ওয়া আলাইকুমুস সালাম
ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম।
জবাবঃ
কত বার দুধ পান করলে দুধ সম্পর্ক স্থাপিত
হবে?
এ সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে- বিশুদ্ধ
মতানুযায়ী
একবার এক কাতরা দুধ পান করে নিলেও দুধ
সম্পর্ক প্রমাণিত হয়ে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ-১৩/৬১৭)
সুরা নিসার ২৩ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
اُمَّہٰتُکُمُ الّٰتِیۡۤ اَرۡضَعۡنَکُمۡ وَ اَخَوٰتُکُمۡ مِّنَ
الرَّضَاعَۃِ
দুধমা, দুধবোন
(দেরকে বিবাহ করা জায়েজ নেই,তারা
মাহরামের অন্তর্ভুক্ত।)
হাদীস শরীফে এসেছে-
حَدَّثَنَا عَبْدُ
اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ، عَنْ
سُلَيْمَانَ بْنِ يَسَارٍ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، زَوْجِ النَّبِيِّ صلى
الله عليه وسلم أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " يَحْرُمُ
مِنَ الرَّضَاعَةِ مَا يَحْرُمُ مِنَ الْوِلاَدَةِ " .
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে
বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রক্তের সম্পর্কের কারণে
যাদেরকে বিয়ে করা হারাম, অনুরূপভাবে
দুধপান জনিত সম্পর্কের কারণেও তারা হারাম। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২০৫৫
দুধ পানের সাথে সম্পর্কিত যেসব বোন আছে, তাদেরকে
বিয়ে করা হারাম। এর বিশদ বিবরণ এই যে, দুধ পানের
নির্দিষ্ট সময়কালে কোন বালক অথবা বালিকা কোন স্ত্রীলোকের দুধ পান করলে সে তাদের
মা এবং তার স্বামী তাদের পিতা হয়ে যায়। এছাড়া সে স্ত্রীলোকের আপন পুত্র-কন্যা
তাদেরই ভাই-বোন হয়ে যায়। অনুরূপ সে স্ত্রীলোকের বোন তাদের খালা হয় এবং সে
স্ত্রীলোকের দেবর-ভাসুররা তাদের চাচা হয়ে যায়। তার স্বামীর বোনেরা শিশুদের ফুফু
হয়ে যায়। দুধ পানের কারণে তাদের সবার পরস্পরের বৈবাহিক অবৈধতা স্থাপিত হয়ে
যায়। বংশগত সম্পর্কের কারণে পরস্পর যেসব বিয়ে হারাম হয়, দুধ পানের সম্পর্কের কারণে সেসব সম্পৰ্কীদের
সাথে বিয়ে করা হারাম হয়ে যায়।
তাই একটি বালক ও একটি বালিকা কোন মহিলার দুধ পান করলে তাদের পরস্পরের মধ্যে
বিয়ে হতে পারে না। এমনিভাবে দুধভাই ও বোনের কন্যার সাথেও বিয়ে হতে পারে না। উকবা
ইবন হারেস বলেন, তিনি আবি
ইহাব ইবন আযীযের এক মেয়েকে বিয়ে করেন। এক মহিলা এসে বলল, আমি উকবাকে এবং যাকে সে বিয়ে করেছে উভয়কে
দুধ পান করিয়েছি। উকবা বললেন,
আমি জানি না
যে, আপনি আমাকে
দুধ পান করিয়েছেন। এর পূর্বে আপনি আমাকে কখনো বলেননি। তারপর তিনি মদীনায় আসলেন
এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানালেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কিভাবে এটা সম্ভব অথচ বলা হয়েছে। তখন উকবা তার
স্ত্রীকে পৃথক করে দিলেন এবং অন্য একজনকে বিয়ে করেন। [বুখারীঃ ৮৮]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, একবার
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরে
ছিলেন। এমতাবস্থায় আয়েশা শুনতে পেলেন যে, হাফসার ঘরে
যাওয়ার জন্য একজন পুরুষ লোক অনুমতি চাচ্ছে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! একলোক আপনার পরিবারভুক্ত ঘরে
প্রবেশ করতে যাচ্ছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমার তো মনে হয় এটা অমুক ব্যক্তি। হাফসার
কোন এক দুধ চাচা। তখন আয়েশা বললেন, অমুক যদি
জীবিত থাকত- আয়েশার কোন এক দুধ চাচা, তাহলে কি সে
আমার কাছে প্রবেশ করতে পারত?
