আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
1,140 views
in সুন্নাহ-বিদ'আহ (Sunnah and Bid'ah) by (7 points)
আসসালামু আলাইকুম।

নামায ব্যতীতও কি পড়তে হবে?উস্তাদ। মাঝেমধ্যে পড়লে কি হবে না।

1 Answer

–1 vote
by (589,260 points)
বিসমিহি তা'আলা
জবাবঃ-
টুপি পড়া সুন্নাত।
টুপি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরেছেন, সাহাবায়ে কেরাম পরেছেন, তাবেয়ীন তাবে-তাবেয়ীন পরেছেন এবং পরবর্তীতে সব যুগেই মুসলিমগণ তা পরিধান করেছেন। টুপি, পাগড়ীর মতোই একটি ইসলামী লেবাস। হাদীসে, আছারে ও ইতিহাসের কিতাবে এ বিষয়ে বহু তথ্য আছে এবং অনেক আলিম-মনীষীর বক্তব্যও আছে। নিম্নে এ সম্পর্কে কিছু দলীল পেশ করা হল। 

হাদীস থেকে।

হাদীস-১
হাসান বিন মেহরান থেকে বর্ণিত-
ﻋﻦ ﺭﺟﻞ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ : ﻗﺎﻝ : ﺃﻛﻠﺖ ﻣﻊ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ، ﻭﺭﺃﻳﺖ ﻋﻠﻴﻪ ﻗﻠﻨﺴﻮﺓ ﺑﻴﻀﺎﺀ
একজন সাহাবী বলেছেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তাঁর দস্তরখানে খেয়েছি এবং তাঁর মাথায় সাদা টুপি দেখেছি’ (আল ইসাবাহ ৪/৩৩৯)

হাদীস-২
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন
ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛﺎﻥ ﻳﻠﺒﺲ ﻣﻦ ﺍﻟﻘﻼﻧﺲ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻔﺮ ﺫﻭﺍﺕ ﺍﻵﺫﺍﻥ، ﻭﻓﻲ ﺍﻟﺤﻀﺮ ﺍﻟﻤﺸﻤﺮﺓ ﻳﻌﻨﻲ ﺍﻟﺸﺎﻣﻴﺔ .
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর অবস্থায় কান বিশিষ্ট টুপি পরতেন আর আবাসে শামী টুপি পরতেন। (আখলাকুন নুবুওয়্যাহ, আল জামে লি আখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামে পৃ. ২০২)

হাদীস -৩
উমর ইবনে খাত্তাব রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন-
ﺍﻟﺸﻬﺪﺍﺀ ﺛﻼﺛﺔ : ﺭﺟﻞ ﻣﺆﻣﻦ ... ﻭﺭﻓﻊ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺭﺃﺳﻪ ﺣﺘﻰ ﻭﻗﻌﺖ ﻗﻠﻨﺴﻮﺗﻪ ﺃﻭ ﻗﻠﻨﺴﻮﺓ ﻋﻤﺮ .
শহীদ হল তিন শ্রেণীর লোক : এমন মুমিন ... এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা তুললেন। তখন তাঁর টুপি পড়ে গেল। অথবা বলেছেন উমরের টুপি পড়ে গেল। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১৪৬ জামে তিরমিযী, iহাদীস : ১৬৪৪ ইত্যাদি)

উপরোক্ত হাদীস সমূহ থেকে এটাই প্রমাণিত হচ্ছে যে নবী কারীম সাঃ টুপি পরিধান করেছিলেন, এজন্য সর্বাবস্থায় টুপি পরিধান করা সুন্নাত।

দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর রা.-এর যুগে যখন ‘নাজরান’ শহরের খৃস্টানরা সন্ধিতে রাজি হল এবং কর দিতে সম্মত হল তখন তারা হযরত উমর রা.-এর সাথে একটি চুক্তিনামা করেছিল। সেই চুক্তির অংশবিশেষ এই-
ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ، ﻫﺬﺍ ﻛﺘﺎﺏ ﻟﻌﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻤﺮ ﺃﻣﻴﺮ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﻣﻦ ﻧﺼﺎﺭﻯ ﻣﺪﻳﻨﺔ ﻛﺬﺍ ﻛﺬﺍ، ﻟﻤﺎ ﻗﺪﻣﺘﻢ ﺳﺄﻟﻨﺎﻛﻢ ﺍﻷﻣﺎﻥ ﻷﻧﻔﺴﻨﺎ ﻭﺫﺭﺍﺭﻳﻨﺎ ﻭﺃﻫﻞ ﻣﻠﺘﻨﺎ ﻭﺷﺮﻃﻨﺎ ﻟﻜﻢ ﻋﻠﻰ ﺃﻧﻔﺴﻨﺎ ﺃﻥ ﻻ ﻧﺤﺪﺙ ﻓﻲ ﻣﺪﻳﻨﺘﻨﺎ ﻭﻻ ﻓﻴﻤﺎ ﺣﻮﻟﻬﺎ ﺩﻳﺮﺍ ﻭﻻ ﻛﻨﻴﺴﺔ ... ﻭﻻ ﻧﺘﺸﺒﻪ ﺑﻬﻢ ( ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ) ﻓﻲ ﺷﻲﺀ ﻣﻦ ﻟﺒﺎﺳﻬﻢ ﻣﻦ ﻗﻠﻨﺴﻮﺓ ﻭﻻ ﻋﻤﺎﻣﺔ .
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
এ অমুক শহরের নাসারাদের পক্ষ থেকে আল্লাহর বান্দা আমীরুল মুমিনীন উমরের সাথে লিখিত চুক্তি। যখন আপনারা (মুসলমানগণ) আমাদের শহরে এলেন তখন আমরা আপনাদের নিকট আমাদের, আমাদের সন্তান-সন্ততি ও স্বধর্মের লোকদের জন্য নিরাপত্তা প্রার্থনা করেছি। আমরা নিজেদের উপর এ শর্ত গ্রহণ করছি যে, এ শহরে এবং এর আশপাশে আমরা কোনো গির্জা তৈরি করব না ... এবং আমরা মুসলমানদের পোশাক-টুপি, পাগড়ি ইত্যাদিতে সাদৃশ্য গ্রহণ করব না ...।-(সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস : ১৯১৮৬)

