আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+3 votes
2,104 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (0 points)
কারো সামনাসামনি তার কোনো কাজের জন্য প্রশংসা করা উচিত কি?কারণ যার প্রশংসা করা হচ্ছে তার মনে অহংকার তৈরি হয় তার সামনেই তার প্রশংসা করার ফলে,যা কখনো বুঝা যায়,কখনো বা বুঝা যায় না।

1 Answer

0 votes
by (712,040 points)
বিসমিহি তা'আলা

জবাবঃ-
দ্বীনে ইসলাম হল,মধ্যপন্থার ধর্ম। মধ্যপন্থাকেই ইসলাম পছন্দ করে।যাতে কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি বা ছাড়াছাড়ি থাকবে না।

আল্লাহ তা'আলা মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী বান্দাদের গুনাগুন সম্পর্কে বলেন,
وَالَّذِينَ إِذَا أَنفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَامًا
এবং তারা যখন ব্যয় করে, তখন অযথা ব্যয় করে না কৃপণতাও করে না এবং তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী।(সূরা ফুরকান-৬৭)

আল্লাহ তা'আলা কথাবার্তায় সংযমী হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا
يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَن يُطِعْ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا
হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল।তিনি তোমাদের আমল-আচরণ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে।(সূরা আহযাব-৭০-৭১)

হাদীসে প্রশংসাজ্ঞাপক এমনসব বাক্যালাপ থেকে নিষেধ করা হয়েছে।যা প্রশংসিত ব্যক্তিকে অহংকারের দিকে নিয়ে যেতে পারে।বা যাতে মিথ্যার সংমিশ্রণ রয়েছে।কিংবা কারো ব্যাপারে নিশ্চিতরূপে কোনো হুকুম আরোপ করা হয়ে থাকে।

যেমন হাম্মাম ইবনুল হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত।
عَنْ هَمَّامِ بْنِ الْحَارِثِ، أَنَّ رَجُلاً، جَعَلَ يَمْدَحُ عُثْمَانَ فَعَمِدَ الْمِقْدَادُ فَجَثَا عَلَى رُكْبَتَيْهِ - وَكَانَ رَجُلاً ضَخْمًا - فَجَعَلَ يَحْثُو فِي وَجْهِهِ الْحَصْبَاءَ فَقَالَ لَهُ عُثْمَانُ مَا شَأْنُكَ فَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ  " إِذَا رَأَيْتُمُ الْمَدَّاحِينَ فَاحْثُوا فِي وُجُوهِهِمُ التُّرَابَ " .
একদিন এক লোক উসমান (রাযিঃ) এর প্রশংসা করতে শুরু করলেন। তখন মিকদাদ (রাযিঃ) হাঁটুর উপর ভর করে বসলেন, কারণ তিনি ছিলেন মোটা মানুষ। এরপর তিনি প্রশংসাকারীর মুখে মাটি নিক্ষেপ করতে লাগলেন। তখন উসমান (রাযিঃ) তাকে বললেন, হে মিকদাদ! তুমি এ কি করছ? উত্তরে তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা অতিমাত্রায় প্রশংসাকারীদেরকে দেখলে তাদের চেহারায় মাটি নিক্ষেপ করবে। (সহীহ মুসলিম-শামেলা:৩০০২,ইসলামিক ফাউন্ডেশন:৭২৩৪, ইসলামিক সেন্টার:৭২৮৮)