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, জন্মগত কারণে যা হারাম হয়, দুধগত কারণেও তা হারাম হয়। [বুখারী ৫০৯৯; মুসলিম: ১৪৪৪]
অন্য
বর্ণনায় এসেছে, আয়েশা
রাদিয়াল্লাহু আনহা বলতেন, জন্মের
কারণে যাদেরকে হারাম গণ্য করো দুধ পানের কারণেও তাদেরকে হারাম গণ্য করবে। [মুসলিম:
১৪৪৫]
,
★সুতরাং
প্রশ্নে উল্লেখিত বিবাহ হারাম হয়েছে।
তাদের ঘর সংসার নাজায়েজ ও যেনা হয়েছে।
যেই সন্তান হয়েছে,এটার দায়িত্ব সেই স্বামী নিবে।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ
مَنْصُورٍ، وَمُسَدَّدٌ، قَالَا: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ
عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، اخْتَصَمَ سَعْدُ بْنُ أَبِي وَقَّاصٍ، وَعَبْدُ بْنُ
زَمْعَةَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي ابْنِ أَمَةِ
زَمْعَةَ، فَقَالَ سَعْدٌ: أَوْصَانِي أَخِي عُتْبَةُ إِذَا قَدِمْتُ مَكَّةَ أَنْ
أَنْظُرَ إِلَى ابْنِ أَمَةِ زَمْعَةَ فَأَقْبِضَهُ فَإِنَّهُ ابْنُهُ، وَقَالَ
عَبْدُ بْنُ زَمْعَةَ: أَخِي ابْنُ أَمَةِ أَبِي، وُلِدَ عَلَى فِرَاشِ أَبِي،
فَرَأَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَبَهًا بَيِّنًا
بِعُتْبَةَ، فَقَالَ: الْوَلَدُ لِلْفِرَاشِ وَلِلْعَاهِرِ الْحَجَرُ،
وَاحْتَجِبِي عَنْهُ يَا سَوْدَةُ
‘আয়িশাহ্
(রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাযি.) ও ‘আবদ ইবনু যাম‘আহ
(রাযি.) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যাম‘আহর দাসীর এক
সন্তানের বিষয়ে বিবাদ নিয়ে উপস্থিত হলো। সা‘দ (রাযি.) বললেন, আমার ভাই ‘উতবাহ আমার কাছে ওয়াসিয়াত করেছে, আমি মক্কায় এলে যেন যাম‘আহর দাসীর সন্তানকে
আমার অধিকারে গ্রহণ করি। কারণ ওটা তার ছেলে। কিন্তু ‘আবদ ইবনু যাম‘আহ বললেন, এটা আমার ভাই, আমার পিতার
দাসীর সন্তান, আমার পিতার
বিছানায় তার জন্ম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্তানটির মধ্যে
‘উতবাহর সুস্পষ্ট সাদৃশ্য দেখতে পেয়ে বললেনঃ সন্তান তার বিছানা যার। আর যিনাকারীর
জন্য রয়েছে পাথর। তিনি সাওদা (রাযি.) বললেনঃ তার থেকে পর্দা করো। যিনাকারীর জন্য
রয়েছে পাথর। মুসাদ্দাদের বর্ণনায় রয়েছেঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘হে ‘আব্দ! সে তোমার ভাই।’(আবু দাউদ
২২৭৩)
★ সু-প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
একবার এক কাতরা (ভুলবশত) দুধ পান করে
নিলেও দুধ সম্পর্ক প্রমাণিত হয়ে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ-১৩/৬১৭)
তবে বাচ্চার বয়স দুই বছরের কম হতে হবে।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যদি ছেলেটি
তার বয়স দুই বছরের মধ্যে তার খালার দুধ পান করে থাকে তাহলে তার খালা তার দুধ মা এবং খালাতো বোন তার দুধ বোন সাব্যস্ত
হয়ে গেছে । তাই এখন ছেলেটি ঐ খালার মেয়েকে
বিয়ে করতে পারবে না।