অত্র হাদীসে টুপিকে মুসলমানদের পোশাক বলা হয়েছে। যেমন পাগড়িকে বলা হয়েছে। 
একটি বস্তুর কতটুকু প্রচলন হলে তা একটি দল বা গোষ্ঠীর সাথে সম্বন্ধ করা হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

মুজতাহিদ ইমামগণ ও টুপি পরিধান করতেন।
ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর টুপিঃ-
ইমাম আবু হানীফা উঁচু টুপি পরতেন।(আল-ইনতিকা, পৃষ্ঠা : ৩২৬; উকুদুল জুমান, পৃষ্ঠা : ৩০০-৩০১)

ইমাম মালিক রাহ.-এর টুপি
ﻛﺎﻥ ﻣﺎﻟﻚ ﺑﻦ ﺃﻧﺲ ﺇﺫﺍ ﺃﺭﺍﺩ ﺃﻥ ﻳﺨﺮﺝ ﻳﺤﺪﺙ ﺗﻮﺿﺄ ﻭﺿﻮﺀﻩ ﻟﻠﺼﻼﺓ ... ﻭﻟﺒﺲ ﻗﻠﻨﺴﻮﺗﻪ ﻭﻣﺸﻂ ﻟﺤﻴﺘﻪ ...
অর্থ : ইমাম মালেক রাহ. যখন হাদীস বর্ণনার জন্য বের হতেন তখন অযু করতেন, টুপি পরতেন ও দাঁড়ি আঁচড়ে নিতেন।-আলজামে, খতীব বাগদাদী ১/৩৮৮, বর্ণনা : ৯০৩

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.-এর টুপি
ফযল ইবনে যিয়াদ বলেন-
ﺭﺃﻳﺖ ﻋﻠﻰ ﺃﺑﻲ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ( ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺃﺣﻤﺪ ) ... ﻋﻠﻴﻪ ﻋﻤﺎﻣﺔ ﻓﻮﻕ ﺍﻟﻘﻠﻨﺴﻮﺓ ... ﻭﺭﺑﻤﺎ ﻟﺒﺲ ﺍﻟﻘﻠﻨﺴﻮﺓ ﺑﻐﻴﺮ ﻋﻤﺎﻣﺔ .
অর্থ : আমি ইমাম আহমদকে টুপির উপর পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় দেখেছি। ... তবে কখনো কখনো তিনি পাগড়ি ছাড়া টুপি পরেছেন।-সিয়ারু আলামিন নুবালা ১১/২২০ (শামেলা)

ইবনুল জাওযী রাহ বলেনঃ
ﻭﻻ ﻳﺨﻔﻰ ﻋﻠﻰ ﻋﺎﻗﻞ ﺃﻥ ﻛﺸﻒ ﺍﻟﺮﺃﺱ ﻣﺴﺘﻘﺒﺢ ﻭﻓﻴﻪ ﺇﺳﻘﺎﻁ ﻣﺮﻭﺀﺓ ﻭﺗﺮﻙ ﺃﺩﺏ ﻭﺇﻧﻤﺎ ﻳﻘﻊ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻨﺎﺳﻚ ﺗﻌﺒﺪﺍ ﻟﻠﻪ
অর্থাৎ- এটা কোনো গোপন বিষয় নয় যে, মাথা খোলা রাখা একটি নিন্দনীয় ও তিরস্কারপূর্ণ বিষয়,এবং এতে ভদ্রতা ও আদাব লঙ্গিত হয়,তবে হজ্বে ইবাদত হিসেবে ও নিজেকে আল্লাহর সামনে তুচ্ছার্থে মাথা খোলা রাখা হয়।(তালবিসে ইবলিস,২৯৬)

মাথা খোলা রাখা মাকরুহ। 
ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়া,১০/১৫৬। 

আল্লাহ-ই ভালো জানেন।

উত্তর লিখনে
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ, IOM.


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...