আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
731 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (72 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু,
পত্রিকায় পড়লাম যে, ইরানে এক ব্যক্তি দাবি করেছেন যে, উটের মূত্র পান করলে করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এটা নাকি ইসলামী ওষুধ? এর দ্বারা এজমা, ফুসফুসজনিত চিকিৎসাও নাকি হয়। এইটার ভিডিও তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে। সে "প্রোফেটিক মেডিসিন সোসাইটি" এর চেয়ারম্যান। ইরানের শিয়া ইমামদের হাত ধরে ইসলামী ওষুধ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই ওষুধ কেও য়ার অন্তর্ভুক্ত ধরছে।কিন্তু আধুনিক চিকিৎসক গণ ইসলামী চিকিৎসার নামে চালানো এই চিকিৎসা কে অবৈজ্ঞানিক ও ঝুকিপূর্ণ বলছেন। সোউদি আরব, জরদান,ইরান সহ বেশ কিছু আরব দেশে উটের মূত্রের ওষধি গুন আছে বলে বিশ্বাস করে।

এক্ষেত্রে আমাদের আকিদা কি হবে?

1 Answer

0 votes
by (573,960 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


প্রথমেই আমরা হারাম বস্তু দ্বারা চিকিৎসা গ্রহন সম্পর্কে মাসয়ালা জেনে নেইঃ 

ইমাম আবু হানীফার বিখ্যাত মত হলো হারাম বস্তু দ্বারা চিকিৎসা করা জায়েজ নেই। (আলমগিরী)

ইমাম শাফী (রা.) মতে মদ এবং নেশা জাত অন্যান্য দ্রব্য ছাড়া অন্য সকল হারাম বস্তু দিয়ে চিকিৎসা করা জায়েজ। (কিতাবুল উম)

মালিকী ও হাম্বলী ফকীহগণ এবং হানাফিদের মধ্যে ইমাম আবু ইউসুফ অবশ্য সব ধরণের হারাম বস্তু দ্বারাই চিকিৎসা করার অনুমতি দিয়েছেন। যদি বৈধ বস্তু দিয়ে তৈরি কোনো বিকল্প কোনো ওষুধ না থাকে এবং কোনো মুসলিম চিকিৎসক সুস্থতা অর্জনের বিষয়ে আশ্বাস প্রাদন করে থাকে। তাহলে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রক্ত ও প্রসাব পান করা এবং মৃত প্রাণী ভক্ষণ করা জায়েজ আছে (আলমগিরী)



وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِنَّ اللَّهَ أَنْزَلَ الدَّاءَ وَالدَّوَاءَ ، وَجَعَلَ لِكُلِّ دَاءٍ دَوَاءً ، فَتَدَاوُوا ، وَلَا تَدَاوُوا بِحَرَامٍ " . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ

আবুদ্ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা রোগ নাযিল করেছেন এবং প্রতিষেধকও। আর প্রত্যেক রোগের ঔষধও নির্ধারিত করেছেন। সুতরাং তোমরা ঔষধ ব্যবহার করো, কিন্তু হারাম বস্তু দ্বারা ঔষধ সেবন করবে না।
আবূ দাঊদ ৩৮৭৪। হাদীসটির প্রথম অংশ (أَنْزَلَ الدَّاءَ وَالدَّوَاءَ) অংশটুকু সহীহ : অবশিষ্ট অংশ য‘ঈফ। য‘ঈফ গয়াতুল মারাম ৬, য‘ঈফুল জামি‘উস্ সগীর ১৫৬৯, মা‘রিফাতুস্ সুনান ওয়াল আসার ৫৯৬৪, ‘বায়হাক্বী’র কুবরা ২০১৭৩,মিশকাতুল মাসাবিহ ৪৫৩৮)

ইমাম বায়হাক্বী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ অনুচ্ছেদে উল্লেখিত হাদীস এবং অপবিত্র ঔষধ ব্যবহার করার নিষিদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, হারাম ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা নেয়া যাবে না। কিন্তু এ হাদীসদ্বয়ের সাথে দ্বন্দ্ব বাধে ‘উরায়নাহ্ গোত্রের হাদীসের। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ গোত্রের কিছু লোককে উটের পেশাব পান করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ

حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ مُحَمَّدٍ الزَّعْفَرَانِيُّ، حَدَّثَنَا عَفَّانُ بْنُ مُسْلِمٍ، حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ، حَدَّثَنَا حُمَيْدٌ، وَقَتَادَةُ، وَثَابِتٌ، عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ نَاسًا، مِنْ عُرَيْنَةَ قَدِمُوا الْمَدِينَةَ فَاجْتَوَوْهَا فَبَعَثَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي إِبِلِ الصَّدَقَةِ وَقَالَ " اشْرَبُوا مِنْ أَلْبَانِهَا وَأَبْوَالِهَا "

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, উরাইনা গোত্রের লোকেরা মাদীনায় আসলো। কিন্তু এখানকার আবহাওয়া তাদের অনুকূল হল না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সাদকার উটের নিকট পাঠিয়ে দিলেন এবং বললেনঃ “তোমরা এর দুধ ও পেশাব পান কর।" 
(তিরমিজি ৭২)

أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الأَعْلَى، قَالَ حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ زُرَيْعٍ، قَالَ حَدَّثَنَا سَعِيدٌ، قَالَ حَدَّثَنَا قَتَادَةُ، أَنَّ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، حَدَّثَهُمْ أَنَّ أُنَاسًا أَوْ رِجَالاً مِنْ عُكْلٍ قَدِمُوا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَتَكَلَّمُوا بِالإِسْلاَمِ فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا أَهْلُ ضَرْعٍ وَلَمْ نَكُنْ أَهْلَ رِيفٍ . وَاسْتَوْخَمُوا الْمَدِينَةَ فَأَمَرَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِذَوْدٍ وَرَاعٍ وَأَمَرَهُمْ أَنْ يَخْرُجُوا فِيهَا فَيَشْرَبُوا مِنْ أَلْبَانِهَا وَأَبْوَالِهَا فَلَمَّا صَحُّوا وَكَانُوا بِنَاحِيَةِ الْحَرَّةِ كَفَرُوا بَعْدَ إِسْلاَمِهِمْ 

মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আ’লা (রহঃ) ... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। উকল গোত্রের কিছু লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাদের ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিল। তারপর তারা বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা দুগ্ধবতী পশু রাখি; আমরা কৃষিকাজের লোক নই। মদিনার আবহাওয়া তাদের উপযোগী হল না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে কিছু উট ও একজন রাখাল প্রদানের নির্দেশ দিলেন এবং তিনি তাদের উটের প্রতিপালনের কাজে মদিনার বাইরে যেতে এবং উটের দুধ ও এর পেশাব পান করার নির্দেশ দিলেন। যখন তারা সুস্থ হয়ে গেল এবং হাররা নামক স্থানে অবস্থান করল, তখন তারা ইসলাম পরিত্যাগ করল। 
সহিহ, নাসায়ী ৩০৬.ইবনু মাজাহ হাঃ ৩৫০৩, বুখারি হাঃ ৪১৯২, মুসলিম (ইসলামিক সেন্টার) হাঃ ৪২০৭

হারাম ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা নেয়া যাবে না।  এ সংক্রান্ত হাদীসগুলোর মাঝে দ্বন্দ্ব। 
 এ দ্বন্দ্বের নিরসন করা যায় তা এভাবে যে, নিষ্প্রয়োজনে বা নিরুপায অবস্থার সম্মুখীন হতে না হয় তাহলে হারাম বা অপবিত্র ঔষধ ব্যবহার করা যাবে না। যেমন হারাম হারাম উভয় প্রকার ঔষধ পাওয়া যায় এমন ক্ষেত্রে হারাম বা অপবিত্র ঔষধ ব্যবহার করা যাবে না। আর হারাম বা অপবিত্র ঔষধের বিকল্প না থাকে; তাহলে সে ঔষধ ব্যবহার করা যায়। 

তবে ‘আল্লামা শাওকানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ এ সমাধানটিকে না বুঝে দেয়া হয়েছে। তাতে কোন গোপনীয়তা নেই। কেননা বিতর্কিত উটের পেশাব হারাম বা অপবিত্রের সাথে সম্পর্কিত হয়। তবে যদি মেনে নেয়া হয়, তাহলে ‘আম, (যেমন- হারাম দ্বারা চিকিৎসা নেয়া) আর খাসের মধ্যে (যেমন- উটের পেশাব দ্বারা ঔষধ ব্যবহার করা)। একত্রিকরণ বা সমাধান করা ওয়াজিব হয়ে পড়বে। আর তা এভাবে যে, সকল প্রকার হারাম দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ করা হারাম শুধু উটের পেশাব ব্যতীত।

শারহুস্ সুন্নাহ্ গ্রন্থে ইবনু রসলান (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ শাফি‘ঈ মাযহাবের সঠিক সিদ্ধান্ত হলো নেশাদার দ্রব্য ছাড়া সকল প্রকারের পবিত্রতা দ্বারা ঔষধ গ্রহণ করা জায়িয। এর দলীল হলো বুখারী মুসলিমে বর্ণিত ‘উরায়নাহবাসীদের হাদীস। কেননা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ঔষধ হিসেবে উটের পেশাব পান করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৩৮৬৬)

ইসলামী স্কলার গন হারাম বস্তু দ্বারাও চিকিৎসা করার অনুমতি দিয়েছেন।
শর্ত হলোঃ 

যদি বৈধ বস্তু দিয়ে তৈরি কোনো বিকল্প কোনো ওষুধ না থাকে এবং কোনো মুসলিম চিকিৎসক সুস্থতা অর্জনের বিষয়ে আশ্বাস প্রদান করে থাকে। তাহলে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে হারাম বস্তু দ্বারা চিকিৎসা জায়েজ আছে।


★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,   
শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে যদি কোনো রোগের ঔষধ বা প্রতিষেধক হালাল পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে হারাম বস্তু দ্বারা চিকিৎসা করা জায়েজ নেই। 

তবে যদি কোনো রোগের হালাল কোনো প্রতিষেধক বা ঔষধ পাওয়া না যায় সেক্ষেত্রে হারাম প্রতিষেধক বা ঔষধ গ্রহণ করা মানুষের জন্য জায়েজ রয়েছে। এটাই হচ্ছে ইসলামী স্কলারদের মত।

★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত রোগ গুলোর যেহেতু হালাল বস্তু দ্বারা চিকিৎসা আছে,তাই হারাম বস্তু (উটের মূত্র ) দ্বারা চিকিৎসা জায়েজ নেই।    


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...