বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম।
জবাবঃ
হজরত আবু বারযা আসলামি রাদিয়াল্লাহু আনহু
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন বান্দার দুটি পা ততক্ষণ
পর্যন্ত নড়াতে পারবে না; যতক্ষণ না তাকে
জিজ্ঞাসা করা হবে যে, তোমার জিন্দিগি
কোথায় ব্যয় করেছ? জ্ঞানানুসারে কি
আমল করেছ? সম্পদ কোথা থেকে
উপার্জন করেছ আর কিসে খরচ করেছ এবং তোমার শরীরকে কী কাজে নিঃশেষ করেছ?’ (তিরমিজি, দারেমি) হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, হাশরের ময়দানে প্রত্যেক বনি আদমকেই আল্লাহ
তাআলার দরবারে তার কর্মের হিসাব দিতে হবে। হাশরের ময়দানে হিসাব-নিকাশ হবে দু
ধরনের।
প্রথমত : যাদের হিসাব সহজ হবে, তাদের হিসাব-নিকাশ পেশ করা হবে। হাদিসে
এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কিয়ামতের দিন যে কারো হিসাব নেয়া হবে; সে ধ্বংস হবে।’ আমি (আয়েশা) বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহা! আল্লাহ তাআলা কি এরশাদ
করেন নাই,
فَأَمَّا
مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ.
فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَسِيرًا
‘আর যার ডান হাতে আমলনামা দেয়া হবে তার হিসাব-নিকাশ সহজ
হবে।’ (সুরা ইনশিকাক : আয়াত ৭-৮)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন, ‘এতো শুধু
(আমলনামা) পেশ মাত্র; কারণ কিয়ামতের
দিন যে কারো হিসাব পর্যবেক্ষণ করা হবে সে নির্ঘাত আজাবে নিপতিত হবে।’ (বুখারি ও
মুসলিম)
দ্বিতীয়ত : যাদের হিসাব-নিকাশ শক্তভাবে
নেয়া হবে
ছোট-বড় সব ব্যাপারেই প্রত্যেককে জিজ্ঞাসা
করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে যদি সত্য বলে তাহলে ভালই। আর যদি মিথ্যা বলার বা গোপন করার
চেষ্টা করে, তবে
হিসাব-নিকাশের দিন তার মুখে মোহর মেরে দেয়া হবে এবং তার অঙ্গ-প্রতঙ্গকে কথা বলার
জন্য বলা হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
الْيَوْمَ
نَخْتِمُ عَلَىٰ أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَا أَيْدِيهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُم
بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ
‘আজ আমি তাদের
মুখে মোহর মেরে দেব; তাদের হাত আমার
সঙ্গে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।’ (সুরা ইয়াসিন : আয়াত
৬৫)
কিয়ামতের দিনে সব মানুষের হিসাব হবে।
কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাদেরকে এর আওতামুক্ত রেখেছেন; তারা ব্যতীত। যেমন-
এ উম্মতের সত্তর হাজার মানুষ রয়েছে। যারা
বিনা হিসাব-নিকাশ ও আজাব ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করবে। কাফেদের হিসাব এবং কর্মসমূহ
পেশ করা হবে তাদেরকে তিরস্কার করার জন্য। তাদের আজাব বিভিন্ন ধরনের হবে।
সুতরাং যার পাপ বেশী হবে, তার শাস্তিও বেশি হবে। আর যার পাপ কম হবে
তার শাস্তি কম হবে। আর যার পূণ্য থাকবে তার আজাব হালকা করা হবে কিন্তু জান্নাতে
প্রবেশ করতে পারবে না।
কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম উম্মতে
মুহাম্মাদীর হিসাব-নিকাশই অনুষ্ঠিত হবে। আল্লাহর হকের মধ্যে সর্ব প্রথম নামাজের
হিসাব নেয়া হবে।
★ সু-প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
বান্দা জান্নাত অথবা জাহান্নামে যাবে তা হলো কিয়ামতের দিন হিসাব-নিকাশের পরই
যাবে। তবে কোন বান্দা জান্নাতে যাবে আর কোন বান্দা জাহান্নামে যাবে তা আল্লাহ
তায়ালা ভালো করে জানেন। তাই কিয়ামতের দিন কি কি ঘটবে সেটা আল্লাহ তায়ালা অনেক কিছু
বলে দিয়েছেন। যেমন রাসূল সা. কে মিরাজের রাতে জান্নাত-জাহান্নাম দেখানো হয়েছে।
জাহান্নামে তিনি মহিলাদেরকে বেশী দেখেছেন অর্থাৎ জাহান্নামে মহিলারা বেশী যাবে এটা
আল্লাহ তায়ালা আগেই দেখিয়ে দিয়েছেন। তেমনী
বনী ইসরাঈলের এক ব্যক্তিকে জান্নাতে ও অপর ব্যক্তিকে জাহান্নামে দিয়েছেন মানে
দিবে। এভাবে ব্যক্ত করার কারণ হলো, অতীত কাল যেমন নিশ্চয়তার অর্থ দেয় তেমনী আল্লাহ তায়ালা যা
বলেন তা নিশ্চিত সংগটিত হবে।