আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
686 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (3 points)

আসসালামু আলাইকুম। 
১।ইমাম আবু হানীফা সহ হানাফী মাযহাবের আরো প্রসিদ্ধ কিছু আলিম কি এই ফাতওয়া দিয়েছিলেন যে নারীদের জন্য গইরে মাহরাম পুরুষের সামনে মুখমন্ডল এবং কব্জি পর্যন্ত হাত অনাবৃত রাখা বৈধ?অর্থাৎ নিকাব ও হাতমোজা পরা ফরয নয়?

২।ফিতনার আধিক্যের কারণে সমসাময়িক হানাফী আলিমগণ কি এই মতটিকে পরিত্যাগ করেছেন?

1 Answer

0 votes
by (675,600 points)
edited by
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

কিছু হাদীস লক্ষ্য করি, 
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ইহরাম গ্রহণকারী নারী যেন নেকাব ও হাতমোজা পরিধান না করে। (সহীহ বুখারী ৪/৬৩, হাদীস : ১৮৩৮)

কাযী আবু বকর ইবনে আরাবী বলেন, নারীর জন্য বোরকা দ্বারা মুখমন্ডল আবৃত রাখা ফরয। তবে হজ্বের সময়টুকু এর ব্যতিক্রম। কেননা, এই সময় তারা ওড়নাটা চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিবে, চেহারার সাথে মিলিয়ে রাখবে না। পরপুরুষ থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখবে এবং পুরুষরাও তাদের থেকে দূরে থাকবে। (আরিযাতুল আহওয়াযী ৪/৫৬)

হযরত আয়েশা রা. ইফ্কের দীর্ঘ হাদীসে বলেছেন-আমি আমার স্থানে বসে ছিলাম একসময় আমার চোখ দুটি নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল এবং আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সফওয়ান ইবনে মুয়াত্তাল আসসুলামী ছিল বাহিনীর পিছনে আগমনকারী। সে যখন আমার অবস্থানস্থলের নিকট পৌছল তখন একজন ঘুমন্ত মানুষের আকৃতি দেখতে পেল। এরপর সে আমার নিকট এলে আমাকে চিনে ফেলল। কারণ পর্দা বিধান অবতীর্ণ হওয়ার আগে সে আমাকে দেখেছিল। সে তখন ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন বলে ওঠে, যার দরুণ আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি এবং ওড়না দিয়ে নিজেকে আবৃত করে ফেলি।

অন্য রেওয়ায়েতে আছে, আমি ওড়না দিয়ে আমার চেহারা ঢেকে ফেলি।-সহীহ বুখারী ৫/৩২০; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৭৭০; জামে তিরমিযী, হাদীস : ৩১৭৯

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ইহরাম অবস্থায় ছিলাম তখন আমাদের পাশ দিয়ে অনেক কাফেলা অতিক্রম করত। তারা যখন আমাদের সামনাসামনি চলে আসত তখন আমাদের সকলেই চেহারার ওপর ওড়না টেনে দিতাম। তারা চলে গেলে আবার তা সরিয়ে নিতাম।-মুসনাদে আহমাদ ৬/৩০; ইবনে মাজাহ,হাদীস: ২৯৩৫

এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, পরপুরুষের সামনে চেহারা ঢেকে রাখা আবশ্যক।

 আসমা বিনতে আবু বকর রা. বলেন, আমরা পুরুষদের সামনে মুখমন্ডল আবৃত করে রাখতাম। ...-মুসতাদরাকে হাকেম ১/৪৫৪

ফাতিমা বিনতে মুনযির রাহ. বলেন, আমরা আসমা বিনতে আবু বকর রা.-এর সাথে ইহরাম অবস্থায় থাকাকালে আমাদের মুখমন্ডল ঢেকে রাখতাম।-মুয়াত্তা, ইমাম মালেক ১/৩২৮; মুসতাদরাকে হাকেম ১/৪৫৪
,

فأخرج ابن جریر وابن أبی حاتم وابن مردویہ عن ابن عباس 
فی ہذہ الآیة قال: أمر اللّٰہ نساء الموٴمنین اذا خرجن من بیوتہن فی حاجة أن یغطین وجوہہن من فوق روٴوسہن بالجلابیب ویبدین عینًا واحدة۔ وأخرج عبدالرزاق وأبو داوٴد وابن أبی حاتم عن أم سلمةقالت: لمّا نزلت ہٰذہ الآیة : ”یدنین علیہن من جلابیہن“ خرج نساء الأنصار کأن علی روٴوسہن الغربان من السکینة وعلیہن أکسیة سود یلبسونہا۔ (فتح القدیر: ۳۵۲/۴، ط: دارابن کثیر)  
وقال الواحدی: قال المفسرون: یغطین وجوہہن وروٴسہن الاعینًا واحدةً(فتح القدیر: /۴ ۳۴۹، دارابن کثیر) 

