনে নেওয়া উচিত যে, লাহব কাকে বলে?

اللهو: ما يشغل الإنسان عما يعنيه و يهمه (مفردات القرآن للإمام الراغب)

অর্থাৎ-যে সকল বস্তু মানুষকে লক্ষণীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী থেকে অমনোযোগী করে দেয় তা হলো "লাহব"।

اللعب :لعب فلان اذا كان فعله غير قاصد به مقصدا صحيحا

অর্থাৎ- খেলাধুলা ঐ সকল কাজ যাতে সঠিক কোন উদ্দেশ্য থাকে না।

اللغو: وهو كل سقط من قول او فعل فيدخل فيه الغناء واللهو و غير ذلك مما قاربه

অর্থাৎ- লাগু ঐ সকল অনর্থক কথাবার্তা ও কাজ-কর্ম যাতে গান-বাদ্য রং তামাশা ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।(কুরতুবি:১৩/৮০)

উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস সমূহ থেকে বুঝা গেল যে, ইসলামী শরীয়তে সময়ের প্রতি যত্নশীল হওয়া ও লক্ষস্থির জীবন গঠনের নির্দেশ হয়েছে। খেলাধুলা ও রং তামাশা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।কিন্তু বিনোদন নয়;বরং বললে ভুল হবে না যে,যেই বিনোদনের অর্থ হলো আনন্দ ও খুশি লাভ করা। শরয়ী আনন্দ সম্ভলিত সেই বিনোদন ইসলামে কেবল অনুমোদিতই নয়;বরং এক পর্যায়ে প্রশংসনীয় ও বটে।যাতে করে শারিরিক অলসতা ও অবসাদ কেটে যায় এবং মনোবল ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয় আর মানুষ প্রফুল্লতার সাথে জীবনের শ্রেষ্ঠ লক্ষ্য অর্জনে মনোযোগী হতে পারে।.........বিস্তারিত জানুন- https://www.ifatwa.info/673

প্রত্যেক ঐ মুআমালাকে জুয়া বলা হয়, যা লাভ ও লোকশানের মাঝে ঝুলন্ত ও সন্দেহযুক্ত থাকে।  [জাওয়াহিরুল ফিক্বহ-২/৩৩৬]

 ‘ফুটবল ম্যাচ’ যেইগুলো টাকা অথবা এমন পুরষ্কারের জন্য খেলা হয় - এইগুলো নাজায়েজ, কারণ এটা হচ্ছে জুয়া। (টাকার বিনিময়ে ফুটবল/ক্রিকেট খেলা জুয়ার অন্তুর্ভুক্ত।) কারণ, ইসলাম অনুমতি দেয়নি, এমন খেলা ছাড়া অন্য যেকোন খেলার জন্যে পুরষ্কার নেওয়া জায়েজ নয়। এই খেলাগুলোতে অংশগ্রহণ করা হারাম, এবং যে ব্যক্তি এটা জানে যে, এই খেলাগুলো পুরষ্কারের জন্য খেলা হয়, তার জন্য জায়েজ নয় যে সে এই খেলাগুলো দেখবে। কারণ, এই খেলাতে অংশগ্রহণ করা মানে এইগুলোকে সমর্থন করা।

يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ ۖ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِن نَّفْعِهِمَا  [٢:٢١٩]

তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে,তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়। [সূরা বাকারা-২১৯]

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٥:٩٠]

إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَن ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ ۖ فَهَلْ أَنتُم مُّنتَهُونَ [٥:٩١]

হে মুমিনগণ,এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।

শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শুত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও কি নিবৃত্ত হবে? [সূরা মায়িদা-৯০-৯১]

كُلُّ شَيْءٍ مِنَ الْقِمَارِ فَهُوَ مِنَ الْمَيْسِرِ حَتَّى لَعِبِ الصِّبْيَانِ بِالْجَوْزِ.

প্রত্যেক বাজি মাইছির তথা জুয়ার অন্তর্ভূক্ত এমনকি শিশুদের হারজিতের খেলাও জুয়ার অন্তর্ভূক্ত। [তাফসীরে ইবনে কাসীর-২/১১৬, সূরা মায়িদা, আয়াত নং-৯০-৯৩]

হারাম টাকার বিধান হল, তা প্রাথমিকভাবে মূল মালিকের কাছে ফেরত দেয়া। নতুবা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরীবদের মাঝে সদকা করে দেয়া।

 من ملك بملك خبيث ولم يمكنه الرد الى المالك فسبيله التصدق على الفقراء

 (معارف السنن، كتاب الطهارة، باب ما جاء لا تقبل صلاة بغير طهور-1/34، الفتاوى الشامية، باب البيع الفاسد، مطلب فى من ورث مالا حراما-7/301، كتاب الحظر والإباحة، فصل فى البيع-9/554، بذل المجهود، كتاب الطهارة، باب فرض الوضوء- 1/37

যদি কারো নিকট কোনো হারাম মাল থাকে,তাহলে ঐ মালকে তার মালিকের নিকট ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব না হলে সেটি ফকিরদেরকে সদকাহ করে দিতে হবে।

সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

প্রচলিত ক্রিকেট বা ফুটবল খেলাধুলা  লাহবের অন্তর্ভুক্ত। আর লাহব কুরআন হাদীসের দৃষ্টিতে হারাম। সুতরাং এই হারাম খেলাধুলা করে টাকা উপার্জন করা কখনো জায়েয হবে না। হারাম টাকার বিধান হল, তা প্রাথমিকভাবে মূল মালিকের কাছে ফেরত দেয়া। নতুবা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরীবদের মাঝে সদকা করে দেয়া।

সুতরাং বাহ্যিক দৃষ্টিতে যদি কিছু মুসলিম খেলোয়াড়ের এমন কাজ প্রশংসার দাবী রাখে। কিন্তু হারাম খেলাধুলা করে টাকা উপার্জন করা কখনো জায়েয হবে না। বরং তার উপর আবশ্যক যে সে এই হারাম সম্পদ দান করবে। তার জন্য হারাম পন্থায় প্রাপ্ত সম্পদ ভক্ষণ করা জায়েয নেই।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...