ওয়া আলাইকুমুস সালাম
ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম।
জবাবঃ
★ স্ত্রীর পর্দার সুবিধার্থে স্ত্রীর
জন্য আলাদা ঘরের
ব্যবস্থা করা স্বামীর উপর আবশ্যক
■ ফাতাওয়ায়ে
হিন্দিয়াতে রয়েছে-
تجب السكني لها عليه في
بيت خال
মর্থার্থ: স্ত্রীর জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করা স্বামীর উপর আবশ্যক।
(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াত, ১/৬০৪)
★ স্ত্রীর ভরণ-পোষণ স্বামীর উপর সর্বাবস্থায় ফরয, স্ত্রীর নিজের সম্পদ থাকুক বা না থাকুক।
■ আল্লাহ
তাআলা বলেন-
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ
عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَبِمَا
أَنفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ ۚ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ
لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ ۚ
পুরুষেরা নারীদের অভিভাবক, ঐ
(বিশেষত্বের) কারণে, যার দ্বারা
আল্লাহ তাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং ঐ সম্পদের কারণে, যা তারা ব্যয় করেছে। সুতরাং সৎ নারীরা হল
অনুগত, (স্বামীর)
অবর্তমানে (নিজের সতিত্ব ও স্বামীর সম্পদ) রক্ষাকারী, আল্লাহ রক্ষা করার কারণে ... -সূরা নিসা : ৩৪
এখানে قَوَّامُونَ -এর তরজমা করা হয়েছে ‘অভিভাবক’। মুফাসসিরীনের ব্যাখ্যামতে তা হচ্ছে,
শাসন ও ব্যবস্থায়ন এবং রক্ষা ও নিরাপত্তাবিধানের মাধ্যমে নারীর দেখভাল করা
এবং আদেশ ও নিষেধের মাধ্যমে তার অবস্থার সংশোধন করা, যেমন শাসকগণ প্রজাসাধারণের দেখভাল করে। তো পুরুষ হচ্ছে নারীর প্রধান ও উপরস্থ;নারীর শাসক ও সংশোধক, যদি সে বেঁকে যায়।-আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/১৮৮; আহকামুল কুরআন ইবনুল আরাবী ২/৪১৬; তাফসীরে কাশশাফ ১/৫০৫; তাফসীরে
ইবনে কাছীর ১/৪৯১
এই আয়াতে স্ত্রীর উপর স্বামীর অভিভাবকত্বের দুটো কারণ বলা হয়েছে : প্রথমত
দৈহিক শক্তি-সামর্থ্য ও বিচার-বিচক্ষণতার মতো গুণাবলি, দ্বিতীয়ত মোহরানা ও ভরণ-পোষণের জন্য
ব্যয়বহন।
এই আয়াতে ‘পুরুষের ব্যয়কৃত সম্পদ’ মানে স্ত্রীর মোহরানা, খোরপোষ ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচ, কুরআন ও সুন্নাহর বিধান অনুযায়ী যা বহন করা
অবশ্যকর্তব্য। এ আয়াত প্রমাণ করে, স্ত্রীর নাফাকা ও খোরপোষ স্বামীর উপর ফরয। -তাফসীর ইবনে কাছীর ১/৪৯২; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/১৮৮
★ চেহারার
পর্দা করাও আবশ্যক।
মহান
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
وَقُلْ
لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا
يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ
عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ
آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ
بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي
أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ
التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ
الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ
بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى
اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١]
ঈমানদার
নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের
হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা
ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে
ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও
বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে
পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। {সূরা
নূর-৩০-৩১}
وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ
حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ
অর্থ
: আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে
কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের
জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা
আহযাব-৫৩}
হাদীস
শরীফে এসেছেঃ
আবদুল্লাহ
ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
وَلاَ تَنْتَقِبِ المَرْأَةُ المُحْرِمَةُ، وَلاَ تَلْبَسِ
القُفَّازَيْنِ
‘আর ইহরাম গ্রহণকারী নারী যেন নিকাব ও হাতমোজা পরিধান না
করে।’ (বুখারী : ১৮৩৮)
এই
হাদীস থেকে বোঝা যায়, নবী ﷺ যুগে মেয়েরা
তাদের হাত ও চেহারা ঢাকতেন।
আয়েশা
রাযি. হজ অবস্থায় মহিলা সাহাবীদের পর্দার যে বিবরণ দিয়েছেন তা থেকে অনুমান করা
যায় পর্দা রক্ষায় তাঁরা কতটা আন্তরিক ছিলেন। তাঁরা স্বাভাবিক অবস্থায় তো বটেই
ইহরাম অবস্থায় যখন মুখ ঢাকতে নিষেধ করা হয়েছে সেখানেও পরপুরুষের সামনে থেকে
নিজেদের চেহারা আড়াল করেছেন। আয়েশা রাযি. বলেন,
كَانَ
الرُّكْبَانُ يَمُرُّونَ بِنَا وَنَحْنُ مَعَ رَسُولِ اللَّهﷺ مُحْرِمَاتٌ فَإِذَا
حَاذَوْا بِنَا سَدَلَتْ إِحْدَانَا جِلْبَابَهَا مِنْ رَأْسِهَا إِلَى وَجْهِهَا
فَإِذَا جَاوَزُونَا كَشَفْنَاهُ.