সারমর্মঃ উক্ত আয়াত নাজিল হওয়ার পর মহিলারা তাদের চেহারা এবং মাথা ঢেকে রাখতো,কিন্তু শুধু এক চোখ খোলা রাখতো। 

وعن محمدبن سیرین قال سألتُ عبیدة السلمانی عن ہٰذہ الآیة: یدنین علیہن من جلابیبہن ، فرفع ملحفةً کانت علیہ وغطی رأسہ کلّہ حتی بلغ الحاجبین وغطی وجہہ وأخرج عینہ الیُسریٰ من شق وجہہ الأیسر وقال قتادة: تلوی الجلباب فوق الجبین وتشدہ ثم تعطفہ علی الأنف وان ظہرت عیناہا لکن تستر الصدرومعظم الوجہ(روح المعانی: ۲۶۴/۱۱، ط: دارالکتب العلمیة، بیروت) 
সারমর্মঃ এমন কাপড় রাখতো,যাহা দ্বারা চেহারা মাথা সবই ঢেকে যেতো,,, 

হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন
أمر اللہ نساء الموٴمنین إذا خرجن من بیوتہن في حاجة أن یغطین وجوہہن من فوق روٴوسہن بالجلابیب ویبدین عینا واحدة (احکام القرآن: ۳/۱۴۳، ط: ادارة القرآن کراچی) 
সারমর্মঃ আল্লাহ তায়ালা মুমিন মহিলাদের আদেশ করেছেন যখন তারা কোনো প্রয়োজনে বাহিরে বের হয়,জিলবাব দ্বারা তাদের মাথার উপর থেকে নিয়ে চেহারা ঢেকে রাখবে।
এক চোখ শুধু খোলা রাখবে।

বিস্তারিত জানুনঃ
,
★ মহিলাদের সমস্ত দেহ আবৃত থাকবে কিন্তু ফিতনার আশংকা না থাকলে মুখমণ্ডল ও হাতের তালু খোলা রাখা যাবে।এ মাসয়ালা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে।তবে সর্বাবস্থায় ফিতনার আশংকা না থাকাই লক্ষণীয়।
তাই চেহারা হাত পায়েরও পর্দা করা আবশ্যক।

আরো জানুনঃ 
,
হানাফী মাযহাব এর অন্যতম ফতোয়ার কিতাব ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছে

في الدر المختار مع رد المحتار: وتمنع المرأة الشابة من کشف الوجہ بین الرجال لا لأنہ عورة بل لخوف الفتنة (۲/۷۹ ط: زکریا دیوبند)

যুবতী মহিলার জন্য গায়রে মাহরাম পুরুষ দের সামনে চেহারা খোলা নিষেধ।
এটি সতর হওয়ার কারনে নয়,বরং ফিতনার আশংকায়।

مذهب أبي حنيفہ:
يقول محمد بن الحسن الشيباني في كتاب الأصل ( ٢/ ٢٣٥-٢٣٦) : (( أما المرأة الحرة التي لا نكاح بينه وبينها ، ولا حرمة ، ممن يحل له نكاحها : فليس ينبغي له أن ينظر إلى شيء منها مكشوفا ؛ إلا الوجه والكف ، ولا بأس أن ينظر إلى وجهها وإلى كفها ، ولا ينظر إلى شيء غير ذلك منها .
وهذا قول أبي حنيفة .
وقال الله تبارك وتعالى { وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا } ، ففسر المفسرون أن ما ظهر منها : الكحل والخاتم ، والكحل زينة الوجه ، والخاتم زينة الكف ، فرخص في هاتين الزينتين .
ولا بأس بأن ينظر إلى وجهها وكفها ؛ إلا أن يكون إنما ينظر إلى ذلك اشتهاء منه لها . فإن كان ذلك ، فليس ينبغي له أن ينظر إليه )) 
সারমর্মঃ এখানে হানাফী মাযহাবের প্রখ্যাত ফকীহ মুহাম্মাদ বিন হাসান শায়বানী যিনি ছাহেবাইন  এর একজন।
তিনি বলেন আবু হানিফা রহঃ এর মাযহাব হলো মহিলারা পুরো শরীর ঢেকে রাখবে।
শুধু চেহারা আর হাত ব্যাতিত।
সুতরাং তাদের চেহারার দিকে তাকানো নাজায়েজ নয়,হ্যাঁ যদি ইশতিহা তথা উত্তেজনা আসে,বা উত্তেজনা আসার সম্ভাবনা থাকে,তাহলে তাকানো নাজায়েজ।      
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই বোন,উপরে উল্লেখিত মাসয়ালাটি মতবিরোধ পূর্ণ একটি মাসয়ালা।
,
তবে বর্তমান যামানায় ফিতনার আশংকা প্রবল হওয়ার কারনে মহিলাদের কোনোভাবেই বাহিরে হাত,চেহারা খুলে বের হওয়া জায়েজ নেই।    
এটার উপর সাড়া বিশ্বের জমহুর উলামায়ে কেরামগন একমত।  


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...