হযরত আবু বাকরা রাযি থেকে বর্ণিত,
عَنْ أَبِي بَكْرَةَ رضي الله عنه أَنَّ رَجُلًا ذُكِرَ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَثْنَى عَلَيْهِ رَجُلٌ خَيْرًا ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( وَيْحَكَ قَطَعْتَ عُنُقَ صَاحِبِكَ - يَقُولُهُ مِرَارًا - إِنْ كَانَ أَحَدُكُمْ مَادِحًا لَا مَحَالَةَ فَلْيَقُلْ : أَحْسِبُ كَذَا وَكَذَا إِنْ كَانَ يُرَى أَنَّهُ كَذَلِكَ وَحَسِيبُهُ اللَّهُ ، وَلَا يُزَكِّي عَلَى اللَّهِ أَحَدًا )
একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এক লোকের ব্যাপারে আলোচনা হয়। তখন অন্য এক লোক বলল, হে আল্লাহর রসূল! অমুক অমুক কাজের বিষয়ে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর তার চেয়ে উত্তম আর কোন লোক নেই। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমার ধ্বংস হোক, তুমি তো তোমার সঙ্গীর গর্দান কেটে ফেলেছ। তিনি এ কথাটি বার বার বললেন। অতঃপর বললেন, তোমাদের কারো যদি তার ভাইয়ের প্রশংসা করতেই হয় তবে সে যেন বলে অমুকের ব্যাপারে আমার ধারণা যে, সে এমন (বাস্তবে হলেই এ কথাটি বলতে পারবে), তবে আল্লাহর সম্মুখে আমি কাউকে দোষমুক্ত ঘোষণা করছি না (অর্থাৎ আমি আল্লাহর সামনে কাউকে পবিত্র করতে পারি না)। (সহীহ মুসলিম-শামেলা:৩০০০,ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭২৩১, ইসলামিক সেন্টার ৭২৮৪)(সহীহ বোখারী-৬০৬১)

আবু মূসা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত।
عَنْ أَبِي مُوسَى، قَالَ سَمِعَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم رَجُلاً يُثْنِي عَلَى رَجُلٍ وَيُطْرِيهِ فِي الْمِدْحَةِ فَقَالَ  " لَقَدْ أَهْلَكْتُمْ أَوْ قَطَعْتُمْ ظَهْرَ الرَّجُلِ "
তিনি বলেন, একদিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক লোককে অপর লোকের অতিরিক্ত প্রশংসা করতে শুনলেন। তারপর তিনি বললেন, তুমি তো ঐ লোকের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিয়েছে (ধ্বংস করে দিয়েছ)। (সহীহ মুসলিম-শামেলা নুসখা;ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭২৩২, ইসলামিক সেন্টার ৭২৮৬)

হযরত মু'বিয়া রাযি থেকে বর্ণিত
عن مُعَاوِيَة رضي الله عنه عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ( َإِيَّاكُمْ وَالتَّمَادُحَ فَإِنَّهُ الذَّبْحُ ) وحسنه الألباني في صحيح ابن ماجة .
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,তোমরা প্রশংসাজ্ঞাপক বাক্যালাপ থেকে বেঁচে থাকো,কেননা এটা যবেহ করা।(মসনদে আহমদ-১৬৩৯৫,সুনানু ইবনি মা'জা-৩৭৪৩)

ইমাম মুনাবী রাহ বলেন,
( فإنه من الذبح ) وذلك لأن المذبوح هو الذي يفتر عن العمل والمدح يوجب الفتور ، أو لأن المدح يورث العجب والكبر وهو مهلك كالذبح ، فلذلك شبه به . قال الغزالي رحمه الله : فمن صنع بك معروفا فإن كان ممن يحب الشكر والثناء فلا تمدحه ؛ لأن قضاء حقه أن لا تقره على الظلم ، وطلبه للشكر ظلم ، وإلا فأظهر شكره ليزداد رغبة في الخير "
হাদীসে যবেহ এজন্য বলা হয়েছে।কেননা যবেহকৃত জিনিষ দুনিয়ার কাজ থেকে সে অবসর হয়ে যায়।ঠিকতেমনি প্রশংসিত ব্যক্তিও প্রশংসার পর আপন কাজে ক্লান্তি অনুভব করে।।অথবা প্রশংসা অহংকারবোধ সৃষ্টি করে,যা ধংসকারী। যেমন যবেহ প্রাণের জন্য ধংসকারী।এজন্য প্রশংসাকে হাদীসে যবেহের সাথে তুলনা করা হয়েছে।ইমাম গাযযালী রাহ বলেন,যদি কেউ তোমাকে কোনো প্রকার ইহসান করে,এবং সে প্রশংসার প্রত্যাশী হয়,তাহলে তার প্রশংসা করবে না।কেননা প্রশংসাকে চাওয়া যুলুমের অন্তর্ভুক্ত।নতুবা ভালো কাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রশংসা করা যাবে। (ফয়যুল কাদীর-৩/১২৯)