‘আমরা ইহরাম অবস্থায় সাল্লাল্লাহু ﷺ-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন আরোহীরা আমাদের সঙ্গে
পথ চলছিলেন। যখন তারা আমাদের আড়াআড়ি হন, আমাদের
সঙ্গীনীরা তাদের বড় চাদর মাথা থেকে চেহারায় ঝুলিয়ে দেন। তারা আমাদের অতিক্রম
করে চলে যাবার পরই আমরা তা উন্মুক্ত করি।’ (আবূ দাঊদ : ৫৩৮১; বাইহাকী : ৩৩৮৮)
মুফতী
মুহাম্মদ শাফী রহ. লিখেছেন, ‘ইমাম চতুষ্টয়ের মধ্য থেকে ইমাম মালিক, ইমাম শাফি’ঈ ও ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল রহ. তিনজনই মুখমণ্ডল ও
হাতের কবজি খোলা রাখার মোটেই অনুমতি দেন নি- তা ফিতনার আশংকা থাকুক বা না থাকুক।
ইমাম আবূ হানীফা রহ. ফিতনার আশংকা যদি না থাকে- এই শর্তে খোলা রাখার কথা বলেন।
কিন্তু স্বাভাবিকভাবে এই শর্ত পূরণ হবার নয়, তাই
হানাফী ফকীহগণ গায়র মাহরাম পুরুষের সামনে মুখমণ্ডল ও হাতের কবজি খোলা রাখার
অনুমতি দেন নি।’ (মা‘আরিফুল কুরআন : ৭/২১৪)
★ মহিলাদের
পা সতরের অন্তর্ভূক্ত কি না?
অধিকাংশ
আলেমের মতে মহিলাদের পাও সতরের অন্তর্ভূক্ত । সুতরাং মহিলাদের জন্য পা খোলা রেখে
পর পুরুষের সামনে যাওয়া যাবে না। এর দলীল হলো আল্লাহ তায়ালা বলেন- وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ
زِينَتِهِنَّ তারা যেন
তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। {সূরা নূর-৩১} উক্ত
আয়াতের মধ্যে মহিলাদের জন্য গোপন
সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা করতে নিষেধ করা হয়েছে। জোরে পদচারণা যদি
নিষেধ হয় তাহলে তো পা দেখানো নিষেধ হবেই।
আরো
জানুনঃ https://ifatwa.info/9333/
পর্দা সম্পর্কে আরো জানুন- https://ifatwa.info/22283/
নারীদের চাকরী করা সম্পর্কে জানুন- https://ifatwa.info/21564/?show=21564#q21564
নারী ও পুরুষের সতর সম্পর্কে জানুন- https://ifatwa.info/2833/
আরো জানুন- https://ifatwa.info/5685/?show=5685#q5685
★ সু-প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
১. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার স্বামীর সামর্থ্য থাকলে আপনার জন্য আলাদা
বাসস্থান ব্যবস্থা করা আপনার স্বামী উপর আবশ্যক। সুতরাং স্বামী যদি স্ত্রীকে
পর্দার সহযোগিতা করার পরিবর্তে কোনো পরপুরুষের সামনে স্ত্রীকে চেহারা খুলতে বাধ্য করে তাহলে এতে স্বামী
গুনাহগার হবে।
২. চাদর দিয়ে বক্ষ আবৃত করে পর্দা করা এটা
মাহরামদের সামনে, পরপুরুষের সামনে নয়। সুতরাং পরপুরুষের সামনে যেতে হলে পুরো শরীর
পর্দা করে যেতে হবে।
৩. নোনাসের হাজবেন্ডের সাথে অবশ্যই পর্দা
করতে হবে। সুতরাং পর্দা খেলাফ করে তার সাথে দেখা সাক্ষাত, কথা বার্তা, খানা খাওয়া
জায়েজ হবে না। তবে ফিৎনার আশংকা না থাকলে পর্দার আড়াল থেকে তার সাথে প্রয়োজনীয় কথা
বলা যাবে।
৪. নারীদের চাকরী করা
সম্পর্কে উপরের লিংকটা দেখে নিবেন।
৫.
আয়েশা রা. শিক্ষিকা ছিলেন, এটা ঠিক আছে। তবে তিনি পর্দার সাথে শিক্ষা দিয়েছেন। তা
ছাড়া ফিৎনার আশংকাও ছিলো না।