প্রশংসায় মিথ্যা কিছু থাকলে সেটা নেফাক হিসেবে গণ্য হবে।
কেননা হাদীসে এসেছে,
( آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلَاثٌ : إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ )
মুনাফিকের আ'লামত তিনটি।(১)মিথ্যা বলা(২)ওয়াদা ভঙ্গ করা(৩)খেয়ানত করা।(বোখারী-মুসলিম)

হযরত আবু উমামা রাযি থেকে বর্ণিত
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ رضي الله عنه عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ( الْبَذَاءُ وَالْبَيَانُ شُعْبَتَانِ مِنْ النِّفَاقِ )........
وَالبَذَاءُ: هُوَ الفُحْشُ فِي الكَلاَمِ، وَالبَيَانُ: هُوَ كَثْرَةُ الكَلاَمِ مِثْلُ هَؤُلاَءِ الخُطَبَاءِ الَّذِينَ يَخْطُبُونَ فَيُوَسِّعُونَ فِي الكَلاَمِ وَيَتَفَصَّحُونَ فِيهِ مِنْ مَدْحِ النَّاسِ فِيمَا لاَ يُرْضِي اللَّهَ.
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,অশ্লীল কতাবার্তা এবং অতিরিক্ত প্রশংসা নেফাকের অন্তর্ভুক্ত।ইমাম তিরমিযি রাহ বলেন,উক্ত হাদীসে বয়ান শব্দের অর্থ হল,বক্তৃতায় এমনসব প্রশংসা মূলক কতাবার্তাকে নিয়ে আসা যার ব্যপারে অবশ্যই আল্লাহ সন্তুষ্ট থাকবেন না।(সুনানু তিরমিযি-২০২৭)

ইমাম নববী রাহ বলেন,
مرحبا بالأخ الصالح والنبي الصالح:
এর ফায়দা ও হেকমত আলোচনা পূর্বক লিখেন,
وَفِيهِ جَوَازُ مَدْحِ الْإِنْسَانِ فِي وَجْهِهِ إِذَا أُمِنَ عَلَيْهِ الْإِعْجَابُ وَغَيْرُهُ مِنْ أَسْبَابِ الْفِتْنَةِ.
এদ্বারা বুঝা যায় যে,ফিতনার আশংকা না থাকলে সামনাসামনি যে কারো প্রশংসা করা যেতে পারে।(আল-মিনহাজ-২/২১৩)

সু-প্রিয় পাঠকবর্গ!
কেউ প্রশংসার যোগ্য না হলে তার প্রশংসা করা কখনো জায়েয হবে না।এবং কারো ব্যাপারে ফিতনায় পতিত হওয়ার আশংকা থাকলে তখন তার বাস্তব গুনাগুণের প্রশংসা করাও জায়েয হবে না।এবং মিথ্যা সংমিশ্রিত প্রশংসা করাতো মোটেই  জায়েয হবে না।নতুবা কাউকে নেক কাজের প্রতি উদ্বোদ্ধ করতে তার প্রশংসা করার অনুমোদন রয়েছে।

তবে উত্তম হল,
أحسب فلانا كذا والله حسيبه،
আমি এমনটা মনে করি।আল্লাহ-ই ভালো জানেন।

উত্তর লিখনে
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ, Iom.
পরিচালক
ইসলামিক রিচার্স কাউন্সিল বাংলাদেশ


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...